গত ১৫ বছর ধরে আমরা শক্তিশালী আওয়ামীলীগকে দেখে এসেছি। কী তাদের দাপট ! তাদের যে কোন সভা সমিতি আলোচনায় হাজার হাজার মানুষ এসে হাজির হয় । ছাত্রলীগের যে কোন মিটিং কিংবা মিছিলেও হাজার মানুষ এসে হাজির । কিন্তু গত ১৫ই আগস্ট আমরা কী দেখলাম, সেই হাজার হাজার মানুষদের টিকিটাও দেখা গেল না। এতো সমর্থক সব গেল কই?
আমি আগেই স্বীকার করে নিয়েছি যে এই আওয়ামী সরকারের যে এভাবে পতন হবে সেটা আমি কোন দিন ভাবি নাই। কিন্তু আদতে দেখা গেল যে আওয়ামী শক্তি আসলে ঠুনকো ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের জন সমর্থকের কাছে তারা স্রেফ উড়ে গেছে। এইভাবে আপনারা লেজ গুটায়া পালাইবেন এইটা আমি ভাবি নাই । সত্যি কোন দিন কল্পনাও করি নাই ।
গতমাসের পনের তারিখে ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা করল । সেই সময়ে দুইটা ছবি ভাইরাল হয়েছিল খুব । একটাতে দেখা গেছে যে দুইটা মেয়েকে একটা বীরপুরুষ ছাত্রলীগ লাঠি দিয়ে মারতে যাচ্ছে । আরেকটা ছবিতে দেখা গেছে আরেক বীরপুরুষ ছাত্রলীগ একটা মেয়েকে মেরে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে। ছবি দুটো আপনাদের চোখে পড়ার কথা ।
এর আগে আমাদের স্বৈরাচার সরকার কিভাবে হুংকার ছেড়ে বলেছিল যে এই আন্দোলন কারীদের জন্য কেবল ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ ! তার পরের দিন আসলে আমরা কী দেখলাম? বলা যায় সেইদিনই আমার ছাত্রলীগের প্রতি যে ধারণা ছিল সেটা ভেঙ্গে গেল। সাধারণ ছাত্ররা প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগকে কুকুরের মত পিটিয়ে বিদায় করে দিল । তাদের ঘরের সমস্ত জিনিস পত্র বাইরে ফেলে দিল ।
ব্যাপারটা একবার ভাবুন শুধু ! তখনও সরকারের কিছুই হয় নি । সাধারণ মানুষ এসে যুক্ত হয় নি আন্দোলনে । তখন কেবল ছাত্রদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল পুরো আন্দোলনটা । সেই সময়ে সাধারণ ছাত্ররা প্রতিটা ক্যাম্পাসটা ছাত্রলীগকে পিটিয়ে দূর করছে। জাবি দিয়ে এটা শুরু হয়েছিল । আর সেই তথাকথিত শক্তিশালী ছাত্রলীগ নেড়ি কুকুরের মত পালিয়েছিল। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য মনে হয় না? লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগকে কুকুরের মত পিটিয়ে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে !
তারপর আবু সাইদের মৃত্যুর পরে ব্যাপারটা আর সাধারণ ছাত্রদের মাঝে সীমাবদ্ধ রইলো না । সাধারণ মানুষ এসেও যোগ দিল । এবং অবশ্যই এর ভেতরে বিএনপি জামাতও এসে জুটল । তারা সুযোগ যে নিবে সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামীলীগের যে এতো এতো সমর্থক, এতো কর্মী এরা সব গেল কই? কেন এরা সামনে এগিয়ে এল না? গত ১৫ বছরে এরা এতো এতো সমর্থক আর কর্মী বানাইছে এরা সব কই এখন? ১৫ আগস্টের আগের দিন লীগের সবার ফেসবুক প্রোফাইলের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল এইদিন একটা ফাটাফাটি হবে। অথচ দেখা গেল ধারে কাছেই যেতে পারল না।
এর একটা কারণ বলি। এই যে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এতো এতো আওয়ামী সমর্থক দেখা গেছে এরা আসলে কেউ সমর্থক না, এরা সব সুবিধাবাদী, এরা হল চাটুকার। ওরা দেখেছে এদের সাথে থাকলে আমাদের লাভ আছে তাই ছিল। এই সুবিধাবাদী কোন দিন কার জন্য আন্দোলনে নামবে না । গুলি খাবে না। আরও সমস্যা হচ্ছে আওয়ামীলীগ এই সুবিধাবাদীদের খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে। এদেরকেই নিজেদের দলের শক্তি মনে করেছে। এবং এই শক্তি মনে করে এরা বাকি সবাইকে নিজেদের শত্রু বানিয়ে ফেলেছে।
আপনাদের কাছে কি আরও কারণ জানা আছে যে কেন এতো শক্তিশালী দল মাঠে নামল না? আমি জানতে আগ্রহী!