(মক্কায় অবতীর্ণ)
আয়াত-৩ রুকু-১
নামকরণ ঃ প্রথম আয়াতের “আল আছর” শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নাযিল হবার সময়কাল ঃ মুজাহিদ, কাতাদাহ ও মুকাতিল একে মাদানী বলেছেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মুফাস্সির একে মাক্কী বলেছেন। এর বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় মাক্কী যুগের প্রথম অংশে অবতীর্ণ। এর আকার মাক্কী সুরার বৈশিষ্ট্য বহন করে।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য ঃ এর মধ্যে স্পষ্ট ভাষায়, মানুষের সাফল্য ও কল্যাণ এবং ধ্বংসের পথ বর্ণনা করা হয়েছে।
ইমাম শাফেয়ী- মানুষ যদি এই একটি সুরা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তাহলে এটিই তাদের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হিসন দারেমী আবু মাদীনা- রাসূলুল্লাহ (সা এর সাহাবীদের মধ্য থেকে যখন দুই ব্যক্তি মিলিত হতেন তখন তারা একজন অপরজনকে সুরা আছর না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না। (তাবারানী)
অর্থ ঃ সময়ের কসম। মানুষ আসলে খুবই তির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।
-ঃ ব্যাখ্যা ঃ-
মূলবিষয় ঃ এ সুরায় চারটি গুনাবলীর অধিকারী ব্যক্তির কথা বলে হয়েছে যারা সময়ের ভেতর অবস্থানকালীন তি থেকে রা পাবে-
১. ঈমান
২. সৎকাজ
৩. পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয়া।
৪. পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দেয়া।
কসমের অর্থ ঃ আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোন বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব, অভিনবত্ব প্রকাশের জন্য কখনও কসম খাননি বরং যে বিষয়টি প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে এই বস্তুটি তার সত্যতা প্রমাণ করে বলেই তার কসম খেয়েছেন।
এখানে সময়ের কসম খাওয়ার অর্থ হলো যাদের মধ্যে উল্লিখিত চারটি গুনাবলী রয়েছে তারা ছাড়া বাকী সমস্ত মানুষ তির মধ্যে রয়েছে সময় সাী।
সময়ের কসম ঃ সময় বলতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এটি কোন দীর্ঘ সময় নয়। ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা বর্তমান অতীতে নিপতিত হচ্ছে। অতীতের কসম হলো ইতিহাসের স্যা। বর্তমানের কসম হলো বর্তমানের অতিবাহিত সময় মানুষকে কাজের জন্য দেয়া হচ্ছে। দ্রুত অতিবাহিত সময়ই হলো আসল মূলধন।
ইমাম রাযী কর্তৃক এক মনীষির উদ্বৃত্ত উক্তি-
এক বরফ ওয়ালা বাজারে হেকে চলছিল, দয়া করে এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুজি গলে যাচ্ছে।
“মানুষ” বলতে সমস্ত জাতিকে বোঝানো হয়েছে।
“তি” বলতে সাধারন অর্থে লাভের বিপরীত হলেও এখানে কল্যাণ ও সফলতা বিপরীত অর্থে।
(সাফল্য ও তির ব্যাখ্যা করতে হবে) প্রকৃত অর্থ হলো দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় তি বিরাজমান। চারটি গুন সম্পন্ন লোক দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই লাভবান।
চারটি গুন ঃ
১) ঈমান ঃ ঈমানের সমন্বয় হলো ক) মৌখিক স্বীকৃতি খ) অন্তরে বিশ্বাস গ) কাজে পরিণত করা।
কোরআনের ঈমানের ব্যাখ্যা-
১. যারা বলেছে আল্লাহ আমাদের বর তারপর তার উপর অবিচল হয়ে গেছে। (হা-মীম সিজদা-৩০)
২. আসলে তারাই মূমিন আল্লাহর কথা উচ্চারিত হলে যাদের দিল কেপে উঠে। (আনফান-২)
৩. যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ও অত্যন্ত মজবুতির সাথে ভালোবাসে। (বাকারা-১৪০)
ঈমানের আসল ল্য হলো প্রকৃত ঈমান মৌখিক স্বীকারোক্তি নয়।
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনো। (নিসা-১৩৬)
ঈমান আনতে হবে, আল্লাহ, রাসূল, কিয়ামত, বিচার এর উপর সামগ্রিকভাবে।
২) সৎকাজ ঃ দ্বিতীয় গুনটি হলো সৎকাজ। কুরআনের পরিভাষায় সালেহাত সমস্ত সৎকাজ এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের দৃষ্টিতে, যে কাজের মূলে ঈমান আছে এবং যা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা প্রদত্ত হেদায়াতের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে তা, সৎকাজ। ঈমানের পর সৎকাজের বর্ণনার অর্থ হলো ঈমান বিহীন কোন সৎকাজের পুরস্কার দেয়ার ...... নেই। সৎকাজ বিহীন ঈমান একটি দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈমান ও সৎকাজ বীজ আর বৃরে মতো।
পরবর্তী দু’টি গুন হলো - যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা পরস্পরকে হক কথা বলা হক কাজ করা এবং ধৈর্য্য ধারণের উপদেশ দিতে হবে। এর প্রাথমিক অর্থ হচ্ছে ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের পৃথক না থেকে সম্মিলিতভাবে একটি সৎ সমাজ দেহ গড়ে তুলতে হবে।
“হক” শব্দটি বাতিলের বিপরীত। দু’টি অর্থ-
১. সঠিক, নির্ভুল, সত্য অনুসারী এবং আকিদা ও ঈমান বা পার্থিব বিষয়াদির সাথে সম্পর্কিত প্রকৃত সত্য অনুসারীর কথা।
২. আল্লাহর বান্দার বা নিজের যে হকটি আদায় করা ওয়াজের হয়ে যায়।
- বাতিল মাথা উচু করে দাড়ালে হক পন্থীরা নিরব দর্শক নয়।
- সমাজে প্রানশক্তি বজায় থাকে।
- হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে হক পন্থীরা অন্যদেরকেও হকের উপদেশ দেয়।
সুরা মায়েদার (৭৮-৭৯) তে বলা হয়েছে-
হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা (আ এর মুখ দিয়ে বনী ইসরাঈল জাতির উপর লা’নত করা হয়েছে কারন তাদের সমাজে গোনাহ ও জুলুম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল এবং লোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধা দিত না।
চতুর্থ গুনটি হলো সবর ঃ হকের নসিহত করতে গিয়ে বা হকের সমর্থন করতে গিয়ে যে সব সমস্যা ও বাধার মুখে নিপতিত হতে হয় তার মোকাবেলায় তারা পরস্পরকে অবিচল ও দৃঢ় থাকার উপদেশ দিতে থাকবে।
-ঃ শিা ঃ-
১) দুনিয়া ও আখেরাতের তি থেকে রা পাওয়ার জন্য প্রকৃত ঈমানদার হতে হবে।
২) প্রকৃত ঈমানদারকে অবশ্যই সৎকাজ করতে হবে এবং পরস্পরকে হক কথা বলতে হবে।
৩) ঈমানদারকে অবশ্যই বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এবং বাতিলকে মাথা উচু করে দাড়াতে দেবেনা।
৪) হক পথে চলার সময় সমস্ত বাধা বিপত্তি অবশ্যই ধৈর্য্য ধরে সামনে অগ্রসর হতে হবে।