একটা সময় আমার মনে হত পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় জিনিস বোধ হয় খবরের কাগজ, কত বিচিত্র সব খবরে ঠাসা থাকে প্রত্যেকটা পাতা। কিন্তু ইদানিং এই জায়গাটুকু খুব আনায়াসেই দখল করে নিয়েছে ফেসবুক। মিনিট ১৫ ফেসবুকের পাতায় ঘুরলেই আমার কাছে মনে হয় মানুষের সব রকমের আবেগের কথা জানা হয়ে গেল।
মানুষের কত বিচিত্র সব আবেগ, কত অনুভূতি, দুঃখ-আনন্দ, ভাল লাগা-মন্দ লাগা, স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন সব একই জায়গায়, এক মুহুর্তে পড়া হয়ে যায়। এমনটি আর কিছুতে মনে হয় না সম্ভব। নিউজফিডে চোখ বুলাতে বুলাতে দেখছি – কেউ হয়ত সব ভাললাগা এক করে প্রচণ্ড কোন সাফল্যের কথা জানাচ্ছে, কেউ হতাসায় ভেঙ্গে পড়ে কিছু না পাবার কথা লিখছে; যখন একজন তার মাকে জড়িয়ে ধরে ছুটির দিনের সকালের সেলফি শেয়ার করছে, ঠিক তখনি হয়ত আরেকজন দূরের তারা হয়ে যাওয়া মাকে ভেবে চোখ মুচ্ছে; কেউ সঙ্গিনীকে জড়িয়ে ধরা আদুরে ছবি দিয়ে প্রোফাইল সাজাচ্ছে, কেউবা ঝগড়া করে রাগে গজগজ করতে করতে স্ট্যাটাস দিচ্ছে ‘ভাল্লেগানা ছাতার সংসার’। আহা ফেসবুক!
কেউ লুচি-তরকারী দিয়ে সকালের নাস্তা সারছে তো, একই সময়ে অন্য কেউ হয়ত দুপুর বা রাতে মেক্সিকান বা চায়নিজ খাচ্ছে। কেউ বরফের স্তুপে দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে সেলফি তুলছে তো কেউ ঘামতে ঘামতে কাঁঠাল-পাকা গরমের কথা বলছে। কত বিচিত্র আমরা, কত বৈচিত্র্যময় আমাদের সব অনুভূতি – ফেসবুকের নিউজফিড, ফেসবুকের সার্ভার প্রত্যেকটা মুহূর্তে এরকম কতসব অনুভূতিতে ভরে উঠছে, উঠতে থাকবে। ফেসবুকের সবচেয়ে ভাল দিক অনুভূতির ভারে সে কখনো ভেঙ্গে পড়ে না। কিন্তু আমরা মানুষরা পড়ি। অন্য কারো অনুভূতি আমার মনের মত না হলে আমরা ভদ্র থেকে অভদ্র হই, স্বাভাবিকতা ছেড়ে অস্বাভাবিক হই আর সব শেষে, মানুষ থেকে অমানুষ হই। তাই একটু ভিন্ন চিন্তার মানুষ গুলো নিশ্চিহ্ন হয়, একটু ভিন্ন আবেগের (মতের) মানুষগুলো আবেগশূন্য-মৃত হয়। হতেই থাকে, থাকবে। ফেসবুক, তুমি আমাদের থেকেও অনেক বেশি শ্রেয়তর, অনেক বেশি সংবেদনশীল। আমরা হয়ত কোনদিনই তোমার মত হতে পারব না।