মৃত্যুর আগে চে গেভারা হত্যাকারীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন 'আমি জানি, তুমি আমাকে মারতে এসেছ। গুলি কর, কাপুরুষ! তুমি তো শুধু একজন মানুষকেই মারবে।'
আর কর্ণেল আবু তাহের বীরউত্তম বলেছিলেন 'আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত। আমাকে হত্যা করতে হলে পুরো জাতিকে হত্যা করতে হবে। কোন শক্তি কি তা করতে পারে?'
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বছরের রাজনৈতিক, সামাজিক আর অর্থনৈতিক অবস্থা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাম্যবাদী মনভাবের মানুষের প্রেক্ষাপটে বর্ণনা রয়েছে বইটায়। লেখক সাবলীলভাবে লিখে গেছেন সবকিছু। কর্ণেল তাহের বীরউত্তমের পরিবারপরিজন, তাঁর রাজনীতির পেছনে বাবা-মা এবং ভাইবোনদের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন দেশের প্রথম সরকারব্যবস্থা, সরকারের দায়িত্বশীলতার অভাব, দুর্নীতি, পরের সরকারব্যবস্থার বৈধতার প্রশ্নকে সবার কাছে স্পষ্ট করেছেন তিনি। ফুটে উঠেছে দুর্নীতিগ্রস্থ একটা দেশে সাম্য প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ চেষ্টা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান, একটি প্রহসনের বিচার এবং তার ফলাফল। বইটা প্রকৃতপক্ষে শুধু একজন বিপ্লবী মানুষের সারাটা জীবনের বিপ্লবকে প্রকাশ করে নি, এর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে সমগ্র জাতির স্বপ্ন, একটা দেশের জন্মলগ্ন থেকে শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষের আকাঙখা যদিও আমার কাছে মনে হয়েছে লেখক এদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি কেন প্রয়োজন সেটাই তুলে ধরেছেন, তবুও নিরপেক্ষ লেখা মনে হয়েছে আমার কাছে। যাদের রাজনীতি, এদেশের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ আছে, তাদের জন্য অসাধারণ একটি বই। সেইসাথে একজন বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারি মানুষের পরিপূর্ণ একটি বায়োগ্রাফি।
পরিশেষে এটাই বলব, বাংলাদেশ তার জন্মের পর থেকে অসংখ্য গুণী মানুষকে অপমান করেছে, ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এখনো চলছে এমন।
হয়ত একদিন এর ফলাফল পাব আমরা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১০