ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই সাজ্জাদের ফোন । পিঁপড়াবিদ্যা দেখতে যেতে হবে । হাতে কাজ ছিল না,তাই রাজী হলাম । সাথে পিন্নীকেও জুটিয়ে নিলাম । বলা বাহুল্য যে, ছবিটির নাম এবং পোস্টারটি এককথায় -অসাধারণ । কিন্তু কেন জানি পোস্টারটিকে (নায়িকার লিপস্টিকে ভেজানো ঠোঁটের উপর একটা কালো পিঁপড়া) আমার মৌলিক বলে মনে হয়নি ! এই পোস্টারের সাথে ২৩ বছর আগের হলিউডি ছবি “Silence of the Lambs” ছবির পোস্টারের মিলে যাওয়াকে যদি কাকতালও ধরে নিই,তাহলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না যে,এতবড় কাকতাল সম্ভব কি করে ?
ফারুকীর হাতে কয়েকটা ব্রহ্মাস্ত্র সবসময়ই থাকে।
১। তাঁর প্রতিটি ছবিই আন্তর্জাতিকতার তকমা পাওয়া ।
২। তাঁর ছবির বিষয়বস্তু খুবই সাম্প্রতিক ।
৩। তাঁর ছবি-না হয়ে উঠে ছবি,না হয় টেলিফিল্ম,না হয় নাটক !
এই তিনটি ব্রহ্মাস্ত্র একে অপরের সাথে সংশ্লিষ্ট । আন্তর্জাতিকতা ব্যাপারটা ছবির সাম্প্রতিক বিষয়গুলোর উপরই নির্ভর করে । আর আধা ছবি-আধা টেলিফিল্মঅলা ছবিগুলোই পুরষ্কারের বাজারে সমাদৃত হয় । অন্তত এখন অবধি সেটাই দেখা যাচ্ছে ।
ফারুকীর “টেলিভিশন” মৌলবাদকে ঘিরে,তারও আগের ছবিটা (থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার) লিভ-টুগেদারকে নিয়ে । আর পিঁপড়াবিদ্যা হল এমএলএম ব্যবসা এবং ভিডিও স্ক্যান্ডাল নিয়ে । বাংলাদেশের মত একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশের চিত্রপরিচালক এমন “সংবেদনশীল” বিষয় নিয়ে ছবি বানিয়েছেন,বহির্বিশ্বের দেশগুলো সেটার স্বীকৃতি দিতে ভুলবে কেন ? অন্তত পুরষ্কারগুলো চলচ্চিত্রকারের সাহসিকতার জন্য হলেও অনিবার্য । ফারুকীর ছবি যদি আসলেই ছবিই না হবে তাহলে তাঁর ছবি এত এত পুরস্কার পায় কি করে ? এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত দেওয়া গেল ।
একটা ছবির আন্তর্জাতিকতা বা সর্বজনীনতা কোন শর্ত নয় । ছবির থিম,অভিনয় আর উপস্থাপন যথার্থ হলে এই শর্তটি এমনিতেই সেটে যায় । পিঁপড়াবিদ্যার থিম চমৎকার কোন সন্দেহ নাই,অভিনয়টাও ভাল । কিন্তু উপস্থাপনে এত “ছ্যাঁচড়ামি” বিনোদিত করে না,বিরক্তি উৎপাদন করে বরং । প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে যদি কেউ নিজেকে অটো সাজেশান দেয় যে “Yes,its okay,its okay ,I am enjoying a movie” তাহলে দর্শক শুরুতেই ধরা খেয়ে যায়,প্রতারিতও হয়,যেখানে ছবির পেছনে অনেক অনেক পুরস্কার !
বিরতির আগ পর্যন্ত যদিবা ধৈর্য রাখা যায়,কিন্তু বিরতির পরে এই ছ্যাঁচড়ামি আর সহ্য করা যায় না । একজন বেকার যুবকের মানবিক চাহিদা,এমএলএম ব্যবসায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়া আর একজন নায়িকার খ্যাতি এবং ভিডিও স্ক্যান্ডাল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে একই সমান্তরালে চালিয়ে নিতে গিয়ে ছবিটি একসময় খেই হারিয়ে ফেলেছে । যেকোন ছবির প্রথম শর্ত হল ছবিতে দর্শককে ধরে রাখবার ক্ষমতা । অনেকটা ছোট গল্পের মতই কিংবা একটা বাক্যের মৌলিক শর্তগুলোর (আকাঙ্ক্ষা,আসক্তি এবং যোগ্যতা) মতই ।পিঁপড়াবিদ্যায় যোগ্যতার সম্ভাবনার দেখা মিললেও বাকি দুটো মাঠেই মরে গেছে ! আর এই মারা যাবার চিতায় ঘৃতাহুতি দিচ্ছিল ফারুকীর অযাচিত জীবনঘনিষ্ঠ সংলাপের প্রায়োগিকতা । খুব বেশি দৈনন্দিনতার উপস্থাপন দেখাতে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা একসময় কেমন যেন ছেলেখেলা মনে হয় ।
আবার বলি,ছবির কাহিনি বা বিষয়বস্তুতে চমৎকারিত্ব ছিল,অভিনবত্বও ছিল,কিন্তু দুর্বল উপস্থাপনার জন্য মুখটা তেতো হয়ে যায় । দুজন মানুষের মানসিক অবস্থার দুর্দশাকে আরো শৈল্পিকভাবে দেখালেই বরং ভাল লাগতো ।
দর্শকের মাথার ভেতর যদি পুরো ছবি দেখার আগ্রহের পোকাই না ঢুকানো গেল তাহলে সেই পোকার বিষপিঁপড়া হয়ে উঠার সম্ভাবনা শতভাগ । এখানেই ফারুকীর ব্যর্থতা আর আমাদের আরো একবার হোঁচট খাওয়া !