প্রতিটি মৃত্যুই কষ্টের । কিন্তু আমরা সব মৃত্যুতে সমান ভাবে শোক প্রকাশ করি না। আমি কার মৃত্যুতে কষ্ট পাবো আর কার মৃত্যুতে পাবো না সেটা একান্তই আমার নিজেস্ব ব্যাপার হওয়া। আওয়ামী আসলে আগস্ট মাস আসলেই এক প্রকাশ সার্কাস শুরু হত। সবাইকে শোক পালন করতেই হবে। এই মাসে কারো কোন আনন্দের সংবাদ থাকতে পারে না । সবাইকেই বাধ্যতামূলক শোক পালন করতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের (বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের) ডেকে নিয়ে যাওয়া হত এই অনুষ্ঠানে। পুরো আগস্ট মাস জুড়ে প্রতিদিন একাধিক অনুষ্ঠান থাকতো। হলেগুলোতে থাকতে হলে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। সকাল থেকে রাত কিংবা মধ্য রাত পর্যন্ত। হলে থাকতে হলে ছাত্রদের এই শোক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই হত। তারপর সরকারী অফিসগুলোতে বাধ্যতামূলক ভাবে তোমাকে যোগ দিতেই হবে। ব্যবসায়ীরা যারা আছেন তাদের প্রতিষ্ঠানের মাথার উপরে টাঙ্গাতে হবে শোক ব্যানার। দিতে হবে চাঁদা । স্কুল কলেজের বিল্ডিংয়ের মাথায় এই ব্যানার টাঙ্গাতেই হবে। কার ব্যানার কত বড় সেটা জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা লেগে থাকত । ১৫ আগস্টের দিন ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার কাভার ফটোতে থাকতে হবে শোকের ছায়া, বঙ্গবন্ধুর ছবি । যদি হলের বড়ভাইরা দেখে যে তুম ডিপি বদলাও নাই, তাহলে তোমার আর হলে থাকা হবে না, যদি অফিসের বস থেকে তার কপি করা শোকের ছবি তুমি শেয়ার দাও নাই তাইলে তুমি জামাত শিবিরের দোসর ! তুমি যে শোকাহত এটা তোমাকে দেখাতেই হবে। নয়তো হলে থাকতে পারবে না অফিসের চাকরি থাকবে না।
পনের বছর বলবো না, তবে গত দশ বছর ধরে এই কালচারই চলে আসছিল এই দেশে। গত দশ বছর ধরেই এই ভাবেই বাধ্য করে শোক পালন করানো হয়েছে দেশের মানুষের । আজকে কয়জন মানুষ এই শোক পালন করছে? ব্যানার টাঙ্গানো তো দূরে থাকুক, কয়জন মানুষ নিজেদের ফেসবুক প্রোফাইল বদল করেছে? যারা এতোদিন বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছে অথবা যারা চাটুকারিতার জন্য করেছে তাদের কেউ সামান্যতম শোক প্রকাশ করে নি। এমন কি সত্যিই সত্যিই যারা বঙ্গবন্ধুর জন্য শোক ধারণ করে রাখত তারাই তার মেয়ের, দলের কাজ কর্মে বিরক্ত হয়ে দূরে গেছে।
তবে এখনো যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে তারা তাদের শোক প্রকাশ করতেই পারে। কত খানি সত্য মিথ্যা সেটা পরের হিসাব কিন্তু যখন কেউ শোক প্রকাশ করতে তার বাড়িতে যেতে ইচ্ছুক তখন তাকে যেতে কেন দেওয়া হবে না? কাউকে আজকে ৩২ নম্বরে যেতে যেতে দেওয়া হয় নি। কয়েকজন গতকাল রাতে সেখানে গিয়েছিল তাদের উপর হামলা হয়েছে । যদিও রোকেয়া প্রাচী চরম লেভেলের আওয়ামী। তারপরেও তার উপরে হামলা কেন? আজকে দেখলাম অনেককেই মারধোর করা হয়েছে। অনেকের ফোন চেক করা হয়েছে। হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে ‘ছবি তোলা যাবে না ভিডিও করা যাবে না’। কেন এমনটা হবে?
কদিন আগেই তো পরিস্থিতি এমন ছিল । বিএনপির যে কোন সমাবেশে ডাকেই পুলিশ এমন ভাবে মোবাইল চেক করত । কোটা আন্দোলনে এমন ভাবে শিক্ষার্থীদের মোবাইল চেক করা হয়েছে। এখন এই একই কাজ তো এখানেও হচ্ছে। যারা সেদিন এই মোবাইল চেকের বিরোধীতা করেছিল আজকে তারাই সেই একই কাজ করছে । কী আজিব একটা ব্যাপার ! ক্ষমতা কী এতোই কুলোষিত ? অনেকেই বলবেন যে আওয়ামীলীগ যা করেছে এটা তারই প্রতিফলন । এখন আপনারাও যদি আওয়ামীলীগের মতই কাজ করেন তাহলে ওদের আর আপনার ভেতরে কী পার্থক্য থাকল ?
জোর করে যেমন কাউকে শোক প্রকাশে বাধ্য করা যেমন অনুচিত ঠিক একই ভাবে কেউ যদি শোক প্রকাশ করতে চায় তাকে বাঁধা দেওয়াও অনুচিত ! এমন কি একজন যদি রাজাকারের জন্য শোক পালন করতে চায় তাকেও সেটা করতে দেওয়া উচিৎ !
একটা অন্যায় দিয়ে কখনই আরেকটা আরেকটা অন্যায় জাস্টিফাই করা যায় না । আওয়ামীলীগ আপনার উপরে যে অত্যাচার করেছে বলে আপনিইও তাদের প্রতি একই অত্যাচার করবেন তাহলে আওয়ামীলীগ আর আপনার ভেতরে কোন পার্থক্য থাকল না। এই সহজ কথাটা যেন আমি আপনি ভুলে না যাই ।