অনু গল্পঃ কোথায় গেল ?
সামিরের ভাই সাব্বিরকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । গত পরশু দিন হঠাৎ করেই হোস্টেল সুপার ফোন দিয়ে তাকে বলল তার ভাই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । কিভাবে গায়েব হয়েছে কেউ বলতে পারছে না । তারা অনেক খোজাখুজি করেছে কিন্তু পায় নি । শেষে পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে । সামির জলদি করে হোস্টেলে এসে হাজির হল । সারা দিন চলল খোজাখুজি । সে যে কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না । রাতের বেলা সে ঘুমাতে গেছে এটা অনেকে দেখেছে । তার রুমমেট বাসায় গেছে গত সপ্তাহে । তাই রুমের ভেতরে কি হয়েছে কেউ কিছু বলতে পারে না ।
সকাল বেলা তার রুম ভেতর থেকে বন্ধ ছিল । অনেক ডাকা ডাকির পরে যখন খুলছিলো না তখন দরজা ভাঙ্গা হয় । এবং সেখানে কেউ ছিল না । কোথায় গেল কেউ বলতে পারে না । কিভাবে গেল তাও কেউ জানে না ।
পুলিশ সবাই কে জিজ্ঞাসাবাদ করলো । কিন্তু কেউই তেমন কিছু বলতে পারলো না । সামি খানিকটা দিশেহারা বোধ করলো । কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না । পুলিশ অফিসার তাকে থানা নিয়ে গেল আরও কিছু খোজ খবর নেওয়ার জন্য । কিছুটা সময় বসে থাকার পরে তার ডাক পড়লো ।
-আপনার ভাইয়ের ঘর থেকে আমরা একটা ডায়রী উদ্ধার করেছি । সেখানে সে বেশ কিছু কথা বার্তা লিখে রেখেছে । বিশেষ করে গতকাল পর্যন্ত সে কি করেছে সেটা ।
সামি বলল
-কিছু জানতে পারলেন ?
-কিছু তো পেয়েছিই । আমি আপনাকে পড়ে শোনাই ।
সাত দিন আগে
একটু আগে আম্মু ফোন করেছিলো । কতদিন পরে মায়ের সাথে শুনতে পেলাম । আম্মু অনেক সময় কথা বলল । ওনার কাছে যেতে বলল । খুব মায়ের কাছে যেতে বলল । মাকে বললাম আর কটা দিন মাত্র । পরীক্ষা শেষ হলেই চলে আসবো আমি ।
ছয়দিন আগে
আজকে আব্বু ফোন দিয়েছিলো । সেও আমাকে দেখতে চাইছিলো । অনেক দিন নাকি আমাকে দেখে না । আমি ঠিক বুঝতে পারছি না হঠাৎ মা বাবা এমন করে কথা বলা শুরু করলো কেন ?
পাঁচ দিন আগে
আজকে আবারও মায়ের ফোন এসে হাজির । আমি অনেক করে বোঝালাম । আম্মু কাঁদছিলো । এমন করে করছিলো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এমন কেন করছে ।
চার দিন আগে
আজকে ভাইয়ার সাথে কথা হল । ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম মা বাবার কথা । ভাইয়া কিছু বলল না । বলল সব ঠিক আছে । রাতে আবার মায়ের ফোন । আমাকে চলে আসতে বলল । আমাকে নাকি অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে । আমারও অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে মা কে !
তিন দিন আগে
আজকে বাবা যেন একটু রাগই করলো । মা নাকি আজকে আমার জন্য অনেক চিৎকার চেঁচামিচি করেছে । আমি কি করবো বুঝতে পারছি না!
দুই দিন আগে
মা আজকে কোন কথা বলে নি । কেবল হুহু করে কাঁদছিলো । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । মাকে বললাম পরীক্ষা শেষ প্রায় ।
একদিন আগে
আজকে মাকে বললাম কালই চলে আসবো আমি । আর কোন সমস্যা নেই । আমি আসছি ! মা খুব খুশি হল । বলল যে সে চলে নিজে আসবে আমাকে নিতে । সকাল হলেই মাকে দেখতে পাবো । এটা ভাবতেই ভাল লাগছে !
ডায়রিটা বন্ধ করে অফিসার বলল
-আপনার মা বাবার কাছে যাওয়ার কথা ছিল আপনার ভাইয়ের । তারা কোথায় থাকে বলেন তো । আসে নি কেন ?
সামি বলল
-আপনি কি নিশ্চিত যে বাবা মা সাব্বিরকে ফোন করেছিলো ?
-হ্যা । আমি খোজ নিয়েছি । প্রতিদিন রাতে হোস্টেলের ফোনে ফোন আসতো । তারপর সাব্বিরকে চাওয়া হত । কোন সময় আপনার বাবা কিংবা মা ফোন করতো ! সাব্বির অনেক সময় ধরে কথা বলতো !
সামি চুপ করে গেল । ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ওর ! অফিসার বলল
-কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন ?
-দেখুন আপনি যা বলছেন সেটা অসম্ভব !
-মানে ?
-মানে বাবা মা কিছুতেই সাব্বিরকে ফোন করতে পারে না ।
-কেন পারবে না ?
-কারন সপ্তাহ খানেক আগে তারা দুজনই একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে । তারা সাব্বিরকেই দেখতে আসছিলো । ওর পরীক্ষা চলছিলো বলেই আমি ওকে কিছুই জানাই নি ।
অফিসার কিছুটা সময় থ হয়ে রইলেন । কি বললেন খুজে পেলেন না ।
সামি বাইরে বের হয়ে এল । তার ভাইটা কোথায় হারিয়ে গেল ? বাবা মা কি তাহলে যাওয়ার সময় তাকেও নিয়ে গেল সাথে করে ?
(সমাপ্ত)
অনু-গল্পঃ মেইড আন্টি
নিজেদের নতুন বাসার ড্রয়িং রুমে বসে বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলো । আজকে তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন । তাই তার ৮ বছরের ছোট ছেলেকে দেখা রাখার দায়িত্ব পড়েছে তার উপর । তার স্ত্রী এক বন্ধুর বাসায় গেছে । ফেরার পথে খাবার কিনে ফিরবে । তাই রান্নার ঝামেলা নেই । হঠাৎ তার ছেলে এসে বাবাকে বলল
-বাবা তুমি কি ভুতে বিশ্বাস কর ?
বাবা কিছু সময় ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-না । ভুত বলে কিছু নেই ।
-কিন্তু বাবা ওরা সত্যিই আছে !
-তাই ?
-হ্যা বাবা । আমি জানি ।
-তুমি ভুল জানো !
-না বাবা সত্যি ওরা আছে ।
-তা কে বলেছে তোমাকে এই কথা ?
ছেলে বলল
-আমাদের বাসার মেইড আন্টি এই কথা বলেছে । সে নাকি নিজে দেখেছে ভুত !
ছোট ছেলেটির বাবা নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর দেওয়ালে ঝুলানো গাড়ির চাবিটা নিয়ে ছেলের হাত ধরে বের হয়ে এল । ছেলে কে গাড়িতে তুলে সোজা শহরের দিকে গাড়ি চালালো । ছেলে গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বলল
-আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
-একজন হুজুরের কাছে । ঐ বাসায় আসলেই ভুত আছে । সে কিছু একটা করতে পারবে হয়তো ।
-বাহ আমি বললাম তুমি বিশ্বাস করলে না । আর মেইদ আন্টির কথা বললাম আর বিশ্বাস করে ফেলল ।
বাবা তার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো, আমাদের বাসায় কোন মেইড কিংবা কাজের মানুষ নেই । বাসাতে আমি তুমি আর তোমার আম্মা থাকে কেবল !
(সমাপ্ত)
(থিম এডোপ্টেড)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৩