somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুয়োর সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র (শুয়োর বলা কি হারাম?)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় গালি হল শুয়োর। কিন্তু আমার কয়েকজন বন্ধুকে আদর করেও শুয়োর বলা যায় না। এমন নয় যে, তারা গালিগালাজ পছন্দ করে না, বা অন্যদের গালি দেয় না। তবে শুয়োরের প্রতি তারা অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। তাদের শুয়োর ব্যতীত বিভিন্ন জন্তুর বাচ্চা বা তার পিতা মাতার চরিত্র সংক্রান্ত গালি দিলেও তারা এতটা সংক্ষুব্ধ হয় না, হতাশ হয় না।

কেন?

কারণ শুয়োর বলা হারাম। শুয়োর একবার উচ্চারণ করলে মুখ ৪০ দিন নাপাক থাকে। আমার দাদা বলেছে।

শুয়োর বললে কেন মুখ নাপাক হয়ে যায়?

কারণ, শুয়োর নাপাক প্রাণী। এরা ময়লা খায়।

আসলেই কি তাই? শুয়োর বলা কি আসলেই হারাম? গালি দেয়া নিঃসন্দেহে একটি খারাপ কাজ, সন্দেহ নেই। কিন্তু শুয়োর বলা হারাম হবে কেন?

প্রথম কথা হল, ছোটবেলা থেকে আমরা যা শুনে আসছি, তার প্রতি আমাদের এতটাই অগাধ বিশ্বাস জন্মায় যে, তা ভুল হতে পারে, এমনটা আমরা ভাবতেই পারি না।

এ কারণেই আমার এ লেখাটার অরণ্যে রোদন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বরং বন্ধুদের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে শুয়োর ব্যতীত অন্য সকল গালি বর্ষণের আশঙ্কা করছি। :P :P

তবু, নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে, দেশ ও জাতির একাংশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার জন্য আমি কলম হাতে ধরেছি :P :P

(এখন থেকে সিরিয়াস কথা......সবাই চুপ!!)

একটু বিশ্লেষণের চেষ্টা করা যাক। কোরান শরীফে কোন জিনিস হালাল আর কোনটি হারাম, তা স্পষ্ট লেখা আছে। এর বাইরে অন্য কোন দলিল যদি আলাদা ভাবে কোন কিছুকে হারাম বা হালাল করে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, হালাল হারাম মৌলিক একটি ব্যাপার। মৌলিক বিষয়গুলোর সমাধান কোরান শরীফেই আছে। কোরান ব্যতীত অন্য কোন দলিল এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
কোরান শরীফে হালাল হারাম সংক্রান্ত যে কটি আয়াত দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তা এখানে উল্লেখপূর্বক ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। (বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমানকৃত অনুবাদের সাহায্য নেয়া হয়েছে।)



সূরা বাকারা
হে মানবজাতি, পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য আছে, তা থেকে তোমরা আহার কর আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৮)

আল্লাহ তো তোমাদের জন্য শুধু মড়া, রক্ত, শূকরের মাংস ও যেসব জন্তুর ওপর (জবাই করার সময়) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম করা হয়ে থাকে, তা তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। তবে কেউ অবাধ্য না হয়ে ও সীমালঙ্ঘন না করে নিরুপায় হলে আল্লাহ তো আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৭৩)
যারা সুদ খায় তারা তো সেই লোকের মত দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। এ এজন্য যে তারা বলে, ‘বেচাকেনা তো সুদের মত’, অথচ আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল আর সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫)

এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে শুয়োরের মাংস হারাম, কিন্তু শুয়োর বলা হারাম, এমনটি লেখা নেই।

সূরা মায়িদা

তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত পশু, রক্ত ও শুকরমাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবাই করা পশু আর আর গলা চিপে মারা জন্তু, বাড়ি খাওয়া মরা জন্তু, শিঙের ঘায়ে মরা জন্তু ও হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু, তবে তোমরা যা জবাই করে পবিত্র করেছ তা ছাড়া। আর মূর্তিপূজার বেদির ওপর বলি দেওয়া আর তীর দিয়ে তোমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা, এসব অনাচার। আজ অবিশ্বাসীরা তোমাদের ধর্মের বিরোধিতা করতে সাহস করছে না, তাই তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের ওপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম। তবে কেউ যদি ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয় কিন্তু ইচ্ছা করে পাপের দিকে ঝুকে না, (তার জন্য) আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা মায়িদা, আয়াত ৩)

আজ তোমাদের জন্য সব ভালো জিনিস হালাল করা হল। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল আর তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাদের জন্য হালাল। এবং বিশ্বাসী, সচ্চরিত্র নারী তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, তাদের সচ্চরিত্র নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, যদি তোমরা তাদেরকে মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা উপপত্নী গ্রহণের জন্য নয়। যে কেউ বিশ্বাস করতে অস্বীকার করবে তার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা মায়িদা, আয়াত ৫)

হে বিশ্বাসীগণ, আল্লাহ তোমাদের জন্য যেসব জিনিস হালাল করেছেন, তাদেরকে হারাম করো না। আল্লাহ তো সীমাঅতিক্রমকারীদের ভালবাসেন না। আর আল্লাহ তোমাদের যে হালাল খাবার ও উত্তম জীবিকা দিয়েছেন তার থেকে খাও ও আল্লাহকে ভয় কর, যার ওপরে তোমরা সকলে বিশ্বাস কর। (সূরা মায়িদা আয়াত ৮৭, ৮৮)

এখানে ৮৭ নম্বর আয়াতটি মনোযোগের দাবি রাখে। আল্লাহ সীমাঅতিক্রমকারীদের ভালবাসেন না। শুধুমাত্র শুয়োরের মাংস হারাম করার পরে আমরা নিজেরা নিজেরা যদি শুয়োর বলা পর্যন্ত হারাম বানিয়ে ফেলি, এটি একদিক থেকে তো বাড়াবাড়িই।

সূরা আ’রাফ

বল, আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচার ও অসঙ্গত বিরোধিতাকে, আর কোন কিছুকে আল্লাহর শরিক করা যার সপক্ষে তিনি দলিল পাঠাননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের জ্ঞান নেই। (সূরা আ’রাফ, আয়াত ৩৩)

এই আয়াতটিও সবার মনোযোগের দাবি রাখে। প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে আল্লাহ হারাম করেছেন। আমার সংবেদনশীল মুসলমান বন্ধুদের অধিকাংশই কি এই কাজটি থেকে বিরত থাকতে পারেন বা পারবেন? বন্ধুদের মধ্যে দেখি অধিকাংশ সময় আশেপাশের পরিচিত মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে রসালো আলোচনা, হলিউড বলিউডের কোন তারকার কোন অঙ্গটি অতিরিক্ত সুন্দর বা কুৎসিত, সেই সাথে “অ্যাডাল্ট এন্টারটেইনমেন্ট” তারকাদের নিয়ে আলোচনা। তাদের পিসিতে থাকে ৫০ থেকে ১০০ গিগা অ্যাডাল্ট মুভি। যাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বেশি, ধরা খাওয়ার ভয় প্রবল, তাদের পিসি পরিষ্কার। কারণ, তারা দেখেই ডিলিট করে দেয়।
কিন্তু তারা দেখে :P :P

(শর্ত ভঙ্গ করে অ-সিরিয়াস কথা বলার জন্য দুঃখিত)

সূরা ইউনূস

বলো, তোমরা আমাকে বল, আল্লাহ তোমাদেরকে জীবনের যে উপকরণ দিয়েছেন, তোমরা যে তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এই অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করছ? (সূরা ইউনূস, আয়াত ৫৯)

আল্লাহ যা হারাম করেছেন, আমরা কি তা হালাল বানিয়ে ফেলছি না? একই সাথে, যা হালাল-হারাম কিছুই না, তাকে আমরা নিজেরা হারাম বানিয়ে ফেলছি না?

আমরা নিজেরা অ্যাডাল্ট মুভি দেখতে দ্বিধাবোধ করি না (যা হারাম), কিন্তু শুয়োর নামক নিরীহ প্রাণীদের প্রতি আমাদের মাত্রাতিরিক্ত ঘৃণা (যদিও শুয়োরের মাংস খেতেই শুধু নিষেধ করা হয়েছ, এর বেশি কিছু বলা হয়নি), আমরা এটাই ভুলে যাই যে শুয়োরও সৃষ্টিকর্তারই সৃষ্টি।

সূরা নাহল

আর তোমরা সেই মিথ্যা বলো না যা তোমাদের জিহবা বানায়, “এ হালাল আর ওটা হারাম”, যারা আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা বানায়, তারা সফলকাম হবে না। (সূরা নাহল, আয়াত ১১৬)

সবশেষে এই আয়াতটি যাতে আমরা সবাই মনে রাখতে পারি, সেই তৌফিক যেন আল্লাহ আমাদের দান করেন, এই কামনা করছি।




৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×