পাঠ প্রতিক্রিয়া বলতে যা বুঝায় তা আমি ঠিকঠাক মত লিখতে পারি না । কেবল একটা বই পড়ার পরে মনে যা আসে সেটা বলি । ভাল লাগলে ভাল বলি খারাপ লাগবে বেশ খারাপ ভাবেই খারাপ বলি এবং বলি সরাসরি । যেহেতু আমি নিজের জীবনের কিছুটা সময় আমি বইটার পেছনে ব্যয় করেছি সেহেতু বইটা ভাল লাগলে ভাল বলা কিংবা না লাগলে সেটাকে খারাপ বলার অধিকার আমার আছে । যাই হোক এবার আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া শুরু করি ! এবার বই মেলা থেকে বেশ কিছু সংখ্যক বই কেনা হয়েছে । সেগুলো আস্তে আস্তে পড়া শুরু করেছি । আপাতত চারটা বই শেষ হয়েছে । সেই চারটা বইয়ের ব্যাপারের কিছু লিখি ।
প্রথম যে বইটা শেষ করেছি সেটার নাম "মিথস্ক্রিয়া" লেখক "কিশোর পাশা ইমন" । প্রকাশিত হয়েছে বাতিঘর থেকে । প্রচ্ছদ করেছেন ডিলান । মোট পৃষ্ঠার সংখ্যা ৩৫১ টি । মূল্য ৩২০ টাকা । বাঁধাই আর পৃষ্ঠার কোয়ালিটি মোটামুটি ।
------------
আমাদের দেশের মৌলিক থ্রিলার গুলো জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করেছে খুব বেশি দিন হয় নি । ভাল লাগা মৌলিক থ্রিলারের ভেতরে এতোদিন নেমেসিস এবং ২৫শে মার্চ ছিল সবার উপরে । কিন্তু মিথস্ক্রিয়া পড়ার পর সেটা বদলেছে । বইটা শুরু করার পর আমি কেবল এক টানা পড়েই গেছি আর পড়ার সময় কেবলই মনে হচ্ছিলো আমাদের নিজেদের দেশীও এমন লেখা আসলেই অনেক দিন পড়া হয় নি । একটানেই বলা চলে বইটা আমি শেষ করেছি এবং বইটা শেষ করার মনে হয়েছে অনেক দিন পরেই একটা মনের মত বই পড়ে শেষ করেছি । লেখকের কথা আগে টুকটাক জানতাম তবে ভাল করে খোজ নিয়ে জেনেছি যে লেখক আমার থেকেও বয়সে বেশ ছোট । এই ছোট বয়সেই এমন চমৎকার একটা বই যে লিখে ফেলতে পারে নিঃসন্দে সামনের জীবনে তার কাছ থেকে আরও চমৎকার সব বই আমরা পাবো । আমি কেবল বলবো যে এবার বই মেলা থেকে কেউ যদি একটা থ্রিলার কেনার কথা ভাবেন তাহলে তার এই বইটা কেনা উচিৎ । যারা থ্রিলার ভালবাসের তাদের সময় কিংবা অর্থ কোনটাই নষ্ট হবে না কিংবা বই পড়ার পরে আফসোস হবে না এটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি ।
কাহিনী শুরু বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানীর রহস্যময় মৃত্যু দিয়ে । নিজের সুরক্ষিত ল্যাবে তিনি মারা যান । কিডন্যাপ হয় তার নিজের ছেলে । স্বয়ং আর্মি জেনারেল ইচ্ছায় ডাক পরে হোমিসাইডের সব থেকে চৌকশ গোয়েন্দা আসিফ আহমেদের । কিভাবে খুনী ভেতরে এসে তাকে মেরে ফেলেছে তা প্রথমে বোঝা যায় না । তবুও দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে সে কিন্তু মাঝে পথেই তাকে থামিয়ে দেওয়া হয় । কেস চলে যায় এফবিআইয়ের হাসে । তবুও হাল ছাড়ে না আসিফ । অন্য কেসের ফাকে ফাঁকেও চালিয়ে চায় কার্যক্রম এবং সেখান থেকে বের হতে থাকে অন্য রকম সব তথ্য । ঘটনা পাল্টাতে থাকে খুব দ্রুত । একটা অদৃশ্য শক্তি পেছনে লেগে থাকে তাদের । নিজের পুরো ডিপার্টমেন্ট যখন আসিফের পেছনে লেগে যায় তখন এক অপরাধীর সাথে জোট বাঁধে আসন্ন বিপদ মোকাবেলা করার জন্য । সেই সন্ত্রাসী নিজেও সেই গোপন সংঘের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে নিজের খুব আপন কাউকে বাঁচানোর জন্য । সাথে যুক্ত হয় আরেক ভ্যাম্পায়ার বয় ।
মিষ্ট্রি, থ্রিল আর একশান সব কিছুই পাবেন এই বইতে এই টুকু বলতে পারি । খারাপ যা লেগেছে সেটা উল্লেখ করার মত নয় । ই-কারে আর ঈ-কারের কয়েকটা সমস্যা ছাড়া আর বানান ভুল চোখে পড়ে নি ।
আর দেরী না করে আজকেই সংগ্রহ করে ফেলুন !
দ্বিতীয় বইয়ের নাম "জীবন বৃত্তান্তে নেই" । লেখক "কাসাফাদ্দৌজা নোমান" । প্রকাশিত হয়েছে দেশ প্রকাশনী থেকে । প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুবএষ । পাতার সংখ্যা ৯৬ টি । মূল্য ১৮০ । বইয়ের বাঁধাই আর পৃষ্ঠার কোয়ালিটি খুবই ভাল ।
---------
অনলাইনে সবাই নোমান ভাইকে চিনেন ক্ষুদ্র আর মজাদার স্টাটাস দাতা হিসাবে । আমি তাকে চিনি ছোট গল্পকার হিসাবে । ব্লগ থেকেই তার ছোট গল্প পড়তাম নিয়মিত । গতবারের ছোট গল্প সংকলনের পড়ে আশা ছিল এবার একটা উপন্যাসন লিখবেন এবং সেটা চলেও এসেছে ।
হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার পরে খুব একটা উপন্যাস পড়া হয় নি । আসলে অন্য কারো লেখা কেন জানি খুব একটা টানতো না । ২০১২ এর পরে যা পড়েছি তার বেশি ভাগই মিস্ট্রি আর থ্রিলারই বলার চলে । আর ছোট গল্প সংকলন । তবে এই বইটা পড়ে অনেক দিন পরে অনেক ভাল লেগেছে ।
জীবনের কাছে পরাজিত তিন যুবকের কাহিনী । তিন জনই ব্যর্থ । যা চেয়েছিল তার কিছুই করতে পারে নি । আজাদের এই জগতে মা আর প্রেমিকা ছাড়া আর কেউ নি । নিত্য দিনের কাজ সেরে সে বাসায় ফিরতে থাকে । অন্ধকার রাস্তায় হাটতে হাটতেই দুজন যুবক তাকে ঘিরে ধরে । আজাদকে বলে যে তারা তাকে খুন করতে চায় । খুন করতে চায় কারন তাদের মন খারাপ ।
গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে মাওয়া ঘাটের দিকে । এভাবেই গল্প এগিয়ে চলে । আস্তে আস্তে তিন যুবকের জীবনের গল্প জানা যায় । খুনী দুজনের ভেতরে একজন মন্ত্রী ছেলে অন্যজন তার দুর সম্পর্কের মামাতো/খালাতো ভাই । ঘটনা যতই সামনে যেতে থাকে আস্তে বেরিয়ে আসতে থাকে তিনজনের গল্প । তাদের জীবনটা কেমন ছিল কি করতে চেয়েছিলো কিংবা জীবনের কাছ থেকে তারা কি পায় নি সব । একে বারে শেস বিন্দুতে তিনজনে এলে মিলিত হয় ।
উপন্যাসের সব থেকে বড় সাফল্যটা হল এখানে একটা ঘটনা ঘটার পরে পরের ঘটনাটা কি ঘটবে সেটা আপনার জানতে ইচ্ছে করবে । ঘটনার প্রবাহ খুবই চমৎকার । কোথাও আপনাকে আটকে যেতে হবে না কিংবা কোথায় পড়ার পরে মনের ভেতরে বিরক্তি আসবে না । বারবার মনে হবে আজাদ কে তারা মেরেই ফেলবে তাহলে ? আজাদ কি পালাতে পারবে ? শেষ কি হবে ? কে মারা পড়বে ? এই টুকু জানতে হলে আপনাদের বইটা পড়তেই হবে ! সময় নষ্ট হবে না এটা বলতে পারি ।
তিন নাম্বার বইটার নাম "সিনেমা হলের গলি" লেখক ইশতিয়াক আহমেদ । এটাও প্রকাশিত হয়েছে দেশ প্রকাশনি থেকে । প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুবএষ । পাতার সংখ্যা ৯৫ টি । মূল্য ১৮০ । বইয়ের বাঁধাই আর পৃষ্ঠার কোয়ালিটি খুব ভাল ।
---------
এই লেখাটা নিয়ে একটু বেশিই আশাবাদী ছিলাম । অন্তত গতবার তার আদর্শলিপি পড়ার পরে মনে হয়েছিল এই বইটাও নিশ্চয়ই ভাল হবে । আশা পূরন না হলেও বলবো যে একেবারে নিরাশ করে নি লেখক । যদিও লম্বা কাহিনী তবে কাহিনীটা তিনটি গল্পের সমন্বয় মনে হয়েছে । তিনজন আলাদা আলাদা মানুষের গল্প । খুব সাধারন তিনজন মানুষ । তিনজনের সাথে তিনজনের কোন সম্পর্ক নেই । বইটার এই জিনিসটাই আমার একটু ভাল লাগে নি ।
একজন বৈচিত্রহীন নাইট গার্ড জীবন যে নিজের জীবনে খানিকটা উত্তেজনা আনতে নিয়ম করে প্রতি শনিবার চুরি করতে যান ।
আরেকটা গল্পে দুই ভাই যে কিনা সৎমায়ের কাছে মানুষ । যাদের মনে ধারনা ছিল যে মা মানেই মনে হয় তাদের সৎমায়ের মত । কিন্তু একদিন জানতে পারে যে তাদের আসল মা এখনও জীবিত আছে তখন থেকেই বড় ভাই তাদের মাকে খুজা শুরু করে । নানার কবরের কাছে বসে থাকে এই আশায় যে যদি কোন দিন তার মা তার নানার কবরে আসে তার একটা সময়ে একটা ক্লু পেয়ে যায় । এগিয়ে চলে কাহনী ।
তিন নাম্বার কাহিনী হচ্ছে এক যুবকের যে ভালবাসে এক মেয়েকে কিন্তু সে মেয়ে তাকে মোটেই পাত্তা দেয় না । তারপর হঠাৎ করেই যুবকের ফোনে আসে প্রাণনাসের হুমকি ! সেটা জানতে পেরেই মেয়ের খানিকটা মায়া হয় যুবকের জন্য । তবে কাহিনী এখানে অন্য দিকে মোড় নেয় ।
এই মোটামুটি তিনটা কাহিনী । কাহিনীতে প্রবাহ ভাল, পড়তে বিরক্ত লাগে নি । তবে একে বারে পূর্ন সন্তুষ্টিও আসে নি ।
চার নাম্বার উপন্যাসের নাম "যে প্রহরে নেই আমি" লেখক রাসায়াত রহমান । প্রকাশিত হয়েছে আদী প্রকাশনী থেকে । প্রচ্ছদ করেছেন তন্ময় আহমেদ । বাঁধাই আর পৃষ্ঠার কোয়ালিটি মোটামুটি ।
-----------------
আগেই স্পয়েলার এলার্ট দিয়ে রাখি ।
প্রতি বই মেলাতেই এমন একটা কিংবা কয়েকটা বই পড়ার পর আফসোস হয় । কেন বইটা কিনলাম আর পড়লাম । আসলে বই কিনার সময় আমি টাকার দিক টা কখনও চিনতা করি নি কিন্তু কিছু কিছু বই কিনে মনে হয় টাকাটা এবং সময়টাই জলে গেল । এই বইটাও ঠিক তেমনই । আগের বছরের লেখকের রাফখাতা প্রথম দিকে ভাল না লাগলেও শেষের দিকে এসে ভাল ছিল কিন্তু এই বইটা পড়ে আমি পুরোপুরি হতাশ । সত্যি বলতে কি প্রথম থেকে পড়তে গিয়ে কেবল বিরক্তিই লেগেছে । যে কোন উপন্যাস ভাল লাগার ভেতরে সব থেকে বেশি দরকার একটা চমৎকার কাহিনী আর লেখকের সেই কাহিনীটাকে সফল ভাবে প্রকাশ করাটা । এই বইতে দুইটার একটাও ছিল না । এমন অনেক গল্প আছে যেখানে কাহিনী খুবই সামান্য কিন্তু লেখক সেটা এমন ভাবে প্রকাশ করেন যে অসামান্য হয়ে যায় কিন্তু এখানে আিম সেটা খুজে পাই নি ।
অথচ রাসায়াত রহমানের ২০১৪তে বের হওয়া ছোট গল্প সংকল টা পড়ে কি চমৎকারই না লেখেছিল । প্রতিটা গল্পই ছিল চমৎকার । কিন্তু এবারের উপন্যাস পড়ে খুবই হতাশ হয়েছি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৬