গতকাল আমেরিকার নির্বাচন হয়ে গেল। ফলও চলে এসেছে এরই ভেতরে। পুরো বিশ্ব তাকিয়ে ছিল সেই নির্বাচনের দিকে। এই প্রেসডেন্ট নির্বাচনে অনেক হিসাব কিতাব হয়তো বদলে যাবে। আবার হয়তো কিছুই বদলাবে না। সে সব জটিল আলোচনার দিকে না যাই। আমাদের ব্লগের মহা জ্ঞানীদের জন্য সেই সব আলোচনা তোলা থাকুক। আমি বরং অন্য কথা বলি!
কাল ডেইলিস্টারের ফেসবুক পেইজে ফলাফলের পরের কয়েকটা ছবি পোস্ট করেছে দেখলাম। তার একটা উপরে দেখতে পাচ্ছেন। ভোটে পছন্দের দল হেরে গিয়ে কাঁদছে। আরও কয়েকটা ছবিতে দেখতে পেলাম তাদের মন খারাপ । ঠিক একই ভাবে আনন্দের ছবিও আছে। নিজের পছন্দের দল জিতেছে সে আনন্দ। ছবি গুলোর বেশ কয়েকবার দেখলাম।
আচ্ছা আপনি আমাদের দেশে এমন আনন্দ শেষ হবে দেখেছেন?
না রাজনৈতিক দলের আনন্দ বলছি না । সাধারণ জনগনের ভেতরে ভোট দিতে পারার আনন্দ জয়ে আনন্দ প্রকাশ কিংবা নিজের পছন্দের দলের পরাজয়ে মন খারাপ? শেষ কবে দেখেছিলেন এমন টা?
আমাদের পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার দল এই দেশ থেকে এই প্রথাই উঠিয়ে দিয়েছিল । ভোট বলে যে আনন্দময় একটা ব্যাপার আমাদের দেশেও কোন এক সময়ে ছিল সেটা আগের সরকার একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
আমার মনে আছে ২০০১ সালের নির্বাচনের কথা। এর আগে আমি অনেক ছোট ছিলাম । তাই মনে নেই কিছুই। আমাদের আর নানাদের বাসা পাশাপাশি। আমার নানা আর বড় মামা আওয়ামী সমর্থক অন্যদিকে ছোট মামা ছিলেন বিএনপির সমর্থক। না,তারা কর্মীটর্মী ছিলেন না। কেবল পছন্দের ভোটার। ২০০১ সালে আমার ছোট বাবা বেশ যুবক। ভোটের জেতার পরেই আনন্দ মিছিল বের হল গ্রামে। আমরাও সেখানে যোগ দিলাম। ছোট ঘোষনা দিলেন আজকে রাতে পিকনিক হবে। সে সময়ে সবে স্কুলে পড়ি । এতো রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু এই যে মানুষের মাঝে ভোট দেওয়ার আনন্দ জয়ী হয়ে মিছিল বের করা এসবের ভেতরে অন্য রকম একটা আনন্দের ব্যাপার ছিল। একই ভাবে বড় মামাকে দেখলাম মন খারাপ করে বাসায় বসে রয়েছেন।
২০০৮ এর নির্বাচনেও একই ব্যাপার ছিল। আওয়ামীলীগ জেতার পরে আবারও আনন্দ মিছিল বের হল। রং মাখামাখি আর পিকনিক।
সেই যে শেষ হল । তারপর একে একে আরো তিনটা নির্বাচন আমরা দেখতে পেলাম। ভয়ংকর ভাবে দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হল। এবং এটা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হল যে দেশের মানুষ আসলে ভুলেই গেল ভোট দেওয়া নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জিততে দেখার ভেতরে আনন্দ আছে একই ভাবে পরাজয়ে আছে বেদনা !
যাক শেখ হাসিনা পালিয়েছে। নতুন সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে। সামনে হয়তো আবারও এমন একটা সময় আসবে যখন আমরা ভোট দিতে যাবো আনন্দ নিয়ে। নিজের পছন্দের দল জিতলে দেশের মানুষ আনন্দ মিছিল করবে রঙ খেলা করবে, একই ভাবে দল হেরে গেলে মন খারাপ করবে।
ড ইউনুসের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছেই দেশে এই অবাধ নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা । অনেকেই বলছে এই সরকার ব্যর্থ, এই সেই। এই সরকার দেশের সামনে কেবল একটাই ম্যান্ডেট সেটা হচ্ছে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি আর সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন পরিচালনা । এই সরকারের দেশের চাকরি সৃষ্টির দরকার নেই, পলিথিন নিষিদ্ধ কিংবা পরিবেশ বাঁচানো এই সরকারের কাজ না। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশ পরিচলনা করতে হবে পরের নির্বাচন পর্যন্ত, এই জন্য এর সরকার এসেছে।
এই সরকার যত ভাল কাজই করুক, যদি সঠিক, সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন না হয় তাহলে তার সব কাজ ব্যর্থ অন্য দিকে, অন্য কোন কাজ না হলেও সুষ্ঠ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারলেই তারা সফল ।
আশা করি যে সামনে আমাদের মানুষও এমন আনন্দের সাথে ভোট দিতে পারবে । নিচের ছবি গুলোর মত আমাদের ছবিও পত্রিকাতে প্রকাশিত হবে।
ছবি গুলো ডেইলি স্টারের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২৮