প্রিয় মা,
আমার মনটা অনেক ছোট হয়ে গেছে ! ইদানিং আমি কিছু কিছু মানুষকে হিংসা করা শুরু করে দিয়েছি ! নিজের মুখোমুখি হতে আজকাল বড্ড ভয় হয় । আয়নার সামনে দাঁড়ালে কোন সময় নিজের কদর্য চেহেরাটা ভেসে উঠে ...প্রচন্ড মানসিক দৈন্যতার ভেতর দিয়ে কাটছে আমার একেকটা দিন-রাত ।
মা,আমি কখনোই তোমাকে তোমার প্রাপ্যটুকু দেই নি । আমি বাবাকেই সর্বেসর্বা ভেবে বড় হয়েছি । বাবার গালভরা গাম্ভীর্য,কথাবার্তা,দূরদর্শিতা,বিচক্ষণতা,দর্শন,নাস্তিকতা সবকিছুকেই অভ্রান্ত আদর্শ বলে ভেবে এসেছি ...তোমার হা হা করা ছেলেমানুষি হাসি,সবকিছুতেই “স্যাক্রিফাইস” করার প্রবণতা,উদয়াস্ত দাসীর মত খেঁটে যাওয়া...খুব অসহ্য ছিল আমার কাছে । একেকটা সময় তোমাকে আর জীবিত মনে হত না,মনে হত তুমি মরে গেছ,তোমার মন বলতে আসলে কিছুই নাই...তুমি মনহীন একটা ফাঁপা মানুষ !!! কিন্তু মা,বিশ্বাস কর...৭০০ কোটি মানুষের গ্রহটিতে যদি একটিও জীবিত মানুষের কথা আমাকে বলতে বলা হয়,আমি তোমার কথাই বলব । কেউ না জানুক,আমি জানি,তুমি কতটা জীবিত,তোমার জীবনে কতটা জীবন আছে,কতটা প্রাণ আছে ।
তোমার মত এমন প্রাণবতী, উদার মায়ের সন্তান কিনা ভুগছে মানসিক দৈন্যতায় ! ছোট ছোট ব্যাপারগুলোতে সে মানুষকে কিনা করে হিংসা ! ছিঃ কি লজ্জার কথা !
শুনে কি তোমার খুব কষ্ট হবে,মা?
পরীক্ষার পরে গত ২ মাসের ভেতর ১ দিনও আমি তোমাকে দেখার জন্য ব্যয় করার কথা চিন্তাতেও আনিনি । এই ২ মাস আমি ছুটে বেরিয়েছি,এখান থেকে ওখানে । নিজেকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টায় ক্ষান্তি দেই নি একটুও । কিন্তু কে জানত আমারই মনের অগোচরে আমারই মনের সমান্তরাল প্রতিনিয়ত আরেকটি হিংসুটে মনের জন্ম হচ্ছে ! যে মন ভীষণ কুৎসিতভাবে সংকুচিত ! যে মন হীনমন্যতার বিষে নীল হয়ে গেছে !
এই ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বৈশাখী দাবদাহেও আমি ফ্যান চালাই না । আমার ঘন ঘন পিপাসা পায় না । কিন্তু যখনই ভাবি,আমি তোমাকে উপেক্ষা করেছি, সেটা এক মুহূর্তের জন্য হলেও,তখনই আমার পিপাসা পায় ... আমি দরদর করে ঘামতে থাকি ।
তোমার কাছে ছুটে আসাই আমার মানসিক পীড়ার দাওয়াই । তোমার অনিঃশেষ সারল্যই আমার অব্যর্থ পথ্য ।
আমি শিগগিরি আসবো মা । কোন এক নিস্তব্ধ ভোরে বিনা নোটিশে গাড়ি থেকে নেমে তোমাকে চমকে দেব ।
মা,তোমার একান্ত ঈশ্বরটির কাছে প্রার্থনা করো...কোন এক ভয়ঙ্কর শারীরিক অসুস্থ্যতাতেই যেন ঝুপ করে আমার সমাপ্তি হয়,মনের কোন অসুখে নয় ।
আমি ভালো নেই,তুমি ভালো থেকো,প্রিয় মা ।
ইতি
তোমার “বাবু”