-তুমি কি ডিপ্রেশড ?
-হ্যাঁ,কিছুটা ।
- কেন,হঠাৎ কি হল তোমার? ডিপ্রেশন কিসের জন্য ?
-ফিউচার নিয়ে । ক্যারিয়ার নিয়ে ।
-ফিউচার নিয়ে খুব ভাবছ ? ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ ?
- হুম !
- তুমি না খুব আশাবাদি ?
- আশাবাদি আমি এখনও । কিন্তু আশাবাদের পাশাপাশি আমার প্রয়োজন সাহায্যের একটা হাত...অনেকটা মানসিক ধাতের ।
- তোমার উপর মনে হয় ডিপেন্ডেন্সির ভূত ভর করেছে ! তুমি আস্ত একটা গারল হয়ে যাচ্ছ ।
- হবে হয়তো । কিন্তু আমি এরকম ছিলাম না ।
- ঠিক তাই । কিছুদিন আগেও তুমি এরকম ছিলে না । প্রচুর বই পড়তে,দিনে দেড়টা মুভি দেখতে,বন্ধুদের সাথে সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে,লিখতে পারতে...ফেইসবুকে নিয়মিত স্ট্যাটাস দিতে,নোট লিখতে । গত দুই সপ্তাহেও তো বেশ ঘোরাঘুরির উপর ছিলে । তোমার মন তো পরিষ্কার থাকার কথা ।
- হুম । মনটা আমার পরিষ্কারই আছে । তবে বেশ বিক্ষিপ্ত । মনে হচ্ছে আমার সত্তাটি আমার কাছে ওহী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। আমি নির্দেশহীনতায় ভুগছি,বলতে পার ।
- ছিঃ এরকম করে বলছ কেন ? তোমাকে এতটা দুর্বল ভাবতে আমার খারাপ লাগছে । তোমার এতদিনের অর্জনকে তুমি অপমান করলে ! আজ ৭ বছর ধরে তুমি ঢাকায় আছ । একা একা কলেজে ভর্তি হওয়া,ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া সবই তুমি একাই করেছ । এই ৭ বছরে তোমার বাবা-মা তোমাকে একবারের জন্যও দেখতে আসেননি । আজকে তোমার এই অবস্থানের জন্য তুমিই কারিগর । তোমার বাবা-মা শুধু তোমাকে অর্থের যোগান দিয়েছে,আর বিশ্বাস করেছে । কিন্তু সবকিছু তুমিই করেছ একা একা । তোমার অভিভাবক তুমিই,তুমিই তোমার স্রষ্টা । তুমিই তোমার গল্পের রাজা ...
- জানি,জানি সব জানি । তবুও কোথায় যেন একটুখানি খটকা লেগে আছে মাছের কাঁটার মত । নিঃশ্বাসে ড্রাগনের মতন হলকা বেরুচ্ছে । পা পিছলানোর আশঙ্কা জোঁকের মত সেঁটে ধরেছে । নিম্ন-মধ্যবিত্তের অনেক দিনের জমানো স্বপ্নের আচমকা অপমৃত্যুর আশঙ্কা পেয়ে বসেছে । এটাই আমাকে দমিয়ে রেখেছে ।
- তোমার মনটা অনেক ছোট হয়ে গেছে । তুমি নৈরাশ্যবাদী ।
-কিছুটা ছোট হয়েছে স্বীকার করি । কিন্তু বাস্তবতা তো অনেক কঠিন ।
-নৈরাশ্যকে তুমি বাস্তবতা দিয়ে ঢাকতে চাইছো ! তুমি তো খুব পলায়নপর ! তোমাকে এতটা নিচু ভাবিনি ।
- আমিও মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই । আমার সত্তার এতটা সঙ্কোচন হল কি করে ? আমি এখনো স্বপ্ন দেখি,তুমুল স্বপ্ন দেখি,বাঁচার স্বপ্ন,জীবনকে জয় করার স্বপ্ন...স্বপ্নকে জয় করার স্বপ্ন । কিন্তু আমার প্রয়োজন একটা হাতের ।
-মানুষের শুধু দুটো হাত দেখা যায় । অদৃশ্য থাকে অজস্র হাত । প্রয়োজনের হাতটিকে বানিয়ে নিতে হয় । নাও না,তুমিও বানিয়ে এমন একটা হাত,তোমার যেমন দরকার ।
-তা হয়তো পারব । কিন্তু আশঙ্কাটাকে উপরাবো কিভাবে ?
- আশঙ্কা ছাড়া পৃথিবীতে কিছু কি হয়েছে ? তুমি সবকিছুকে জয় করার কথা বলেছ কিন্তু আশঙ্কাটাকে জয় করার কথা বলনি ! তোমার উচিত এখানেই মনযোগ দেওয়া । পৃথিবীর আর কেউ না জানুক,আমি জানি তুমি পারবে । তোমার দ্বারাই সম্ভব ।
- সত্যি ?
-সত্যি । যাও ঘুমুতে যাও ।
-আচ্ছা ।