কথাটা প্রথম শুনেছিলাম মুহাম্মদ জাফর ইকবালের মুখে, সময় টিভির ‘সরাসরিঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছিলেন মানুষের জরার জন্য দায়ী ক্রোমোসমের অভ্যন্তরে এক কোণায় থাকা নির্দিষ্ট একটি বস্তু যাকে বলে টেলোমার। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই কণিকাগুলোর আকার ছোট হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন একে নিয়ে। কোনভাবে যদি এর আকার হ্রাস পাওয়ার হার কমানো যায়, তবে মানুষ আরো বেশিদিন বাঁচবে।
একই কথা পড়লাম হুমায়ুন আহমেদের সর্বশেষ বই রঙপেন্সিল এ। তিনি লিখেছেন,
“এখন বলা হচ্ছে মৃত্যুঘড়ি বা মৃত্যুঘণ্টা বলে কিছু নেই। মানবদেহ অতি অসাধারণ এক যন্ত্র। যন্ত্রের দিকে খেয়াল রাখলেই জরা আমাদের গ্রাস করবে না। বায়োলজিস্টরা এখন বলছেন, জরার মূল কারন টেলোমারস কনিকাগুচ্ছ। এরা ডি এন এ র অংশ, থাকে ক্রমোসমের শেষ প্রান্তে। যখনই কোন জৈবকোষ ভাঙে, টেলমারের আকার ছোট হতে থাকে। যখন জৈবকোষে আর কোন টেলমার থাকে না, তখন শুরু হয় জরা। আমরা ধিরে ধীরে মৃত্যুর দিকে আগুতে থাকি।
বায়লজিস্টরা পরীক্ষা করেছেন ইঁদুর নিয়ে। তাদের দেয়া হল টেলমারেজ (telomerase) এনজাইম। দেখা গেল, তাদের জরা প্রক্রিয়াই যে বন্ধ হল তা না, তারা ফিরতে লাগল যৌবনের দিকে।
.....................................................................................................................................................................
তারপর, একী! সত্যি কি মৃত্যুকে ঠেকানো যাচ্ছে? আমার হাতে টাইম পত্রিকার একটি সংখ্যা (ফেব্রুয়ারি, ২০১১)। প্রচ্ছদ কাহিনীঃ 2045, the year man becomes immortal. প্রচ্ছদ কাহিনী পরে জানলাম ২০৪৫ সালে মানুষ অমর হয়ে যাচ্ছে। মানুষের হাতে আসছে নতুন নতুন টেকনোলজি। টেকনোলজির বৃদ্ধি ঘটছে এক্সপোনেনশিয়ালি। ২০৪৫ এর কাছকাছি সময়ে মানুষ সিঙ্গুলারিটি তে পৌঁছাবে। সিঙ্গুলারিটি শব্দটি এসেছে Astro physics থেকে। এর অর্থ এমন এক বিন্দু যেখানে পদার্থবিদ্যার সাধারণ সূত্র কাজ করবে না। এর মানেই অমরত্ব। ২০৪৫ সাল পর্যন্ত আমি এমনিই টিকছি না। অমরত্ব পাওয়া এই জীবনে আর হল না। পৃথিবীতে ফিনকি ফোটা জোছনা আসবে। শ্রাবণ মাসে টিনের চালে বৃষ্টির সেতার বাজবে। সেই অপূর্ব অলৌকিক সংগীত শনার জন্য আমি থাকব না। কোন মানে হয়?”
টেলোমারকে তুলনা করা হয় জুতার ফিতার শেষপ্রান্তে থাকা প্লাস্টিকের সাথে। কারণ এরা এক ক্রোমোসমের সাথে আরেক ক্রোমোসমের ধাক্কাধাক্কি আর একসাথে লেগে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। টেলোমার না থাকলে ক্রোমোসমের এক প্রান্ত অন্য ক্রোমোসমের এক প্রান্তের সাথে মিলে যেত, ক্ষতি করত কোষের genetic blueprint এর। ফলে কোষের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেত, ক্যান্সারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেত।
কিন্তু কোষ বিভাজনের সাথে সাথে টেলমারের দৈর্ঘ্যও ছোট হতে থাকে, যখন তারা বেশি ছোট হয়ে যায়, তখন অই কোষ আর বিভাজিত হতে পারে না। এর নির্মম পরিণতি ওই কোষের ‘মৃত্যু’। আর বৃহৎ অর্থে, ওই প্রাণী মৃত্যুর দিকে এগুতে থাকে টেলমারের ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে।
টেলমারের দৈর্ঘ্য হ্রাস রোধ করা গেলে কোষের জীবনকাল বাড়বে, এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রাণীর জীবনকালও বেড়ে যাবে।