গল্পের শুরু
টিউশনীর যাওয়ার জন্য আমার মাঝের একটু রাস্তা হাটতে হয় । আগে রিক্সায় করে যাওয়া যেত কিন্তু মগবাজার ফ্লাইওভার চালু হওয়ার কারনে মাঝের রাস্তাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । এখন পুরোটুকু পথ আর একবারে রিক্সা করে যাওয়ার উপাই নেই । লঞ্চ পারাপারের মত এপারে এসে নেমে রাস্তা পায়ে হেটে পার হয়ে আবার এপাশে এসে রিক্সা নিতে হয় । তাই এখন আর রিক্সা নেই না । এই টুকু পথ হেটেই যাই । অবশ্য হাটতে আমার খারাপও লাগে না । আরও একটা কথা হচ্ছে সারা দিনের ভেতরে কেবল এই টুকুই আমার শারীরিক পরিশ্রম হয় । বেকার মানুষের জীবনে কেবল সুখ আর সুখ । শুয়ে বসে থাকার পর এই টুকু কষ্ট করাই যায় ।
আজকেও টিউশনী থেকে বাসায় যাচ্ছিলাম । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তবে শরীর ভিজিয়ে দেওয়ার মত কিছু না । ছাতা আনি নি । আপন মনেই হাটতেছি । বৃষ্টির কারনে রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা । কেবল মাত্র সরকারী অফিসার্স কোয়াটারটা পার হয়েছি তখনই গাড়িটা চোখে পড়লো । আমাকে ক্রস করে গেল এবং সামনে গিয়ে থামলো । সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল । একজন মাঝ বয়সী লোক বের হয়ে এসে একেবারে আমার মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো ।
আমি একটু ভয় পেলাম । ছিনতাইকারী না তো ?
তখনই গাড়ির দিকে তাকালাম । বেশ দামী গাড়ি মনে হল । এতো দামী গাড়িতে করে এই ভদ্রলোক নিশ্চয়ই ছিনতাই করতে আসবে না । আমি পাশ কাটিয়ে যেতে যাবো তখনই লোকটা বলে উঠলো
-অপু !
খাইছে ! এই লোক দেখি আমার নাম জানে ! তার মানে আমার কাছেই এসেছে ।
কোপ দিবে না তো ? ইদানিং অনলাইনে কিছু লিখলেই মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে কোপ খেতে হয় । আমি একটু থমমত খেয়ে গেলাম । বললাম
-জি ?
-তোমার সাথে কয়েকটা কথা ছিল !
-আমার সাথে ?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে কি বলবো ? এই ভদ্রলোকের আমার সাথে কি কাজ থাকতে পারে কে জানে !
ভদ্রলোক বলল
-গাড়ির ভেতরে বসে বলি ? এখানে বৃষ্টি পড়ছে ।
আমার তখনই কেমন জানি সন্দেহ হল । আমাকে গাড়ির ভেতরে নিয়ে গিয়ে কিডন্যাপ করবে না তো ? কিন্তু আমাকে কিডন্যাপ করে কি লাভ ! আমার নাম জানে তার মানে আমার ব্যাপারে খোজ খবর নিয়েই এসেছে । তবে যদি আরও ভাল করে খোজ নিয়ে থাকে তাহলে খুব ভাল করেই জানার কথা যে আমাকে কিডন্যাপ করে খুব একটা লাভও হবে না । আর ভদ্রলোকের চেহারা দেখে আর যাই হোক কিডন্যাপারের মত কিংবা কোপ মারার মত মনে হচ্ছে না ।
আমি তবুও একটু ইতস্তত করে গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসলাম ।
ভদ্রলোকে এবার ভাল করে দেখতে পেলাম । সম্ভ্রান্ত চেহারা । অনেক টাকা পয়সার মালিক দেখলেই বোঝা যায় । এই লোক আমার কাছে কি চায় ! আমি খানিকটা সংকুচিত কন্ঠে বললাম
-জি বলুন !
-আমি নুশরাতের বাবা !
-কোন নুশরাত......
আমি কয়টা নুশরাতকে চিনি ? চিন্তা করার চেষ্টা করলাম । সবার আগে সেই নুশরাতের কথাই মনে পড়লো । আমার সাথে পড়তো । কিন্তু কেবলই পড়তো । মেয়েটার সাথে আমি কোন দিন কথাও বলতে পারি নি । অবশ্য সে আমাদের ক্যাটাগরির ছিল না । গাড়িতে করে আসা যাওয়া করতো । ক্লাসের আরও কয়েকজন বড় লোকের ছেলে মেয়েদের সাথেই তার উঠা বসা ছিল ।
সেই নুশরাত ? কিন্তু ওর বাবা আমার কাছে কি চায় ?
আমি বললাম
-আচ্ছা । কেমন আছে ও ?
-আছে ! তুমি জানো ও কেমন থাকে !
হু ! মেয়েটার ব্যাপারে আমি জানি । মেয়েটার একটা রোগ ছিল নাকি শুনেছিলাম । পড়া লেখা চলা কালিন সময়েও বেশ কয়েকবার ও দেশের বাইরে গেছিলো বলেও শুনেছিলাম ।
-ও আচ্ছা । বলুন আমার কাছে কি দরকার ?
-আসলে কিভাবে যে তোমাকে বলি !
তারপর আমার সামনে একটা বই মত কিছু একটা ধরিয়ে দিল । হাতে নিয়ে দেখলাম আসলে সেটা কোন বই না । প্রিন্ট করা পেপার একসাথে বাঁধাই করা হয়েছে । বইয়ের মত করে । আমি খুলে কয়েক লাইন পড়তেই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম ।
-আরে এটা তো....।
আমাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে নুশরাতের বাবা বলল
-হ্যা তোমার লেখা গল্প । বেশ কয়েকটা আছে এখানে ।
-আচ্ছা । আসলে আমি এসবের কিছু বুঝতে উঠতে পারছি না ।
-বলছি ।
এই বলে ভদ্রলোক বেশ কিছু সময় দম নিল । তারপর বললেন
-আসলে আমার মেয়ে তোমার লেখা এই গল্প গুলো বেশ পছন্দ করে । বিশেষ করে ঐ ৪৭ পৃষ্ঠায় যেটা আছে ওটা । আমি বেশ কয়েকবারই ওকে এই একই গল্প পড়তে দেখেছি । ওখন ও মুখে এমন একটা আনন্দ দেখেছি যেন ও ও নিজেই ওটার ভেতরে আছে ।
-আচ্ছা !
-আমি চাই আমার মেয়েটা আসলেই ওমন কিছু ফিল করুক !
-আমি ঠিক বুঝলাম না !
-মানে আমি চাই যে আমার মেয়েটা যেন অন্তত কিছু দিন এমন একটা স্বপ্নের দুনিয়াতে বসবাস করুক, কারো সাথে সময় কাটাক !
আমি ততক্ষনে পৃষ্ঠা উল্টে ৪৭ পেইজে চলে গেছি । কয়েক লাইণ পড়েই গল্পটার কথা মনে পড়লো আমার । একজন এমপ্লোয়ী তার বসের মেয়ের সাথে প্রেম করে । মেয়েটার শরীর খারাপ থাকে । কদিন পরেই মারা যাবে কিন্তু শেষ কটা দিন ওর চমৎকার কাটে ছেলেটার জন্য । আমি নুশরাতের বাবার দিকে তাকালাম । উনি ওনার মেয়ের জন্যও এমন একটা কিছু তৈরি করতে চাইছেন ।
এই লোকের মাথা ঠিক আছে তো ?
আমি বললাম
-স্যার এটা বাবানো গল্প । বাস্তবে এমন হয় না ।
-এই জন্যই আমি এটা তৈরি করতে চাই ।
-তার মানে আপনি চান আমি এমন কিছু করি ?
-হ্যা । চাইলে আমি আরও অনেকের কাছেই যেতে পারতাম কিন্তু গল্পটা যেহেতু তুমি লিখেছো তার উপরে তোমাকে ও চেনেও তোমার জন্য সহজ হবে ওর কাছাকাছি যাওয়া । যদি মানা করে দাও তাতে অবশ্য সমস্যা নেই । আমি অন্য কাউকে ঠিকই খুজে নেব । তবে তোমার লেখা গল্প তুমি হয়তো ভাল বুঝবে চরিত্রটা । তাই তোমার কাছে আসা । এবং ....
-এবং ?
-সাথে আরও ভাল কিছু অফারও আছে ।
-যেমন ..
-আমি যতদুর জানি তুমি এখনও কোন চাকরী পাও নি, চাকরি খুজছো, রাইট ?
-হ্যা । প্রস্তুতি চলছে ।
-হ্যা । নুশরাতের সাথে সম্পর্ক তৈরি করাটা মোটামুটি এক বছরের একটা কন্ট্রাক্ট । তোমাকে একটা বছর এই কাজটা করে যেতে হবে । মাস শেষে তুমি এর জন্য বেতন পাবে । বেতনটা তোমার এক্সপেক্টটেশন থেকে অনেক বেশি হবে এটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি । এবং এর এই ক্যারেক্টরটা পালন করার জন্য তোমাকে আমার কোম্পানিতে চাকরী করতে হবে । ঠিক যেমন করে গল্পে নায়ক চাকরী করে ।
-আচ্ছা ।
-এক বছর শেষে চাকরিটা তোমার পার্মানেন্ট হয়ে যাবে । তোমাকে আর জব খুজতে হবে না ।
আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না । মেয়ের বাবা তার মেয়ের জন্য একজন প্রেমিক ঠিক করছেন যাতে মেয়েটার সাথে প্রেমের অভিনয় করতে পারে । অদ্ভুদ ! অবশ্য মেয়ের বাবারা মেয়ের সুখ কিংবা আনন্দের জন্য অনেক কিছুই করতে পারে ।
আমার জন্য ভাল একটা সুযোগ । নিশির বিয়ে হয়ে গেছে এইতো কদিন আগে । চাকরি ম্যানেজ হয় নি বলেই বিয়ে করা হয় নি । আর বেকার ছেলের হাত ধরে ঘর থেকে বের হয়ে আসবে এমন বোকা মেয়ে সে কোনদিনই ছিল না । সেদিক দিয়ে আমার আসলে এই অফারটা নেওয়াতে কোন বাঁধা নেই । আমি বললাম
-কিন্তু আমি কি পারবো ? আসলে এই জিনিস আমি কোন দিন করি নি তো । গল্পই কেবল লিখেছি বাস্তবে আসলে এগুলো এতো সহজ নয় ।
-তুমি যদি না বল তাহলে আমাকে অন্য কাউকে.....
-না মানে আমি না বলছি না । আমি রাজি !
-গুড । এটা তোমার জন্য একটা ভাল ডিল হবে আশা করি ।
বাবা মেয়ের জন্য ডিল করছে । আমার জন্য অবশ্য ভাল বিজনেস ডিলই বলা চলে । এখন দেখার বিষয় আমি কতটা ভাল ভাবে কাজটা করতে পারি ।
নুশরাতের বাবা তারপর নিজের স্যুটের ভেতর থেকে একটা খাম বের করে আমার হাতে দিল । বলল
-আগামী সপ্তাহ থেকে তোমার কাজ শুরু । এখানে তোমার এপয়েন্টমেন্ট লেটার আছে ।
গাড়ি থেকে বের হয়ে যখন আবারও হাটতে শুরু করলাম তখনও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আসলে কি হল ।
আসলেই কি হল ?
এমন কি হয় নাকি আবার ! তবে হাতের খাম টা কোন ভাবেই তো আর মিথ্যা কথা বলতে পারে না ।
খেলা শুরু
চাকরিতে জয়েন করার পর আরও ২১টা দিন পার হয়ে গেল । কোন প্রকার কোন ঘটনা ছাড়াই । মনের ভেতরে একটু অবাক লাগছিলো যে এখনও একবারের জন্যও নুশরাতের সাথে আমার দেখা হওয়ার কোন সুযোগ ঘটে নি । আর আমি কিভাবে ওর সাথে গিয়ে দেখা করবো ? ওদের কোম্পানীতে চাকরি পেয়েছি বলেই তো আর ওদের বাসায় গিয়ে হাজির হতে পারি না, গিয়ে বলতে পারি না যে শুনছো আমি তোমাদের কোম্পানীতে চাকরী করি, আসো আমরা প্রেম করি ।
কিন্তু এভাবে হাতের উপর হাত রেখে বসেও থাকতেও পারি না । অবশ্য আমি বসেও নেই । যে কাজের জন্য আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেই কাজ না করলেও আমাকে অফিসের কাজ ঠিকই করতে হচ্ছে । বলতে গেলে পুরো অফিসের সময়টুকু আমার দম ফেলার সময় থাকে না, ২১টা দিন কিভাবে পার হয়ে গেল টেরই পেলাম না । এখন তো মনে হচ্ছে নুশরাতের আব্বা আমাকে ওনার মেয়ের সাথে প্রেম করার জন্য ঠিক করেন নি বরং এখানে এভাবে খাটিয়ে মারার জন্য নিয়োগ দিয়েছে ।
এমনটাই যখন ভাবছি তখনই নুশরাতের সাথে আমার দেখা হয়ে গেল । অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই । আমি অফিস শেষ করে রিক্সা করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম । তখনই দেখতে পেলাম একটা সাদা রংয়ের গাড়ি রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে । গাড়ির সামনের ব্যানেট খোলা । একজন মানুষ ইঞ্জিনের ভেতরে কিছু দেখার চেষ্টা করছে । আর গাড়ির দরজার সামনে হেলান দিয়ে বিরক্ত মুখে নুশরাত দাড়িয়ে ! একবার মনে হল পাশ কাটিয়ে চলে যাই কিন্তু তারপরই মনে হল, চাকরি পেয়েছি এটা অনুযায়ী কাজ তো করতে হবে ! আমি ওর সামনেই রিক্সা থামালাম ।
রিক্সা থামাতে দেখে নুশরাত আমার দিকে কিছু সময়ে তাকিয়ে থেকেই আমাকে চিনে ফেললো ।
-তুমি অপু না ?
-হ্যা !
আমি একটু হেসে রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম ।
-এখানে ?
-আর বল না । গাড়িটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে ।
-কোথায় যাচ্ছো ?
-কোথাও না । তবে আকাশের অবস্থা ভাল না খুব বেশি । বাসায় ফিরা যাবো ভাবছি । তা তুমি কোথা থেকে আসতেছো ?
-আমি !! অফিস থেকে !
-তাই নাকি ? কোথায় চাকরি কর তুমি ?
আমি কোম্পানীর নাম বলার পর নুশরাত কিছু সময় আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-তুমি আমাদের কোম্পানীতে জয়েন করেছো আর আমাকে বলও নাই একবারও ?
-আসলে ........
-তোমার তো ফাইন হয়ে গেছে ।
আমার কাছে একটু অবাকই লাগছিলো । ক্যাম্পাসে আমার আর নুশরাতের কোন দিন কথা হয় নি । অবশ্য অনেকের সাথেই হয় নি । আমি খানিকটা নিশ্চুপ টাইপের মানুষ ছিলাম । আর নুশরাতও ছিল অন্য সার্কেলের সাথে । আর আজকে মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলছে যেন কতই ভাল সম্পর্ক ছিল ।
নুশরাত আমার সাথে রিক্সায় উঠে এল । সেখান থেকে আমাকে সোজা বেইলি রোডের দিকেই নিয়ে গেল । বলল যে আজকে তাকে ট্রিট দিতেই হবে । অবশ্য আমার জন্য ভালই হল । আমি হয়তো এতো সহয়ে ওর সাথে কথা বার্তা এগোনো সহজ হত না ! যেন না চাইতেই সব কিছু সহজ হয়ে গেল !
নুশরাত অনেক কথা বলল । এমন কি আমার নাম্বার পর্যন্ত নিয়ে নিল । বলল যে ফোন দিবে । আর আমি ভাবছিলাম আজকের পরে ওর সাথে কিভাবে দেখা করবো । সেই সুযোগটা ও নিজেই আমাকে করে দিল । ও যখন নিজে ইচ্ছে করে ফোন নাম্বারটা আমাকে দিল তখন সামনে ওর সাথে যোগাযোগ করাটা খুব একটা কষ্টের হবে না ।
ওকে যখন বাসায় পৌছে দিতে গেলাম তখনই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো । হুড তুলে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার কথা ভাবছি তখন নুশরাত একটা অবাক করার কাজ করলো । হুড খুলে ফেলে ভিজতে লাগলো ! সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই কেবল ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলোতে নুশরাতের চেহারা দেখা যাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
এই মেয়ের সমস্যা কি !
মেয়েটা চলন্ত রিক্সাতে করে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিতে ভিজছে । ওর চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে খুব আনন্দ হচ্ছে । নুশরাত চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অনেক দিনের ইচ্ছে এমন ভাবে রিক্সায় করে বৃষ্টিতে ভিজবো । আমার আবার বৃষ্টিতে ভেজা একবারে নিষেধ । বাবা জানলে খুব রাগ করবে ! আমার আবার বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসে !
-সেকি !
-আরে ভয় পাচ্ছো কেন ?
-ভয় পাবো না ? তিনি আমার বস তুমি জানো না ? যদি জানে যে আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছো তাহলে আমার চাকরি গেছে ....
-আরে কিছু হবে না । আমি বলব নাকি তোমার নাম ? তবে আজকেই আমাদের দেখা হল আর আজকেই আমার বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছেটা পূরন হয়ে গেল । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমাদের সামনের দিন গুলো ভাব হতে যাচ্ছে ....
আজকে আসলেই আমি কার মুখ দেখে উঠেছিলাম জানি না । একদিনেই এতোটা হয়ে যাবে ভাবতে পারি নি । সব যেন আসলেই আমার গল্পের মত করে হয়ে যাচ্ছে । মনে মনে খুশি হয়ে উঠলাম তবে সেই সাথে একটু চিন্তিতও হলাম । নুশরাত বলছিল বৃষ্টিতে ভিজলেই নাকি ওর জ্বর । যখন ওকে ওদের বাসার গেটের কাছে নামিয়ে দিলাম তখনও বৃষ্টি পড়ছে বেশ ভাল ভাবেই ।
নুশরাত বলল
-অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগলো !
-আমারও !
রাতের বেলা খানিকটা ইতস্তত করেই ফোন দিলাম ওকে । কয়েক ঘন্টা আগেই আমাদের দেখা হয়েছে তবুও মনে হচ্ছিলো যেন মেয়েটা আমাকে চিনতেই পারবে না । তবে আমার ধারনা মিথ্যা প্রমানিত হল । নুশরাত আমাকে ঠিকই চিনতে পারলো ।
-শরীরের কেমন অবস্থা এখন ?
-জ্বর নিয়ে ভয় পাচ্ছো ?
-একটু তো পাচ্ছিই ।
-এখনও আসে নি তবে আমি বুঝতে পারছি চলে আসবে !
-তাহলে ?
-তাহলে আর কি । কালকে যখন জ্বর আসবে তখন একবার দেখতে এসো । কেমন ?
-তোমাদের বাসায় ?
-হ্যা । সমস্যা কি ?
-না বাবা পারবো না ।
-শুনো এতো ভয়ের কিছু নেই । আমি আছি না ?
এমন ভাবে আচ্ছা বললাম যেন আমি খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়ে গেলাম । কিন্তু মেয়ে তো জানে না যে আমি আসলে চাইলেই ওদের বাসায় কত সহজে যেতে পারি । আচ্ছা ওর বাবা ওর জন্য যেটা করতেছে সেটা জানতে পারলে মেয়েটার মনের অবস্থা কেমন হবে ?
ওর বাবা তো ওর জন্যই এসব করতেছে কিন্তু আমি ?
আমি কিসের জন্য করতেছি ?
টাকার জন্য ?
তাই তো টাকার জন্যই তো । নুশরাত নিশ্চয়ই এটা জানার পর আমার দিকে কি ভাববে সেটা ভাবছি !
এই সব চিন্তা আমি মন থেকে দুর করে দিলাম । তা ছাড়া এতো দিকে চিন্তা করলে চলে না । সবাই কেবল নিজেরটা বোঝে । নিশি তো চমৎকার ভাবে নিজেরটা বুঝতে পেরে চলে গেছে আমি কি ভাববো সেটা ভাবে নি তাহলে আমি কেন এতো কিছু ভাববো ?
ধরা পড়লে যা হবে দেখা যাবে !
প্রথম সুযোগ
সকালে অফিসে গিয়েই ম্যানেজারের রুমে ডাক পড়লো । আমাকে গত সপ্তাহে একটা কাজ দিয়েছিল । ফ্যাক্টরীর একটা রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে । জানতে চাইলো
-কাজটা শেষ হয়েছে ?
-জি স্যার একদম কমপ্লিট ।
-আচ্ছা তাহলে সেটা রেডি করে আনো । আমাদের স্যারের বাসায় যেতে হবে । আজকে উনি কাঠমন্ডু যাবেন । উনি বলেছেন ওনাকে যেন রিপোর্ট টা ওনার বাসায় গিয়ে প্রেজেন্ট করা হয় !
বাহ ! এতো চমৎকার সুযোগ চলে আসবে ভাবি নি । অথবা ..... নুশরাতের বাবা হয়তো ইচ্ছে করেই এমন করে করেছেন । যাই হোক আমার তো কাজ হয়ে গেল ।
নুশরাতের বাবার সাথে মিটিংটা ভাল হল । সব কাজ কর্ম ঘন্টা খানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল । আমরা যখন বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখনই এক আয়া মত মেয়ে এসে আমাকে বলল
-ভাইয়া, আপু আপনাকে থাকতে বলেছে ।
ম্যানেজার সাহেব আমার দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকালো । আমাকে এই বাড়ির কোন আপু থাকতে বলতে পারে এটা ওনার কাছে ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না । হওয়ার কথাও না । আমি বললাম
-স্যার, নুশরাত আমার সাথে পড়তো ভার্সিটিতে ।
ম্যানেজার সাহেব আসলেই একটু অবাক হয়ে গেল । তারপর মাথা ঝাকিয়ে গেটের দিকে পা বাড়ালো । আমি আয়ার পেছনে হাটতে হাটতে বাড়ির ভেতরে চলে এলাম আবার । একেবারে সোজা নুশরাতের ঘরে ।
এতো দ্রুত আমি নুশরাতের রুমের ভেতরে চলে আসতে পারবো ভাবতে পারি নি । আগে তো ভাবছিলাম যে এক বছরে মেয়েটার সাথে ঠিক ঠিক ভাব করতে পারবো তো আর ২২ দিনের মাথায় এতো দুর চলে এলাম !
নিজেই নিজের ভাগ্য দেখে অবাক হয়ে গেলাম ।
নতুন মাত্রা
-তুমি কোথায় বললে ?
ফোনের ভেতরেই আমি নুশরাতের গলায় বিশ্ময়টা টের পেলাম । আমি নিজেই নিজের কাজে খানিকটা অবাক হয়ে গেছি । নয়তো এই রাত একটার সময়ে আমি নুশরাতদের বাসার সামনে কি করতেছি । তাও আবার এই প্রবল বৃষ্টির সময়ে । আমি নিজের আচররনে নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে যাচ্ছি । নুশরাত তো হবেই ।
আমি আবার বললাম
-তোমাদের বাসার সামনে এসেছি ।
-এই রাতের বেলা তাও আবার বৃষ্টি হচ্ছে !
-তুমি না বললে যে এই বৃষ্টির সময় আমি পাশে থাকলে তোমার ভাল লাগতো
ওপাশ থেকে কোন কথা হল না কিছু সময় । আমিও কি বলবো খুজে পেলাম না, আসলে কি বলবো কিংবা বলা উচিৎ । একটানা কেবল বৃষ্টির শব্দই হচ্ছে । আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে দাড়িয়ে আছি ওদের বাসার সামনে । নুশরাতের রুমটা থেকে এই জায়গাটা একদম পরিস্কার দেখা যায় । আমি ওর রুমের লাইট জ্বলে উঠতে দেখলাম । তারপর নুশরাতকে জানালায় আসতে দেখলাম । আমি হাত তুললাম । নুশরাত এক হাতে ফোন নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
কিছু সময় পরে নুশরাত বলল
-তুমি কি আসলেই পাগল হয়ে গেছ ?
-জানি না । আসলে অনেক দিন পর আবার নতুন কিছু অনুভব হচ্ছে কারো জন্য । আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এমন কেন হচ্ছে তবে হচ্ছে । মাথা ঠিক নাই কি করছি নিজেই বুঝতে পারছি না ।
নুশরাত যেন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না । যদিও এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না তবুও আমার কেন যেন মনে হচ্ছে নুশরাত আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে । ভাবছে এই পাগল ছেলেটা এখানে কি করছে ! তারপর হঠাৎ করেই ফোনের লাইন কেটে গেল । নুশরাত জানলা থেকে সরে গেল তারপরেই । তবে ঘরের লাইট বন্ধ হল না । আমি দাড়িয়ে রইলাম । মনে হল যে নুশরাত একটু পরেই নেমে আসবে !
আমি বৃষ্টির ভেতরে দাড়িয়েই রইলাম । একটু শীত শীত করতে লাগলো । অনেকদিন পর আজকে আবার বৃষ্টি হচ্ছে । শীত কাল প্রায় চলে এসেছে । এই বৃষ্টির পরেই শীত নামা শুরু হবে ।
নুশরাতের বাবার সাথে দেখা হয়েছে আমার সেই মাস ছয়েক আগে । আস্তে আস্তে কাজটা করতে করতে আমি কিভাবে নুশরাতের সত্যিকারের প্রেমে পড়ে গেছি আমি নিজেই টের পেলাম না । আমি কোন দিন ভাবতেও পারে নি নিশিকে ছাড়া আর কাউকে কোন দিন ভালবাসতে পারবো কিন্তু নুশরাতের সাথে কথা বলার পর থেকেই সময় গুলো যেন পাল্টে যেতে লাগলো ।
ওর সাথে প্রথম দেখার পর থেকে আমাদের ঘন ঘন দেখা হতে লাগলো । যখন নুশরাতের ডাক শুনে ওর রুমে গিয়ে হাজির হলাম সেদিন থেকেই মনে হচ্ছিলো যে আমাদের সামনের দিন গুলো আরো ভাব যাবে । কেউ বলে দিচ্ছিলো না কিন্তু নুশরাতের আচরনটা আমার কাছে সেকমই মনে হচ্ছিলো ।
সাদা চাদরে নিচে শুয়ে ছিল আমি ওর বিছানার পাশে বসে ওর সাথে কথা বলছিলাম । তবে একটু যে অবাক হচ্ছিলাম তা না । সব কিছু যেন খুব সহজেই হয়ে যাচ্ছে । একেবারে গল্পের মতই । যেন কেউ গল্পের প্লট লিখে রেখেছে ।
প্রথম মাসের বেতন যখন হাতে পেলাম সেটা আসলেই আমার ধারনা থেকে অনেকটাই বেশি ছিল । প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ওকে খাওয়াতে নিয়ে গেলাম । আমার কেন জানি একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো কিন্তু খুব একটা আমলে নিলাম না । ওকে বললাম যে যেখানে থাকি সেখানে ভাবছি আর থাকবো না । নতুন একটা বাসা ঠিক করা দরকার !
যে হোস্টেলে থাকতাম সেটা ছেড়ে দিলাম । নুশরাতই আমাকে সাহায্য করলো বাসা ঠিক করতে । অফিসের কাছেই দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট ঠিক করে ফেললাম । সারা দিন দুজন মিলেই ঘর সাজাতে শুরু করলাম । মনে হচ্ছিলো যে নুশরাতের সাথে আমার নতুন বিয়ে হয়েছে দুজন মিলে ঘর গোছাচ্ছি ।
তারপর একটা একটা করে দিন যেতে লাগলো আর আমাদের মেলা মেশা আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো । প্রায় প্রতিদিনই ওর সাথে দেখা হতে লাগলো । ফোন, ফেসবুক তো ছিলোই । এভাবে আমি নিশির সাথেও কোন দিন মিশি নি যখন ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল । আমি প্রথম প্রথম নিজেকে খানিকটা নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করলাম কিন্তু একসময়ে লক্ষ্য করলাম আসলে সেটা সম্ভব হচ্ছে না !
মাস দুয়েক যাওয়ার ভেতরেই নুশরাত আমার প্রথম চুমু খেলো । সত্যিই বলতে কি আমি তখনও কেবল ওর বাবার দেওয়া এসাইনমেন্টটাই করছিলাম কিন্তু ও যখন আমাকে চুমু খেল তারপর থেকেই অনুভব করতে শুরু করলাম যে আমার অনুভুতি আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে । আমি যে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছিলাম নিজেকে সেটা ঠিকমত কাজ করছে না !
ঐদিন ছুটির দিন ছিল । আমি বাসাতেই ছিলাম । এমন সময়ে কলিংবেল বেজে উঠলো । দরজা খুলে দেখি নুশরাত দাড়িয়ে । ওর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে । আমি বললাম
-কি হয়েছে ?
ও কোন জবাব না দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো । তারপর গম্ভীর হয়ে সোফার উপরে বসে রইলো । আমি তখনও কিছুই বুঝতে পারছি না । আমি ওর পাশে গিয়ে বসতে বসতে বললাম
-কি হয়েছে বলবা তো ?
নুশরাত আমার দিকে এমন চোখে তাকালো যেন আমি অনেক বড় কিছু করে ফেলেছি । আমি মনে মনে চিন্তা করার চেষ্টা করলাম আসলে কি হয়েছে কিংবা কি হতে পারে ! তখনই আমার মনে হল নিশ্চয়ই নুশরাত ব্যাপারটা জেনে ফেলেছে । ওর বাবা যে আমাকে ওর সাথে প্রেমের অভিনয় করার জন্য ঠিক করেছে এটা জেনে ফেলেছে । এই ব্যাপারটা মনে হতেই আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । একবার মনে হল স্বীকার করে ফেলি, সত্যি কথা বলে ফেলাই ভাল কিন্তু তারপরই মনে হল সত্য প্রকাশ করলে আমার এতো চমৎকার চাকরিটা চলে যাবে । কি দরকার ! আমি কিছু বলছি না দেখে নুশরাত বলল
-তুমি ঐ মেয়েটার সাথে রিক্সা করে কেন গেছো ?
আমি একটু শান্তি পেলাম যে নুশরাত আসল ব্যাপারটা জানতে পারে নি । তারপরেই মনে হল কোন মেয়েটা ?
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-কোন মেয়েটা ?
-কত গুলো মেয়ের সাথে তুমি রিক্সায় ঘুরো শুনি ?
-আরে একটাও না । তোমাকে ছাড়া আর কাউকে নিয়ে তো ঘুরি নাই ।
-তাহলে কালকে ঐ মেয়েটা কে ? কে ?
-আরে কালকে যাকে নিয়ে রিক্সায় চড়েছিলাম সে আমার সাথে কাজ করে । তোমার বাবাই একটা কাজ দিয়েছিলো আমাদের দুজনকে ! সেটা করার জন্য ওর সাথে এক জায়গায় যেতে হয়েছিল । আমি তো ঘুরতে যাই নি ।
নুশরাত তবুও আমার দিকে এমন ভাবে তাকাতে লাগলো যেন আমার রিক্সায় চড়ে বড় অন্যায় করে ফেলেছি । অবশ্য তখনও সে আমাকে ভালবাসি বলে নি তবে তার আচরনে বেশ বোঝাই যাচ্ছে সে আমার উপরে হোঁচট খেয়েছে । আমি বললাম
-আচ্ছা, দাড়াও ... আমি যদি অন্য কোন মেয়ের সাথে রিক্সাতে চড়ি তাহলে তোমার কি সমস্যা শুনি .....
এই লাইণটা বলার সাথে সাথেই নুশরাতের মুখের ভাব বদলে গেল । সেখানে একটা লাল আভা দেখতে পেলাম ।
আমি হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকতেই নুশরাত বলল
-গাধা ! এখনও বুঝো নাই ....
-না তো ......
আমি চাচ্ছিলাম যে ও নিজের মুখ দিয়ে বলুক ।
কিন্তু ও যে আমার কাছে এসে আমাকে সরাসরি চুমো খেয়ে ফেলবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি । আমি যেমন অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ও তেমন লজ্জা মিশ্রিত চোখে আমাকে দেখছিলো । এক সময়ে বলল
-এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো ! লজ্জা লাগছে !
তারপর থেকেই ওর সাথে আমার প্রেম শুরু হয়ে গেল । তবে আমি যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবে কিছুই হল না । চিন্তা ভাবনা সব কেমন এলোমেলো হতে লাগলো । নয়তো এভাবে আমি এখানে এই বৃষ্টির ভেতরে এসে হাজির হই । সেদিনের পর থেকে নুশরাত সম্পূর্ন রুমে আমার সাথে একেবারে এটে থাকা শুরু করলো । মান অভিমান রাগ ঝগড়া আরও কত কিছু যে মেয়েরা জানে সেটা আমি হাতে হাতে টের পেতে শুরু করলাম । নিশির সাথে সম্পর্কের সময় আমাকে কোন দিন এমনটা কিছু করতে হয় নি । হলেও সেটার মাত্রা ছিল অনেক কম । নুশরাত যেন ঠিক আমার গল্প থেকে উঠে আসা কোন নায়িকা বরং ওর ভেতরে সেই গুণ গুলো আরও বেশি ছিল । আমার অবশ্য বেশ লাগছিলো । তবে আমি যে ওর প্রেমে পড়া শুরু করেছি সেটা বুঝতেও কষ্ট হল না খুব একটা ।
নুশরাত নিচে নেমে এল কিছু পরেই । ছাতা মাথায় দিয়ে । ল্যাম্প পোস্টের নিচে এসে আমার সামনে এসে দাড়ালো । আমি জানি এতো দিনে আমি সত্যি সত্যিই মেয়েটার প্রেমে পরে গেছি । তাই জন্যই হয়তো মাঝে মাঝে নিজের কাছে একটু একটু খারাপ লাগে । মেয়েটা সত্যটা জানতে পারলে কি হবে কে জানে ?
নুশরাত আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এমন পাগল কেন তুমি ?
-তোমার জন্য পাগল ।
-হুম ! তোমার গল্পের নায়ক গুলোর মত পাগলামো কর না । বাস্তবে এসব হয় না ।
-হচ্ছে না ? এই তো হচ্ছে । বাস্তবে পাগলামো গুলো আর অনেক বেশি মধুর হয় । কারন সেগুলো আমরা ফিল করতে পারি বাস্তবে ।
নুশরাত কিছু না বলে মাথা ঝাঁকালো । ওর চোখের আনন্দটা আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম ।
-চল হাটি ।
প্রবল বৃষ্টিতে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাত ধরে হাটছে । সত্যি কোন গল্প ছাড়া এটা বাস্তবে হতেই পারে না । তাই না ?
-এটা খানিকটা গল্পের মতই নাকি !
-আমার আর তোমার গল্প !
ওর হাত ধরে বৃষ্টির ভেতরে হাটতে লাগলাম । আসলেই গল্প মনে হচ্ছিলো সব কিছু ।
কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো ততই আমার ভেতরকার সেই অপরাধবোধটা প্রবল হতে লাগলো । এর মাঝে নুশরাতের বাবা আমার সাথে বেশ কয়েকবার কথা বলেছে । আমার প্রোগ্রেস দেখে তিনি বেশ খুশি । তার মেয়ে নাকি এখন স্বপ্নের জগতে আছে এবং এটাই তিনি চেয়েছিলেন । তবে আমাকে তিনি এও বলে সাবধান করে দিয়েছেন যেন আমি যেন কেবল প্রেমই করি এর বেশি কিছু না হয় । তিনি ঠিক কোন দিকে ইঙ্গিত দিলেন আমার বুঝতে কষ্ট হল না ।
কিন্তু আমি নিজের কাছে শান্তি পাচ্ছিলাম না কিছুতেই । মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটাকে এভাবে মিথ্যা বলা উচৎ হচ্ছে না । আর এখন তো ওকে আমি সত্যিই সত্যিই ভালবাসি । ওকে আমি বলবোই সত্যি কথাটা ! অনেক সাহস করে সিদ্ধান্ত নিলাম ।
সত্য বলার দিন
নুশরাত আমার মুখের গাম্ভীর্য দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি হয়েছে ? তোমাকে এমন লাগছে কেন ?
-নুশরাত আজকে তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই ।
-হ্যা বলবা তো । তুমি ছাড়া আর কে বলবে ? কিন্তু এমন মুখ করে কেন রেখেছো ? আমার তো ভয় লাগতে শুরু করেছে ।
আমি ওকে আমার সোফার উপর বসালাম । তারপর মুখোমুখি বসলাম । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তোমার কি মনে হচ্ছে ? মনে হচ্ছে যে আমি তোমাকে ভালবাসি ?
নুশরাত কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-হ্যা ।
-কোন সন্দেহ নেই তো ?
এতো সময়ে হাসছিল ও । এবার ওর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল । বলল
-কোন সন্দেহ নেই । তুমি যে আমার প্রেমে হাবুডুব খাচ্ছো এটা আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছি । আর আজকে কি কথা বলবে সেটাও আমি জানি ।
-জানো মানে ?
আমি খানিকটা ধাক্কার মত খেলাম । কি বলছে এই মেয়ে ?
এই মেয়ে কিভাবে জানে !
নুশরাত আমাকে বলল
-আমি তোমার আর বাবার মধ্যকার কন্ট্রাক্টের কথা জানি !
আমি এবার সত্যি সত্যিই ধাক্কার মত খেলাম । এতোটা অবাক আমি এর আগে কোন দিন হয়েছি কি না আমি জানিও না । কি বলছে এই মেয়ে ! নুশরাত বলল
-যে কথাটা তুমি জানো না সেটা হচ্ছে, আমার কথা মতই আমার বাবা তোমার কাছে গিয়েছিলো !
-কি !!
আমি কেবল অবাক হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । নুশরাতের চোখের দিকে তাকিয়েই মনে হচ্ছে মেয়েটা কোন প্রকার মিথ্যা কথা বলছে না । আমি চোখ বড় বড় করে কেবল তাকিয়েই রইলাম ওর দিকে । নুশরাত বলে চলল
-তোমার কি মনে হয় মেয়েরা এতো সহজেই ছেলেদের প্রেমে পড়ে যায় ? জাস্ট লাইক তোমার গল্পের মত ? একটু খেয়াল করে দেখো তো আমি কি খুব বেশি সহজেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি না ?
আমি মনে করার চেষ্টা করার করলাম এবং সত্যিই তাই মনে হল । নুশরাতকে প্রেমে ফেলার জন্য আমার তেমন কিছু করাই লাগে নি । মেয়েটা যেন আপনা আপনিই আমার প্রেমে পড়েছে । নুশরাত এবার হেসে উঠলো ! আমি তখনও ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি । মেয়েটা কি আসলেই সত্যি কথা বলছে ?
কিন্তু কেন ?
কি এমন দরকার পড়ে গেল ?
নুশরাত বলল
-ভাবছো কেন ? আমি কেন এসব করলাম ?
আমি কোন কথা না বলে তখনও ওর দিকে তাকিয়ে আছি অবিশ্বাসের চোখে ।
নুশরাত যেন আপন মনেই বলল
-আমাদের ক্লাসে কত গুলো ছেলে ছিল তোমার মনে আছে ? ৫৭জন । আমি সবাইকে চিনি । এবং জানো এই ৫৭ জনের ভেতরে ৫৬ জনই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলো । ওদের চোখের দিকে তাকালেই আমি বুঝতে পারতাম আমার জন্য ওরা কি না করতে রাজি ছিল । কিন্তু কেবল তোমার চোখে আমি সেটা দেখি নি । তুমি তো নিশি ছাড়া কিচ্ছু বুঝতেই না । এটা আমার কোন ভাবেই সহ্য হত না । একটা ছেলে আমাকে দিনের পর দিন দেখবে আর আমার প্রেমে পড়বে না সেটা আমি মেনে নিতে পারি নি । ছোট বেলা থেকে এমনটা কোন দিন হয় নি । এখনও হয় না । কেবল মাত্র তুমি ছাড়া !
-কেবল এটার জন্য ?
-হ্যা ! এটার জন্যই । আজকেও তুমিও আমার প্রেমে পড়ে গেছো !
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সেটা বলতে পারলাম না । আসলেই পারলাম না । আমি সত্যি সত্যিই নুশরাতের প্রেমে পড়ে গেছি । এটা অস্বীকার করতে পারছি না !
নুশরাত বলল
-সামনেই আমার বিয়ে । আমি কেবল তোমার এই সত্য স্বীকার কার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম ।
-কেবল এই কাজটা জন্য তুমি এসব করেছো ? এই সব মিথ্যা বলেছো ?
-কেন তুমি বল নি ? তোমার উদ্দেশ্যও কিন্তু সৎ ছিল না ।
আমি কথার জবাব দিতে পারলাম না । আসলেই প্রথমে আমার উদ্দেশ্যও তো সৎ ছিল না । টাকার জন্য আমি নুশরাতের অনুভুতির সাথে খেলা করতে রাজি ছিলাম । ওকে দোষ দেওয়াটা ঠিক আমার মানায় না । আমি বললাম
-তোমার অসুখের ব্যাপারটা ?
-ওটা মিথ্যা ছিল । ভার্সিটিতে থাকা সময়ে আমার এলার্জির কিছু সমস্যা ছিল । সেটার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম । এর বেশি কিছু না !
আর দাড়ালো না ও । উঠে চলে গেল । দরজার কাছে গিয়ে আবার ঘুরে দাড়ালো । তারপর বলল
-তবে ভয় নেই, তোমার চাকরিটা যাবে না । ওটা থাকবে ! তোমার সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই । যেটা ছিল সেটা পেয়ে গেছি ।
আমি কেবল অবাক হয়ে ওর চোলে যাওয়া দেখলাম । মেয়েটা কেমন হাসতে হাসতে চলে গেল ।
অফিস শুরু আবার
একবার মনে হল চাকরিটা ছেড়ে দেই । পরে মনে হল চাকরি ছেড়ে দিয়ে কি করবো ? আমিও প্রথমে নুশরাতের সাথে সত্যি কথা বলি নি । টাকার জন্যই তো এসব করেছি । টাকার জন্যই যখন করেছি তখন আর এতো সব ভেবে লাভ কি । আর প্রেম তো কদিন পরেও সব ঠিক হয়ে যাবে । স্বাভাবিক হয়ে যাবে । নিশির চলে যাওয়ার পরে যেমন প্রথম প্রথম কষ্ট লাগলেও পরে সেটা ঠিক হয়ে গেছিল । এটাও ঠিক হয়ে যাবে ।
পরের দিনই নুশরাতের বাবা আমাকে ডেকে কেবিনে ডেকে নিয়ে গেলেন । বললেন
-দেখো আসলে আমি যা করেছি ওটা মেয়ের ইচ্ছে পূরন করার জন্যই । তুমি কিছু মনে কর না । ওর বিয়ে আমি অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম কিন্তু ও সাফ জানিয়ে দিল যে এই কাজটা যদি ও না কারতে পারে তাহলে ও বিয়ে করবে না !
-না স্যার ঠিক আছে । সমস্যা নেই । আমি তো টাকার জন্যই করেছি । আর এতো ভাল চাকরিটাও পেলাম সেটার জন্য । আপনার বিব্রত হওয়ার কোন কারন নেই ।
-আমার মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই একটু একরোখা টাইপের । বুঝতেই পারছো । এক মাত্র মেয়ে ।
-জি স্যার ।
-তবে তুমি যে ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছো সে জন্য আমি অনেক খুশি । আর এমপ্লোয়ী হিসাবেও তুমি চমৎকার, কর্মঠ । তোমাকে এখানে রাখতে পারলে আমারও ভাল লাগবে !
-ধন্যবাদ ! আমি যাই তাহলে স্যার !
এই বলে আমি বের হতে যাবো তখন নুশরাতের বাবা আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল । বলল
-এটা তোমার সাথে যা কন্ট্রাক্ট হয়েছিল সেই অনুযায়ী তোমার পেমেন্ট !
আমি খাম নিয়ে বের হয়ে এলাম । আমি তো ভেবেছিলাম চাকরিতে যে বেতন দিচ্ছে সেটাই আমার পেমেন্ট কিন্তু এখন দেখি আলাদা টাকা । খাম খুলে টাকার পরিমান টা দেখে আমার বিশ্ময়ের সীমা রইলো না । ১০ লাখ !
যাক, কালকে যতটা খারাপ লাগছিলো আজকে ততটা খারাপ লাগছে না । টাকা আসলে অনেক কষ্টই ভুলিয়ে দিতে পারে । নুশরাত আমার জন্য একটা বিজনেস ডিল ছাড়া আর কিছুই নয় । অতি লাভজনক একটা বিজনেস ডিল ।
কিন্তু যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম ততটা সহজ হল না । সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকতাম তাই টের পেতাম না কিন্তু বাসায় আসলে সেটা টের পেতাম । বুকের ভেতরে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগতো । ওর সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা আমি কিছুতেই আমার মন থেকে বের করতে পারছিলাম না ।
আবার ধাক্কা
দিন যেতে লাগলো । আমি চোখ কান বুঝে কাজ করতে লাগলাম । তখন মাস দুয়েক কেটে গেছে । নুশরাতের সাথে আমার আর দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবারই । আমি ওকে দেখেও না দেখার মত করে সামনে দিয়ে চলে এসেছি । ওকে দেখলেি বুকের ভেতরে কেমন একটা কষ্ট শুরু হত । একবার তো দেখি একটা হ্যান্ডসাম তো ছেলের সাথে ও আমাদের অফিসে এসেছে । সম্ভবত ওর সাথেই নুশরাতের বিয়ে হতে যাচ্ছে । এটা দেখে বুকের ভেতরের জ্বলুনিটা আরও যেন একটু বেড়ে গেল । নিজেকে কেবল বোঝালাম যে কিছুই করার নেই । আর যে জিনিস নিজের হাতে নেই সেটার জন্য মন খারাপ করে লাভ কি !
আজকেও আমি অফিসেই কাজ করছিলাম । অফিস ছুটির সময় পার হয়ে গেছে অনেক আগেই । আমি একটা কাজ করছিলাম বলে বের হতে পারি নি । অনেকেই চলে গেছে । আমি কাজ শেষ করলাম তখন সাড়ে সাতটা বেজে গেছে । গত কয়েকদিন ধরেই এমন ভাবেই কাজ করছিলাম । যাতে শরীর বেশি ক্লান্ত থাকে বাসায় গেলেই ঘুমিয়ে পড়া যায় । আমি বের হতে যাবো তখনই বড় স্যার মানে নুশরাতের বাবার ফোন এল আমার ফোনে !
আমি সালাম দিলাম ।
-তুমি কি এখনও অফিসে ?
-জি স্যার । বের হব ।
-আচ্ছা । ড্রাইভার যাচ্ছে । ওর সাথে করে চলে এসো । কেমন ...
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল । অফিস থেকে বের হতেই দেখলাম আমার জন্য গাড়ি দাড়িয়ে । আমি কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসলাম । কোথায় যাচ্ছে গাড়ি সেটা অবশ্য আমার কোন ধারনা নেই ।
যখন গাড়ি থামলো তাকিয়ে দেখি এটা নুশরাতদের বাসা !
এখানে কেন ?
একটা প্রশ্ন মনের ভেতরে ঘুরপাক খেতে লাগলো ।
আমি আস্তে আস্তে বাসার ভেতরে ঢুকতে লাগলাম । বাড়ির পরিবেশ কেন জানি আমার ঠিক মনে হল না । সব থেকে বড় কথা বাসাতে অনেক মানুষ জন দেখতে পাচ্ছি । মনে হল যে কোন অনুষ্ঠান !
কিসের অনুষ্ঠান ?
বিয়ে নাকি বাগদান ?
বাগদানের অনুষ্ঠানই হবে হয়তো । বিয়ে হলে অফিসের সবাই জানতে পারতো নিশ্চয়ই । আমি বড় হল রুমের ভেতরে ঢুকতেই সব কটা চোখ আমার দিকে ঘুরে গেল, যেন ওরা জানতো আমি আসতেছি । আমি খানিকটা বিব্রত ভাব নিয়ে ভাবতে লাগলাম কোন দিকে যাবো এখন ? আসলে আমার কাছে কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না । আমি এখানে কেন ?
তখনই নুশরাতের বাবাকে দেখতে পেলাম । আমার হাত ধরে নিয়ে উনি সবার মাঝখান দিয়ে আমাকে একটা ঘরের দিকে নিয়ে গেল । নুশরাতের রুম এটা । আমি আগেও এখানে এসেছি । তাকিয়ে দেখি সেখানে নুশরাত মাথা নিচু করে বসে আছে ।
একটু কি কাঁদছে ?
পাশে সেদিনের সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা ।
তাহলে বাগদানের অনুষ্ঠানই হচ্ছে ।
কিন্তু আমি এখানে কেন ?
আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না তো ! আমিও চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম । দেখলাম সেই হ্যান্ডসাম মত ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে এল । আমার হাত ধরে হ্যান্ড শেখ করে বলল
-আমি ফারাজ ।
আমি আমার নাম বললাম । আমি তখনও বুঝতে পারছি না আমার এখানে কি কাজ !
নুশরাতের বাবা বলল
-কনফিউজ হচ্ছো ?
-জি স্যার । আমি কিছু বুঝতে পারছি না ।
-আসলে ....
এবার ফারাজ সাহেব বলতে শুরু করলো
-আসলে তোমার সাথে আমরা সবাই মিলেই একটা খেলা করেছি, আমাদের যে কাজটা করা ঠিক হয় নি ।
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ।
ফারাজ সাহেব বলল
-কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নুশরাত খেলাটা ঠিক মত খেলতে পারে নি । মন বড় অদ্ভুদ জিনিস অপু সাহেব । তাই না ?
-জি ! কিন্তু আমার এখানে কি কাজ আমি এখনও বুঝতে পারছি না ।
-আরে মশাই আপনারই আসল কাজ । আপনি কি এখনও বুঝতে পারছেন না যে নুশরাত আপনার সাথে যে খেলাটা শুরু করেছিলো সেটাতে আপনি যেমন জড়িয়ে গেছেন, চাইলেই বের হতে পারছেন না, একটু পরে হলেও নুশরাত নিজেও বুঝতে পেরেছে যে ও নিজেও বের হতে পারছে না ।
আমি নুশরাতের দিকে তাকালাম ।
ফারাজ বলল
-আমি আঙ্কেলকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি । শী ইজ ওল ইয়োর্স নাও !
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ফারাজ সাহেবের মুখের দিকে । নুশরাত তখনও মাথা নিচু করেও বসে আছে । কাঁদছে সেটা আমি এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি ।
নুশরাতের বাবা বলল
-দুজন মিলে ঠিক করে নাও কি করবে । বাইরে মেহমানরা অপেক্ষা করছে ।
এই বলে দুজনই ঘর থেকে বের হয়ে গেল । আমি বোকার মত দাড়িয়ে রইলাম । কি হল এতো সময়ে আমার মাথায় ঢুকলো না । মাস দুয়েক আগে নুশরাত আমাকে যে বড় রকমের একটা ধাক্কা দিয়েছিল আজকেও আমি বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম । এই মেয়েদের মন গুলো এরকম অদ্ভুদ হয় কেন ?
কেবল মেয়েদের মন বলছি কেন ? সবারই মনই অদ্ভুদ হয় ।
আমি আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে ওর পাশে গিয়ে বসলাম । তারপর বললাম
-কি কাঁদতেই থাকবে ?
নুশরাত কোন কথা বলল না । তবে ওর কান্নার বেগ যেন বাড়তে লাগলো । আমি বললাম
-বেশি কান্না কাটি করলে চোখের কাজল নষ্ট হয়ে যাবে । লেপ্টে গিয়ে চেহারা খারাপ দেখাবে । তখন ? মানুষজন কি বলবে !
নুশরাত এবার আমার দিকে তাকালো । বলল
-আমি কাঁদছি সেটা নিয়ে চিন্তা নেই, আমার চোখের কাজল নিয়ে চিন্তা তোমার ?
-আরে বাবা তোমাকে নিয়েই তো চিন্তা । মানুষ তো তখন তোমার চেহারা নিয়েই কথা বলবে নাকি !
-এতো চিন্তা করতে হবে না । এটা ওয়াটারপ্রুফ কাজল ! কিভাবে তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম আসলেই বুঝতে পারছি না !
পরিশিষ্টঃ
ঐদিনই বাগদান হয়েছিল আমাদের তবে বিয়ে হতে দেরি আছে । নুশরাতের ইচ্ছে আমার সাথে আরও কদিন প্রেম করুক । সত্যি সত্যি গল্পের মতই আমার দুজনের দেখা হওয়াটা ছিল । তারপর কিভাবে কিভাবে এক সাথে হলাম আমরা এখনও ভাবতে গেলে আমার ঠিক বিশ্বাস হয় না । স্বপ্নের মত মনে হয় ।
আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি । শুরুতেই যে ২১ দিন নুশরাতের সাথে আমার দেখা হয় নি আসলে সেটা ভেতরকার অন্য কাহিনী ছিল । আমাদের অফিস থেকে বের হওয়ার চার টা রাস্তা ছিল । চার দিকে যাওয়া যেত । আমি অফিস শেষ করে একেক দিন একেক দিক দিয়ে যেতাম । আর নুশরাট দাড়িয়ে থাকতো অন্য দিকে । এমন অনেক কয়বার হয়েছে যে ও আমার জন্য দাড়িয়ে থাকতো এক রাস্তায় আমি চলে যেতাম অন্য রাস্তা দিয়ে । এই জন্যই আসলেই ২১টা দিন ওর সাথে আমার কোন দেখা হয় নি ।
নুশরাত বড় বিরক্ত নিয়ে এই গল্পটা করতো আমি হেসে কুল পেতাম না !
সত্যি সত্যি নুশরাত আমার জন্য খুব ভাল একটা বিজনেস ডিল ছিল । সেই ডিল যে জীবনের সাথে এভাবে মিলেমিসে একাকার হয়ে যাবে কে জানতো !
আমার লেখাতে বানান ভুল থাকবেই । কষ্ট করে পড়ার ধন্যবাদ । আর ভুল বানানের জন্য ক্ষমা প্রার্থী
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:১৭