somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবন্তির গল্পঃ Incidents Happen

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এক

চোখ মেলে আবন্তি কিছুটা সময় বুঝতে পারলো না কোথায় আছে । সিলিংয়ের রংটা তার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে না । ওর নিজের ঘরের সিলিংয়ের রং হালকা নীল । অথচ এই ঘরের সিলিংয়ের রংটা একদম সাদা !
আবন্তি আরও কিছুটা সময় চিন্তা চেষ্টা করলো ঠিক কোথায় আছে কিংবা কোথায় থাকতে পারে ! কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না । মাথার ভেতরটা এখনও কেমন ফাঁকা হয়ে আছে । কাল রাতে একটু বেশিই ড্রিংক করা হয়ে গেছিলো !
ওয়েট !
ওয়েট !
আবন্তির কিছু মনে পড়ে গেল !
কাল রাতে ও একদমই ড্রিংক করে নি । ও বন্ধুদের সাথে ছাড়া কখনই অন্য কিছু খায় না । আর গতকাল রাতে ও একাই গিয়েছিলো ক্লাবে । ওর আর কোন বন্ধু তখনও এসে পৌছায় নি । ও অপেক্ষা করছিলো আর একটা লেমন জুস নিয়ে বসে ছিল ক্লাবের ড্যান্স রুমের এক কোনায় ! তাহলে ?
ও এখানে এল কিভাবে ?

আবন্তি বিছানা থেকে উঠে বসলো । বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর নিজের পোষা সুন্দর করে ভাজ করে রাখা আছে । ও নিজের দিকে তাকালো । কম্বলের নিচে ও তেমন কিছুই পরে নি ।
ওর পোষাক বদলালো কিভাবে ?
কে বদলালো !
কাল রাতে কি কিছু হয়েছে !
একটা সুক্ষ আতংকের প্রবাহের বয়ে গেল ওর পুরো শরীর জুড়ে ।
ও কোথায় !
কাল রাতে কি হয়েছে ওর সাথে !
ও এখানে কেন ?
এটা কার বাসা ?
ওকে কি কিডন্যাপ করা হয়েছে !
এতো গুলো প্রশ্ন ওর মনের ভেতরে ঘুর পাক খাচ্ছে কিন্তু একটারও জবাব নেই । ভয়ে ভয়ে ও খাট থেকে নামলো । নরম কার্পেটে ওর পায়ের পাতার অনেকটাই ডুবে গেল !
নাহ !
ওকে কেউ কিডন্যাপ করে নি । কারন কিডন্যাপ করলে ওকে এমন বিলাশ বহুল ঘরে রাখা হত না ।
ও নিশ্চয়ই কাল রাতে এমন কিছু করেছে কিংবা এমন কোন ঘটনা ঘটেছে ওর সাথে যার ফলে ও এখানে এসে পরেছে । জীবন কোন রকম ঘটনা ঘটে !
ইন্সিডেন্টস হ্যাপেন ইন লাইফ ! ওর পছন্দের একটা লাইনটার ! কিন্তু এটা কি ধরনের ইন্সিডেন্ট ?
পোষাক পরে নিল । তারপর পা টিপে টিপে দরজার কাছে আসতেই কারো কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেল । একজন মহিলার কন্ঠ ! কাউকে যেন কিছু বলছে !
কয়েকবার চিন্তা করলো দরজার নব টা খুলবে কি না নাকি এখানেই অপেক্ষা করবে ! শেষে নব খুলে দরজা খুলেই ফেলল । দরজা খুলে ড্রয়িং ঢুকতেই ওখানে থাকা তিনজন মানুষ ওর দিকে ফিরে চাইলো ।

তাদের ভেতরে একজনের দিকে তাকাতেই আবন্তি তাকে চিনে ফেলল সাথে সাথেই । গতকাল রাতে এই যুবকের সাথেই দেখা হয়েছিল । ও যখন এক কোনায় বসে ছিল তখনই এই যুবক তার পাশে এসে বসে । সুদর্শন ছিল সেই সাথে পোশাক-আষাকেও ভদ্র ঘরের মনে হয়েছিল তাই আবন্তির কিছু মনে হয় নি ।
টুকটাক কথাও তাদের ভেতরে হয়েছিল ! নাম যেন কি বলেছিল ?
স.... স্যাম....। স্যামন চৌধুরী ! ডাক নাম বলেছিলো স্যাম ।
হ্যা !
তারপর .....।
ছেলেটা ওকে ড্রিংক অফার করে ।
ওটা খাওয়ার পরপরই...... ওর মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে !
তারপর তারপর আর কিছু মনে নেই ।
এই সেই কাল্প্রিট ! ইয়েস, স্যামই ওকে নিয়ে এসেছে ওকে !
ও কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তখনই স্যাম চৌধুরী বলে উঠলো,
-এইতো ঘুম ভেঙ্গেছে ! এতো সময় লাগলো ? আবন্তি মিট মাই প্যারেন্টস !

স্যাম চৌধুরীর মুখে হাসি দেখে আবন্তি কেমন কনফিউজ হয়ে গেল । ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে না ছেলেটা কোন অন্যায় করেছে আর করলেও নিশ্চয়ই সে তাকে তার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিত না ।
কিন্তু স্যাম তাকে তার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় কেন করিয়ে দিবে ?
এর ভেতরে কোন একটা সমস্যা আছে !
কিন্তু কি !
স্যাম আবার বলল
-তোমাকে বলেছিলাম সকালে তোমাকে সারপ্রাইজ দিব !

আবন্তি দেখলো ওদের পাশে বসে থাকা একজন মাঝ-বয়সী মহিলা ওর দিকে এগিয়ে হাসি মুখে ! মহিলার চেহারা কেমন যেন পরিচিত মনে হল । কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারলো না । তবে তাকে দেখেছে সেটা নিশ্চিত । মহিলা তারপর আবন্তিকে জড়িয়ে ধরলো ! তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-বাহ ! আমার ছেলের যে এতো চমৎকার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে এটা তো আমি বিশ্বাসই করি নি ।

আবন্তি অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো । এখনও ঠিক বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে ওর সাথে । কিন্তু ছেলেটা এমন ভাবে ওর সাথে কথা বলল যেন কত দিনের চেনা । আর ছেলেটার বাবা মায়ের চেহারাতেও কেমন একটা আনন্দ আনন্দ ছাপ । এসব কি হচ্ছে ?
পেছন থেকে স্যাম চৌধুরী বলল
-মা । তুমি এসব কি করছো ? দেখো ও লজ্জা পাচ্ছো ! তুমি কি বলেছিলে !!
-ওকে স্যাম ! আমরা যাচ্ছি !

এই বলে মাঝ বয়সী মহিলা ওকে ছেড়ে আবার সোফার কাছে এসে দাড়ালো । তারপর স্যাম দিকে তাকিয়ে বলল
-তোর কথা বিশ্বাস করলাম স্যাম । এখন আমরা যাচ্ছি !
তারপর আবন্তির দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার ছেলেটা এমন হয়েছে না ? যাক তোমরা থাকো ! আমরা গেলাম ! এখন তোমাকে চিনে ফেললাম । আরও কথা হবে কেমন মা-মনি !!
আবন্তি কিছুই বুঝতে পারছে না । ওর সাথে কি হচ্ছে !
ওর চলে গেলেই আবন্তি স্যাম চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল
-হোয়াটস জাস্ট হ্যাপেন্ড ?
স্যাম চৌধুরী একটু হাসলো !
-ইন্সিডেন্টস হ্যাপেন ইন লাইফ ! সিট ....

সামনের সোফার দিকে ইশারা করে ওকে বসতে বলল ! এখনও পর্যন্ত যা হয়েছে তার কিছুই আবন্তির মাথায় ঢুকছে না । অনেক প্রশ্নের জবাব তার জানার বাকি !
আবন্তি স্যাম চৌধুরীর সামনের সোফার এসে বসলো ।


দুই

আবন্তি এক ভাবে স্যাম চৌধুরীর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো । এরই মাঝে মানুষটা ওর জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে । ধোঁয়া ওঠা কাপের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে আবারও স্যাম চৌধুরীর দিকে তাকালো ।
কিছু মিশিয়ে দেয় নি তো ?
গত রাতের মত !
স্যাম যেন ওর মনের কথাটা বুঝে ফেলল । ওর চোখ দেখেই আবন্তির কেমন যেন একটু অস্বস্থি হল । স্যাম বলল
-ভয় নেই । এখন কিছু মিশাই নি ওখানে !
-কিভাবে বিশ্বাস করবো ? গতরাতে ঠিক এইভাবেই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন ! আপনি জানেন, আমি চাইলে আপনার নামে অপহণের অভিযোগ আনতে পারি ?
-পারো ! আমি তো মানা করছি না । তবে তুমি তা করবে না ! আমি জানি ।
-বাহ ! এতো কন্ফিডেন্ট আসলো কোথা থেকে ?
-আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে আমার ।

আবন্তি কি বলবে বুঝতে পারছে না । তবে পুরো ব্যাপারটা ওকে একটু কৌতুহল যে করে নি সেটা ও বলবে না । স্যামন চৌধুরী যার ডাক নাম স্যাম, ওর সাথে এমন আচরন কেন করছে ? তবে ওর যে ভয় লাগার কথা সেই ভয় লাগছে না । মনের ভেতর থেকেই মনে হচ্ছে যে এখান থেকে ওর ক্ষতি হবে না । স্যামের বাবা আর মা চলে যাওয়ার পরপরই আবন্তির মাথাটা একদম পরিস্কার হয়ে গেছে । সব মনে পরেছে ।

গত দুই দিন স্যামের সাথে ক্লাবে দেখা হয়েছে । স্যাম যে দেখতে সুদর্শন সেটা স্বীকার করতে কোন বাঁধা নেই । আর পোশাক পরিচ্ছেদেও সম্ভ্রান্ত আর ভদ্র ঘরেরই মনে হয়েছে । কেবল একটা আচরনের ব্যাখ্যা আবন্তি এখনও ঠিক মত বের করতে পারছে না । সেটা হল ওকে এভাবে এখানে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে আনার কি মানে হল !

আবন্তির মনে একটু দ্বিধা যদিও ছিল তবুও ও কফির কাপে চুমুক দিল । সাথে সাথেই মনটা অনেকটাই শান্ত হয়ে এল । কফির স্বাধটা আসলেই চমৎকার হয়েছে । এতো চমৎকার কফি সে অনেক দিন খায় নি । এই সকালবেলা খালি পেটে খেতেও চমৎকার লাগলো ! আবন্তি বলল
-এবার বলবেন কি এসবের কারন কি !
-বলছি ।
স্যাম একটা লম্বা শ্বাস নিল । যেন অনেক কথা বলতে হবে !
-আমার মা আর বাবাকে তো দেখলেই । চেনো ওনারা কারা ?
-আমার কি চেনার কথা ?
-পরিচিত মনে হয়নি ?
-নাহ !
না বলে আবন্তির মনে যেন চেহারাটা কেমন পরিচিত ছিল । তখনই একবার মনে হয়েছিল । কোথায় যেন দেখেছে !
স্যাম বলল
-আমার আম্মা, ফরিদা পারভিন নাম, তুমি যে ইউনিভার্সিটিতে পড় সেখানকার প্রো-ভিসি !
-আরে তাই তো ......

আবন্তির মুখটা হা হয়ে গেল মুহুর্তেই । অনেক কয়বার দেখেছে কিন্তু চিনতে পারে নি !

-আর আমার আমার বাবা আরমান গ্রুপের মালিক !
আবন্তি কি বলবে বুঝতে পারলো না । আরমান গ্রুপের নাম সে শুনেছে । বেশ কয়েকবারই শুনেছে । ওর এক বন্ধুর বাবা এই কোম্পানীতে চাকরি করে ! আর সেই কোম্পানীর ছেলের সামনে ও বসে আছে ।
ওর মাথায় আসলেই কিছু ঢুকছে না । এসব কি হচ্ছে ?

স্যাম বলেছিলো ইন্সিডেন্টস হ্যাপেন ইন লাইফ কিন্তু এটা তো ইন্সিডেন্ট না এটা ..... না না এটা দুর্ঘটনাও না ! তাহলে কি এটা ?
-আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না !
-আমি বুঝিয়ে বলছি ! আসলে আমার বাবা আর মা আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে । তারা আমাকে বিয়ে দিয়েই তবে ছাড়বে এমন একটা অবস্থা । আমি কোন দিন তাদের অবাধ্য হই নি তাই কিছু করতে পারছি না । বিয়েটাও টালতে পারছি না । শেষে আমি তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বলে দিলাম যে আমার একজন গার্লফ্রেন্ড আছে । তারা তো বিশ্বাস করেই না । তাদের একই কথা হয় তদেরকে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করিয়ে দেই নয়তো তাদের পছন্দ মত মেয়ের সাথে বিয়ে করি ।
-আচ্ছা । তারপর ?
-তারপর বললেই তো আর হল না । গার্লফ্রেন্ড বললেই তো পাওয়া যায় না ।
-আপনি চাইলেই তো ম্যানেজ করতে পারতেন আই গেস !
-কিন্তু সেখানেও সমস্যা তো থেকেই যেত । শেষে আমাকে বিয়ে করতেই হত !
আবন্তি খানিকটা দুষ্টামীর হাসি দিয়ে বলল
-তা জনাব বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় ? বয়স হয়ে যাচ্ছে তো ! নাকি অন্য কোন সমস্যা ?
-অন্য কোন সমস্যা মানে ?
-না মানে থাকে না কত রকম সমস্যা কত রকম টেস্ট ?
-শুনো আমি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ । এবং আমার টেস্টও স্বাভাবিক !
-তাহলে সমস্যা কোথায় ?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে ! এখন তোমাকে যে জন্য নিয়ে দরকার সেটা বলি ! ওকে !!

স্যামের গলার স্বর একটু ঠান্ডা শোনালো । আবন্তি বুঝতে পারলো ওর এভাবে বলাটা ঠিক হয় নি । নিজেকে খানিকটা সামলে নিল । তারপর বলল
-তো আপনি চান আমি আপনার গার্লফ্রেন্ডের ভূমিকাতে কিছু দিন অভিনয় করি ! তাই না ?
-হ্যা !
-আমি যদি অন্য মেয়েদের মত আপনার গলাতে ঝুলে পড়তে চাই ? তখন ?
স্যাম আবন্তির কথা শুনে হাসলো । তারপর বলল
-তোমার কেন মনে হয় এতো মানুষ থাকতে আমি তোমাকেই চুজ করেছি ?

আবন্তি কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আবন্তি জানে স্যাম ওকে কেন চুজ করেছে । ফ্যামিলি বন্ডিংস, প্রেম ভালবাসা এসবের আবন্তি বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই । বলা চলে এসব থেকে সব সময় দুরে থাকে । ছোট বেলা থেকে নিজের বাবা মায়ের ঝগড়া দেখতে দেখতে বড় হয়েছে । ভালবাসা বলে ও ঠিক মত জানেও না । জানার আগ্রহও নেই । এসব থেকে দুরে থাকতে পারলেই ভাল । একা থাকতেই ওর বেশি ভাল লাগে ! ফ্রেন্ড সার্কেলটা একটু আঢটু মেইনটেইন করে, ব্যাস । এর বেশি কিছু আর না ।
আবন্তি বলল
-আচ্ছা বুঝলাম ! তা আমার লাভ কি ?
-বল তুমি কি চাও ?
-যা চাইবো পাবো ?
-হ্যা যদি আমার সাধ্যের মধ্যে থাকে সেটা পাবে ?
-যদি একটা ল্যাম্বর্গিনি চাই ?
-তাও পাবা !
-ইউ আর কিডিং রাইট ?
-নো ! আমি কথা দিলে কথা রাখি ! কাজ শেষ হলে তুমি একটা ল্যাম্বর্গিনি পাবে ? ওকে !!
-নো নো নো ! আমি এখনও ঠিক করি নি । পরে ভেবে চিন্তে চাইবো । এই সুযোগ বারবার তো আসবে না !
-আচ্ছা !
-আর কত দিন চালিয়ে যেতে হবে ?
-এই মাস দুয়েক ! তারপর আমার সাথে ব্রেক-আপ করবে । ঠিক আছে ?
-তাহলে কি হবে ?
-সেটা আমি দেখবো । তোমার যা ভূমিকা সেটা তুমি করবে । ঠিক আছে ?
-ওকে ডান ! তবে আমার একটা শর্ত আছে ।
-কি ?
-আমাকে মাঝে মাঝে এরকম কফি বানিয়ে খাওয়াতে হবে !

স্যাম আবারও হাসলো । আচ্ছা খাওয়াবো ! আবন্তিও হাসলো । স্যাম আস্তে বলতে লাগলো ওকে কি কি কাজ করতে হবে । কেমন করে আচরন করতে হবে ! আবন্তি মন দিয়ে শুনতে লাগলো । সত্যি বলতে কি কাজটা করতে ও নিজেও বেশ আগ্রহ বোধ করছে । কেন করছে ও নিজেও জানে না !

ওর আরও জানা নেই যে আগামী দুই মাসের ভেতরে ওর জীবনটা পুরোপুরি বদলে যেতে চলেছে ! এমন একটা জীবনের ভেতরে প্রবেশ করতে চলেছে যেটার কথা ও নিজেও কোন দিন কল্পনা করে নি !



তিন

আবন্তির ঘুম অনেকটা সময় আগেই ভেঙ্গেছে । জানলার পর্দা সকালের বাতাসে মৃদু কাঁপছে সেই সাথে সকালের রোদ মাঝে মাঝে এসে ওর গালের এক পাশে পড়ছে । একটা অন্য রকম ভাল লাগছে । মনে হচ্ছে এভাবে আরও অনেকটা সময় ঘুমিয়ে থাকতে পারলে ভাল হত । কিন্তু সেটা সম্ভব না । কিছু সময় পরেই সূর্যের তেজটা আরও বেড়ে যাবে তখন এই আরামটা পাওয়া যাবে না ।

-আবন্তি !

আবন্তি এক চোখ মেলে সামনে দাড়ানো মানুষটার দিকে তাকালো । হঠাৎ করেই আবন্তির মনে হল অনেক দিন পর কেউ তাকে এভাবে সকালে বিছানা থাকতে থাকতেই ডাক দিল । আবন্তি স্যামের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুটা সময় । ছেলেটা যে সুদর্শন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । যে কোন মেয়ে তার উপর ক্রাশ খাবে মুহুর্তেই । একটু আগে গোসল করেছে সেটা চেহারা দেখলেই বুঝা যাচ্ছে । গাঢ় নীল শার্টের সাথে কালো প্যান্ট পরেছে ইন করে । কালো বেল্ট ! টাই টা এখনও ওর হাতে ধরা । আবন্তি বলল
-রেডি ?
-প্রায় । তুমি উঠে পড় । নাস্তা রেডি হয়ে গেছে । তোমার কফিও !
-আসছি ।

স্যাম আর দাড়ালো না । হাতে ধরা টাই নিয়ে বাইরে চলে গেল ।

আবন্তি বাথরুমে ঢুকে ট্যাপ ছেড়ে দিল ! ওর নিজের ভাবতে খানিকটা অবাক লাগছে । আজ থেকে দুই মাস আগেও স্যামকে চিনতো না । ওকে দু মাস আগে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে স্যামে ঠিক এই ঘরেই নিয়ে এসেছিল । আর আজকে ও নিজের ইচ্ছেতেই এখানে এসেছে । এভাবে আসবে ও কোন দিন ভাবেও নি !

ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এসে ওর মনটা ভাল হয়ে গেল । টেবিলে সকালের নাস্তা তৈরি হয়ে আছে । স্যাম তখনও টাই বাঁধে নি । ওর জন্য অপেক্ষা করছে । আবন্তি বসতে বসতে বলল
-এগুলো সব তুমি করেছো ?
-কেন ? বিশ্বাস হচ্ছে না ?
-আসলে হচ্ছে না । আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারলাম না যে এতো টাকা পয়সা থাকতেও তুমি কেন এভাবে নিজের কাজ নিজে কর । আই মিন তোমার জন্য কাজ করার জন্য হাজার হাজার মানুষ রয়েছে, বিশেষ করে এই রান্না বান্না করার কাজ গুলো !
-আমি আমার কাজ নিজে করতে ভালবাসি । আর সব সময় তো করি না । মাঝে মাঝে করি !
আবন্তি পাউরুটিতে কামড় দিতে দিতে বলল
-যাক ভাল । কোটিপতি বালকের হাতের রান্নাও এজীবনে খেতে পারবো ভাবি নি কোন দিন ! লাকি মি !

সেদিনের পর স্যামের সাথে আবন্তির দেখা হয়েছে অনেক বার । বিশেষ করে ওকে নিয়ে বেশ কয়েকটা ফ্যামিলি ফাংশনে হাজির হয়েছে ও । বলাই বাহুল্য সেই অনুষ্ঠানে যাওয়া আগে আবন্তিকে নিয়ে স্যাম গিয়েছে মার্কেটে ওকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য !
একবার আবন্তি স্যামের কাছে জানতে চাইলো
-আচ্ছা আমাকে যে এতো কিছু কিনে দিচ্ছো তা ব্রেক আপ যখন করবো তখন কি এগুলো ফেরৎ দিতে হবে !
স্যাম আবন্তির প্রশ্ন শুনে হাসলো । হেসেই বলল
-নাহ ! কিছু ফেরৎ দিতে হবে না !
-তাহলে এই সুযোগ তো হাত ছাড়া করা যায় না । দেখি আরও কি কি কিনতে পারি !

তারপর আরও অনেক ঘটনা ঘটে গেছে । আবন্তি ব্যাপারটা ফান হিসাবে নিয়েছিলো । ওর বন্ধুরাও জেনে গেল যে আবন্তি এক সুদর্শন ছেলের সাথে ঘুরছে ফিরছে । ওরা তো বিশ্বাসই করে নি । সব মিলিয়ে আবন্তির সময় গুলো ভাল যাচ্ছিলো । বিশেষ করে এই এতো গুলো বছরের এক ঘেয়ে জীবনের রুটিন থেকে বের হতে পেরে ওর ভাল লাগছিলো !


গতকালকে কি মনে হয় সন্ধ্যার সময় স্যামকে ফোন দিয়ে বসলো !
-হ্যালো !
-কি খবর তোমার ?

কয়েকদিন স্যামের সাথে ওর যোগাযোগ হয় নি । স্যাম কাজে ব্যস্ত ছিল ! তাই যোগাযোগ হয় নি ওদের মাঝে । স্যাম বলল
-আমি কাজে বিজি ছিলাম । জানোই তো !
-হুম । তা কাজের চাপে গার্লফ্রেন্ডকে ভুলে গেলে চলবে ? যতই ফেইক হোক না কেন গার্লফ্রেন্ড তো ! রীতিমত চুক্তি করা !

ওপাশ থেকে স্যামের হাসির আওয়াজ ভেসে এল । আবন্তি বলল
-হাসলে চলবে না । ফাইন দিতে হবে !
-কি ফাইন দিতে হবে, শুনি ?
-কালকে সকালে কফি বানিয়ে খাওয়াতে হবে !
-ওকে চলে আসো !
-এতো সকালে আমি আসতে পারবো না । আমার ঘুমই ভাঙ্গবে না ।
-তাহলে ?
-আমি জানি না । তুমি বয়ফ্রেন্ড তুমি ব্যবস্থা কর !

কিছু সময় স্যামের দিক থেকে কোন কথা শোনা গেল না । তারপর স্যাম বলল
-আচ্ছা যদি তোমার সমস্যা না থাকে তাহলে রাতের বেলা চলে আসো এখানে !
-একা ? যদি তুমি কিছু করে ফেলো তখন ? এসব কিন্তু চুক্তিতে নেই !
-যখন সুযোগ পেয়েও কিছু করি নি তখন জোর করে নিশ্চয়ই কিছু করবো না !
-তা অবশ্য ঠিক !
-আর রাতে আমাকে বেশ কাজ আছে । আমি কাজে ব্যস্ত থাকবো তবে সকালে কফি খাওয়াবো ঠিক ঠিক ।


আবন্তি আর বেশি কিছু চিন্তা করলো না । কাল থেকে ওর আসলে কিছুই ভাল লাগছিলো না । যদিও একা একা থেকে ওর অভ্যাস তবুও মাঝে মাঝে ওর খুব মন খারাপ হয় । নিজের উপর নিয়ন্ত্রন থাকে না । এই জীবনে কতবার যে ও সুইসাইড করতে চেয়েছে । তার কোন ঠিক নেই । ঠিক সাহসের অভাবে করতে পারে নি ।

রাতের বেলাতেই চলে এসেছিলো ও । রাতে অবশ্য খুব বেশি কথা হয় নি । স্যাম কাজ করছিলো ওর ল্যাপটপে । ও খানিক্ষন টিভি দেখে শুয়ে পড়ে রুমে গিয়ে ।


নাস্তা শেষ করে কফি নিয়ে বসলো সোফার উপরে । স্যাম ততক্ষনে টাই বাঁধার জন্য আয়নার সামনে দাড়িয়ে পড়েছে । কেন জানি আবন্তির খুব ইচ্ছে করলো স্যামনে গিয়ে টাই টা বেঁধে দিতে । কিন্তু নিজেকে সামলে নিল । তারপর নিজের কাছেই অবাক হয়ে গেল এমন একটা চিন্তা এল দেখে । বুঝতে পারলো এমনটা কেন হল ! আর এমন ভাবনাটাও কেন হল ?
স্যামের মায়ের জন্য ?
ঐদিন স্যামের মা অর্থাৎ ওদের ইউনিভার্সিটির প্রোভিসি ম্যাডামের জন্য !
ওনার কাছ থেকে স্যাম সম্পর্কে জানার পর থেকে এমনটা মনে হচ্ছে !

-আমি যাচ্ছি ! তুমি কখন বের হবে ?

আবার বাস্তবে ফেরৎ চলে এল আবন্তি । স্যাম ততক্ষনে কোর্ট টাও গায়ে দিয়ে ফেলেছে । আবন্তি বলল
-খানিকক্ষন শুয়ে থাকি তোমার বিলাশ বহুল এই ফ্ল্যাটে ! যখন যেতে ইচ্ছা করবে চলে যাবো । তোমার অফিস তো পাশেই তাই না ?

আবন্তি জানে এই ফ্ল্যাটের চার বিল্ডিং পরেই স্যামদের বিশাল অফিস । স্যাম এখানে এই ফ্ল্যাটে এসে মাঝে মাঝে থাকে । সপ্তাহে দুই দিন । যখন ও একা থাকতে চায় কিংবা যখন ওর মন খারাপ থাকে । এসব কিছু আবন্তি জানতে পেরেছে ওর মায়ের কাছ থেকে !

-আচ্ছা ! আমি যাই !

স্যাম বের হয়ে যেতে আবন্তি দরজায় খানিকটা সময় দাড়িয়ে থাকলো । কেন দাড়িয়ে থাকলো ওর জানা নেই । লিফটের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্যামের দিকেই তাকিয়ে রইলো ।

ছোট বেলায় মাঝে মাঝে এমন দৃশ্য দেখতো ও । যখন স্কুল যাওয়ার সময় দরজার বাইরে আসতো তখন প্রায়ই পাশের প্রতিবেশিদের কারো কারো সাথে দেখা হয়ে যেত । অফিস যাওয়ার সময় বাড়ির মেয়েরা ছেলেদের এভাবে বিদায় দিচ্ছে । বারবার মনে হত ওর বাবা মা কেন এভাবে নিজেদের কে বিদায় দেয় না কোন দিন । কেন ওর জন্য ওর বাবা কিংবা মায়ের কোন সময় নেই ।





চার

আবন্তি যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে কেবল একটা জিনিসই দেখে এসেছে । ও বাবা আর মা কেবল একে অন্যের সাথে ঝগড়াই করে আসছে । দুজনের কোন কিছুই দুজনের পছন্দ নয় । কথায় একে অন্যকে খোচা দেওয়া মাঝে মাঝে তো গায়ে হাত তোলা ! এই দুইজনের ঝগড়াতে কারো লক্ষ্যই থাকলো না যে তাদের একটা মেয়ে আছে এবং সে অনাদরে বড় হচ্ছে !

আবন্তির বাবা পেশায় পাইলট ছিল । লম্বা সময়ে জন্য বাসা থেকে দুরে থাকতো । তবে কাজ শেষে যখনই বাসায় আসতো তখনই ঝগড়া শুরু হত । আবন্তি কেবল দুরে দাড়িয়ে দেখতো সব ! তারপর আরেকটু বড় হতেই যখন অনেক কিছু বুঝতে শিখলো তখন সে তার মায়ের ব্যাপারে আরেকটা ভয়ংকর জিনিস জানতে পারলো । সেটা জানার পর থেকে মা আর নিজের প্রতি এক রকম ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে । সাথে সাথে এই জিনিসটাও বুঝতে শুরু করে যে তার বাবা কেন অন্য বাবাদের মত তাকে আদর করে না !

সব কিছু জানার পর আস্তে আস্তে নিজেকে সবার কাছ থেকে কেমন দুরে সরিয়ে রাখা শুরু করলো । আবন্তির যখন ১৭ বছর বয়স তখন তার বাবা আর মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায় । তার মা তাকে তার কাছে রাখতে চেয়েছিলো আবন্তি নিজে রাজি হয় নি । শেষে এমন একটা ব্যবস্থা ঠিক হল যে আবন্তি থাকবে একা । ওর দেখা শুনা করার জন্য আবন্তির এক দুঃসম্পর্কের খালা এসে থাকতে লাগলো । আর আবন্তির খরচ ওর বাবা আর মা দুজন দিবে । আবন্তির মনে হয়েছিলো যে এমন ব্যবস্থায় ওর বাবা আর মা দুজনেই যেন একটু হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল । যেদিন ওর বাবা চলে যাবে সেদিন আবন্তি ওর বাবাকে ডেকে বলল
-তুমি চাইলে অবশ্য আমার দায় দায়িত্ব নাও নিতে পারো ! তোমার তো দায় নেই ।
আবন্তির বাবা কেবল হাসলো । তারপর বলল
-তোর মা কি করেছে সেটা তার দায় । তবে আমার কিছু দায় তো আছেই । হয়তো ওমন করে কোন দিন দেখতে পারবো না তবে তুইতো মেয়েই আমার নাকি !

তারপর থেকে আবন্তি একাই আছে । প্রথম প্রথম খারাপ লাগলোও ও শান্তিতে ছিল । প্রতিদিনকার সেই ঝগড়া তো আর তাকে দেখতে হত না । মায়ের ঐ ব্যাপার গুলোও ওকে দেখতে হত না । ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর ওর সেই খালা কাকে যেন বিয়ে করে চলে গেল । ব্যাস তারপর থেকে আবন্তির আর কোন পিছু টান নেই । একা একাই তারপর থেকে থেকে এসেছে । কাউকে নিজের জীবনের সাথে জড়ায় নি । শুনেছিলো ওর বাবা আর মা নাকি ভালবেসে বিয়ে করেছিল । এই যদি হয় ভালবাসার বিয়ের ফলাফল তাহলে সেই ভালবাসায় আবন্তি নিজেকে কোন ভাবেই জড়াতে চায় নি ।

কিন্তু গত কিছু দিনে আসলে সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল । স্যাম ওকে এমন একটা অদ্ভুদ ভাবে ওর মা বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । আবন্তির সব থেকে অবাক লাগলো যে যেরকম পরিস্থিতিতে ওকে পরিচয় করিয়ে দিল সেই ব্যপারটা ওনারা খুবই স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে এটা দেখে । এটা স্বাধারনত স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার কোন বিষয় না । তার ছেলে ফ্ল্যাটে অন্য একটা মেয়ে রয়েছে এটা তাদের কাছে স্বাভাবিক কিভাবে হয় আবন্তি প্রথমে বুঝতে পারে নি ।

প্রথম সপ্তাহে কিছু না হলেও পরের সপ্তাহের প্রথম দিনেই আরেকটা ঘটনা ঘটলো । ক্লাশ শেষে বের হচ্ছিলো তখনই একজন ক্লার্ক এসে বলল যে ওকে প্রো-ভিসি ম্যাডাম ডাকছে । আবন্তি জানতো এমন ডাক ওর আসবেই ।
প্রো-ভিসির ফরিদা পারভিনের রুমে ঢুকতেই সেদিনের সেই হাস্যোজ্জল মহিলাকে দেখতে পেল আবন্তি ! ওর দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে ।
-তুমি এই ইউনিভার্সিটিতে পড় ? গাধাটা আমাকে গতকালকে বলেছে এই কথা !

আবন্তি কি বলবে বুঝতে পারলো না । খানিকটা অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো ।

-দেখি মা মমনি এদিকে এসো আরেকটু । ঐদিন তো তোমাকে ঠিক মত দেখতেই পারি নি ।

তারপর নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো । কতদিন পরে কেউ এমন ভাবে আদর করে ওকে জড়িয়ে ধরেছে আবন্তি মনে করতে পারলো না । বুকের মাঝে কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হল ওর ।

-শোনা আর কোন কাজ নেই তো তোমার ?
-জি না !
-ওকে চল তাহলে । আজকে মা মেয়ে মিলে শপিং করি । জানো একা একা কেনা কাটা করে মজা নেই । আমি যখনই মার্কেটে যাই বারবার মনে হয় আমার একটা মেয়ে থাকলে আজকে কত ভাল হত । আল্লাহ এই জন্যই তোমাকে পাঠিয়েছে ।
-না মানে ....
-কোন মানে টানে না । আজকে তোমাকে ছাড়ছি না ।

একপ্রকার জোর করেই ওকে গাড়িতে তুলে নিল । তারপর বাকিটা সময় এই মার্কেট ঐ মার্কেটে দুজনে ঘুরতে লাগলো । প্রথম প্রথম আবন্তির খানিকটা অস্বস্তি লাগলেও একটা সময় আবিস্কার করে ওর ভাল লাগছে পাশে মহিলাকে ! বিশেষ করে তার এই সত্যিকারে আন্তরিকতা দেখে ।

একেবারে সন্ধ্যার সময় যখন ওদের কেনাকাটা শেষ হল তখন আবন্তি লক্ষ্য করলো যা কেনা কাটা হয়েছে তার বেশির ভাগই ওর জন্য । আবন্তি প্রথম প্রথম খুব মানা করছিলো বারবার বলছি আন্টি লাগবে না কিন্তু ফরিদা পারভিন কিছুতেই শুনেন নি ।

প্রথমে আবন্তি যখন ম্যাডাম বলে ডাকলো তখন সে একটা ধকমও দিয়েছিলো । বলেছিলো যে ইউণিভার্সিটিতে আমি তোমার ম্যাডাম কিন্তু এখানে তোমার হবু শ্বাশুড়ি । এটা মনে রাখো ।

তারপরেই সেই কথাটা বলল সে । কেনা কাটা শেষে দুজন একটা ফার্ট ফুডের বসেছে খাওয়ার জন্য । খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তখনই ফরিদা পারভিন বলল
-মা তোমাকে একটা কথা বলবো ?
-বলুন ! অনুমুতি কেন চাইছেন ?
-তুমি আমার ছেলেটাকে ছেড়ে যাবে না তো ?
-মানে কি বলছেন ?
-আসলে আমার ছেলেটা মানুষের সাথে ঠিকঠাক মত মিশতে পারে না । এই জন্যই ওর এমন কেউ ছিল না । কিন্তু যাকে একবার ভালবাসে তাকে জান প্রান দিয়ে ভালবাসে ! ও কি তোমাকে প্রিয়ার কথা বলেছে ?
-প্রিয়া ? না তো !
-এই প্রিয়ার জন্যই আসলে ও আর কাউকে বিয়ে করতে চাইছিলো না । ও যখন কলেজে পড়তো তখন একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করেছিলো । সব কিছু ঠিকঠাক চলছিলো তখনই মেয়েটার বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয় । স্যাম আমাদের কে বলেও ছিল বিয়ের ব্যাপারে কিন্তু তখন সবে মাত্র ও কলেজে পড়ে কিভাবে বিয়ের জন্য হ্যা বলি বল ? তারপর থেকে মেয়েটার মানে প্রিয়ার বিয়ে হয়ে যায় । তারপর থেকে ও আরও বেশি গম্ভীর হয়ে যায় । ও আর কাউকে ভালবাসে নি । বিয়েও করতে চায় নি । আমরা শত বলেও রাজি করাতে পারছিলাম না । একটা সময় আমার আর ওর বাবার দুজনেরই দোষী মনে হত । বারবার মনে হত আমরা যখন তখন রাজি হয়ে যেতাম তাহলে আজকে আমার ছেলেটা এমন হত না ! তারপর ও যখন বলল তোমার কথা, আমরা দুজন যে কি পরিমান খুশি হয়েছিলাম তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না । আমরা কিছুতেই আর এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাই না । তুমি যা চাইবে যেমন করে চাইবে তাই হবে কেবল আমার ছেলেটাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ !

আবন্তি কি বলবে খুজে পায় নি । তবে ওর একটু যে খারাপ লাগে নি সেটা বলবে না ।




পাঁচ

স্যাম অফিসের সামনেই দাড়িয়ে আছে । ওর ফ্ল্যাটটা ওর অফিসের ঠিক কাছেই । এখানে যাওয়ার জন্য গাড়ির দরকার হয় না । কিন্তু ও গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে আছে । ওর বাবার সাথে ওকে যেতে হবে ওদের বাসায় । বাবা বলছিলো কি যেন একটা কাজ আছে । ঠিক তখনই স্যাম আবন্তিকে দেখতে পেল। হাটতে হাটতে ওর সামনে এসে দাড়ালো । আর ঠিক সেই সময়েই ওর বাবাকে নিয়ে গাড়িটা এসে থামলো ওর পাশেই ।

কোন দিকে যাবে ?

আবন্তির দিকে নাকি গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসবে । কিন্তু কিছু করার আগেই ওর বাবা নিজেই দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এল । ওর বাবাও আবন্তিকে দেখতে পেয়েছে । আবন্তির দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল
-আরে তুমি এখানে ?
-গুড আফটারনুন আঙ্কেল ! এই তো !
-কোথায় যাবে ?
-বাসার দিকে যাবো । স্যামকে চাবি দিতে এসেছি !

স্যাম দেখলো ওর বাবা ওর দিকে তাকালো । ওর বাবা বলল
-ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসো না কেন ? তোমার মায়ের সাথে ওর প্রতিদিন দেখা হয় । তুমিও দেখা কর । তা কেবল আমি বাদ যাবো ?
স্যাম কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না । তারপর আবন্তির দিকে তাকিয়ে বলল
-তা মামনি আজকেই চল আমাদের বাসায় !
-আঙ্কেল আজকে একটা জরুরী কাজ চলে এসেছে । কালকে আসি ! কালকে ছুটির দিন আছে সবার সাথে দেখা হবে !
-প্রোমিজ তো ?
-একদম ! কালকে !
-ওকে ! ডান ।

তারপর স্যামের দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো, তাহলে তোমার আর আসা লাগবে না আমার সাথে । তুমি আবন্তিকে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে আসো !
তারপর আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে হুস করে চলে গেল ।


চাবি টা তখনও আবন্তির হাতেই । আবন্তি ওর কাছে এসে বলল
-চল ?
-দাড়াও । গাড়ি আসুক !
-না গাড়িতে করে যাবো না
-তাহলে কিসে করে যাবা ?
-রিক্সায় করে ! যে ছেলে সারা জীবন গাড়ি ছাড়া চলে নি তাকে নিয়ে রিক্সায় চড়তে কেমন লাগে সেটা দেখতে চাই ।
-দেখো এখন আকাশের অবস্থা ভাল না । দেখেছো তো । যখন তখন বৃষ্টি নামবে !
-আরে এখানেই তো আসল মজা ! বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে বৃদ্ধিতে ভিজতে মজাই আলাদা ।

কথাটা বলে আবন্তি এতো জোরে হাসতে লাগলো যে আশে পাশে মানুষজন পর্যন্ত ওদের দিকে ফিরে তাকাতে শুরু করলো । বুঝতে কষ্ট হল না ওরা এখানেই জব করে । বসের ছেলের সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে এবং সে অদ্ভুদ ভাবে হাসছে এটা দেখে তারা খানিকটা অবাক না হয়ে পারলো না । শেষে স্যাম আবন্তিকে নিয়ে রিক্সাতেই উঠে বসলো । অদ্ভুদ লাগলেও ওর খারাপ লাগছিলো না !
তবে স্যাম বুঝতে পারছিলো যে মেয়েটার ভেতরে কি যেন একটা পরিবর্তন এসেছে । মেয়েটা কথা বলছে খুব বেশি ! এতো কথা তো মেয়েটা বলতো না । এমন করছে কেন ?
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল যে আজকে বৃষ্টি আসবেই । এখন তার আগে আগে বাসায় পৌছাতে পারলে হয় !


আবন্তি কি করছে সেটার কোন ব্যাখ্যা ওর নিজের কাছেও নেই । ও কেবল এসেছিল চাবিটা দেওয়ার জন্য । তারপর ওর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু স্যামের বাবার সাথে দেখা হয়ে যাওয়াটা কেমন সব পরিবর্তন করে দিল । ওভাবে স্যাম কে নিয়ে রিক্সায় ওঠাটা ওর কোন ইচ্ছে ছিল না । তার উপর আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যখন তখন বৃষ্টি নামবে । আবন্তির আবার বৃষ্টির পানি একদম সহ্য হয় না । গায়ে পড়লেই জ্বর চলে আসে । এই জন্য ও বৃষ্টির পানিকে খুব এড়িয়ে চলে । কিন্তু আজকে ওর এসব কোন চিন্তার ভেতরেই আসছে না ।

স্যামের দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা কথা বলেই চলেছে । স্যামের দিকে তাকিয়ে প্রথমে মনে হচ্ছিলো ছেলেটা সম্ভবত একটু অবাক হচ্ছে তবে কিছু সময়ে সেটাও দুর হয়ে গেল গেল । আবন্তির মনে হল ও সারা জীবন মানুষের মিশতে পারে নি ওর পারিবারিক কারনে স্যাম নিজেও খানিকটা সেরকম । মানুষের সাথে ঠিক মত মিশতে পারে না । ও মা ই বলেছিলো ।

সত্যি সত্যিই বৃষ্টি নেমে গেল । কিছু সময়ের ভেতরেই দুজনই ভিজে একদম একাকার হয়ে গেল । কিছু সময় যাওয়ার পরই আবন্তি বুঝতে পারলো ওর শরীরে কাঁপন শুরু হয়েছে কিন্তু সেটা ও আমলেই নিল না । পুরোটা সময় বৃষ্টিতে ভিজতেই লাগলো । কেন জানি ওর অসম্ভব ভাল লাগছিলো । কোন ব্যাখ্যা নেই তবুও । পাশে এমন একজন আছে এই জন্য ভাল লাগছে ?
কিন্তু সে তো আসল কেউ না । কদিন পরে এই সব কিছু কেমন কোথায় চলে যাবে তখন ?



যখন আবন্তির সামনে নামলো তখনই রীতিমত ওর জ্বর চলে এসেছে । স্যাম ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ঠিক আছো ?
-হ্যা !
-কাঁপছো মনে হচ্ছে !
-একটু ঠান্ডা লাগছে । শরীর মুছলে ঠিক হয়ে যাবে !

কেন জানি আবন্তির খুব ইচ্ছে এই কথা বলতে যে আমার এখনই আকশ পাতাল জ্বর আসবে । তুমি একটু থাকবে আমার পাশে । কিন্তু বলল না । আজকে যেটুকু হয়েছে সেটাই অনেক । অনেক বেশি ! খানিকটা টলতে টলতেই আবন্তি লিফটের দিকে পা বাড়ালো ।



ছয়

-মা মানি ! এটুকু খেয়ে না !
-না ! খাবো না । তেতো লাগছে ।
-খেতে হবে ! কই মুখ খোলো !

আবন্তি ভাল করে চোখ মেলে দেখলো সে নিজের ঘরে নেই । সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে মনে হল কোন হাসপাতালে আছে । সামনে ওর দিকে স্যুপের বাটি নিয়ে স্যামের আম্মু ফরিদা পারভিনকে দেখা যাচ্ছে ।
-মুখ খোলো !
আবন্তি মুখ খুলল । ফরিদা পারভিন পরম যত্ন নিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলেন । পুরো স্যুপের বাটি খালি করেই তবেই তিনি উঠলেন ! আবন্তির মনে হল ও যেন স্বপ্ন দেখছে ! এমন ভাবে ওর দেখা শুনা কেউ করেছে কি না আবন্তির মনে নেই ।
এমন স্বপ্ন ও প্রায়ই দেখে । ও খুব শরীর খারাপ করে ঘরে শুয়ে আছে । ওর মা ওকে আদর কয়ে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে । জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু তার এই জীবনে এমন ঘটনা কোন দিন ঘটে নি । আজকে ঘটছে !

আবন্তি বলল
-আমি এখানে কিভাবে এলাম ?
-এখন কোন কথা না । তোমার যে বৃষ্টিতে ভিজলে এমন জ্বর আসে সেটা জেনেও তুমি স্যামের সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছো কেন ? আগে তুমি ঠিক হও স্যামের কপালে দুঃখ আছে ।
-ওর কোন দোষ নেই । আমিই ......
-হয়েছে । ও কেন ভিজতে দিবে ? এই খেয়াল নেই ?

কটপ রাগটা কেন জানি আবন্তির অসম্ভব ভাল লাগলো । বুকের ভেতরে কেমন জানি করতে লাগলো । ওর নিজের মা যদি এমন হত তাহলেও ওকে এভাবে বকাবকি করতো ! এমন করে শাসন করতো ?


ঘন্টা খানেক পরে স্যাম আসলো হাসপাতালে । হাতে ফুলের তোড়া ! ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল
-ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি ! এভাবে কারো জ্বর আছে আমার জানা ছিল না ।
-আমি এখানে কিভাবে এলাম ?
-আম্মু নিয়ে এসেছে তোমাকে ! আমিও অবশ্য ছিলাম !
-কিন্তু খবর পেলেন কিভাবে ?
-তোমার সম্ভবত হুস ছিল না জ্বরের কারনে । তুমি আমাকে মেসেজ পাঠাতে গিয়ে আম্মুকে পাঠিয়ে ছিলে । আম্মুতো তখনই আমাকে নিয়ে তোমার বাসায় হাজির । দরজার কাছে গিয়ে দেখি তুমি দরজাটাও ঠিক মত লক কর নি । বৃষ্টিতে ভিজলে তোমার জ্বর আসে তবুও কেন এভাবে ভিজলে । তোমার জন্য আম্মু আমাকে এতো বকেছে জানো !!


তারপরও আরও দুইদিন আবন্তিকে হাসপাতালে থাকতে হল । ওকে যেদিন রিলিজ করে দিবে সেদিন বিকেলেও খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । ফরিদা পারভিন রুমের ভেতরে এসে দেখে আবন্তি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে । বৃষ্টির দিকে আছে । খানিকটা ধমকের সুরে আবন্তিকে বিছানা এসে বসতে বলল । আবন্তি আবার বেডের কাছে আসতে আসতে বলল
-আন্টি আমার আবারও বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে ।
-কি ! কি বলে এই মেয়ে !
-আবার বৃষ্টিতে ভিজলে আবার জ্বর আসবে । আবারও আপনি স্যাম আঙ্কেল আমার জন্য অস্থির হয়ে যাবে । আমাকে দেখা শুনা করবেন ! আসলে ছোট বেলা থেকে এমন ভালবাসা আদর পেয়ে আমার অভ্যেস নেই তো তাই লোভ সমালাতে পারছি না । আমার কেউ নেই তো যে আদর করবে ..।

ফরিদা পারভিন দেখলো আবন্তির চোখে পানি । তিনি মেয়েটার জন্য এমন মায়া অনুভব করলেন ! আবন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললেন
-তুমি আজকে থেকে আমাদের বাসায় থাকবে । ঠিক আছে ! আর কেউ নেই এই কথাটা খবরদার বলবে না ! আজ থেকে আমাকে আন্টি নয় আম্মু বলে ডাকবে ! মনে থাকবে ?



সাত

স্যাম বাসায় ঢুকতেই ওর মনে হল বাসার পরিবেশ কেমন জানি একটু অন্য রকম ! কিছু যেন ঠিক নেই । ঠিক ধরতে পারছে না কি সমস্যা তবে কিছু একটা সমস্যা সেটা বুঝতে পারছে ।
আরও আধা ঘন্টা পরে ও যা জানতে পারলো সেটার জন্য ও মোটেই প্রস্তুত ছিল না । আজকে ও বিয়ে । হাসপাতালে কিছু একটা হয়েছে । বাসার একজনের কাছে শুনতে পেল যে ওর ফরিদা পারভিন যখন আবন্তিকে নিয়ে বাসায় আসলো তখন আবন্তি খুব কান্না কাটি করছিলো । কেন কাঁদছিলো সেটা অবশ্য কেউ জানে না । তারপর ফরিদা পারভিন হঠাৎ করেই সবাই কে ডেকে প্রস্তুতি নিতে বলে । ঘর সাজাতে বলে । ওর বাবা নাকি গেছে কাজি ডাকতে । আজকে একটু পরেই ওর সাথে আবন্তির বিয়ে দিবেন তিনি । পরে বড় করে আয়োজন করা যাবে ।

স্যাম ছুটে গেল মায়ের দিকে !
-আম্মু এসব কি ?
-কি দেখতেই পাচ্ছো ? তুমি যাকে ভালবাসো তার সাথেই তোমাকে বিয়ে দিচ্ছি ।
-কিন্তু আম্মু ..... এতো জলদি আমার তো প্রস্তুতির দরকার আছে । আর.....
-কোন প্রস্তুতির দরকার নেই । আমি মেয়েটা আর একটা মিনিটও একা থাকতে দিতে রাজি নই । এতো গুলো বছর মেয়েটা একা একা কিভাবে কি কষ্টের ভেতরে দিন কাটিয়েছে সেটা তোমার খেয়াল আছে । কেবল মুখেই ভালবাসো কোন দিন মেয়েটার কষ্ট টা অনুভব করার চেষ্টা করেছো কোন দিন ?
-কিন্তু আম্মু ....
-কোন কিন্তু না । তোমাকে অনেক দিন সময় তো দিলাম আর কত !! বিয়ে তো একেই করবে তুমিই বলেছো । আজ কর আর কাল কর একই ব্যাপার !


স্যাম নিজের রুমে গিয়ে বুঝতে পারলো না কি করবে । ও যেমন টা প্লান করেছিল সব ঠিক মত চলছিলোই । আর কটা দিন পরেই সব প্লান মোতাবেক হত । তখন ওর মা বাবা আর ওকে জোর দিতে পারতো না । কিন্তু মাঝখান দিয়ে এই মেয়েটা কেমন সব গুবলেট পাকিয়ে দিল । ঠিক ঠাক মত ই মেয়ে নির্বাচন করেছিলো । অতীত ইতিহাস জেনেই এমন একটা মেয়ে বেছে নিয়েছিলো কিন্তু মেয়েটা এমন করবে সেটা ও বুঝতে পারি নি ।

-আমার উপর রাগ হচ্ছে খুব ?
-তুমি ?

স্যাম পেছন ফিরে দেখে ওর ঘরের দরজার কাছে আবন্তি দাড়িয়ে আছে । স্যাম বলল
-তুমি কিন্তু ডিল ভাঙ্গ করছো । তোমার সাথে এমন কথা ছিল না !
-মোটেই না ।
-অবশ্যই তুমি ডিল ভাঙ্গছো । এমন কথা ছিল না !
-তুমি বলেছো মাস দুয়েক পরে তোমার সাথে ব্রেক আপ করতে ।
-তো তুমি কি করছো ?
-আমি তোমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলছি । আজকেই ! হ

এক হিসাবে কথাটা আবন্তি ভুল বলে নি ! স্যাম কি বলবে খুজে পেল না । ওর মানুষ নির্বাচনে ভুল হয়েছে । আবন্তি বলল
-তুমি যদি চাও আমি গিয়ে আম্মুকে বলি যে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি । সব সত্যি কথা বলি তাকে । কিভাবে আমাদের পরিচয় হল । আমরা কিভাবে ....... সরি আমরা না তুমি কি করলে কিভাবে তাদের কে....
-স্টপ ! তুমি এমন কিছু করবে না !
-আচ্ছা আরেকটা কথা তুমি আমাকে দিয়েছিলে । মনে আছে ? আমি যা চাইবো তাই দিবে !
-আগে তো তুমি গিয়ে কাজ টা কর তারপর !
-আমি তো করেছিই । করি নি ? আগে শুনে নাও আমি কি চাই ।
-কি !
-আমি এই ভালবাসাটা চাই ! তোমার আম্মুকে আম্মু বলে ডাকতে চাই । আমি কাছের মানুষ গুলোকে চাই আর কিছু না । এটা টুমি চাইলেই আমাকে দিতে পারো । তুমি বলেছিলে যে তুমি সম্ভব সব কিছু দিতে রাজি ! এটা আমি চাই ।

স্যাম কি বলবে খুজে পেল না । মেয়েটার চোখের ভেতরে, কথা বলার মাঝে এমন কিছু ছিল যা স্যামকে কিছু বলতে দিল না । বুঝতে পারলো ওর আম্মু কেন আজকেই এভাবে ওকে বিয়ে দিতে চাইছে ।



পরিশিষ্টঃ দুই মাস পর


-দাড়াও তো ...
-সময় নেই । টাই আমি গাড়িতে বেঁধে নিবো !
-কোন দেরি হচ্ছে না । তুমি অন্যের অফিসে চাকরি কর না নিজের অফিসে একটু লেট হলে কিছু হবে না !

ফরিদা পারভিন তাকিয়ে দেখলো আবন্তি খুব যত্ন করে তার ছেলের টাইয়ের নক টা বেঁধে দিল । প্রতিদিনই এমন চমৎকার কিছু দৃশ্য তার চোখে পরে । মেয়েটা এই দুই মাসের ভেতরে কিভাবে পুরো সংসারের সব কিছু আপন করে নিয়েছে ভাবতেও অবাক লাগে । আসলেই যে মানুষ গুলো সারা জীবন ভালবাসা হীন থেকেছে তারা একবার কারো কাছ থেকে ভালবাসা পেলে নিজের জীবন উজার করে সেই ভালবাসা কে আকড়ে ধরে থাকে । আবন্তির বেলাতেও ঠিক এমনই ঘটেছে ।

স্যাম ফরিদা পারভিনের দিকে তাকিয়ে বলল
-আম্মু গেলাম !
-আচ্ছা । সময় মত বাসায় আসবি ।
-আচ্ছা আম্মু । আগে তো একজন ছিল তাই সময় মত আসতাম এখন আবার দুজন । না এসে উপায় আছে !!


স্যাম কে বিদায় দিয়ে আবন্তি আবারও খাবার টেবিলে এসে বসলো ।
আজকের প্লান কি । ইউনিভার্সিটিতে যাবে না ।
-নাহ !
-এভাব ক্লাস কামাই করলে চলবে ! এটেনডেন্সের কি হাল হয়েছে এই দুই মাসে সে খেয়াল আছে !
-সমস্যা নেই । আমার শ্বাশুড়ি আম্মা সামলে নেবেন !

ফরিদা পারভিন ধকম দিতে গিয়েও হেসে ফেললেন । এই মেয়েটা আসলেই কোথায় ছিল এতো দিন !

(সমাপ্ত)


কিছু কিছু বানান ভুল থাকবে, এই জন্য দুঃখিত
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৫০
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×