“ সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ” কথাটি ব্লগার চাঁদগাজী স্যারের । এটা কতটা সত্য । আমাদের দেশের দিকে তাকালে তা বুঝে ওঠা মুশকিল । কেননা আপনি আমাদের দেশে মেধার বা শিক্ষার গুরুত্ব মানুষ কে বলে বুঝিয়ে মানাতে পারবেন না । যদিও এটা আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয় । তবে এটাই সত্য । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোন কাঠামো নেই । কোন সুন্দর ব্যবস্থাপনা নেই । কোন সিলেবাস বা নিয়ম নেই । শুধু বছরের শুরুতে আপনি সবার হাতে বই পৌছে শিক্ষার সঠিক মান আনতে পারবেন না । মান বাড়াতে আপনাকে সেই অনুযায়ী কাজও করতে হবে । সেটার উপর কতটা নজরদারী রাখছেন । আপনি বছর বছর এ প্লাস আর গ্রাজুয়েট বের করছেন কিন্তু তাদের মানের দিকে কতটা খেয়াল রাখছেন । শুধু পাস দিয়ে আপনি যাচাই করছেন শিক্ষার মান । কোয়ান্টিটির দিকে না তাকিয়ে কোয়ালিটির দিকে তাকান ।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দিন দিন ভেঙ্গে পরছে । এর দায় ভার কার । ছাত্র ছাত্রীরা শুধু পাস করার জন্য ছুটে বেরাচ্ছে । জিপিএ সিজিপিএ নিয়ে হতাশায় ভুগছে । এগুলো একজন মানুষের মানসিক বিকাশ বাধা গ্রস্থ হচ্ছে । আর সে থেকে ছাত্রছাত্রীরা অন্ধকারে চলে যাচ্ছে যার মধ্যে তারা সুইসাইড এবং মাদকাসক্তি সহ বিভিন্ন ভাবে তাদের নিজের জীবন কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তারা বুঝেই উঠতে পারছে না আসলে তাদের জীবনের লক্ষ্য কি । আর একজন শিক্ষক হিসেবে এবং শিক্ষার জন্য আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্রছাত্রীর এই দিকে লক্ষ্য রাখা । তাদের মানসিক দিক্কের প্রতি খেয়াল রেখে আপনাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে । আপনি শিক্ষক তাই বলে যা খুশি তাই আপনি করতে পারেন না । ছাত্রছাত্রীরা আপনার কাছ থেকে শিখবে ক্ষমা আর দয়াশীলতা । অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে ন্যায়ের পথে থেকে অন্যায়ের সাথে লড়াই করা ।
গত কিছু দিনে ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যা বেড়েছে । একজন মানুষ কখন আত্মহত্যা করে বা সেই পর্যায়ে চলে যায় সেটা একবার আমাদের ভেবে দেখা উচিত । আমি নিজেও এই পড়াশুনা নিয়ে অনেক হতাশ । কারন যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়েছে সে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করে । ডাক্তার মন্ত্রনালয়ে জব করে । তাহলে সে ডাক্তারি কেন পড়েছে । আচ্ছা এসব বাদ দেই । কারন সবার ই নিজস্ব পছন্দ থাকে । তবে যারা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার তারা কেন সাধারন চাকরিতে ঢুকে যায় সেটাই আমি বুঝতে পারি না । আবার কোম্পানিরা বলে তারা নাকি যোগ্য লোক পায় না । আচ্ছা যোগ্যতার মাপ কাঠি তো আপনারা ঠিক করেছেন রেজাল্ট দিয়ে তবে কেন তারা যোগ্য নয় ।
যাইহোক সুইসাইড নিয়ে কথা বলছিলাম । ভিকারুন্নিসা স্কুলের যে ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে সেটার দায়ভার এখন কে নেবে । সে কেন আত্মহত্যা করেছে সেটার দিকে নজর দেয়া যাক । সে তার বাবা মায়ের অপমান সহ্য করতে পারেনি তার ছোট্ট মন । আর কিভাবেই বা নেবে, সেও তো মানুষ । মার খেয়ে সহ্য করা যায় কিন্তু কথার বান আপনি কিভাবে সহ্য করবেন । যে ছাত্রীর বাবা মায়ের বুক আপনি খালি করলেন তা পূরন করতে পারবেন ।
শিক্ষকের দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীকে তার ভুল ধরিয়ে দিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা । তাদের ন্যায় আর অন্যায়ের পার্থক্য তুলে ধরা । ভাল মন্দ বোঝানো । এখন এখানে দেখা যাচ্ছে মেয়েটা মোবাইল ফোন নিয়ে স্কুলে এসেছে এবং পরীক্ষার হলে বসেছে । এটা বড় ধরনের অপরাধ স্কুলের ক্ষেত্রে । আমি এটাকে অপরাধ ই বলব । কারন মোবাইল ফোন ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই একটা বয়সে দরকার আছে । আমি এবং আমার ছোট বোন কলেজে ওঠার পর ফোন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছি । তবে এটা সবার পারিবারিক ব্যাপার । এটা যে পরিমানের অপরাধের পর্যায়ে পরে তাতে বাবা মায়ের কাছে নালিশ দেয়া পর্যন্ত যাওয়া লাগে না । তাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বা হালকা ধমক দিয়ে ছেড়ে দেয়া যেত । এছাড়া বাবা মা কে ডাকার পর মোবাইল ফোন তাদের কাছে হস্থান্তর করতে পারত । তারা সেটা না করে উলটো বাবা মা কে অপমান করে টিসির হুমকি দেয় । কারন তারা জানে ক্ষমতা তাদের হাতে ।
আবার অন্য দিকে এটা লঘু পাপে গুরু দন্ডের মত হয়ে গিয়েছে । আমার মতে শুধু ছাত্রীকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিলেই হতো তার বাবা মা কে টেনে আনাটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছে । স্কুল কতৃপক্ষের কি এতটুকু ধারনা নেই যে তারা ছাত্রছাত্রীদের কি শিখিয়েছে । তারা শিক্ষক কিন্তু আসলে তারা কি শিক্ষা দিচ্ছে । তারা শিক্ষক তাদের কাছ থেকে সবাই শিখবে । কিন্তু তারাই যখন নিজেদের মুর্খতা প্রমান করেন তখন আসলেই মনে হয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে স্বপ্ন ভাঙ্গার কারিগর ।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা গত কিছু দিনে অনেক গুলো প্রান কেড়ে নিয়েছে । স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতেই মৃত্যুর মিছিল থামছে না । আপনাদের কি মনে হয় না এরা কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে । কেন তারা নিজের জীবন নিয়ে এত হতাশ । এই দায়ভার কি একটুও আপনাদের উপর বর্তায় না ।
শিক্ষা ব্যবস্থায় কোয়ালিটি দরকার কোয়ান্টিটি না ।
ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩