গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, দেশে উতসব উৎযাপনের মাত্রা আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে। অন্তত উৎসবের বাণিজ্যিকরণটা বেশ চোখে পড়ার মত। স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে লাল-সবুজ পোশাক পড়া, একুশে ফেব্রুয়ারীতে সাদা-কালো পোশাকে সাজা, গাল-মুখ রাঙিয়ে সেলফি তোলা, টিভি চ্যানেলে ২-৩ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠান, মোবাইল কোম্পানির স্পন্সরে রাত-ব্যাপি রাজপথ অঙ্কন ইত্যাদি ইত্যাদি। এর অবশ্যই বেশ কিছু পজিটিভ দিক আছে। নতুন প্রজন্ম দেশের মূল জাতীয় দিবস, দেশের ইতিহাস ইত্যাদি নিয়ে সচেতন হচ্ছে এ ধরণের উৎযাপনের মধ্য দিয়ে – এটাই সাধারণে বিবেচ্য ধারণা। নিশ্চয়ই হচ্ছেও কিছুটা।
কিন্তু যখন দেখি, এই প্রজন্মের অনেকেই ‘স্বাধীনতা দিবস’ আর ‘বিজয় দিবস’ – এর পার্থক্য বোঝে না কিংবা ফেসবুকে/সেল ফোনে শুভেচ্ছা জানায় ‘শুভ ভাষা-শহীদ দিবস’ লিখে কিংবা ‘Hey dude, Happy Mother Language Day’ বলে তখন সত্যিই শঙ্কিত হই। নৈরাশ্যবাদে ভুগি যখন দেখি, যে ব্যাক্তি কয়দিন আগেও প্রোফাইল পিকচারে পাকিস্তানের (এবং ভারতের) পতাকার রং লাগাচ্ছে, সেই একই ব্যক্তি বিজয় দিবসে বাংলাদেশের পতাকার লাল-সবুজ মাখছে প্রোফাইলে। এর মানে হল, এই মানুষগুলোর জানার, দেখার, শেখার চৌহদ্দিটাতে বিশাল বড় গ্যাপ।
কিছুদিন আগে একজন প্রবীণ সাংবাদিকের সাথে কথা হচ্ছিল; উনি বলছিলেন – ‘Information(তথ্য) আর Knowledge(জ্ঞান) দুটো আলাদা জিনিস। তোমাদের এই প্রজন্ম Information-এ অনেক ভাল, নানা টেকনোলজি আছে তোমাদের Information জানার, কিন্তু তোমদের Knowledge(জ্ঞান)বাড়ছে কি?’ লাল-সবুজের এই ‘ফাঁপা-বাণিজ্যিক বিজয় উৎযাপন’ দেখে আমার সত্যিই মনে হয় আসলেই দেশ, দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ছে কি? সচেতনতা বাড়ছে কি?
এই প্রজন্ম চাঁপা-চামেলী ফুল না চিনলেও বিদেশি চেরি ফুল চেনে। এই প্রজন্ম হালখাতা না চিনলেও হ্যালোউইন চেনে। কারণ এখনকার প্রজন্মের নিউজের সোর্স ফেসবুক-টুইটার, এরা কখনো নিউজ পেপার পড়ে না, বই পড়ে না। তাই আমাদের স্বাধীনতা আর বিজয় দিবসে গুলিয়ে যায়, মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারে মিলে-মিশে যায়, সাম্প্রদায়িকতা আর অসাম্প্রদায়িকতার বোধ হারিয়ে যায়। তবুও প্রত্যাশা করি, একটা সুস্থ-সুন্দর প্রজন্ম বেড়ে উঠছে আমাদের ভবিষ্যৎটাকে আরও উপরে তুলে ধরবার জন্য।