আজ আম্মু আলু ভর্তা বানিয়েছে দুপুরে। সাথে বেগুন ভাজা। এই অসাধারণ দুটো খাবার খেতে পারলাম না ঠিকমত টনসিলের জ্বালায়। ঢোঁকই গিলতে পারছিনা ঠিকমত, খাওয়া তো দূরের কথা।
টনসিল সাহেবের সাথে প্রথম পরিচয় ক্লাস সিক্সে থাকতে। আগে জানতাম বেশি আইসক্রিম খেলে টনসিল হয়। কিন্তু আমার টনসিল হল ভিন্ন কারণে। বিকালে খেলার পর সমস্ত ঘাম শরীরেই শুকিয়ে যেত। কারণ বাসায় এসেই খাটের উপর চিত হয়ে শুয়ে পড়তাম ফুল স্পিডে ফ্যানটা ছেড়ে। একদিন হঠাৎ করেই জ্বর আর গলা ব্যথা হওয়ায় ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি এই কথা বললেন।
ওষুধ খেয়ে ঠিক হয়ে গেলাম। সব ভুলেও গেলাম। কিন্তু পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আরও দুই বার টনসিল ফোলায় হুঁশ ফিরল। নিষিদ্ধ হল ঘামা শরীর নিয়ে ফ্যানের নিচে শোওয়া আর রুমাল হল সব সময়ের সঙ্গী। একটু ঘামলেই তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতাম। বিশেষ করে গলায় ঘাম জমতেই দিতাম না। আমার ধারণা ছিল ঐখানে ঘাম জমতে দেয়াই যাবে না, কারণ টনসিল তো গলার ঠিক নিচেই!
এক বছর কাটল। তারপর আবার টনসিল। এবার ডাক্তার বলল লক্ষ্মণ খারাপ। কদিন পরপর টনসিল হলে এটা কেটে ফেলাই উত্তম। শুরু হল আমাকে ভয় দেখানো- টনসিল কাটার সময় অজ্ঞান করে না, মুখ হা করিয়ে নাকি টেনে বের করে আনে। কয়েক সপ্তাহ নাকি খাওয়া দাওয়া বন্ধ রাখতে হয়। টনসিল কাটার পর নাকি সবাই অস্ট্রেলিয়ান গরুর মত মোটা হতে থাকে আরও কত কী যে বলেছিল। স্বাভাবিকভাবেই ভয় পাওয়া শুরু করলাম। আম্মু আল্টিমেটাম দিল এর পর টনসিল হলেই টনসিল কেটে ফেলা হবে।
এই আল্টিমেটাম পেয়ে আরও ঘাবড়ে গেলাম। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই একটা ঢোঁক গিলতাম। ঢোঁক গিলতে ব্যথা হওয়ার অর্থই টনসিল ফুলেছে। ভয়ে ভয়ে থাকতাম কোনদিন না যেন ঢোঁক গিলতে ব্যথা হবে আর পরদিনই টনসিল কাটবে। তখন তিনদিন পর পর গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুল কুচা করতাম। এতসব করার পর টনসিল আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে আমাকে ছেড়ে দিল।
সুদীর্ঘ ছয় বছর পর গত পরশু টনসিল সাহেব আবার ফিরেছেন। সকালে ঢোঁক গেলার অভ্যাস এখনো রয়ে যাওয়ায় ঘুম ভাঙ্গার পরপরই বুঝতে পেরেছি তিনি এসেছেন।
দুদিন হয়ে গেল যাওয়ার কোন নামগন্ধ পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত আম্মুকে বলিনি সাহেবের আগমনের খবর। লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করে ঠেকানোর চেষ্টা করছি। তবে মনে হচ্ছে উনি দেড় দুই সপ্তাহ থাকার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছেন। ঠিকমত আপ্যায়ন না করলে (ডাক্তার না দেখালে) তিনি যাবেন না বলেই মনস্থির করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩৩