প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব
এগারো
দুপুরের এই সময়টা রাস্তায় গাড়ির পরিমান কম থাকে । কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে সব গাড়ি রাস্তায় নেমেছে । তীব্র জ্যাম সৃষ্টি হয়েছে । নাকি আমার মনেই এমন মনে হচ্ছে । রাস্তাঘাট আমার কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে ! সব কিছু অপরিচিত ঠেকছে । আমি জোরে জোরে দম নিচ্ছি কেবল ! কত সময় ধরে দৌড়াচ্ছি আমি বলতে পারবো না । একটু আগে একটা সিএনজিতে ছিলাম । তবে সেটা ছেড়ে দিয়েছি । জ্যামের ভেতরে আটকে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো । আমার কেবল মনে হচ্ছে আমার এখন নিকিতার কাছে পৌছাতে হবে ।
আজকে কাটাবনের কাছে একটা সম্মেলন ছিল । সেখানে বক্তিতা দেওয়ার সময় নিকিতার উপর হামলা হয়েছে । স্নাইপার দিকে কেউ ওকে গুলি করেছে । এর বেশি কিছু কেউ জানে না । ওকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । কত টুকু আঘাত পেয়েছে সেটা বলা যাচ্ছে না । সংবাদটা শোনার সাথে সাথে আমার বুকের ভেতরে একটা তীব্র আকুলতা দেখা দিয়েছে ওকে দেখার জন্য । ওকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু কেউ ফোন ধরে নি । আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি । আমার কেবলই এখন মনে নিকিতাকে নিজের চোখে না দেখতে পারলে আমার শান্তি নেই ।
ওর বাসার সামনে যখন পৌছালাম ততক্ষনে সামনে প্রচুর ভীড় জমে গেছে । আমি ভীড় ঠেকে গেটের কাছে এসে হাজির । অন্য সবাইকে ভেতরে ঢুকতে না দিলেও আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিল । আমি এর আগেও এই বাসায় এসেছি কয়েকবার । তাছাড়া আমাকে সবাই মোটামুটি চেনে । দরজা ঠেকে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম ঘরের ভেতরে কয়েকজন মানুষ রয়েছে । এক পাশে সোফার নিকিতা বসে আছে । আমি ভেতরে ঢুকতেই সবার চোখ আমার উপর পড়লো । নিকিতাকে দেখলাম উঠে দাড়ালো । ওর বাবাকেও দেখতে পেলাম ।
আমি জানি না আমার ভেতরে কি হল আমি সবার সামনে গিয়েই নিকিতাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম । যদিও কাজটা কতখানি ঠিক হল আমি জানি না তবে মনে হল এটা না করলে যেন আমি শান্তি পাবো না । প্রথমে কিছু সময়ে আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হল না । আমার বুকের ভেতরের আন্দোলনে কারনে আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না । একটা সময় নিকিতা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করলো, আরে বাবা আমার কিছু হয় নি । বিশ্বাস কর ! কিচ্ছু হয় নি ! এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি !
কত সময় পড়ে আমি নিজেকে নিকিতার থেকে আলাদা করেছিলাম মনে পড়লো না । তবে তখন তাকিয়ে দেখি ঘর ততক্ষণে একদম ফাঁকা হয়ে গেছে । সবাই রুম ছেড়ে চলে গেছে । আমার মুখের ভাব দেখে নিকিতা বলল
-এমন বাচ্চাদের মত আচরন করে কেউ ? সবার সামনে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলে ! আমি লজ্জায় শেষ !
আমি ততক্ষণে একটু সামলে নিয়েছি । নিকিতাকে বললাম
-সরি ! আসলে আমি ...
-তুমি কি ?
-জানি না । নিজেকে ধরে রাখতে পারি নি । বারবার মনে হচ্ছিলো যদি তোমার কিছু হয়ে যেত.....
আমার কথা বলার ভাবটাই এমন ছিল নিকিতা আমার দিকে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর আমার ঠোঁটে চুমু খেল খুব গভীর ভাবে ! একটা পর্যায়ে ও আমাকে নিয়ে ওঠে আরও ভেতরের ঘরে ! আরও তীব্র ভাবে দুজন দুজন কে ভালবাসতে শুরু করলাম !
সন্ধ্যার পরপরই নিকিতা সাংবাদিকদের জানালো যে সব কিছু ঠিক আছে । তার শরীরের কোন আঘাত লাগে নি । হামলা হয়েছিলো তবে স্নাইপার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে । কে এই হামলার পেছনে আছে সেটা সে ঠিকই খুজে বের করবে । সে মোটেই এই হামলার কারনে ভীত হয়ে পড়ে নি । তার কাজ সে করেই যাবে । এবং আরও বেশি উদ্দম আর সততার সাথে ।
রাতে আমি নিকিতার বাসাতেই থেকে গেলাম । আমার আসলে ওকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করছিলো না । ওকে যে কতখানি ভালবাসতে শুরু করেছি সেটা আমি আজকে আরও ভালবাসে উপলব্ধি শুরু করেছি । রাতে ওর ঘরের ঝুল বারান্দায় বসে বসে দুজন গল্প করতে লাগলাম ।
কফির মগ হাতে নিয়ে নিকিতা বলল
-এই যে প্রফেসর সাহেব, আপনি যে কাজটা করলেন এতো গুলো মানুষের সামনে সেটা কি ঠিক হয়েছে ? আমার বাবা ছিল বাবার কয়েকজন বন্ধু পর্যন্ত ছিল । তারা কি মনে করলো ?
-যা মনে করে করুক ! আমার বউ বলে কথা !
-এখনও বউ হই নি !
-হও নি, হবা ! ইনফ্যাক্ট খুব জলদি । আমি তোমাকে নিজের বউই মনে করি । আর তুমিও যদি তা নাই ভাববে তাহলে ঐ কাজ....
আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নিকিতা বলল
-এই বেয়াদপ চুপ ....
-বাহ রে তুমি করতে পারবা আর আমি বলতে .....।
সাথে সাথেই দেখলাম নিকিতার মুখ লাল হয়ে গেল । ও বলল
-এবার কিন্তু ভাল হবে না । একদম চুপ ! ঐ সময়ে তোমার মাথা যেমন ঠিক ছিল আমারও না । ঠান্ডা মাথায় এসব কখনই হত না । বুঝলে !
আমি কিছু বললাম না । নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলল
-জানো,তোমার ঐ চেহারা দেখে আমারও আসলে ..... আমিও আসলে আামর আবেগ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারি নি । তুমি জানো আমি এই পুরো জীবনে আমার প্রতি কারো এতো তীব্র আবেগ দেখাতে দেখি নি । আমাকে অনেকে চেয়েছে কিন্তু আই গেস তোমার মত করে কেউ নয় । আমি যে তোমাকে সেদিন তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম মোটেই ভুল করি নি !
আমি ওর আরেকটু কাছে এসে আরেকবার চুমু খেলাম ওকে ! নিকিতা সেটাতে বাঁধা দিল না । তখন নাকি ওর মাথা ঠিক ছিল না কিন্তু এখন তো মাথা ঠান্ডা । এখনও নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার কোন লক্ষ্যন দেখতে পেলাম না !
পরের কয়েক দিন আমাদের আরও ঘন ঘন দেখা হতে লাগলো । মোটামুটি ও যেখানে যেত আমি কাজ না থাকলে সেখানে আমিও হাজির থাকতাম । একদিন রাত বারোটার দিকে তীব্র বৃষ্টির মাঝে ওর বাসার সামনে হাজির হলাম । ওকে ফোন করতেই ও জানলা দিয়ে কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর নিজেই নেমে এল । দুজন ওদের বাসার সামনে খানিক সময় লাফালাফি করলাম । তখনই আমার মনে হল এই মেয়েকে আমার বিয়ে করতে হবে । এবং জলদিই বিয়ে করতে হবে । নিজের ভেতরেই একটা পরিকল্পনা করে ফেললাম ।
পরের সপ্তাহেই কাজটা করতে হবে । ওকে বললাম যে আমার পছন্দের রেস্টুরেন্টে ওকে নিয়ে আমি ডিনার করতে চাই । এর আগে দুবার আমরা গিয়েছি সেখানে । তবে আগের দুবারই নিকিতার মুখ ঢাকা ছিল ওড়না দিয়ে । এবার সেটা থাকবে না । আর ঠিক করেছি এবার ওকে আমি সবার সামনেই বিয়ের জন্য প্রোপোজ করবো ।
ঠিক সময় মতই ও হাজির হল । ওকে আসতে দেখে অনেকেই অবাক হল । কয়েকজন ওর সাথে এসে ছবি তুলল । অনেকে অটোগ্রাফও নিলো । এমনটা হবে আমি জানতামই । তাই মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর আসলে কিছু করার নেই । যখন সময় পেলাম তখন আমি ম্যানেজারকে ইশারা করলাম । সে হঠাৎই রেস্টুরেন্টের আলো খানিকটা কমিয়ে দিল । সেই সাথে নিকিতার সব থেকে পছন্দের গানটা বেজে উঠলো মৃদু স্বরে । নিকিতা অবাক হয়ে বলল
-কি ব্যাপার কি হচ্ছে ?
আমি ওকে আরও খানিকটা অবাক করে দিয়ে ঠিক ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলাম । পকেট থেকে আংটি বের করে ওর সামনে বাড়িয়ে দিলাম । বললাম
-মাই ডিয়ার হোম মিনিস্টার তুমি কি আমার ঘরের হোম মিনিস্ট্রির দায়িত্ব নিবে ?
নিকিতা কিছু সময় তাকয়ে রইলো আমার দিকে । ওর চোখে আমি পানি দেখতে পেলাম । চারি দিকে তখন সবাই চুপ করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে ! এমন কি গানও বন্ধ হয়ে গেছে । পুরো রেস্টুরেন্টে একটা পিন পতন নিরবতা ।
নিকিতা কিছু বলবে এর আগে ঢং ঢং করে ঘড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম । আওয়াজটা যেন একটু বেশিই তীব্র মনে হল আমার কাছে । সেই সাথে কোথাও কাচ ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে পেলাম আমি । সাথে সাথেই একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম আমি । আমার বুকের ভেতরে যেন আগুন ঢুকে পড়েছে ।
আমি আংটিটা তখনও হাত দিয়ে ধরে রেখেছি । তবে নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না । চোখটা চলে গেল আমার নিজের বুকের দিকে । এই রকম আলোতেও সাদা শার্টে লাল রক্ত চিনতে অসুবিধা হল না আমার ।
কেউ আমাকে গুলি করেছে !! আমি মারা যাচ্ছি !
মাটিতে ঢলে পড়ার আগে নিকিতার চিৎকার শুনতে পেলাম কেবল । চোখ বন্ধ হওয়ার আগে নিকিতাকে দেখলাম আমার দিকে এগিয়ে আসতে । একেবারে চোখ বন্ধ করার আগে কেবল একটা কথাই মনে হল, নিকিতা কি "হ্যা" বলেছিলো !
বারো
আমি নিজেকে এমন একটা স্থানে আবিস্কার করলাম যেখানে এর আগে কোন দিন আসি নি । জায়গাটাকে আম মোটেই চিনতে পারছি না। এখানে কিভাবে এলাম সেটাও বুঝতে পারছি না । সামনে কিংবা পিছনে যেদিকেই তাকাই না কেন কোন কিছুই ঠিক পরিস্কার বুঝতে পারছি না । চারিদিকে কেমন ধোয়া ধোয়া ভাব দেখা যাচ্ছে ।
আমি একটা বেঞ্চে বসে আছি । কত সময় ধরে বসে আছি সেটা আমি বলতে পারবো না । আর কেনই বা বসে আছি সেটাও ঠিক বলতে পারবো না । আমি কেবল বসে আছি !
একটা সময়ে দেখতে পেলাম কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসছে । দুর থেকেই বুঝতে পারছি একটা মেয়ে ! জিন্স টিশার্ট পরা অবস্থায় ধির পায়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে । একবার মনে হল আমি উঠে গিয়ে মেয়েটার সাথে দেখা করি । তারপরই মনে হল আমার ওঠার কোন দরকার নেই । মেয়েটা তো এই দিকেই আসছে ।
মেয়েটা যখন আমার কাছে এল আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আর কেউ নয়, আমার প্রথম প্রেমিকা আইরিন !
আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । আইরিনের সাথে আমার শেষ কবে দেখা হয়েছিলো আমি মনেও নেই । ইণ্টারের পর আর দেখা হয় নি । এই মেয়ে কোথায় আছে সেটা আমি জানিও না । আইরিন আমার পাশে এসে বসলো ।
আইরিন আমার দিকে মিষ্টি করে হেসে বলল, এখনও আমার উপর রাগ করে আছো ?
আমি বললাম, এখানে এই প্রশ্ন ?
-না মনে হল ! আমার কেন জানি মনে হয় তুমি কোন দিন আমাকে ক্ষমা করবে না আমি যা করেছি তোমার সাথে !
কথা অনেকটাই সত্য । আমি হয়তো কোন দিনই মন থেকে আইরিনকে ক্ষমা করতে পারবো না । মনের ভেতরে একটা ঘৃণা বোধ রয়েই যাবে সব সময় । আইরিন বলল,
-এটার কারনে তুমি কোন দিন পরিপূর্ন সুখী হবে না । যতদিন আমাকে ঘৃণা করবে ততদিন তোমা শান্তি নেই ।
-তুমি শান্তি পাবে ? বিশেষ করে আমার সাথে ঐ আচরণ করার পরে ?
-না হয়তো ! আমার হয়তো সারা জীবন এর থেকে কোন মুক্তি নেই । এটা আমার কৃতকর্ম । এটার ফল আমাকে ভোগ করতে হবে । কিন্তু তুমি তো আর অন্যায় কর নি । তাহলে তুমি কেন কষ্ট পাবে শুনি ! তুমি চাইলেই এটা থেকে মুক্তি পেতে পারো !
-সো তুমি এখন আমার শান্তির জন্য ভাবছো ?
আইরিন কোন কথা না বলে উঠে দাড়ালো । তারপর হাটতে লাগলো । আমি কয়েকবার ডাক দিলাম তবে সে শুনতে পেল না যেন । না থেমে চলে গেল । দেখতে দেখতে দৃষ্টির অনেক দুরে চলে গেল । আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম । এই অদ্ভুদ স্থানে একা একা বসে থাকার চেয়ের আইরিনের সাথে বসে থাকাটা মন্দ ছিল না । ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছি অনেক দিন । এখন অবশ্য আর চাই না । তবে আইরিন সত্যই বলেছে । ওকে ঘৃণা করার কারনে হয়তো কোন দিন পুরোপুরি সুখী হব না । হঠাৎ কি মনে হল আমি আইরিনকে মাফ করে দিলাম । ওর প্রতি জমে থাকা সকল ঘৃণা ক্লেশ এক নিমিশেই মুছে দিলাম । মনে মনে বললাম তোমাকে মাফ করে দিলাম আইরিন । আমি এখন তোমার কাছ থেকে একেবারে মুক্ত !
এরপর অদ্ভুদ একটা ঘটনা ঘটতে লাগলো । আমার জীবনে আমি যে সব মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছি তারা হঠাৎ হঠাৎ আমার সামনে আসতে লাগলো । যাদের সাথে আমার অনেক দিন দেখা হয় নি, অনেক পুরানো বন্ধু বান্ধব, পরিচিত মানুষ যাদের আচরনে আমি কষ্ট পেয়ে তাদের কাছ থেকে নিকেজে গুটিয়ে নিয়েছি এমন অনেক মানুষ আমার সামনে হাজির হতে লাগলো । সবাইকে আমি আস্তে আস্তে ক্ষমা করে দিলাম । তাদের প্রতি জমে থাকা রাগ গুলো মুছে যেতে লাগলো ধীরে ধীরে !
কি হচ্ছে এই সব এখানে !
যখন খানিকটা অস্থির হয়ে যেতে শুরু করেছি তখনই আমি নিকিতাকে দেখতে পেলাম । আমার দিকে হাসি মুখে এগিয়ে আসছে !
এই মেয়েটার উপর তো আমার কোন রাগ নেই । তাহলে এখানে কেন আসছে ?
নিকিতা সামনে এসে বলল
-কি জনাব ! এখনও বসে আছেন ?
আমি কিছু না বলে কেবল মাথা ঝাকালাম । নিকিতা বলল
-আসুন ! অনেক কাজ হয়েছে । এখন বাসায় যাওয়ার সময় হয়েছে !
-বাসায় !
-হুম !
এই বলে নিকিতা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল । আমি ওর হাতটার দিকে কিছু সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । ওর হাতের অনামিকায় একটা আংটি দেখা যাচ্ছে । অংটিটা আমার কাছে খুব বেশি মনে হচ্ছে । কিন্তু আমি ঠিক মনে করতে পারছি না আমি কোথায় দেখেছি ! আমার মনের ভেতরে খুব অস্থির লাগতে লাগলো । আমার পুরো পৃথিবী যেন কেঁপে উঠলো ।
তখনই আমি জেগে উঠলাম ।
চোখ মেলে কিছু সময়ে ঠিক বুঝতে পারলাম না আমি কোথায় আছি । সাদা ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলাম বেশ খানিকটা সময় । আমার নিজের ঘরের সিলিংটা ঠিক সাদা নয় । আমি এখানে কিভাবে এলাম !
কয়েক সেকেন্ড পরেই আমার সব কিছু মনে পড়ে গেল । আমি নিকিতার সাথে রেসন্টুরেন্টে ছিলাম । ওকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম ও কখন হ্যা বলবে । ঠিক সেই সময়ে আমি একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করি । নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানটা লাল রক্তে ভেসে যাচ্ছে । কেউ আমাকে গুলি করেছে ।
গুলির আওয়াজ শুনি তবে একটা কাঁচ ভাঙ্গার আওয়াজের মত শুনেছি । সম্ভবত স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি করা হয়েছে !
আমি একটু নড়তে চেষ্টা করলাম । সাথে সাথেই সেই ব্যাথাটা অনুভব করলাম । মুখ দিয়ে একটু আওয়াজ বের হয়ে গেল । সাথে সাথেই একটা মুখ দেখতে পেলাম চোখের সামনে !
নিকিতা !
ওর চোখে পানি দেখতে পাচ্ছি । চোখ লাল হয়ে আছে । নিশ্চয়ই ঘুমায় নি ।
নিকিতা কোন কথা বলছে না । কেবল আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমি কোন মতে বললাম
-তুমি কি হ্যা বলেছিলে ?
নিকিতা চোখে পানি নিয়ে হেসে ফেলল । তারপর ওর অনামিকাটা আমাকে দেখালো । ওখানে আমার দেওয়া আংটি টা দেখা যাচ্ছে ।
নিকিতা বলল
-যদি কিছু হয়ে যেত তোমার খবর ছিল ! আমি বিয়ের আগে মোটেই বিধবা হতে চাই না । হতে দিবোও না !
হতে দিবো না শব্দে নিকিতার জোর দেওয়া দেখে আমার ভাল লাগলো । তবে ভাল লাগলো যে আমি বেঁচে আছি । হয়তো খুনি নিকিতাকে নিশানা করেছিলো । আমি মাঝ পথে পড়ে গেছি । এমনটা একটা রিস্ক যে থাকবে সেটা আমি অনেক আগে থেকেই জানি । অতীতে আমাদের দেশে এমন হামলা হয়েছে । বিশেষ করে যারা সত্যি সত্যটি দেশের জন্য কাজ করতে যায় তারা অনেকের কুনজরে পড়ে যায় সব সময় । অনেকে অস্বস্থির কারন হয়ে দাড়ায় । নিকিতার কথা বলার অপেক্ষা রাখে না । নিকিতা যে কত মানুষের অস্বস্তির কারন সেটা সবাই জানে । এবং তারা বেশ ক্ষমতাবান মানুষ ।
নিকিতা আরও কিছু বলতে গেল কিন্তু তার আগেই আমি মায়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম । একটু মাথা কাত করে দেখি মা আর বাবা দরজা দিয়ে ঢুকছে ।
আমার দিকে তাকিয়ে কিছু সময় মা বিলাক করলো । তার বেশির ভাগই নিকিকে দোষারোক করে । আমার এইপরিস্থিতির জন্য নিকিতা দায়ী সেটা সে কোন প্রকার রাকঢাক না করেই বলতে লাগলো । নিকিতার দিকে তাকিয়ে দেখি সে মুখ কালো করে দাড়িয়ে আছে । কোন কিছু বলছে না । এক পর্যায়ে বাবা মায়ে থামালো । তারপর নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তুমি মা এখন বাসা যাও । গত চারদিনে একবারও এই রুমের বাইরে যাও নি । তুমি গুরুত্বপূর্ন পদে আছো । সব কিছু ফেলে এখানে বসে থাকাটা মানায় না ।
আমি নিকিতার দিকে তাকালাম । নিকিতার চেহারা দেখেই প্রথমে মনে হয়েছিলো যে ও যেন নিজের ভেতরে নেই । পুরোটা সময় সে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে আমার পাশে বসে ছিল । নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো তারপর বলল
-আমি আসি !
-আচ্ছা !
নিকিতা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-এভাবে বলার দরকার ছিল মা ?
-শোন যা বলেছি ঠিকই বলেছি । আমি এই জন্য রাজনৈতিকদের দেখতে পারি না । তুই বল আজকে ঐ মেয়ে যদি তোর জীবনে না আসতো তাহলে এসব কিছু হত ?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম না । এক হিসাবে মায়ের কথা ঠিকই আছে । মা আবার বলল
-আমি কিছু জানি না । এই মেয়ের সাথে আমি তোর মেলামেশা করতে দিবো না ।
আমি বললাম
-দেখো এসব বলে লাভ নেই । যা হবার হবে । এটা নিয়ে আমি ভাবতে চাই না । আমি নিকিতাকে ছাড়বো না ।
-হ্যা এখন তা ছাড়বা কেন ? তুমি নায়ক হয়েছো । মরবা তবুও নায়িকাকে ছাড়বা না ! আমরা কে ? বুক খালি হলে তো আমার হবে অন্য কারো হবে না ! কিন্তু আমার কথা ভাবে কে !
মা এই কথা বলতে বলতে ঘর ছেড়ে চলে গেল । আমি বাবার দিকে তাকিয়ে রইলাম । বাবা একটু একটু হাসলো । তারপর আমার পাশে এসে বসলো । বলল, তোমার মায়ের মাথা একটু গরম হয়ে আছে । কি করবি বল । তবে নিকিতাকে আমার পছন্দই হয়েছে । শুরু থেকে মনে হয়েছিলো মেয়েটা হয়তো টাইমপাশ করছে কিন্তু গত চার দিনে বুঝেছি যে মেয়েটা সত্যিই তোকে ভালবাসে । একটা মিনিটের জন্য তোকে চোখের আড়াল করে নি । সব সময় তোমার সামনে ছিল । ঠিক মত খায়ও নি কিছু । এর ভেতরে অনেকে এসে তোকে দেখে গেছে । এমন এমন সব মানুষ যে আমি কোন কল্পনাও করি নি । পিএম অফিস থেকে আমার ফোনে ফোন এসেছে । বুঝতে পারছিস ব্যাপারটা ?
আমি হাসলাম ! বললাম, হুম !
পরের কটা দিন শান্ত ভাবেই কেটে গেল । রাতে নিকিতা আসতো । সারা রাতই বসে থাকতো আমার রুমে । আমি ঘুমানোর থেকে ঘুম ভাঙ্গা পর্যন্ত নিকিতাকে দেখতে পেতাম । মায়ের সাথেও নিকিতার দেখা হত । মা চুপ করে থাকতো । এমন একটা ভাব করতো নিকিতাকে যে যেন দেখেই নি । বিয়ের আগেই বউ শ্বাশুড়ির লড়াই শুরু হয়ে গেল ।
কিন্তু একদিন খুব অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলো । তখনও নিকিতা আসে নি । মা একটু আগে বাড়ির দিকে গিয়েছে । বাবা সম্ভবত আছে তবে রুমে আমি একলাই ছিলাম । এমন সময় একজন নার্স ঘরে ঢুকলো । তার মুখে একটা মাস্ক পরা তাই চেহারা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না । মেয়েটা আমার কাছে এসে আমার রিপোর্ট দেখার ভান করে আমার সামনে এসে দাড়ালো । তারপর একটা ছবি আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । আমি তাকিয়ে দেখি একটা জনসভার ছবি । নিকিতার জনসভা । সামনের দিকে বেশ কিছু মানুষকে দেখা যাচ্ছে । একটা মাথার উপর গোল দেওয়া আছে । আমি কৌতুহল নিয়ে নার্সের দিকে তাকালাম । নার্স বলল, গোল সার্কেল দেওয়া মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছেন ?
-হ্যা ।
-এই মানুষটা আপনাকে গুলি করেছে ।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা আবার বলল
-লোকটা আপনার হোম মিনিস্টারের দলের লোক । সার্প সুটার । এর আগেও এই কাজ করেছে । তবে তার উপর দলের নেক নজর থাকায় আমরা কিছু করতে পারি নি ।
-আমরা মানে ? আপনারা কারা ?
মেয়েটা সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল
-গত কালকে এই লোকটা মারা গিয়েছে এনকাউন্টারে ! এতোই গোপন ছিল যে আমিও কিছু জানতে পারি নি । আপনার উপর আবারও হামলা হবে মিস্টার অপু ! এইবার সে তারা ভুল করবে না !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-আপনি কে ? কি বলছেন এসব ?
-আমাকে আপনি চিনবেন না । তবে আপনি এমন কাউকে চিনেন যে আমাকে চিনে ?
-কে ?
মেয়েটা কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-আমি রিদির বন্ধু । আমরা এক সাথে পড়াশুনা করেছি । ও ইউনিভার্সটিতে গিয়েছে আমি ডিবিতে এসেছি । দেশে ছাড়ার আগে ও আমাকে আপনার ব্যাপারে বলেছে । যাই হোক আমার এখন যাওয়া দরকার । আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করবো । যদিও খুব একটা কিছু করার নেই আমার হাতে তবে অন্তত সাবধান করতে পারবো আপনাকে । আপনার পতিপক্ষ বড় শক্ত আর ক্ষমতাবান ।
মেয়েটা আর দেরি না করে চলে গেল গেল । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার চলে যাওয়া পথের দিকে । কি বলে গেল মেয়েটি ! রিদির বন্ধু মেয়েটা ! আর আমাকে যে গুলি করেছিলো সে নিকিতার দলের ছত্রছায়ার মানুষ হওয়া এক স্যুটার !!
আমার ঠিক বিশ্বাস হল না ব্যাপার টা ! না এসব হতে পারে না । মোটেই পারে না !
তের
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও আমার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও মাস খানেক সময় লেগে গেল । সারাটা দিন আমি বাসাতেই থাকতাম । বই পড়ে টিভি দেখে সময় কাটছো । আর কাটতো অনলাইন ব্রাউজিং করে । এই কদিনে আমি দেশের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছি । আমাকে নিয়ে অনেক গল্প চালু হয়ে গেছে ।
তার ভেতরে একটা গল্প হচ্ছে ঐদিন আসলে নিকিতাকে মারার জন্য গুলি করা হয়েছিলো । আমি সেটা বুঝতে পেরে নিজের শরীর পেতে দিয়ে তাকে রক্ষা করেছি । এই গল্পটা পাবলিক সব থেকে বেশি গিলেছে । কেবল ফেসবুক পোস্টই নই বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে এই নিউজ ছাপা হয়েছে । আমার কিছু স্টুডেন্ট কলিগেরা আমাকে ট্যাগ দিয়ে সেই নিউজ শেয়ারও দিয়েছে । তারা খুব প্রাউড ফিল করতেছে আমাকে নিয়ে ।
আমি মনে মনে না হেসে পারি নি । তবে আমি এই টুকু বুঝতে পারলাম না যে আমি আগের সহজ সরল লেকচারার নেই । আমি এখন পাবলিক ফিগারে পরিনত হয়েছি । মানুষজন আমাকে এখন চেনে । হাসপাতালে থাকা কালীন বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ আমাকে দেখতে এসেছিলো । বাসায় আসার পরেও বেশ কিছু মানুষ এসেছে । আমাদের ক্যাম্পাসে অনেকে এসেছে । একদিন সেই ছাত্রনেতা কামাল আফসার এসে হাজির । আমার সাথে খুব হাসিখুশি ভাবে কথা বলল । আগে কি হয়েছে সেসব ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলল । সাথে এও বলে গেল যে ক্যাম্পাসে আমার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব নাকি তার । আমার উপর আর হামলা হবে না এটা নিশ্চিত করে গেছে ।
নিকিতার আচরন সব থেকে বেশি পরিবর্তন হয়েছে । আগে তো একটু রেখে ঢেকে আমার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে আসতো এখন আর সেব কিছু নেই । আমার বাসার সামনে সব সময় একটা পুলিশের গাড়ি অপেক্ষা করে । কেবল আমিই না, আমার পরিবারের যে কেউ বাইরে গেলেই তার পেছন পেছন পুলিশ থাকে । মা একদিন নিকিতা খুবই বিরক্তি নিয়ে এই কথা বলল । তার পেছনে পুলিশ থাকে সব সময় এটা তার পছন্দ না । আমি ভেবেছিলাম নিকিতা এই প্রশ্নের জবাব দিবে না কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে নিকিতা বলল
-দেখুন আমি আপনি পছন্দ করেন কিংবা না করেন এটা আমি করবোই । আমি ওখানে ছিলেন না । আমি ছিলাম যখন অপু আমার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল । এটো ক্ষমতা থাকার পরেও আমার সেদিন কি পরিমান অসহায় লেগেছিলো সেটা আমি আপনাকে বোঝাতে পারবো না । এমনটা আমি আর হতে দিবো না । কোন ভাবেই না । অপুর এবং আপনাদের সবার নিরাপত্তার ব্যাপারটা সবার আগে এখন আমার কাছে ।
নিকিতার কন্ঠে কিছু একটা ছিল । মা দেখলাম আর কিছু বলল না । হাসপাতালে নিকিতা প্রতি রাতেই আমার কাছে আসতো । রাত টুকু ক্যাবিনেই থাকতো সে । সকালে আবার চলে যেত । বাসায় আসার পরেও প্রায় প্রতিদিন রাতেই সে আমার বাসায় আসে । রাতের খাবার আমরা এক সাথে খাই । আমার মা আর নিকিতার মাঝে একটা ঠান্ডা বউ শ্বাশুড়ির লড়াই চলছে । তবে মা নিকিতাকে কেন জানি সহ্য করে নিয়েছে । এমন একটা ব্যাপার আছে না যে ছেলে প্রেম করে বিয়ে করেছে কিন্তু মায়ের সেটা পছন্দ না । কিন্তু কিছু বলতেও পারছে না । আমার বাসার পরিস্থিতি হয়েছে তেমন ।
আরেকটা পরিবর্তন হয়েছে । সেটা হচ্ছে দেশের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে । গুম খুন আর ছিনতাইয়ের পরিমান অনেক কমে গেছে । নিকিতা তার ফেসবুক থেকে একদিন এই কথাই পোস্ট দিয়েছিলো । সে লিখেছিলো যে কাছের কেউ যখন আহত হয়ে পড়ে থাকে তখন কেমন লাগে সেটা সে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে । এমটা যেন দেশের আর কাউকে বুঝতে না হয় সেটার ব্যবস্থা সে করবে । এবং তাই করতে লাগলো । সত্যিই সত্যিই অবস্থার উন্নতি হতে লাগলো । তবে সেই সাথে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতে লাগলাম যে বিরোধী দলের লোকজন একটু যেন বেশিই দৌড়ের উপর আছে । মাঝে মাঝেই এই সংবাদ পত্রিকাতে দেখতে লাগলাম !
এরই মাঝে আরেকটা ঘটনা ঘটলো । আমার কাছে কুরিয়ারে আসা সেই ফোনটা বেজে উঠলো । আমি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম ।
-আপনি বাসায় আসেন না এখন ?
-হ্যা আছি । আপনাদের বাসার ছাদে আসুন !
এই বলে লাইন কেটে গেল । আমি কিছু সময় বোকার মত চেয়ে রইলাম মোবাইলের দিকে । তারপর আর কিছু না ভেবে ছাদের দিকে রওয়ানা দিলাম । ছাদে উঠে খানিকটা এদিক ওদিক তাকাতেই দেখলাম একটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । ছাদের সিড়ি ঘরের দিকেই আবার আমাকে যেতে ইশারা করলো । সিড়ির উপরেই আমরা দাড়ালাম । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময় । এই মেয়েটিই যে সেদিন হাসপাতালে নার্স হয়েছিলো সেটা বুঝতে পারলাম । আমি বললাম
-আপনি ! আজকে এভাবে বাসায় এসেছে । আজকে তো নিকিতা জেনে যাবে ?
মেয়েটি হাসলো । তারপর বলল
-জানতে পারে তবে না জানার সম্ভাবনাই বেশি । আপনাদের বিল্ডিংয়ের এইট সির বাসিন্দা ফকরুদ্দিন সাহেবের কাছে এসেছি আজকে । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য । যদিও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আপনার সাথে কথা বলা । বুঝতেই পারছেন ।
আমি মাথা নাড়ালাম । তারপর বললাম
-আপনি সে দিন যা বলেছিলেন আমার বিশ্বাস হয় নি ।
-না হওয়ার কথা । তবে আমি মিথ্যা বলি নি । শুনুন আপনার কোন দিন মনে হয় দেশের স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একজন সাধারন লেকচারার সাথে কেন প্রেম করছে ? এই সহজ প্রশ্নটা আপনার মাথায় আসে নি ?
এই প্রশ্ন যে আমার মাথায় আসে নি সেটা বলবো না । অনেকবার এসেছে । নিকিতা যদিও আমাকে বলেছিলো যে আমার সেদিনের আচরনই নাকি ওকে আমার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলো । পরে আমি আর এসব নিয়ে মাথায় ঘামাই নি । মেয়েটি বলল
-মানুষ নিজেদের মত মানুষকে পছন্দ করে । নিকিতা ম্যামের টার্গেট ছিল ইয়াং জেনারেশনের সমর্থন পাওয়া । আমি অবশ্যই বলবো না যে সে একজন খারাপ হোম মিনিস্টার । অন্তত আমার দেখা সব থেকে সেরা সে । তার কারনেই আমাদের পুলিশ সেক্টরটা আরও স্বচ্ছ আর কার্যকরী হয়েছে ।
এই কথাটা মোটেই মিথ্যা না । মেয়েটি বলেই চলল
-একবার কল্পনা করুন । এখন প্রত্যেক ছেলে মেয়ে স্কুল কলেজ থেকেই প্রেম করা, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় । তাদের একজন মন্ত্রীও যদি ঠিক তাদের মত আচরন করে লাইক প্রেম করতেছে বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা তাদের উপর কি ইম্প্যাক্ট পরবে । ইয়াং জেনারেশন সেই মন্ত্রীকে নিজের মত করে ভাবতে শুরু করবে এমন একজন সে তাদের মত । এই প্যারালাল সমর্থনের জন্য আপনি এসেছেন ।
আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । কিন্তু এটা মানতে ইচ্ছে করছিলো না । আবার এটার বিপরীতে কিছু বলতেও পারছিলাম না ।
মেয়েটি বলল
আমি নিজেও তাকে পছন্দ করি । চাই সেই যেন এই দায়িত্বে থাকুক । এই জন্য আমি কখনই তার বিপক্ষে যেতে পারবো না । কিন্তু অন্য দিক দিয়ে রিদির সাথে, আনার সাথে তিনি যা করেছেন সেটাও আমি ভুলতে পারছি না । আমি বললাম
-রিদির সাথে কি করেছে ?
-রিদিকে সে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে । আপনি জানেন কি না জানি না তবে রিদি আপনাকে সত্যিই পছন্দ করতো । আমার সাথে তার কথা হত, এখনও হয় । তাকে স্কলারশীপ দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছে । এমন একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে যেন সেন আগামী পাঁচ বছর সে দেশে আসতে না পারে ।
আমি অবিশ্বাসের চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটি বলেই চলল
-রিদির বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগটা একেবারে স্বচ্ছ ছিল না । সেটাও রিদি হয়তো ছেড়ে দিতো আপনার জন্য । কিন্তু ওর বাবার কারনে আসলে সে সব কিছু মেনে নিয়েছে । আপনি জানেন রিদির বাবা সরকারি কর্মচারি । তার কিছু দোষ ছিল । আমাদের দেশের যেই রকম অবস্থা । আপনি জানেন । আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে সব কিছুর প্রমান থাকে । রিদির বাবারটাও ছিল । রিদিকে কেবল বলা হয়েছে যেন সে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যায় দেশের বাইরে । দেশের কারো সাথে যোগাযোগ যেন না করে । বিশেষ করে আপনার সাথে । যদি সেটা সে না শোনা তাহলে তার বাবার উপর আলাদা ভাবে ইনকোয়ারি কমিশন বাসানো হবে । কম করেও হলেও দশ বছর জেলে যাবে সে । তার আর কি করার ছিল !
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । কোন কথা বের হচ্ছিলো না । মেয়েটি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো । তারপর বলল
-আমার এখন যাওয়া দরকার । আপনার উপর আবারও হামলা হতে পারে । হবেও মনে হচ্ছে । প্যারালাল সমর্থন নিকিতা ম্যাম পেয়ে গেছে । এখন তার চাই সিম্প্যাতি সাপোর্ট ! আপনি হচ্ছেন সব থেকে বড় টোপ সেটার জন্য । আমি আপনাকে বাঁচাতে পারবো না । সেই ক্ষমতা আমার নেই । আমি কেবল আপনাকে সাবধান করলাম ।
মেয়েটি আর কিছু না বলে চলে গেল । আমি সিড়িতেই বসে পড়লাম । আমার কিছু ভাল লাগছিলো না । বুকের ভেতরে কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছিলো । নিকিতা সত্যিই কি এমন করেছে আমার সাথে ? ও এটা কিভাবে করলো ?
কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সত্যিই অনুভব করতে পেরেছিলাম যে সে আমাকে ভালবাসে । তাহলে এই অনুভব কি মিথ্যা ছিল? আমার মন দুই দিকে ভাগ হয়ে গেল । একদিন বলল যে মেয়েটি যা বলেছে সেটা সম্পূর্ন মিথ্যা । মেয়েটিকে রিদি পাঠিয়েছে । আরেকদিক বলছে মেয়েটার আমাকে মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই । রিদিরও আসলে লাভ নেই । আমি রিদিকে ছেড়ে দেই নি । ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে !
আমি উঠে দাড়ালম । যে কোন কিছু বিশ্বাস করার আগে আমার আগে প্রমান বের করা দরকার ! হাতে প্রমাণ না পেয়ে আমি কোন কিছু বিশ্বাস করবো না । এবং কোন কিছু অবিশ্বাসও করবো না ।
অবশ্য সেই সুযোগ আমার চলেও এল সপ্তাহ খানেক পরে । নিকিতা সেদিন রাতে আমাদের বাসায় শাওয়ার নিতে গেল । শাওয়ার নিতে গেলে নিকিতার কম করেও হলেও আধা ঘন্টা সময় লাগে । ওর সাথে ওর ল্যাপটপ ব্যাগ ছিল । ও ভেতরে ঢুকতেই ল্যাপটপটা চালু করলাম । পাসওয়ার্ড দেওয়া দেখে আগ্রহ দমে গেল । নিজেকে গাধা মনে হল । ওর ল্যাপটপ যে পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকবে এটা জানাই ছিল । ল্যাপটপ টা আবার বন্ধ করতে যাবো তখনই কি মনে আমি পাসওয়ার্ড বক্সে আামর নিজের নাম লিখলাম । এবং আমাকে অবাক করে দিয়ে সেটা খুলে গেল ! আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছিলাম যে নিকিতা আমার নাম ওর ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করবে !
আমি সেদিকে কিছু তাকিয়ে থেকে তারপর একটার পর একটা ফোল্ডার খুজতে লাগলাম । খুব বেশি খুজতে হলও না । একটা ফোল্ডারে রেকোর্ডিং নামের বেশ কিছু ফাইল পেলাম । মিটিং, ফোন এই দুই ফোল্ডারে কম করে হলেও কয়েক হাজার ফাইল রয়েছে । মোট ১৭ জিবি । আমি বিন্দু মাত্র দেরি না নিজের পেন ড্রাইভে সেগুলো ট্রান্সফার করতে শুরু করলাম । এখন ১৫/২০ মিনিটের মত লাগার কথা ।
এর মাঝে যদি ও দরজা খুজে বের হয়ে আসে তাহলে আমার খবর আছে ! এই রেকোডিং গুলো অবশ্যই খুব সেনসেটিভ ব্যাপার । তবুও রিস্ক নিতেই হবে ।
যখন মাত্র অর্ধেক ফাইল ট্রান্সফার হয়েছে তখনই আমি দরজায় সিটকানি খোলার আওয়াজ শুনতে পেলাম । আজকে দশ মিনিট আগেই নিকিতা বের হয়ে আসছে!
ও মাই গড !
এখন কি হবে !
ও তো দেখে ফেলবে যে আমি ওর ল্যাপটপ চালু করেছি ! কি করেছি সেটা বুঝতেও বাকি থাকবে না !
এখন ?
চৌদ্দ
দরজার আস্তে আস্তে ফাঁক হচ্ছে আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি । বুকের ভেতরে একটা কাঁপন অনুভব করলাম । ধরা পরে যাওয়ার ভয় । নিকিতা যদি দেখতে পায় যে আমি ওর ল্যাপটপ থেকে কিছু জিনিস কপি করছে তাহলে কি হবে ?
এটা ওর ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ! একটা দেশের হোম মিনিস্টারের ল্যাপটপে এভাবে অবৈধ ভাবে ঢুকে পড়াটা অন্যায়ের ভেতরে পড়ে । কত গুরুত্বপূর্ন জিনিস সেখানে থাকতে পারে যেগুলো বাইরে প্রকাশ পেলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে ।
আমি ল্যাপটপের ঢাকনাটা বন্ধ করে দিলাম । তবে এখনও সেটা চালু আছে । ডেক্সটপ হলে পাওয়ার সুইচ অফ করলেই ঝামেলা শেষ হয়ে যায় কিন্তু ল্যাপটপে সেটা করতে পারবো না । এখন এটা বন্ধ করবো কিভাবে ?
দরজাটা একটু খুলে গেছে । তবে নিকিতা বের হয়ে এল না । তার বদলে ওর মাথা বের হয়ে এল । ওর মুখে পানি লেগে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল, অপু তোয়ালেটা দাও দেখি ! নিতে ভুলে গেছি !
আমি উঠে দাড়ালম । ডান দিকের চেয়ারের উপর সেটা রাখা ছিল । তোয়ালেটা হাতে নিয়ে একেবারে দরজার সামনে এল । বুকের কাঁপনটা ততক্ষণে কমে গেছে । নিকিতার কেবল মাথা দেখা যাচ্ছে । আমি হঠাৎ বললাম
-তোয়ালে নিতে হলে বাইরে বের হয়ে আসতে হবে !
নিকিতার মুখে একটা বিস্ময় দেখতে পেলাম । আমার কাছ থেকে যেন এই ধরনের কথা সে আশাই করে নি । বলল
-দুষ্টামী করবা বলে দিলাম !
-উহু ! কোন দুষ্টামী না । আমি সিরিয়াস ! এটা নিতে হলে বাইরে বের হয়ে আসতে হবে ।
-দেখো ভাল হবে না বলছি ।
-না হোক !
-পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবো !
-দাও । তোমাকে ওখান থেকে বের করতে হলে আমার যদি ১০ বছরের জেল হয় তবুও আমি রাজি ! জীবনে তো অনেক ভাল প্রেমিক হয়ে থাকলাম এখন না হয় একটু দুষ্টামি করিই !
নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । আমিও ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমি আসলে সময় নিতে চাচ্ছি । ও যত বেশি সময় নিবে আমার জন্য তত ভাল । ফাইল গুলো কপি হয়ে যাবে । তবে আমি নিশ্চিত যে ও বের হয়ে আসবে না । যতদুপর জানি ওর শরীরে এখন কোন কাপড় নেই । এই ভাবে বের হয়ে আসতে পারবে না কোন ভাবেই ।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই দরজাটা খুলে গেল সম্পূর্ন । তারপর ওর নগ্ন পাটা আগের বের করলো ও । আমার পুরো শরীরে একটা বড় রকমের ধাক্কা মারলো । আমি সত্যিই ভাবি ও বের হয়ে আসবে ! আমার পুরো জীবনে এই রকম কোন ঘটনা ঘটে নি । আমি ঘরে দাড়ালাম । আমার পক্ষে নিকিতার দিকে তাকানো কোন ভাবেই সম্ভব না ।
আমি অনুভব করলাম নিকিতা একদম আমার পেছনে এসে দাড়িয়েছে । আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে নিকিতা বলল
-এই বীর পুরুষ । তাকাও আমার দিকে !
আমি কোন মতে বললাম
-সরি ! আমি আসলে পারবো না !
নিকিতার হাসির আওয়াজ পেলাম । নিকিতা বলল
-তোমার দৌড় আমার জানা আছে ।
-আমি সত্যিই ভাবি নি তুমি বের হয়ে আসবে !
নিকিতা আমার হাত থেকে তোয়ালেটা নিল । তারপর বলল,
-মেয়েরা যখন কাউকে ভালবাসে তখন তাদের জন্য সব কিছু করতে পারে । সব অন্যায় আবদারও মেনে নেয় । বুঝতে পেরেছো ?
-হুম !
আমি নিকিতার আবারও বাথরুমের ভেতরে চলে যাওয়াটা বুঝতে পারলাম । দরজা বন্ধ হতে আবার ঘরে দাড়ালাম । আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না কি করবো ? নিকিতার আচরণ আবারও আমাকে খানিকটা দ্বিধায় ফেলে দিল । আমার মন বলছে এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে । সিড়ি ঘরে ঐদিন মেয়েটা যা বলেছে সেটা কোন ভাবেই সত্য হতে পারে না । একবার মনে হল পেন ড্রাইভটা বের করে ফেলি । আমার দরকার নেই এই সব প্রমানের । কিন্তু অন্য মনটার কারনে সেটা পারলাম না ।
ল্যাপটপের ঢাকনাটা আবারও খুলে দেখলাম সব ফাইল কপি করা হয়ে গেছে । আমি পেন ড্রাইভটা বের করে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলাম । এখন আমার কাজ হবে এই সব অডিও ফাইল গুলো চেক করে দেখা
সপ্তাহ খানেক লেগে গেল আমার সব ফাইল গুলো চেক করতে । নিকিতার তার ফোন কলের সব রেকর্ড রাখতো । কে কে তাকে ফোন করে এবং কারকার কাছে কি কি কথা হয় সে সবের একটা প্রমান নিকিতার কাছে রয়েছে । দেশের বেশ কিছু বড় বড় বিজনেস ম্যানের সাথে নিকিতার কথা হয়েছে । তাদের অন্যায় আবদার নিকিতা শুনেছে । কিছু কিছু শুনতে রাজি হয়েছে আবার কিছু না করে দিয়েছে । খানিকটা মন খারাপই হল আমার । বাইরে থেকে নিকিতাকে দেখে যতই স্বচ্ছ আর পরিস্কার মনে হোক না কেন আসলে ভেতরে সে একেবারে স্বচ্ছ না । হয়তো কোন রাজনীতিবীদই তা নন । সিস্টেমটাই হয়তো এই রকম । আমি সেটা নিয়ে আর ভাবলাম না ।
ফোন কলের সাথে সাথে সাথে নিকিতার কাছে কিছু মিটিংয়ের রেকোর্ডিংও আছে দেখতে পেলাম ।
সেটা সব চেক করতে গিয়েও আমি সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেলাম । ঐদিন মেয়েটি যা বলেছে সেটা আসলে সত্য । নিকিতা আসলেই প্লান করেই আমার সাথে দেখা করেছে ।
রেকোডিংয়ের মোট তিন জনের কথা শোনা যাচ্ছে । একটা নিকিতা নিজে । অন্য জন্য ওর বাবা আজাহার আহমেদ । তৃতীয় ব্যক্তিটিকে আমি ঠিক চিনতে পারলাম না । মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম । সেই বেশি কথা বলছিলো । রেকোডিং টা চলছে-
নিকিতা তুমি আমাদের দলের সব থেকে বড় টার্মকার্ড । আমি চাই তোমার জনপ্রিয়তাই সবার আগে থাকুক । হ্যা তোমার কাজে একটু সমস্যা যে হচ্ছে সেটা বলবো না বিশেষ করে আমাদের দলের অনেকই তোমার উপর ঠিক পুরোপুরি সন্তুষ্ট না যেহেতু তুমি তাদেরকেও ছাড় দাও নি ।
নিকিতার হাসির আওয়াজ পেলাম । নিকিতা বলল, এই জন্যই আমার জনপ্রিয়তা বাড়ছে । একটু সমস্যা হবে তবে বৃহৎ স্বার্থে সেটা ত্যাগ করতে হবে । এখন আমার মাথায় আরো একটা বুদ্ধি এসেছে । আমি ঠিক করেছি আমি একটা রিলেশন করবো । প্রেম করবো । এবং সেটা সবাই জানবে সবাই দেখবে !
-মানে কি ?
-মানে টা খুব সহজ ! মনে করেন আপনি খুব ফুটবল খেলতে, ফুটবল খেলা দেখতে পছন্দ করেন, নিজেও খেলেন । এখন সামনে যদি এমন একটা মানুষ আপনি দেখেন যে নিজেও ফুটবল খেলে, খেলা দেখে ফটবল খুব ভাল বোঝে তাহলে আপনার মনভাব কি ? তার প্রতি আপনা আপনিই আপনার একটা পজেটিভ মনভাব চলে আসবে । এখন আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেন । আমাদের দেশের ইয়াং জেনারেশন, স্কুল থেকে কলেজ ভার্সিটি সবার ভেতরে একজা মনভাব খুব কমন । প্রেম । প্রায়ই সবাই এটা করে । যারা করে তারাও মনে মনে এইটার ব্যাপারে ফ্যান্টাসী পেষন করে । এখন কল্পনা করে দেখে তারা এমন একজন মানুষকে দেখতে পাবে সে তাদের মতই কারো প্রেমে পরেছে তাকে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে । আবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কষ্ট পাচ্ছে । এটা আমাদের দেশের ইয়াং জেনারেশনদের একটা ট্রেড মার্ক । ওরা যখন আমাকে ঠিক তাদের মত করেই প্রেম করতে দেখতে ভালবাসতে দেখবে আমার প্রতি ওদের একটা পজেটিভ ভাব আপনা আপনিই চলে আসবে ।
এইবার নিকিতার বাবার কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম
-কিন্তু বিরোধী পক্ষ যদি এটা নিয়ে কিছু বলে ?
-চিন্তা কর না তো ! এটা ফল পজেটিভ আসবেই । আই ক্যান এশিওর ইউ !
আমি সত্যিই নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । তাহলে সবই ছিল প্রিপ্লান ! এই আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া আমার, সাথে প্রেম করা, এমন কি ঐ বৃষ্টিতে ভেজার ছবি ভাইরাল হওয়াটাও !
আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না । কিছু না ।
হঠাৎ কিছু মনে হতেই আমি আবারও ফোন রেকোর্ডিং ফোল্ডার ওপেন করলাম । এখানকার ফাইল গুলো তারিখ আর সময় দিয়ে সেভ করা হয়েছে । সব ফোন রেকোডিংই এমন করেই সেভ হয় । আমি যেদিক গুলি খেয়েছিলাম সেদিনের তারিখ বের করলাম । সেদিন মোট ১১ টা ফোন কল এসেছিলো । একটার সাইজ একেবারে কম । মাত্র কয়েক কিলোবাইট ! আমি সেই ফাইলটা চালু করলাম । মোট ১৩ সেকেন্ডের কল রেকোডিং । ফোন রিসিভ হতেই কিছু সময় নিরবতা । তারপর কেউ বলল
-আজকেই সেই দিন !
নিকিতা বলল
-হ্যা !
লাইন কেটে গেল । আমি সময়টা দেখলাম দুপুর দুইটা ২৬ মিনিট । এটাই সেই কল । কেউ কিছু করার অনুমূতি চাইছে । নিকিতা সেটার অনুমূতি দিয়েছে । কোন কাজের অনুমূতি সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না । আমার বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠলো । এই প্রমানটা না পেলেই সম্ভবত ভাল হত ।
আইরিনও ঠিক একই কাজ করেছিলো । আমার সাথে ওর পরিচয়ের কারন ছিল আমার পড়াশুনা । আমি ওকে পড়াশুনায় সাহায্য করতাম অনেক । আমার তৈরি করা নোট গুলো ও নিতো । পরে বুঝেছিলাম যে কেবল সেগুলোর জন্যই সে আমার কাছে এসেছি । আর আজকে নিকিতাও তাই । নিজের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য, সবার কাছে নিজের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সে আমাকে ব্যবহার করেছে । এমন কি আমাকে মেরে ফেলার অনুমূতি দিতেও তার বাঁধে নি ।
তীব্র একটা রাগ হল । মনটা প্রতি হিংসায় ভরে উঠলো । যে কাজের জন্য সে আমাকে ব্যবহার করেছে সেটাই আমি ধ্বংস করেদিবো । আমি পিসিটা অন করলাম । এ অডিও ফাইল আমি এখন নেটে ছেড়ে দিবো । দেশের মানুষ জানুক নিকিতার আসল চেহারা !!
চলবে ......
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭