প্রতিদিন টিউশনি থেকে ফেরার পথে প্রেসক্লাবের পাশে যাত্রীছাউনিতে কয়েকজন মহিলাকে বসে থাকতে দেখি । মুখে গাঢ় রুজ পাউডার,কানে বিরাট বিরাট দুলগুলো ঝুলে থাকে উচ্চ ফলনশীল আমের মতন...গা থেকে ভুসভুস করে বের হয় উৎকট সস্তা সুগন্ধি... বুঝতে পারি,কারা এরা,কোন বাসের জন্য ওদের প্রতীক্ষা,কোন দেহের অধিকারিণী তারা !
প্রথম প্রথম ওদের সাথে চোখাচোখি হলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতাম না,দৃষ্টির সাথে ছুঁড়ে দিতাম গাদা গাদা ঘেন্না ।
“আমার দিকে তাকাবি না,খবরদার। তোরা অচ্ছুৎ,অসামাজিক,নোংরা,পুতিঃগন্ধময় অস্তিত্ব। তোদের থেকে আমার দেহ-মন অনেক অনেক পবিত্র । ফিরিয়ে নে তোদের ওই পঙ্কিল দৃষ্টি”
অসহ্য ভ্যাঁপসা গরম কি ঝুম বৃষ্টি...প্রতিদিন একই জায়গায়,একইভাবে,একই মানুষগুলোর শরীরের সাজানো পসরা দেখে এখন আর ঘেন্না ছুঁড়ে দেই না । ভাবি, হয়তো ওই রুজ পাউডারের উপর বেঁচে আছে অনেকগুলো প্রাণ...দেখি,ওই রুজের ভেতরের আসল,মৃতপ্রায়,ফ্যাকাশে মুখটিকে,হলুদ সোডিয়ামের আলোর আড়ালে অসহায় বিবশতাগুলোকে ...।
এখন ঘেন্না ছুঁড়লে সে ঘেন্না নিজেরই উপর এসে পড়ে । তাই এখন আর ঘেন্না ছুঁড়ি না,করুণাও না, মমতাও না,একটু চুক চুকও না ...বরং ছুঁড়ে দেই দুর্বোধ্য এক নির্বিকার দৃষ্টি ... যে দৃষ্টির সামনে স্বয়ং বিধাতাও লজ্জায় লুকিয়ে রাখেন তাঁর নূরানি দৃষ্টিটিকে !