আপনাদের সেই ২০১০ সালের সেই সময়কার কথাটা মনে আছে কিনা জানি। তবে আমার মনে আছে। সেই সময়ে আমি গ্রামের বাড়ি ছিলাম। তখন এই রকম অনলাইন ভিডিও ছিল না । আমরা টিভি চ্যানেলে দেশের খবর দেখতাম। সেই সংবাদেই খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ঘটনা দেখিয়েছিলো। সেই সময়ে আমি বিএনপির রাজনীতির ভক্ত ছিলাম না। এখনও নই। তবে সেই খালেদা জিয়াকে ওভাবে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করাটা আমার কাছে ভাল লাগে নি। শেখ হাসিনা এই কাজ করেছিলেন কেবল মাত্র প্রতিহিংসা থেকে। পরে অনেক জায়গাতে সেই প্রতিহিংসার বহিপ্রকাশ ঘটেছে তার নগ্ন উল্লাসেই। ৪০ বছর ধরে বসবাস করা বাড়ি থেকে একজন মানুষ শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে টেনে হিচড়ে বের করেছিলেন তিনি। খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে এভাবে উচ্ছেদ করাটা কি আসলেই খুব দরকার ছিল? সত্যিই ছিল না। সেই সময়ে আমার মা একটা কথা বলেছিল। বলেছিল একদিন হাসিনার অবস্থাও এমন হবে।
তারপর পনের বছর কেটে গেছে। হাসিনার পতন হল। ৩২ নম্বরে হামলা হল সেটাকে পুড়িয়েও দেওয়া হল।গতকাল সেই বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হল। রাত ভর মানুষ প্রথমে হাতুড়ি শাবল দিয়ে সেই বাড়ি ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে । পরে বুল্ডোজার নিয়ে এসে বাড়ি ধ্বংস করা হল। আমার কাজের যাওয়ার রুট এই ৩২ নম্বর দিয়েই। প্রতিদিন আমি ঠিক এই বাড়ির সামনে দিয়েই বাসায় আসি রাতের বেলা। আওয়ামী শাসনের পুরো ১৫ বছর এই ৩২ সড়কটা তারা অবৈধ ভাবে বন্ধ করে রেখেছিল। সরকার পতনের কিছু দিন পরে রাস্তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তখন থেকে আর ঘুরে না গিয়ে সরাসরি এই পথেই যাওয়া যেত। আজকে বাসায় আসার সময় দেখি এই রাস্তায় প্রচন্ড ভীড় । মানুষ জন আনন্দ উৎসব করছে।
আমার খুশি হওয়া উচিত । গত ১৫ বছরে আওয়ামীলীগ যা করেছে, চোখের সামনে সেই জিনিস দেখে যে কারোই এই দৃশ্য ভাল লাগবে। বাট আই ডোন্ট নো আমার কেন জানি এই দৃশ্যটা ভাল লাগল না। এবং সত্যি কথা বলতে এই একই কাজটা যদি স্বাধীনতা বিরোধী কোনো রাজাকারের বাড়ির সাথে হত তখনও আমার ভাল লাগত না। আমার সব থেকে অপছন্দের মানুষ যাকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি তার সাথে হলেও আমার ভাল লাগত না।
জনগনের মাঝে এই প্রতিহিংসা এক দিনে তৈরি হয় নি। বছরের পর বছর শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ যে অপকর্ম করেছে, ক্ষমতা হারালে তাদের অবস্থা যে এই রকমই হবে এটা সহজেই অনুমেয় ছিল। আচ্ছা তারা নিজেরা কি এটা জানতো না?
কে জানি একটা কথা বলেছিল, কথাটা হচ্ছে তুমি মানুষের উপরে ঠিক ততখানি অন্যায়, ততখানি জুলুমই করবে যতখানি তুমি নিজে সহ্য করতে পারবে। শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ কি এই কথাটা মনে করে নি। বিগত ৫ বছরের বৈধ এবং ১১ বছরের অবৈধ শাসনামলে আওয়ামীলীগ এমন একটা খারাপ কাজ নেই যে করে নি। আওয়ামীগীল মাত্র ৬ মাস পালিয়ে রয়েছে। কিন্তু গত ১০/১২ বছর ধরে বিরোধী দলের কোন কর্মী রাতে শান্তিমত নিজের বাসায় ঘুমাতে পারে নি। শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সেটা হতে দেয় নি। এই তীব্র প্রতিহিংসার রাজনীতি তারা করেছে এটার ফল তারা এখন ভোগ করছে। সামনে আরও কয়দিন ভোগ করবে।
প্রতিটা স্বৈর শাসকের পরিনতিই এমন । সামনের দিনেও এমনই হবে। তাই পরের বার যেই ক্ষমতায় আসুক এই ব্যাপার তাদের অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত । মানুষের প্রতি জুলুম যেন তারা না করে। প্রতিহিংসার রাজনীতি যেন তারা না করে। আর প্রতিটা জুলুমের আগে যেন শেখ হাসিনার এই পরিনতির কথা ভাল করে মনে করে নেয়।