somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও আমাদের প্রিয় বন্ধু রাষ্ট্র :D

২৫ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যোগাযোগ যে কোন উন্নত সভ্যতার লাইফলাইন। এই কথা কেউ অস্বীকার করবে না, করছেও না এখানে। পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে আমাদের কি যোগাযোগ নেই? রেল, স্থল এবং বিমান যোগাযোগ তো রয়েছে আমাদের। এই রুট দিয়ে যেমন মানুষ চলাচল করে, তেমনি মালামালও আনা নেওয়া হয়, ব্যবসা বানিজ্য চলে। স্থলবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ মালামাল প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে। রেলের কথা বললে, ৫টি ট্রেনের মধ্যে তিনটি দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হয় এবং দুইটি দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়া হয়। এই যোগাযোগ নিয়ে কি কারো কোন আপত্তি রয়েছে? নেই। কিন্তু নতুন ট্রানজিট নিয়ে আপত্তি কেন?

একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়!
ধরুন জামান সাহেবের বাড়ি চারদিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। বাড়িতে তার পরিবার-পরিজন থাকে। তারা মূল গেট দিয়ে বাইরে যায়, বাইরের লোকজনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এখন জামান সাহেবের মনে হলো আমি এই সম্পর্ক আরও বাড়াব। তিনি তখন কী করলেন, নিজের বাড়ির ঠিক মাঝ বরাবর একটা রাস্তা তৈরি করলেন। তারপর ঘোষণা দিলেন, "ভাইয়েরা, আমি আপনাদের অনেক ভালবাসি। আপনারা এইবার আমার বাড়ির মাঝ দিয়ে, এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন।" বর্তমান বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের ট্রেন যাওয়ার ব্যাপারটাও ঠিক একই রকম!

ম্যাপ খুলে দেখলে আপনি দেখতে পাবেন, আমাদের দেশের পূর্বাংশে ভারতের যে সাতটি রাজ্য রয়েছে, সেই রাজ্যগুলোতে যাওয়ার স্থল পথটা কেবল একটা। সরু একটা পথ দিয়ে যেতে হয়। চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন।



কলকাতা থেকে যে কোন পণ্য স্থল পথে এই সেভেন সিস্টারে যেতে হলে এই সরু পথ দিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘ লম্বা একটা পথ। এছাড়া এখানে নেপাল, ভুটানের সীমান্ত রয়েছে। একটু দূরে চীনও রয়েছে। একটা মাত্র যাওয়ার পথ, আবার তিন দেশের সীমান্ত। ভারত এই পথের উপর চাপ কমানোর জন্য বাংলাদেশের উপর দিয়ে পণ্য নিয়ে যাওয়ার আবদার করে আসছিল অনেক দিন ধরে। এখনও পর্যন্ত যতদুর শোনা যাচ্ছে যে ভারত হয়ে দর্শনা থেকে চিলাহাটি হয়ে ভারতে ঢুকবে ট্রেন ।



এই চুক্তির ফলে ভারতের লাভ সবচেয়ে বেশি। কেবল মাত্র ভারতকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশের পণ্য রেলপথে ভারতে আগেই যেত, এই চুক্তির আগেই। যেখানে ভারতের পণ্য, ভারতীয় মানুষ আমাদের দেশে আসে এবং আমাদের পণ্য ও আমাদের দেশের মানুষ ভারতে যায়। যোগাযোগ, আন্তদেশীয় ব্যবসা বৃদ্ধি হবে- এই ধরনের ভূগোল বুঝানোর চেষ্টা করবেন না। সবাই আপনাদের মতো দালাল আর পা চাটা মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মায়নি। এই ট্রেনে কেবল মাত্র ভারতের মালামাল ভারতের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবে। বাংলাদেশের মালামাল যাবে না । বুঝেছেন কথাটা?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশ যদি নেপাল আর ভুটানে এমন একটা রেল ট্রানজিট চায়, ভারত কি সেটা দেবে? সম চুক্তি এভাবে হয়। "ঠিক আছে তুমি আমার দেশের উপর দিয়ে তোমার সুবিধার জন্য পণ্য নিয়ে যাচ্ছ, আমাকেও তোমার দেশের উপর দিয়ে আমার পণ্য নিয়ে যেতে দিতে হবে।" এমন কিছু হয়েছে? কিংবা হওয়ার কোন সম্ভবনা আছে? ২০১১ সালের দিকে কী না এক চুক্তি হয়েছি তা আজও বাস্তবায়িত হয়েছে?

এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী, একটা দেশ যদি অন্য আরেকটা দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য আরেকটি দেশে পণ্য আনা-নেওয়া করতে চায়, তাহলে মধ্যবর্তী দেশটি ট্রানজিট সুবিধা দিতে বাধ্য। কিন্তু যদি একটি দেশ অন্য একটি দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নিজের দেশের অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে চায়, তাহলে সেই মধ্যবর্তী দেশটি ট্রানজিট সুবিধা দিতে বাধ্য নয়। এখানে খেয়াল করুন, বাংলাদেশ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য সরবরাহের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আসছে, কিন্তু ভারত সেটা দেয়নি। এটা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, অথচ দেয়নি। আর যেটা ভারতকে দিতে বাধ্য নয়, সেটাই দেওয়া হয়েছে! নাইস না ব্যাপারটা?

ভারতের ট্রেন রুট চালু হলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কথা বাদই দিলাম, অন্য যে বড় সমস্যাটা আমাদের দেশের মানুষ ফেস করবে সেটা হচ্ছে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়। আমাদের দেশে ট্রেন লেট করে আসার তো একটা ঐতিহ্য রয়েছে, আমরা সবাই জানি। যদি ভারতের ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে দেশের উপর দিয়ে, তাহলে এই সিডিউল বিপর্যয় বাড়বে আরও বহুগুণে!

যারা ট্রেনে নিয়মিত চলাচল করেন তারা ক্রসিং নামের ব্যাপারটার সাথে পরিচিত আশা করি। যারা জানেন না তাদের কাছে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি! আমাদের দেশের বেশির ভাগ রেলপথই সিঙ্গেল ট্র্যাক। একটাই যাওয়ার পথ। এখন যখন দুইটা ট্রেন মুখোমুখি আসে তখন কিভাবে পার হয়? ঢাকা থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস রাত বারোটার দিকে রওয়ানা দেয় চুয়াডাঙ্গার দিকে। অন্য দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস সাড়ে বারোটার দিকে রওয়ানা দেয় ঢাকার দিকে। এখন বেনাপোল এক্সপ্রেস রাজবাড়িতে এসে থেমে থাকে। কারণ এরপর সিঙ্গেল ট্র্যাক। সুন্দরবন এক্সপ্রেস যত সময় না রাজবাড়ি ক্রস করে চলে যায়, তত সময় বেনাপোল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়েই থাকে। কখনও সেটা ২০ মিনিট কখনও সেটা ৪০/৫০ মিনিট। আমাদের দেশের রেলের সিডিউল বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এই ক্রসিং। পদ্মা সেতুর ফলে এই নতুন রেলপথে এই একটি মাত্র ক্রসিংয়ের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। কারণ এখনও এই রুটে বেশি ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি। সামনের মাস থেকেই আরও তিনটি ট্রেন চালু হবে। মানে ক্রসিংয়ের পরিমাণ বাড়বে। আগে যখন ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকা আসতাম, তখন অন্তত তিন চারটি ক্রসিং পার হতে হতো। সাড়ে ৫ ঘণ্টার জার্নিতে অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেট! এই নতুন রুটে এখনও পর্যন্ত আমি সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা লেট ফেস করেছি।

ক্রসিংয়ের একটা সাধারণ নিয়ম হচ্ছে যে ট্রেনটি ক্রসিং পয়েন্টে আগে আসবে সে অপেক্ষা করে অন্য ট্রেন ক্রস করে চলে যাওয়া পর্যন্ত। কিন্তু এই নিয়মের ব্যতিক্রম হচ্ছে মৈত্রী এক্সপ্রেস, যা ভারত যায়। ওটা কারো জন্য অপেক্ষা করে না, সবাই ওটাকে সাইড দিয়ে চলে। খুব স্বাভাবিকভাবে ভারতের ট্রেনও একই সুবিধা পাবে। আপনারা হয়তো জানেন না যে ভারত আমাদের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে, যেখানে আমাদের দেশীয়দের থেকে তারা বেশি অগ্রাধিকার পায়। মানে হচ্ছে, দুই দেশের জাহাজ আসলে আগে তাদের পণ্য খালাস করা হয়, তারপর আমাদেরটা!

এই সমস্যা সমাধানে একটা বড় উপায় হচ্ছে এদেশে যতগুলো সিঙ্গেল ট্র্যাক রয়েছে সেগুলোকে ডাবল ট্র্যাক করা। অন্তত ভারতীয় ট্রেন যে রুটে চলাচল করবে সেই রুটের সম্পূর্ণটা ডাবল ট্র্যাক করতে হবে এবং এটা ভারতকে করতে হবে। সুবিধা তার, সে তার নিজের পণ্যের জন্য ট্রেন ব্যবহার করবে, তার চলাচলের রাস্তা কমে আসবে অর্ধেকের বেশি। এই ট্রেন লাইন বসাতেও হবে তাকেই। যদি এমনটা হয়, তাহলে আমাদের রেল এবং দেশের জন্য ভাল একটা ডিল হতে পারত। কিন্তু আমাদের কূটনীতি কি সেটা করতে পেরেছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×