বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হারাম। এবং আমাদের আলেম ওলামারাও এই মতবাদে গোঁড়া বিশ্বাসী। কিন্তু আসলেই কি তাই?
“Don’t kill your children for fear of poverty; it is We who provide sustenance for them and you; verily killing them is a most heinous crime!” (Al-Isra’: 31).
অনেকে এই আয়াতের বর্ণনা দিয়ে বলতে চান ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? সন্তান হত্যা করা আর জন্মনিয়ন্ত্রণ করা কি এক কথা?
জন্মনিয়ন্ত্রণ মানে কোন একটি উপায়ে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মধ্যে মিলন ঘটতে না দেয়া। শুক্রাণু আর ডিম্বাণু মিলিত হলে তখনই না ধীরে ধীরে তা একটি মানবশিশুতে পরিণত হয়, এর আগে তো ডিম্বাণু আর শুক্রানুর আলাদা কোন জীবন নেই যে তাদের মিলিত হতে না দেয়া সন্তান হত্যা করার সমতুল্য হবে।
এছাড়াও আরব সমাজে একটা সময় মেয়ে শিশু হত্যার খুব বেশি প্রবণতা ছিল। সেই প্রবণতা রোধ করতেও এই আয়াতের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। কিন্তু কোনভাবেই এটি জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে নিষেধ করেছে বলে মনে হয় না।
এখন দেখা যাক জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ কী কী।
জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ
সার্জারির মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ
ভ্যাসেকটমি
এই পদ্ধতিতে পুরুষের “ভাস ডিফেরেন্স” কেটে ফেলা হয়। ফলে পুরুষের বীর্যপাত হলেও বীর্যে শুক্রাণু থাকে না।
হিস্টেরেকটমি
হিস্টেরেকটমিতে নারীর জরায়ু কেটে ফেলা হয় ফলে সন্তানধারণের কোন সম্ভাবনা থাকে না।
এই দুটি পদ্ধতি ইসলামে হারাম, কেননা এগুলো একপ্রকার অঙ্গহানি। বিনা কারণে অঙ্গহানি করতে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে।
মেডিকেল উপায়
এই পদ্ধতিতে নারীদেহের হরমোনাল পরিবর্তন সাধন করা হয় যার ফলে তার ডিম্বাণুগুলো সক্রিয় থাকে না, নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। পদ্ধতিটি অস্থায়ী বা স্থায়ী উভয়ই হতে পারে।
ইসলামী বিশেষজ্ঞরা এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে উৎসাহ দেননি যেহেতু এই পদ্ধতিও এক প্রকার শারীরিক পরিবর্তনই (হরমোনাল) সাধন করে থাকে। এছাড়া এই পদ্ধতি গ্রহণ সংক্রান্ত সরাসরি কোন হাদিস বা আয়াত নেই। তবে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা
যেতে পারে বলে মত দেয়া হয়েছে দুটি শর্তেঃ
১. যদি আবশ্যকতা থাকে (যেমন মেডিকেল কোন কারণে সন্তান গ্রহণ করা ঝুকিপূর্ণ হয়ে থাকে)
২. যদি স্বামী রাজি থাকে
ফিজিক্যাল উপায়
এই উপায়ে শারীরিক কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে শুধুমাত্র শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর মধ্যে মিলন রোধ করা হয়। যেমন কনডম ব্যবহার বা যোনির বাইরে বীর্যপাত করা (আজল) ইত্যাদি।
যোনির বাইরে বীর্যপাত বা আজল করা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। কারণ রাসুল (সঃ) এর সময় থেকেই সাহাবীরা আজল করে এসেছেন কিন্তু মহানবী তা করতে নিষেধ করেননি।
এই সংক্রান্ত হাদিসের দিকে নজর দেয়া যাক।
We used to engage in coitus interruptus at the time of the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him). News of that reached the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him), and he did not forbid us to do that.
(মুসলিম ও বুখারি)
“coitus interruptus” বলতে বোঝায় ‘আজল’ বা যোনির বাইরে বীর্যপাত করানোকে।
আজল করা আর কনডম ব্যবহার করার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কনডম সামান্য উন্নত প্রযুক্তি, এই যা। কিন্তু দুটিরই মূলনীতি এক। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনে বাধা দেয়া।
এছাড়া আরেকটি হাদিসে এসেছে,
O Messenger of Allaah, I have a slave woman and I engage in ‘azl with her, because I do not want her to get pregnant, but I want what men want. But the Jews say that ‘azl is a lesser form of infanticide.” He said, “The Jews are lying. If Allaah wants to create (a child) you cannot prevent that.
(আবু দাউদ কর্তৃক বর্ণিত)
হাদিসটির এই অংশের দিকে মনোনিবেশ করুন,
If Allaah wants to create (a child) you cannot prevent that.
মহানবী সরাসরি বলেছেন, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন জন্মনিয়ন্ত্রণের, যার জন্মানোর কথা, সে অবশ্যই জন্মাবে। আমরা চাইলেও তা রোধ করতে পারব না। এর অর্থ কি কোনভাবে এই হয় যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হারাম? আমার তো মনে হয় না। অন্য কেউ কি আমাকে একটা হাদিস বা আয়াত দেখাতে পারবেন যেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হারাম বলা হয়েছে?
আজল করা যদি হারাম না হয়, তবে কনডম ব্যবহার করে জন্মনিয়ন্ত্রণ কি হারাম হবে?
আর আজল নিশ্চয়ই জন্মনিয়ন্ত্রণ করারই একটি পদ্ধতি ছিল। সেই সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক ব্যবস্থা থাকলে নিশ্চয়ই সবাই সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করত। এটা যদি নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে, তবে অন্যান্য ফিজিক্যাল উপায়গুলো নিষিদ্ধ হবে কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩