রাসূল (সাঃ) কর্তৃক সরাসরি পরিচালিত তাহা হল ‘গাযওয়া’। আর রাসূল (সাঃ) কর্তৃক প্রেরিত তাহা হল ‘সারিয়া’। নবী জীবনের ২৯টি গাযওয়াঃ
১। গাযওয়ায়ে ওয়াদ্দানঃ
২য় হিজরী সফর মাসের সংঘটিত হয়। ৭০ জন মুহাজিরসহ নবী করীম (সাঃ) ‘ওয়াদ্দান’ নামক স্থানে বনী জামরার উদ্দেশ্যে এ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে সংঘর্ষের পরিবর্তে সন্ধি হয়। এতে ১৫ রাত অতিবাহিত হয়। এর অপর নাম ‘আবওয়া’
২। গাযওয়ায়ে বুওয়াতঃ
হিজরী ২য় সনে রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম ভাগে ২০০ মুহাজিরের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে এ গাযওয়া হয়। শত্র“ সংখ্যা ২০০ এবং ২৫০টি উট ছিল। কোন সংঘর্ষ হয়নি।
৩। গাযওয়ায়ে সাফওয়ানঃ
বুওয়াতের কদিন পরেই কুরয বিন জাবের যোহরী চরণভূমি আক্রমণ করলে নবী করীম (সাঃ) এর সেনাপতিতে মুহাজিরগণ তাদের দমনার্থে রওয়ানা করলে তারা পালিয়ে যায়। রাসূল (সাঃ) বদরের যাহাওয়াল ওয়াদী পর্যন্ত অগ্রসর হন।
৪। গাযওয়ায়ে ওশায়রাঃ
হিজরী ২য় সনের জমাদিউল আউয়াল মাসে আবু সুফিয়ানের সিরিয়ার পথ রুদ্ধ করতে রাসূল (সাঃ) ২০০ মুহাজিরসহ অভিযান চালান। তারা সিরিয়ার অস্ত্র ক্রয় করার জন্য অন্য পথ ধরে চলে গেলে নবী করীম (সাঃ) ওশায়রা নামক স্থানে জামাদিউস সানী মাস পর্যন্ত স্বসৈন্য অপো করেন।
৫। গাযওয়ায়ে বদরঃ
হিজরী ২য় সনের ১৭ই রমজান ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ এ গাযওয়ার সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। মুহাজির ৬৪ এবং আনসার ২৪৯ জন ছিলেন। ৭০টি উট ও ২টি ঘোড়া। শত্র“ সৈন্যের সংখ্যা ছিল ১০০০। তাদের যুদ্ধাপরাধের কারনও ছিল অনেক বেশী। যুদ্ধে মুজাহিদরা আবু জাহেলসহ ৭০জন কাফেরকে হত্যা, ৭০জনকে বন্দি করে বিজয় লাভ করেন। ১৪জন মুজাহিদ শহীদ হন।
৬। গাযওয়ায়ে বনী সুলাইমঃ
বদর থেকে ফিরে এসে নবী করীম (সাঃ) বনী সুলাইমের গাযওয়ায় যান। তিন দিন অবস্থান করে স্বসৈন্যে ফিরে আসেন। শত্র“ প পালিয়ে যায়।
৭। গাযওয়ায় কাইনুকাঃ
বদর যুদ্ধের পর থেকে কাইনুকা নামক মদীনার ইয়াহুদী গোত্র মদীনা সনদ ভঙ্গ করে এবং একজন মুসলমানকে হত্যা করে। তাদের বিরুদ্ধে ২য় হিজরীর ১৫ই শাওয়ালে এক অভিযান চালানো হয়। তাদের দূর্গগুলোকে ১৫ রাত অবরোধ করে রাখা হয়। তাদের সংখ্যা ছিল ৭০০। তারা আত্মসমর্পন করে সিরিয়ায় বসতি স্থাপন করে।
৮। গাযওয়ায় সাবীকঃ
বদর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আবু সুফিয়ান ২০০ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমন করে কয়েকটি খেজুর বাগান জালিয়ে হযরত সা’দ (রাঃ) নামে এক আনসারীকে শহীদ করলে রাসূল (সাঃ) ২য় হিজরীর জিলক্বদ মাসে অভিযান চালান। আনসার ও মুহাজির ছিল ২০০। খবর পেয়ে শত্র“ প পালিয়ে যায়।
৯। গাযওয়ায় কারকারাতুল কুদুরঃ
২০০ মুজাহিদ নিয়ে হুজুর (সাঃ) এ অভিযান পরিচালনা করেন।
১০। গাযওয়ায় গাতফানঃ
হিজরী ৩য় সনের রবিউল আউয়াল মাসে গাতফান গোত্রের বনী সালাবা ও বনী মাহারিবের বিরুদ্ধে ৪৫০ জন মুজাহিদ নিয়ে মদীনা অঞ্চলের উপদ্রব দমনের জন্য এক অভিযান চালান। এতে শত্র“ প পালিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নেয়।
১১। গাযওয়ায় বাহারানঃ
বনী সুলাইম অভিযানের জন্য বিরাট সৈন্য বাহিনী প্রস্তুত করে; সংবাদ পেয়ে রাসূল (সাঃ) ৩০০ সাহাবীর সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে হিজরী ৩য় সনের ৬ই জমাদিউল আউয়াল শত্র“র বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তারা পালিয়ে যায়।
১২। গাযওয়ায় ওহুদঃ
৩য় হিজরী সনের শাওয়াল মাসের ১১ তারিখ বদরের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য কাফির মুশরিকরা ৩,০০০ সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণ করলে রাসূল (সাঃ) ৭০০ মুজাহিদ নিয়ে তাদের প্রতিহত করতে ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নেন। পাহাড়কে কেন্দ্র করে ৫০ জন তীরন্দাজ নিয়োগ করলে এ যুদ্ধে হামযা (রাঃ) সহ ৭০ জন মুজাহিদ শহীদ হয়। এ যুদ্ধে মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয় হলেও প্রথমে মুসলমানরা বিজয় হয়েছিল।
১৩। গাযওয়ায় হামরাউল আসাদঃ
আবু সুফিয়ান মদীনা আক্রমণ করেছে শুনে রাসূল (সাঃ) ৭০ জন মুজাহিদ নিয়ে বাহরাইনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে ৮ মাইল দূরে হামরাউল আসাদে তাবু তাবু গাড়ে। খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়।
১৪। গাযওয়ায় বনু নজীরঃ
৪র্থ হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাসে এ অভিযান পরিচালিত হয়। বনু নজীর গোত্র মদীনা সনদ ভঁঙ্গ করে ধ্বংসাত্বক কার্য কলাপে অবতীর্ণ হয়। নবী করীম (সাঃ) কে দাওয়াত দিয়ে হত্যার চেষ্টাও করে। কয়েকজন সাহাবা নিয়ে তিনি তাদেরকে ১৫ দিন অবরোধ করে রাখেন। পরে তারা মদীনা ছেড়ে চলে যাবে এ মর্মে আত্মসর্মপন করে।
১৫। গাযওয়ায় বদরুল আযীরঃ
হিজরী ৪র্থ সনের শা’বান মতান্তরে যিলকদ মাসের ঘটনা। নবী করীম (সাঃ) এর এটা বদর এর ২য় অভিযান। ওহুদ প্রান্তরের পরাজয়ের বদলা নেয়ার জন্য আবু সুফিয়ান ২০০০ সৈন্য ও ৫০টি অশ্ব নিয়ে মদীনা আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছে- এ খবর শুনে নবী (সাঃ) ১৫০ জন মুজাহিদ ও ১০টি অশ্ব নিয়ে তাদের গতিরোধ করতে বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন, পরে শত্র“ প খবর পেয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার সাহস পায়নি। তারা মক্কায় ফিরে যায় আর রাসূল (সাঃ)-ও মদীনায় ফিরে আসেন।
১৬। গাযওয়ায়ে যতুর রিকাঃ
আম্মার ও সালাবা গোত্রের লোকেরা মদীনা আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে। এই মর্মে হিজরী ৫ম সনের মুহাররম মাসে হুজুর (সঃ) এর নিকট খবর আসে। তাই ১০ই মুহাররম তিনি ৪০০ মুজাহিদ নিয়ে বেরিয়ে পড়লে শত্র“ প ভয়ে পালিয়ে যায়।
১৭। গাযওয়ায়ে দুমাতুল জানদালঃ
দুমাতুল জানদালের খ্রিস্টান বেদুইনরা মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকা লুটপাট আরম্ভ করে মদীনা আক্রমনের জন্য সমবেত হলে ৫ম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে রাসূল (সাঃ) ১০০০ মুজাহিদ নিয়ে অগ্রসর হলে তারা পালিয়ে যায়।
১৮। গাযওয়ায়ে বনু মুস্তালিকঃ
ইহাকে মুরায়সী যুদ্ধও বলা হয়। মদীনার ৮ মঞ্জিল দূরে অবস্থিত মুরায়সী নামক স্থানের বাসিন্দা বনু মুস্তালিক স¤প্রদায় মদীনা আক্রমণের জন্য সৈন্য বাহিনী গঠন করেছে- এ খবর পেয়ে নবী করীম (সাঃ) হযরত যায়েদ ইবনে খুযাইরা (রাঃ) কে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঠান এবং তিনি সত্য বলে রিপোর্ট করেন। তাই হিজরী ৫ম সনের শা’বান মাসের ১ম সপ্তাহে রাসূল (সাঃ) মুরায়সীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে শত্র“ নেতা হারিস পালিয়ে যায়। অন্যরা তীর ছুড়তে থাকলে মুজাহিদ বাহিনীর তীরের আঘাতে দিশেহারা হয়ে পালিয়ে যায়। তাদের ১০ জন মারা যায় এবং ৬০০ জন বন্দি হয়। এই যুদ্ধেই হযরত আয়শা সম্পর্কে কুৎসা রটনা করলে সূরা নূরের ১১-২০ আয়াত নাযিল হয়ে সন্দেহ দূর করা হয়।
১৯। গাযওয়ায়ে আহযাব বা খন্দকঃ
হিজরী ৫ম সনের জিলকদ মাসে কাফেররা ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণ করলে নবী করীম (সাঃ) তাদের প্রতিরোধকল্পে হযরত সালমান ফারসীর (রাঃ) পরামর্শক্রমে মদীনা শরীফের অরতি দিকে পরিখা খনন করেন। এটির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় দেড় মাইল, প্রস্থ ছিল ৭-১০ হাত এবং গভীরতা ছিল ৯/১০ হাত। এটি খনন করতে ৩০০০ মুজাহিদের ২০ দিন সময় লাগে। কাফেররা মদীনা আক্রমণ করলেও পরিখা পাড়ি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় এক মাস অবস্থান করে অস্ত্রশস্ত্র রেখে পালিয়ে যায়।
২০। গাযওয়ায়ে বনু কুরায়যাঃ
খন্দক থেকে ফিরে এসে নবী করীম (সাঃ) মদীনা সনদ ভঁঙ্গকারী বনু কুরায়যার দূর্গ অবরোধ করেন। ২৫ দিন পর তারা বশ্যতা স্বীকার করে।
২১। গাযওয়ায়ে গাবা বা জিকারাদাঃ
গাবা মদীনা শরীফের অদূরে একটি স্থানের নাম। আর জিকারাদ একটি পুকুরের নাম। ৬ হিজরী সনে উমাইয়া গোত্র এখানে চরণরত হুজুর (সাঃ) এর ২০টি উট লুট করে নিয়ে যায় এবং তত্ত্বাবধায়ক হযরত আযর (রাঃ) এর পুত্রকে হত্যা করে। হুজুর (সাঃ) কয়েকজন সাহাবাসহ তাদের ধাওয়া করলে তারা উটগুলো রেখেই পালিয়ে যায়।
২৩। গাযওয়ায়ে বন লেহইয়াঃ
হিজরী ৬ সনে বনূ লেহইয়ানের বিরুদ্ধে একটি অভিযানে বের হন। শত্র“রা এ খবর শুনে পাবর্ত্য এলাকায় পালিয়ে যায়।
২৪। গাযওয়ায়ে হুদায়বিয়াঃ
এটি হিজরী ৬ষ্ঠ সনের ঘটনা।
২৪। গাযওয়ায়ে খাইবারঃ
হিজরী ৭ম সনের জিলহজ্জ মাসে হুজুর (সাঃ) খাইবারের ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে ২৪০০ পদাতিক এবং ২০০ অশ্বারোহী মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। ইয়াহুদীরা সুরতি দূর্গে অবস্থান নেয়। তাদের ৭টি দূর্গ একে একে বিজিত হয়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত অজেয় কানুস দূর্গটি হযরত আলীর হাতে পতন ঘটলে হুজুর (সাঃ) তাকে “আসাদুল্লাহ” উপাধি দেন। এ যুদ্ধে ৯৩ জন ইয়াহুদী নিহত এবং ১৫ জন মুজাহিদ শহীদ হন।
২৫। গাযওয়ায়ে ওয়াদিল কুরাঃ
এটা খায়বারের ঘটনা। ওয়াদিল কুবায় হুজুর (সাঃ) ও মুজাহিদরা আসলে ইয়াহুদীরা তাদের প্রতি তীর নিপে করে। পরে তারা পরাজিত হয়।
২৬। ফাতহে মক্কা বা মক্কা বিজয়ঃ
এটা ৮ম হিজরীর ১০ তারিখের ঘটনা। যাহা রক্তপাতহীন যুদ্ধ। তবে পর পর ২৭ জনের মত নিহত হয়।
২৭। গাযওয়ায়ে হুনাইনঃ
মক্কা বিজয়ের পর ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসের ১০ তারিখে হুজুর (সাঃ) এই মর্মে খবর পান যে, কাফেরদের একটি দল হাওয়ান গোত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই ১২,০০০ মুজাহিদ নিয়ে তিনি রওয়ানা হলে হুনানি নামক প্রান্তরে কাফেররা আতর্কিত হামলা করে। হামলায় তারাই পরাজিত হয় এবং ৭০ জন নিহত হয়। আর ৫ জন মুজাহিদ শহীদ হন। ৬,০০০ কাফির বন্দী হয়। গনীমত পাওয়া যায় ২৪ হাজার উট, ৪০,০০০ ছাগ-মেষ এবং ৪ হাজার উকিয়া পরিমাণ রৌপ্য।
২৮। গাযওয়ায়ে তায়েফঃ
হুনাইন ও আওতাস থেকে পলায়নকারী গুটি কয়েক কাফির বিরাট শক্তি সঞ্চার করে ১ বছরের রশদসহ তায়েফের সুরতি দূর্গে অবস্থান নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। নবী করীম (সঃ) মুজাহিদ বাহিনী সহ তায়েফ গিয়ে দূর্গ অবরোধ করেন। এ যুদ্ধে সর্বপ্রথম দুর্গ বিধ্বংসী যন্ত্র “দুবাব” ও “মিনজানিক” ব্যবহৃত হয়।
২৯। গাযওয়ায়ে তাবুকঃ
এটি নবী করিম (সাঃ) এর শেষ অভিযান। হিজরী ৯ম সনের রজব মাসে এটি সংঘটিত হয়। রোমানদের বিরুদ্ধে ৩০,০০০ মুজাহিদ গিয়েছিলেন। এ অভিযানে তারা জানতে পেরে যুদ্ধ করতে সাহস পায়না।