-এই যে দাড়ান । এতো রাতে কই যান ?
আমি সাইকেল থামালাম । সামনেই একটা পুলিশের গাড়ি দেখতে পাচ্ছি । টহল পুলিশ । আমার একটু ভয় পাওয়ার কথা । কারন এখন দেশের অবস্থা ভাল না । পুলিশ ধরলে খবর হওয়ার কথা তবে কেন জানি আমি ঠিক চিন্তিত হলাম না ।
একজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে ভাল করে দেখার চেষ্টা করলো ।
আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল
-এতো রাতে কোথায় যান ?
আমি বললাম
-কোথাও না । এমনি সাইকেল চালাচ্ছি । দিনের বেলাতে সাইকেল চালিয়ে মজা নেই তো তাই মাঝে মাঝে সাইকেল চালাই !
আমার উত্তর সম্ভবত পুলিশের ঠিক পছন্দ হল না । আমাকে দাড় করিয়েই পুলিশ চলে গেল দাড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে । আমি সাইকেল থেকে নেমে ফুটপাতের উপর বসলাম । সম্ভবত আমাকে এখানে লম্বা সময় বসতে হবে । এরা এতো সহজে আমাকে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে না ।
তৃষাকে আরেকবার ফোন দিবো কি না ভাবছি । আজকে সারা দিনে ও একবারও আমার ফোন ধরে নি । ধরবে না জানতাম । আমার সাথে ওর যেদিন দেখা হওয়ার কথা থাকে সেদিনই ও ফোন ধরে না । আমি জানি ও আমার সাথে দেখা করবে না তবুও ওর পেছনে লেগেই থাকি দেখা করার জন্য । মাঝে মাঝে ও বলে যে কাল দেখা করবে কিন্তু সেই কাল আর কোন আসে না । সেই দিন সারাদিনই ওর ফোন অফ থাকে নয়তো ফোন ধরে না ও । আমি ফোন দিয়ে যাই । আজ সারা দিন তাই করেছি । ধরবে না তবুও দিয়েছি । কেন দিয়েছি আমি নিজেই জানি না । আমি ফোন বের হয়ে তৃষা কে ফোন দিতেই তৃষা ফোনটা রিসিভ করলো । বেশ অবাক হলাম । আজকে তো ওর ফোন ধরার কথাই ছিল না ।
-হ্যালো ।
ওপাশ থেকে কোন কথা শুনতে পেলাম না । আমি আবার বললাম
-হ্যালো ? শুনতে পাচ্ছো নাকি ?
-হ্যা পাচ্ছি !
তৃষার কন্ঠ শুনেই মনে হল ও বেশ কান্না কাটি করেছে । আমি আর ওসব জানতে চাইলাম না । বললাম
-মন ভাল ?
-ভাল হওয়ার কথা ?
-জানি না । সারা দিন ব্যস্ত ছিলে বুঝি ?
-না ! এক দম ব্যস্ত ছিলাম না ।
-ও !
আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না । তৃষা ওপাশে কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-তোমার রাগ হচ্ছে না আমার উপর ?
-কেন ?
-তুমি জানো কেন রাগ হবে ? রাগ হয় না ?
-না তো !
-অন্য কেউ হলে আমাকে ছেড়ে ঠিক চলে যেত । আমাকে আর কোন দিন ফোন দিতো না ।
-তারা তো তোমাকে ভালবাসে না ।
ওপাশ থেকে আবারও বেশ কিছুটা সময় কোন কথা শোনা গেল না । আমার কেন জানি মনে হল তৃষা নিজের কান্নাকে আটকানোর চেষ্টা করছে । আমি ওকে শান্ত করতে বললাম
-সমস্যা নেই । আমার সাথে না হয় অন্য কোন দিন দেখা কর । কেমন !
আমি তৃষার কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পেলাম । ও বলল
-করবো না । কোন দিন দেখা করবো না । তবুও অপেক্ষা করবে ?
-হ্যা করবো !
আমার আরও কিছু বলার ছিল দেখি তার আগেই পুলিশের সেই লোকটা আমার কাছে ফিরে এল । আমার দিকে বলল
-চলেন !
আমার তখনও ফোন কানে । আমি বললাম
-কোথায় ?
-থানায় চলেন । আপনে গাড়িতে উঠেন । আমি আপনার সাইকেল নিয়ে আসতেছি !
এখানে আমার আসলে কিছুই করার নেই । আমাকে গাড়িতে উঠতেই হবে । ফোনের ওপাশ থেকে তৃষা বলল
-কার সাথে কথা বলছো ?
-পুলিশের সাথে !
-এতো রাতে তুমি বাইরে কি করছো ?
-এই তো একটু হাওয়া খেতে বের হয়েছিলাম ।
-মানে ? এখন কি হয়েছে ?
-ওরা বলছে থানায় যেতে !
ওপাশ থেকে আবারও কোন কথা শোনা গেল না । পুলিশ আমাকে আবারও তাগাদা দিল জলদি গাড়িতে ওঠার জন্য । তৃষা একটু পর বলল
-বলতো ওর কোন থানার ?
-জানি না তো !
একটু ধমকের সুরে বলল
-জানো না, জিজ্ঞেস কর !
আমি পুলিশ লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম
-ভাই আপনার কোন থানার ?
-কেন ?
-না মানে একজন জানতে চাচ্ছে ।
পুলিশ বলল
-বলেন যে আপনাকে বনানী থানায় নিয়ে যাচ্ছি আমরা !
আমি তৃষা কে থানার নাম বললাম । তৃষা ফোন রাখতে রাখতে বলল আমি যেন কোন চিন্তা না করি । ও দেখছে । যদিও আমি জানতাম ও ঠিক ঠিক দেখবে ।
আমি মোবাইল পকেটে রেখে গাড়িতে উঠলাম । পুলিশের গাড়িতে এর আগেও বেশ কয়েকবার উঠেছি । আমার ক্যাম্পাসের পাশেই বড় থানা ছিল । মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় যখন বাস পেতাম না, তখন পুলিশকে বললেই ওনারা পেছনে উঠবে বলল । কিন্তু আজকে ঘটনা একেবারেই অন্য রকম । আমি চুপচাপ বসে রইলাম । রাত বলেই রাস্তা ঘাট একেবারে ফাঁকা । গাড়িটা চলছে একভাবে তবে গাড়ির গতি খুব বেশি না । কত সময় গাড়িতে বসে ছিলাম জানি না দেখি গাড়িটা একটা বাসার সামনে এসে থামলো । আমি বসেই রইলাম । একটু পরে একজন অফিসার গাড়ির পেছনে এসে দাড়ালো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-নামেন ।
আমি নামলাম । বনানী থানা আমি চিনি । এটা যেন সেই থানা না সেটা বুঝতে কষ্ট হল না। আমার দিকে তাকিয়ে পুলিশ অফিসার টি বলল
-আরে রাস্তায় এমন একা একা চলেন কেন ? আর বলবেন না যে সৈয়দ সাহেব আপনার চেনা লোক ।
আমি মনে করার চেষ্টা করলাম এই সৈয়দ সাহেবটা আবার কে? আমাকে কি ভুল করে ছেড়ে দিবে নাকি ! তারপরেই আমার মনে পড়লো সৈয়দ হচ্ছে তৃষাদের বংশীয় পদবী ।
অফিসার আবার বলল
-ওনার ফোন এসেছিল । শুনুন এর পর থেকে আমাদের কেউ যদি আপনাকে ধরতে যায় তাহলে আগে পরিচিত মানুষের নাম বলবেন । ঠিক আছে !
আমি বললাম
-আচ্ছা ! আমার সাইকেল টা ?
-ওটা আসছে । এইখানে চলে আসবে । চিন্তা করবেন না । যান ভেতরে যান !
পুলিশ আমাকে হাত ইশারায় সামনের বাসাটা দেখালো । আমি বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এতো রাতেও বাসার সব আলো জ্বলছে । দারোয়ান গেট খুলে এদিকে এগিয়ে আসছে ।
আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে এসব তৃষার কর্ম । ও নিশ্চয়ই এই সময়ের ভেতরেই এই পুলিশকে ফোন দিয়েছে এবং অনুরোধ করেছে যেন আমাকে ওর বাসার সামনেই নামিয়ে দেয় ! এরা তাই করেছে ।
আমি আস্তে আস্তে গেটের দিকে এগোতে থাকলাম । তৃষার সাথে যে আমার এই ভাবে দেখা হয়ে যাবে আমি কোন দিন ভাবতেও পারি নি । অবশেষে আমাদের দেখা হতে যাচ্ছে । আমি একটু কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে যাই তৃষাদের বাসার দিকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১২