১.
বাংলা একাডেমির সামনের ফুটপাথটির খাঁজে একটা মানুষ মরে পড়ে ছিল !মানুষ না বলে কঙ্কাল বলাই ভাল । একজন মানুষের স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হতে পারে সেটা কক্ষনো ভুলেও আমার কল্পনাতেই আসেনি !
রাত’ভরে ঝড়-বৃষ্টির পর মিষ্টি রোদ নিয়ে একটা চমৎকার সকাল শুরু হয়েছিল । বাংলা একাডেমির সামনে এসে সেই চমৎকারিত্ব পলকেই উবে গেল । আঞ্জুমান মফিদুলের মানুষজন এসে মৃতের লুঙ্গি তুলে এক ঝলক দেখে নিল মানুষটা হিন্দু কি মুসলমান !হিন্দু হলে শ্মশান আর মুসলিম হলে গোরস্থান ।ধর্ম যাই হোক মানুষটা তো বে-ওয়ারিশ ! একটা বে-ওয়ারিশ মানুষের জন্য পথচারীদের কেউই থমকে দাঁড়ায় না,কেউ চোখের জলও ফেলে না...ফেলবেও না !
আশ্চর্য ! কত তুচ্ছভাবেই না মানুষের মৃত্যু হয় !
২.
বাংলা একাডেমি থেকে কিছু দূরে সামনে-পেছনে সাইন্স ক্যাফেটেরিয়ায় আর টিএসসি’তে চলছে সমাবর্তনপ্রার্থীদের আনাগোনা । গাউন,ক্যাপ আর ব্যাগ নেবার ব্যস্ততা । শিক্ষাজীবনের শেষটাকে হল্লা করে উদযাপনের কোন কমতি নেই তাঁদের চোখে-মুখে । তাঁদের মুখরিত কোলাহলে হারিয়ে যাচ্ছে কিছু নিঃসঙ্গ,শব্দহীন কথামালা !
৩.
ঢাকা শহরটা নিছক একটা শহরই নয় একটা প্রকান্ড উদরও । প্রতিদিন কত কত মানুষ এই উদরে এসে পড়ে । সবাইকেই উদরে তুলে নেয় শহরটা । এরপর এই মানুষগুলো মরে গেল কি বেঁচে থাকল কেউ তাঁর খোঁজ রাখে না ! এই ঢাকা শহরটাও রাখে না ।
জীবন এত অসহায়?
৪.
বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের স্বাধিকার আর সার্বভৌমত্বের সাথেই শুধু জড়িত নয় আমার একান্ত অনেক মানসিক ঘাত-প্রতিঘাতের সাথেও জড়িত । আমি ভুলে গেলেও একাডেমিটি আমাকে ভুলতে দেয় না, যে সেটির সাথে আমার কতটা মানসিক যোগাযোগ !