ফেসবুকে “অই ছেড়ি ওড়না গলায় না, বুকে দে কামে দিব” টাইপের পেজ খুবই জনপ্রিয়। আরো কয়েকটা পেজ দেখলাম এই টাইপের। যেমন “উল্টাপাল্টা ড্রেস পরিহিত নারীদের ইভ টিজিং করার সুযোগ করে দেয়া হোক” বা “উত্ত্যক্ত হওয়া বেহায়া মেয়েদের মৌলিক অধিকার, আসুন তাদের অধিকার সংরক্ষণ করি” এসকল পেজের কর্মকাণ্ড পর্ণ সাইটের চেয়ে খুব উন্নত কিছু নয়। বিশেষ করে “অই ছেড়ি......” পেজটিতে পোস্টকৃত ছবি গুলো আর তার কমেন্ট গুলো দেখলে সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকে না। এই সকল পেজের সমর্থনকারী লোকের সংখ্যাও কম নয়। অই ছেড়ি...র প্রায় ১০ হাজার, উল্টাপাল্টা......য় ৫ হাজারের বেশি, আর বেহায়া...... তে প্রায় ৩ হাজার মানুষ সমর্থন জানিয়েছে।
এদের সকলের কথা প্রায় একই। মেয়েরা ইসলামী আইন মানে না, পরদা করে না। আমরা কেন তাহলে তাদের হয়রানি করব না। এটা আমাদের দায়িত্ব। আমি আরো অবাক হই যখন সহপাঠীদের মধ্যেও প্রায় একই মানসিকতা দেখি। এক সহপাঠী বলছিল ইভ টিজিং (যৌন হয়রানি) এর জন্য মেয়েরাই দায়ী, কেননা তার ইসলামী আইন মানে না।
এইসকল পেজের ইনফো বা তথ্যে যা কিছুই লেখা থাকুক না কেন তাদের মূল কথা একটাই, “আমরা রাস্তায় নারীদের দেখলে নিজেদের কন্ট্রোল করতে পারি না, আমাদের পশুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে” কিন্তু নিজেদের সাফাই গাওয়ার জন্য তারা বলে, ওই মেয়েদের ওড়না বুকে থাকে না, তারা নির্লজ্জ, নির্লজ্জ মেয়েদের তো উত্ত্যক্ত করতেই হবে, এটা সবার দায়িত্ব। নিজেদের দিকে তারা একবারও তাকায় না, নিজেদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে না। একজন মানুষকে তার পোশাক আশাকের জন্য, তার জীবনাচরণের জন্য অশ্লীল, কটূ কথা বলার অধিকার কে তাদের দিয়েছে? এদের অধিকাংশই নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে। এবং তারা সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করতে চায়। ওই মেয়েরা পর্দা মানে না বলে তাদের হয়রানি করতে হবে, এ বিষয়ে তারা একমত। ইসলামে কি বলা আছে, কোন মেয়ে যদি পর্দা মেনে না চলে তবে তার দেহের গঠন সম্বন্ধে অশ্লীল মন্তব্য কর? তার বুকে ওড়না না থাকলে তার স্তনের গড়ন নিয়ে কথা বল? তার নিতম্ব দেখে বল যে “খাসা মাল”? ইসলাম কি তাদের সেই অধিকার দিয়েছে? ওই নোংরা কাপুরুষগুলো এর চেয়েও ঘৃণ্য মন্তব্য করে এবং মন্তব্য করা তারা নিজেদের মৌলিক অধিকার বলে দাবি করে। সুযোগ পেলে মার্কেটে বা অন্য কোন জনাকীর্ণ স্থানে মেয়েদের শরীরে হাত দিতেও তাদের বাধে না। কারণ সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করতে হলে রাস্তাঘাটে মেয়েদের শরীরে হাত দিতে হবে।
তাদের বেশীরভাগই নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না। কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তারা নিজেদের জান কোরবান করতে প্রস্তুত। পরিষ্কার করে বললে নিজেদের তৈরি করা পর্দাপ্রথা প্রচলনে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী মেয়েরা বোরকা পরবে, আর পুরুষেরা লক্ষ্য রাখবে তারা ঠিকমত কাপড় পরেছে কিনা। একটু এদিক ওদিক হলেই তাদের শাস্তি হবে।
ইসলামে নারী পুরুষ উভয়কে পর্দা মেনে চলতে বলা হয়েছে। শুধুমাত্র নারীদের জন্য পর্দা নয়। সুরা নূরের ৩০ নং আয়াতে বলা আছে পুরুষরা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। পরের আয়াতে বলা আছে, নারীরা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। এখানে পুরুষের প্রতি নির্দেশ এসেছে আগে, এর অর্থ কি এই না যে পুরুষদের নিজেকে সংযত রাখা অধিক গুরুত্বপূর্ণ? পুরুষরা কি সেই কাজটি করেন? রাস্তায় দূর থেকে কোন মেয়ে দেখলেই হল, তার দিকে চেয়ে থাকা বেশীরভাগ পুরুষের কাজ। আর তাদের চোখ তো চোখ নয়, স্ক্যান মেশিন, মেয়েদের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তারা তাদের চোখ দিয়ে স্ক্যান করেন। ইসলাম কি পুরুষকে এই অধিকার দিয়েছে? বলা হয়েছে, পুরুষরা যেন তাদের যৌনাঙ্গ হেফাজত করে। এর অর্থ কু প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সকল পন্থা যেমন ব্যভিচার, মৈথুন থেকে নিজেদের বিরত রাখা। এসকল গ্রুপের একটিমাত্র সদস্যও যদি বলে যে সে নিয়মিত মৈথুন করে না, তবে আমার উপর যেন আল্লাহর গজব নাজিল হয়।
কামপ্রবৃত্তির প্রথম কারণ দৃষ্টিপাত এবং শেষ পরিণতি ব্যভিচার। ব্যভিচার ইসলামে হারাম। আর নিজেদের দৃষ্টিও সংযত রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দুটিকেই হারাম করে দেয়া হয়েছে। ফলে এই দুয়ের মধ্যবর্তী সকলকিছুই হারাম। যৌন উত্তেজক কথাবার্তা, কিংবা স্পর্শও হারাম। সেই অর্থে নারীর প্রতি অশালীন মন্তব্য ও যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করা কি হারাম নয়? নাকি এটি ইসলাম রক্ষার হাতিয়ার?
ইচ্ছাকৃত কোন নারীর দিকে দৃষ্টিপাত করা নাজায়েজ। হযরত আলি (রা) বর্ণিত হাদিস অনুসারে, “প্রথম দৃষ্টি মাফ, দ্বিতীয় দৃষ্টি গোনাহ”
অন্য একটি হাদিসে আছে, “বেগানা নারীর প্রতি বদ নিয়তে তাকানো হারাম, বিনা নিয়তে তাকানো মাকরূহ” যেখানে নারীর প্রতি দৃষ্টি দিতেও নিষেধ করা আছে সেখানে কোন সাহসে তারা নারীদের বুকের ওড়না আছে কি নাই সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়?
এটি সত্য যে দৃষ্টি চলে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু নিজেদের সংযত রাখতে পারাই প্রকৃত ঈমানের পরিচায়ক। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দৃষ্টিপাত শয়তানের একটি বিশাক্ত শর। যে ব্যক্তি মনের চাহিদা সত্ত্বেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, আমি তার পরিবর্তে তাকে দান করব সুদৃঢ় ঈমান যার মিষ্টতা সে অন্তরে অনুভব করবে” দেখলাম, মন্তব্যও করলাম, সুযোগ পেলে মেয়েদের শরীরে হাত দিয়ে নিজের কামপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করলাম আর নিজেকে দাবি করি মুসলমান হিসেবে- এর চেয়ে বড় কপটতা (মুনাফিকি) আর কী হতে পারে?
বউ আমার ভার্জিন হতেই হবে- কয়েকজন ধর্মপ্রাণ(??) মুসলিমের সাথে আলাপ
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৩৯