প্রশ্নঃ Pk যদি বাংলাদেশে বানানো হত, তবে এর নাম কী হত?
উত্তরঃ নাস্তিক ব্লগার।
কারণ কিছু না। ধর্ম নিয়ে বেসিক কিছু প্রশ্ন করায় আমির ভারতে pk উপাধি পেয়েছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাস্তিক ব্লগার উপাধি পাওয়াটাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত।
এইরকম স্ক্রিপ্টে বাংলাদেশে কোন সিনেমা কখনো মুক্তি পাবে কিনা সন্দেহ। কারণ তখন মূল ফোকাসটা থাকত ইসলামের ওপর। এবং আমরা তা মানতে পারতাম কিনা তা বিরাট একটা প্রশ্ন।
তবে এই সিনেমা ভারতে মুক্তি পাওয়ায় আমরা অনেকেই ব্যাপক খুশি। ‘হিন্দুধর্মের মত অবৈজ্ঞানিক ধর্মকে হেয় করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে’
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই কারণে pk দেখে খুশি। তারা মনে করছে এতে হিন্দু ধর্মকে কটাক্ষ করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ধর্মব্যবস্থাটার ওপরই যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা তারা এখনো বুঝে উঠতে পারেন নাই।
ভারত হিন্দুপ্রধান দেশ বিধায় হিন্দুধর্মের ওপর জোর বেশি আসছে, বাংলাদেশে এই মুভি তৈরি হলে নিশ্চয়ই ইসলামের বিভিন্ন আচার আচরণের উপর আলোকপাত করা হত। তখন কি আমাদের ধর্মানুভূতি কি intact থাকত? বলা মুশকিল।
কোন একদিন আমি আমার এক ফ্রেন্ডকে শুয়োর বলে গালি দিয়েছিলাম (গালি হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ ‘শুয়োর' )। আমার মুখ নাকি এতে নাপাক হয়ে গিয়েছিল ৪০ দিনের জন্য। হাদিসে নাকি এই কথা লেখা আছে।
তার মতে শুয়োর আর হ্যারি পটারের লর্ড ভোল্ডেমর্টের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। উভয়েরই নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ।
আমার বেশ কয়েকদিন লেগেছিল তাকে এটা বোঝতে যে শুয়োর বললে মুখ নাপাক হওয়ার কারণ নাই। যদি হয়ে থাকে, যে কোন গালি দিলেই মুখ নাপাক হওয়া উচিত- আল্লাহ নিজেই যদি নিজের সৃষ্টিকে (শুয়োরকে) এত অপছন্দ করেন, তাইলে ক্যামনে কী।
আর যদি এটা সত্য হয়েও থাকে, তাহলে এই হাদিস বর্ণনা করার সময় যারা বর্ণনা করেছেন, তাদেরও মুখ নাপাক হয়ে গেসিল যেহেতু তারা শুয়োর শব্দটা উচ্চারণ করসেন, যদি না তারা কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকেন (the animal who must not be named বা এই রকম কিছু)
“শুয়োর বললে যে মুখ নাপাক হয় না” এইটুকু মেনে নেয়াই তার জন্য অনেক কঠিন ছিল। কারণ ছোটকাল থেকেই আমরা ব্যাপারগুলোর সাথে এত অভ্যস্ত হয়ে যাই যে এই ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা চলে, এইটুকু আমরা মানতে পারি না। আর এইরকম সেনসিটিভ ইস্যুতে আড়াই ঘন্টার মুভি দেখা, যা আপনার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়, তা অকল্পনীয়।
যদি বাংলাদেশে এইরকম কোন সিনেমা বানানো হয় যেখানে ধর্মের বিভিন্ন আচার আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তাহলে কি আমরা সেটা সহ্য করতে পারব? মনে হয় না। তার ওপর কোন হিন্দু অভিনেতা যদি ইসলাম ধর্ম নিয়ে আড়াই ঘণ্টার সিনেমা বাদ দিই, ১০ মিনিটের একটা ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে, তার জীবন ঝুঁকির মধ্যে চলে যাবে না? আর মুসলিম কেউ হলে তাকে মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে হয়ত তার কাটা মুণ্ডুর জন্য পুরষ্কারও ঘোষণা হত।
যারা অনেক বেশি খুশি হয়েছেন সিনেমাটা দেখে এবং মনে করছেন যে এতে ইসলামকে মহিমান্বিত করা হয়েছে আর হিন্দুধর্মকে ছোট করা হয়েছে, তারা সিনেমাটা আরেকবার দেখেন।
“জন্মের পর কারো গায়েই হিন্দু মুসলিম সিল দেয়া থাকে না” এই ডায়লগটা তো সিনেমায় আছে। এখন কল্পনা করুন বাংলাদেশে আপনার কোন মুসলিম বন্ধু আপনাকে এই কথা বলছে। তখনও কি আপনি খুশি মনে তার কথা মেনে নিবেন? তখন কি আপনার ধর্মানুভূতি আহত হবে না?