কাংখিত চাকুরী পাওয়া কিংবা চাকুরীটিতে স্যাটিসফেকশন না থাকলে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় আন্ডারইমপ্লোয়েড-তা যত বড় এবং যত বেশী সেলারীই থাকুক না কেন। চাকুরী অনেকের কাছে ধরা আর ছাড়া, কোনো ব্যাপারই নয়। আবার অনেকেই বলেন, ভালো চাকুরী সোনার হরিণ। তদবীর বা তকদীর ছাড়া নাকি চাকুরী হয়না। তাহলে যোগ্যতার জায়গা কোথায়? সত্যিটা হলো যে যোগ্য তার জন্য একটি জায়গা আছেই। চাকুরী হওয়ার আগেই যোগ্যতা প্রমাণের একটি জায়গা হলো ভাইভা বোর্ড ফেস করা। বিসিএস এর ভাইভা বোর্ডে সাধারণত ৪ জন সদস্য থাকেন। এর মধ্যে ১ জন পিএসসি’র মেম্বার পদাধিকার বলে ঐ বোর্ডের চেয়ারম্যান, ১ জন সরকারের প্রতিনিধি, ১ জন এক্সপার্ট, ১জন মনোবিজ্ঞানী। সাধারণত মনোবিজ্ঞানী প্রশ্ন করেন না, তিনি কেবল অবজার্ভ করেন। বাকীরা প্রশ্ন করেন। আমাদের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে ভাইভাবোর্ড কেমন হয়, তা তারাই নির্ধারণ করেন। সাধারণত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে যোগ্যদের জন্যই সুপারিশ করা হয়। সরকারী চাকুরীতে বহু কারণেই যথাযথ মূল্যায়ন নাও হতে পারে।
চাকুরী প্রার্থীদের পরামর্শে তাদের ভাইভাবোর্ডে করনীয় ও অকরনীয় কাজ ও অভ্যাস গুলো উপর সংশ্লিষ্টদের মতামতের উপর ভিত্তি করে এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো। দেখুন আপনার কাজে লাগে কিনা।
১। কখনোই কোনো ভাইভা বোর্ডে মোবাইল ফোন নিবেন না। নিতে হলে অবশ্যই তা বন্ধ রাখুন।
২। অতি আধুনিক পোষাক পরিহার করুন। সব সময় সাদা শার্ট ও কালো প্যান্টকে প্রথম বিবেচনায় রাখুন, সাথে কালো জুতা-যা অবশ্যই পলিশ করা।
৩। দ্রুত টাই বাধঁতে না পারলে, টাই পরিহার করুন, এটি অপরিহার্য নয়। ধার করা টাই যা ক্রয়ের সময় দোকানদার বেধেঁ দিয়েছে, তারপর আর খোলা হয়নি বার বার মাথা ঢুকিয়ে পড়ছেন আর খুলছেন-এ ধরনের সমস্যায় টাইয়ের তেমন প্রয়োজন নেই।
৪। অতি মাঞ্জা পরিহার করুন। মনে রাখবেন ভাইভা বোর্ডের সাথে বিউটি পার্লারের কোনো চুক্তি নেই। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে । তবে অবশ্যই সেভ করবেন।
৫। অতি আধুনিক ভাব পরিহার করুন, কারণ ভাইভা বোর্ডে টারসিয়ারী যুগের অনেক প্রাণীও থাকে, তারা আপনার ভুল ধরতে পারে কিংবা আপনাকে উদ্ধত ভাবতে পারে।
৬। ভাইভার আগে সেদিনের দৈনিক পত্রিকার হেড লাইন গুলো দেখে যাবেন এবং সেদিন বাংলা সনের কত তারিখ, কোন মাস অবশ্যই জানবেন।
৭। কমপক্ষে ২ টি জরুরী সাহায্যের ফোন নম্বর মনে রাখুন। যেমন : পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
৮। চাকুরীর যে পদটির জন্য আপনি ভাইভা দিবেন, সেই পদটির ভবিষ্যত কেরিয়ার, সামাজিক অবস্থান এবং আপনার পছন্দের উপযুক্ততা প্রমাণে যৌক্তিক ব্যাখ্যা জানুন।
৯। আপনি যে ডিসিপ্লিনের ছাত্র ছিলেন, সেই বিষয়ের উপর একটি সামারী ধারণা রাখুন-যেন সুযোগ পেলে কমপক্ষে টানা দশ মিনিট বলতে পারেন।
১০। কোনো বির্তকিত বিষয়েও ভাইভা বোর্ডে বির্তকে যাবেন না।
১১। কোন প্রশ্নের উত্তর না পারলে, ‘‘জানতেন ভুলে গিয়েছেন’’-এ জাতীয় ভান কখনোই করবেন না-এতে আপনার অসততা প্রকাশ পাবে।
১২। কোনো ভাবেই ‘‘আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেরা’’-এ জাতীয় ভাব যেন প্রকাশ না পায়-কারণ ভাইভা গ্রহণকারী সবাই আপনার ভার্সিটির নাও হতে পারে।
১৩। ‘‘আপনার পঠিত সাবজেক্টই সেরা’’-এ জাতীয় ভাব যেন প্রকাশ না পায়-কারণ ভাইভা গ্রহণকারী সবাই আপনার সাবজেক্টের নাও হতে পারে।
১৪। প্রশ্ন শোনার পর উত্তর মনে করে উত্তর দেওয়ার জন্য সময় ক্ষেপণ প্রশ্ন কর্তাদের বিরক্তি সৃষ্টি করে এবং আপনার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়, এ জাতীয় চেষ্টা না করে সোজা সরি বলে দিন, তাতে আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে এবং তার উত্তর হয়তো সুন্দর করে দিতে পারবেন।
১৫। কোনো ভাবেই ফ্লোরে পা ঘষবেন না কিংবা ভাইভাবোর্ডে প্রবেশ করার সময় এ জাতীয় ঘষার শব্দ সৃষ্টি করবেন না।
১৬। অযথা পা নাড়বেন না, হাত নাড়াবেন না, আঙ্গুল তুলে কথা বলবেন না-কারন ভাইভা গ্রহণকারী কেউ বধির নয়।
১৭। নিজেকে অসহায় এবং অহংকার মুক্ত রাখুন।
১৮। কারও সম্পর্কে অযৌক্তিক প্রশংসা বা তোষামোদ করবেন না। তাতে আপনাকে খয়ের খা মনে হতে পারে।
১৯। সুযোগ থাকলে বুঝাতে পারেন, আপনি সুশৃংখল ও আদর্শ পরিবারের মানুষ।
২০। সুযোগ থাকলে বুঝাতে পারেন, ভাইভা বোর্ডের সবাই যোগ্য এবং অবশ্যই আপনার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ। কিন্তু তা যেন নীচুমানের তেলবাজির পর্যায়ে না যায়, খেয়াল রাখবেন।
২১। অযথা নাক চুলকাবেন না, কান খুচাঁবেন না, ঘনঘন চুল ঠিক করবেন না।
২২। নিজের দেশ/সমাজ/প্রজন্ম/পরিবেশ/সতেচনতা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো ভাবেই হতাশাজনক কিছু বলবেন না। আশাবাদী সংগ্রামী মানসিকতার একজন পরিবর্তনকারী হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন।
২৩। নাক টানা, কিংবা হালকা কাশির চেষ্টা করবেন না। হাই উঠলে মুখ হা করে অন্যকে দেখাবেন না। হাত দিয়ে মুখ ঢাকুন।
২৪। হাতের আঙ্গুল দিয়ে টেবিলে তবলা বাজানোর চর্চা করবেন না। কিংবা বারে বারে পকেটে হাত ঢুকাবেন না।
২৫। মনে রাখবেন ভাইভা গ্রহনকারীরা অলওয়েজ রাইট, তাই শেখাতে যাবেন না। সবখানে জ্ঞান বিতরণের ফলাফল আপনাকে শমসের করে দিতে পারে।
২৬। ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করার আগে ওয়েটিং রুমে/বারান্দা/কিংবা অফিসের যেকোনো স্থানেই আপনি থাকুন না কেন সংযত এবং মার্জিত থাকুন। কারণ আপনাকে হয়তো সিসিটিভিতে তারা দেখছে। আধনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এটি খুবই সাধারণ ঘটনা।
২৭। প্রশ্ন কর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন।
২৮। ঘোমরা মুখ করে থাকবেন না, বুঝাতে পারেন আপনার প্রাণচাঞ্চল্য অনেক।
২৯। অযথা প্যাঁচাবেন না, টু দ্যা পয়েন্ট উত্তর দিবেন, বাড়তি কথা পরিহার করুন।
৩০। নিজ জেলা ও নিজ প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য সম্পর্কে কংক্রিট ধারণা রাখুন।
৩১। চাকুরীটির জন্য কোনো তদবির করে থাকলেও, তা কোনো ভাবেই প্রকাশ করবেন না।
৩২। অবশ্যই পকেটে একটি কলম রাখুন।
এর বাইরে যেকোনো ব্লগার মন্তব্যে কোনো পরামর্শ দিলে তা পোস্টে সংযোজন করা হবে। সবার মতামত, প্রশ্ন কিংবা পরামর্শ কাম্য এবং পোস্টটি আপগ্রেড করা হবে।
বি।দ্র: এর আগে এমন একটি পোস্টের মডিফায়েড রিপোস্ট এটি।