-এখন ফোন দিয়েছো কেন ?
আমি প্রথমেই কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । মিমি যদিও এমনিতেই সব সময় একটু গম্ভীর আর ঠান্ডা থাকে কিন্তু আজকে যেন একটু বেশি গম্ভীর । আমি ওকে দেখতে না পারলেও ঠিকই ওর গাম্ভীর্য ভাব টা বুঝতে পারছি বেশ ।
আমি আমতা আমতা করে বললাম
-না মানে আজকে সারা দিন কোন খোজ খবর নেই নি তো !
-তো ! তোমাকে না বলেছি বাসায় থাকলে ফোন দিবে না ।
-ও ভুলে গেছিলাম ।
-ফোন রাখো ।
-আচ্ছা ।
আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মিমি ফোন রেখে দিল । আমি কিছুটা সময় মন খারাপ করে বসে রইলাম । আসলে মিমি এরকই । মন খারাপ করে কি লাভ ! নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । তবুও মন খারাপ ভাবটা কাটলো না ।
এই কথা সত্যি যে মিমি যখন বাসায় থাকে তখন তাকে ফোন দেওয়া নিষেধ । ও যেগুলো শর্ত আমাকে দিয়েছিলো এটা তার ভেতরে অন্যতম ছিল । তবুও মাঝে মাঝে আমি ঠিক ঠিকই ফোন দিয়ে ফেলি । আর বকা শুনতে হয় ।
আসলে আমি ওকে ফোন দিয়েছিলাম কিছুটা অস্থিরতা থেকেই । মিমি গত সপ্তাহেই আমাকে বলেছিলো ওকে দেখতে নাকি পাত্রপক্ষ আসছে । এমন স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলল যেন প্রতি দিনই ওকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসে । আমি কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারলাম না । একটু উত্তেজিত হতেই মিমি শান্ত কন্ঠে বলল
-আমি আমাদের সম্পর্কের শুরুতেই কি বলেছিলাম মনে আছে ?
আমি চুপ করে গেলাম ।
-মনে আছে ।
-তাহলে তুমি কেন এমন করছো ? আমি তুমি দুজনেই জানি যে এরকমই হবে । সো ?
আমি কোন যুত সই জবাব খুজে পেলাম না ।
আসলেই মিমির সাথে সম্পর্কের শুরুতেই আমার কিছু কথা হয়েছিল । আরও ভাল করে বলতে গেলে মিমি আমাকে কিছু শর্ত দিয়েছিল । যেগুলো যদি আমি মানতে পারি তাহলেই যেন আমি আগাই ।
ওর প্রথম কথাটাই ছিল ও বিয়ে হবে ওর বাবা মায়ের ইচ্ছায় । এখানে ওর কোন কিছু বলার নাই । যে সম্পর্ক টা হবে সেখানে কোন আশা রাখা যাবে না । ঘন ঘন ফোন করা যাবে না । ও যখন বাসায় থাকবে তখন কথা হবে না । খুব দরকার না হলে ফোনও করা যাবে না । দেখা হবে কিন্তু নো টাচিং । হাত ধরা যাবে তাও সব সময় না ।
আমার তখন আসলে এসব কিছু মনে হয় নি । প্রেমে পড়লে মানুষের মাথা ঠিক মত কাজ করে না । আমারও করে নি তাই সকল শর্তই মেনে নিলাম চুপাচাপ । কিন্তু পরে আস্তে আস্তে টের পেলাম । তারপরেও মিমিকে বেশ আনন্দেই ছিলাম । কিন্তু এইভাবে যে ওর বিয়ে হয়ে যাবে আমি ভাবতে পারি নি ।
পরের দিনও মিমি ফোন দিল না । আমি অস্থির হয়ে আছি । সন্ধ্যার দিকে মিমি আমাকে ফোন দিল । শান্ত কন্ঠে বলল
-এতো বার ফোন দেওয়ার কি হল ?
-আমি ফোন দিবো না ? তোমাকে অন্য কেউ দেখতে আসবে আর চুপ করে থাকবো ?
-কি করবে তুমি শুনি ?
-দেখো রাগাবা না কিন্তু । সত্যি বলছি রাগাবা না ?
-তুমি রাগতে জানো নাকি ? ভাল । শুনো একটা কাজ কর তো এখনই আমাদের বাসায় আসো তো একটু !
আমার মনে হল আমি হয়তো ভুল শুনলাম । কত কথা ভেবে রেখেছিলাম সব উবে গেল মুহুর্তেই । যেই মিমি বাসায় থাকলে আমাকে ফোন করতে মানা করে সেই মিমি আমাকে বলছে ওদের বাসায় যেতে । আমি কি ভুল শুনলাম !
আরেকবার শিওর হওয়ার জন্য বললাম
-কি বললে তুমি ?
-শুনতে পাও নাই ? বললাম বাসায় আসো ?
-কাদের ? তোমাদের ?
-গাধার মত প্রশ্ন কর কেন ? আসতে বলছি আসো ! ঠিকানা মেসেজ করে দিতেছি ।
আধা ঘন্টা পরে যখন মিমিদের বাসার নিচে এসে দাড়ালাম তখনই ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি আসলেই মিমিদের বাসায় ঢুকতে যাচ্ছি । শুনেছি মিমির বাবা নাকি খুব রাগি মানুষ । তারপর উপর ওর মাও নাকি বাবার থেকে কম না । এই দুইজন আমাকে পেলে কি করবে কে জানে ?
কলিং বাজানোর আগে আরও কয়েকবার চিন্তা করে দেখলাম । তারপর টিপ দিলাম বেল এ । হয়তো এমন হতে পারে যে ওর বাবা মা আগে থেকেই আমার আসার কথা জানে । এতো চিন্তার কথা না । না হলে মিমি হয়তো আমাকে আসতেই বলতো না ।
দরজা খুলে দিলেন মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক । চেহারা দেখেই আমার মনে হল উনি মিমির বাবা । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কাকে চাই ?
বেশ ভরিক্কি গলা । আমি একটু থতমত খেলাম । তার মানে কি মিমি বলে নি ?
আমি বললাম
-এটা মিমিদের বাসা না ?
-হ্যা !
-আমি মিমির সাথে পড়ি ! ও আমাকে আসতে বলেছে !
এইবার সামনের ভদ্রলোক অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ঠিক মত যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি মিমির সাথে দেখা করতে এসেছি আর মিমি আমাকে এখানে আসতে বলেছে । মিমির বাবা তখনও দরজা ছেড়ে দাড়ায় নি । তার আগেই আরেক মহিলা এসে দাড়ালো ।
-কে এসেছে ?
মিমি বাবা বলল
-মিমি সাথে পড়ে । মিমি নাকি আসতে বলেছে !
-কি !!
ভদ্রমহিলা এমন ভাবে কি বলল যেন মনে হচ্ছে কোথাও কোন বড় ধরনেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে । তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন অবাক হয়ে । তার চোখেরও অবাক বিশ্ময় । আমি পড়লাম ঝামেলায় । কি বলবো আর কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না । ঠিক মত কোন কথাও বলতে পারছি না ।
আমি যখন ভাবছি কি বলবো তখনই মিমিকে দুজনের পেছনে দেখতে পেলাম ।
-আরে চলে এসেছো ? এসো !
মিমির বাবা মা দুজনের অবাক চোখ এবার আমার দিক থেকে সরে গিয়ে তাদের মেয়ের দিকে গেল । তারা এখনও ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না এটাই আসলেই মিমি কি না !
মিমি আবার বলল
-কই এসো ? বাবা ওকে একটু ঢুকতে দাও ।
মিমি বাবা অবাক মুখ নিয়েই সরে দাড়ালো দরজা থেকে । আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম ।
মিমি সামনে আমি পেছনে পেছন হাটছি । ও সম্ভবত আমাকে ওর ঘরের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে । আমি পেছন দিকে না তাকিয়েও স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে মিমির বাবা আর মা আমার থেকেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । এতো দিন আমি মিমির কাছে যা শুনে এসেছি তা যদি সত্যি হয় তাহলে মিমির বাবা সম্ভবত তাদের মেয়েকে ঠিক মত চিন্তে পারছেন না । আমি নিজেও চিন্তা করতে পারছি না । মিমির আসলেই কি হয়েছে ! এতো সাহসী কিভাবে হল ?
দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ মিমি দাড়িয়ে পড়লো । আমাকে দাড়াতে হল । পেছনে ফিরে ওর বাবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-আম্মু, অপু কিন্তু রাতে খেয়ে যাবে, ঠিক আছে ? আর ও মাংসে ঝাল একটু কম খায় !
তারপর আমাকে নিয়ে দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো । আমি ওর ঘরের বিছানার উপর বসতে বসতে বললাম
-কি হয়েছে তোমার ? ঠিক আছো তুমি ?
-কেন ?
-না মানে কেমন জানি অপরিচিত লাগছে তোমাকে । যে মেয়েটা সারাটা সময় নিজের বাবা মায়ের ভয়ে অস্থির থাকতো আজকে সে তার প্রেমিক কে বাবা মায়ের সামনে দিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এল । এতো সাহস পেল কোথায় সে ? কিভাবে ?
মিমি কিছু না বলে হাসলো । রহস্যময়ী হাসি । আমি আবার বললাম
-প্লিজ বল । কিছু তো বল !
-হুম ! কিছু তো একটা হয়েছে যা আমার ভয়কে ভেঙ্গে দিয়েছে ।
-কি হয়েছে ?
মিমি আরও কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । পিসি চালুই ছিল ওখানে কি যেন করছিলো । আমি ওর ঘরটা দেখতে লাগলাম । বেশ চমৎকার করেই সাজানো ঘোছানো । ওর যা স্বভাব তেমনই আশা করেছিলাম । সামনে একটা বারান্দা রয়েছে । সেখানে একটা ফুলের গাছ আছে । আমি ওকে কদিন আগে দিয়েছিলাম !
আরও কিছুটা সময় পরে ও আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
-আজকে ঐ ছেলের সাথে দেখা করতে গেছিলাম ।
-কোন ছেলের সাথে ? যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ?
-হুম ।
-তারপর ?
-ছেলে না বলে লোক বললেই ভাল হত । আসলে আমি সারাটা জীবন এটাই জেনে এসেছি যে আমার বিয়ে বাবা মায়ের ইচ্ছে মতই হবে । আমার কোন কিছু বলার থাকবে না । তারা যেখানে বিয়ে দিবে আমার বিয়ে সেখানেই হবে । কিন্তু লোকটা কে দেখার পর আমার মাথা ঘুরে গেল । এমন রাগ অনুভব করলাম যে নিজের কাছে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম ।
আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি মিমির কথা । কিছুটা অবিশ্বাস নিয়েই । আমার শান্ত-শিষ্ট প্রেমিকা হঠাৎ করেই এমন বিদ্রোহী হল কিভাবে ? মান্নার শান্ত কেন মাস্তান মুভির মত হয়ে গেছে । কাউকে ভয় করছে না ।
মিমি বলেই চলেছে ।
-লোকটা বয়স আমার কাছে মনে হল ৪০ না হলেও কাছাকাছি তো হবেই । কথায় কথায় হঠাৎ আমি তাকে বললাম আপনার এতো বয়স হয়েছে গেছে এখনও বিয়ে করেন নি ।
লোকটা হাসলো একটু ! এমন বিশ্রী হাসি আমি এর আগে আমি আগে দেখেছি বলে মনে পড়লো না । সারা শরীর টা কেমন রিরি করে উঠলো ! লোকটা বলল
-কাজের চাপে আর সময় হয়ে ওঠে নি !
আমি হাসলাম । বললাম
-আপনাকে দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না ! সমস্যা মনে হচ্ছে !
লোকটার চেহারা মুহুর্তেই কেমন হয়ে গেল । আমি বিন্দু মাত্র না থেমে বললাম
-হয় আপনার আগে বিয়ে হয়েছে, আর নয়তো আপনি ........ কথাটা শেষ করলাম না !
লোকটা রেগে উঠলো তখন ।
-হোয়াট ? কিকিকি বললে তুমি ?
-অথবা দুটোই ! আপনারট বিয়ে হয়েছিল তারপর ঐ কারনে আপনার বউ আপনাকে ছেড়ে গেছে !
যদিও আমি এসবের কিছুই জানি না । আমার কেবল মনে হচ্ছে এই লোক কে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না । কোন ভাবেই না । মনে যা আসে তাই বলে বলেছি কোন কিছু না ভেবেই । কিন্তু মনে হচ্ছিলো যে লেগে গেছে ।
দেখলাম লোকটার চেহারা রাগে নীল হয়ে গেছে । তোতলাতে তোতলাতে আরও কিছু বলল আমি তখনই শিওর হয়ে গেলাম যে আমার ধারনা মোটেই ভুল না । আমি যা বলেছি সব মিলে গেছে ।
-তারপর ?
-তারপর আর কি, লোকটা উঠে চলে গেল । বিল পর্যন্ত দিয়ে গেল না ।
-তোমার চিন্তা লাগছিলো না । বাসায় কি বলবে ?
-সত্যি বলতে কি আসলেই লাগছিলো না । বাসায় এসে আম্মুতো পারলে আমাকে খেয়ে ফেলে । আমি শান্ত কন্ঠে মাকে বললাম ছোট খালা কি তোমাকে বলেছে যে ছেলের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল ? বিয়েটা আমার ছোট খালা এনেছিল ! তাই তো মায়ের এতো আগ্রহ ছিল । মায়ের মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম যে বলে নি । আম্মু তখনই ফোন দিলো । আমি আর বাবা দুজনেই তখন তার সামনে দাড়িয়ে । ফোনে আম্মু কথা বলছে । তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছিলাম যে ছোট খেলা আগে বলে নি কিন্তু এখন স্বীকার করেছে ।
আমি শান্ত কন্ঠে আম্মুকে বললাম বাহ খুব ভাল । আমার খুব ভরশা ছিল যে তোমরা আমার খুব ভাল জায়গায় বিয়ে দিবে । এই হচ্ছে তার নমুনা । তা খালা এটা বলে নি যে ছেলে নংপুশক । তার প্রথম স্ত্রী তাকে এই জন্য ছেড়ে চলে গেছে ।
আম্মু আর বাবা দুজনেই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । দুজনের চোখেই অবিশ্বাস । আমি যে তাদের সামনে এমন কথা বলবো সেটা তারা আসলেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না !
রাতে খাওয়ার সময় আসলেই আমি একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম । টেবিলের দুই মাথায় মিমির বাবা আর মা গম্ভীর মুখে বসে আছে আর মিমি আর আমি পাশাপাশি বসেছি । ও আমার সাথে টুকটাক কথা বলছে । ওর পাশে যে ওর বাবা মা বসে আছে সেটা যেন ওর লক্ষই নেই ।
আমি সেদিনের মত ভেবেছিলাম যে মিমির কার্য কলাপ থেমে যাবে । কিন্তু তখনও বেশ খানিকটা বাকি ছিল । আমার খাওয়া তখন অর্ধেকের মত হয়েছে । মিমিরও তাই । মিমি ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা তোমরা কি আবারও আমার জন্য ছেলে দেখতে শুরু করবে কাল থেকে ?
ওর বাবার মুখ দেখে কিছু বোঝা গেল না । তিনি গম্ভীর মুখে খেয়েই চলেছেন । মিমি বলল
-আমি চাই না তোমরা এই কাজ টা কর !
এবার সম্ভবত মিমির মা আর চুপ থাকতে পারলো না ! মিমির দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার বড় সাহস হয়েছে মনে হচ্ছে । তুমি কি বলতে চাও !
-মিমি বলল
-বলতে চাচ্ছি যে তোমাদের উপর ভরশা করে আমি ভুল করেছিলাম । তোমার একটা আধবড়ো অক্ষম ছেলে আমার জন্য খুজে এনেছো
-মিমি !
এবার কথা বলল মিমির বাবা !
-তুমি কিন্তু আসলেই সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো ?
আমি ভেবেছিলাম মিমি মনে হয় চুপ করে যাবে । কিন্তু কোথায় কি !
মিমি যেন বোমা ফাটালো । ওর কন্ঠ শুন কেবল আমিই না ওর বাবা আর মা দুজনেই চমকে উঠলো । মিমি যে এভাবে কথা বলতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না । সম্ভবত ওর বাবা মাও জানতো না !
-সীমা ছাড়াবো না ? তুমি বল জন্মের পর থেকে কোন কথাটা তোমাদের শুনি নাই । তোমরা যেভাবে বলেছো যা বলেছো সব শুনেছি তার বদলে তোমরা কি করলে ? কোথা থেকে একটা বুড়োকে ধরে আনলে আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য । বল তুমি
এবার ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি তোমার বোন কে এই বাড়ির আসে পাশে আসতে মানা করে দিবা । সত্যি যদি তাকে এই বাড়ির আসে পাশে দেখি তাহলে দরজার হুক দিয়ে তার মাথা আমি ফাটিয়ে দেব বলে দিলাম ।
দুজন তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিমির দিকে । কি বলবে কিংবা বলা উচিৎ হবে কি না তারা বুঝতে পারছে না !
আমি মিমির দিকে তাকিয়ে বললাম
-মিমি ! খাওয়াটা শেষ কর । এখন আর এসব বলে কি লাভ । বিয়ে তো হয় নাই তাই না ?
মিমি আমার দিকে একটু তাকালো । তারপর আবারও ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-আর আমার বিয়ে নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না । এই অপুকে দেখছো না, একে আমি বিয়ে করবো ঠিক করেছি । তোমরা যেমন ছেলে চাও সেসব গুন ওর ভেতরে আছে ।
দুজনে এবার আর অত বেশি অবাক হলেন না । কেবল আমার দিকে এক সাথে তাকালেন । তারা হয়তো আগে থেকেই টের পেয়েছিলেন । মিমির বাবা চোখে কেমন যে একটু অসহায়ত্ব দেখতে পেলাম । আমি কোন দিকে তাকাবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । এই মেয়ের আজকে কি হয়েছে কে জানে । এমন কেন করছে ?
খাওয়া শেষ করলাম । রাত ১০ টার দিকে যখন ওদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে হলাম তখনও মিমি আমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এল । যাওয়ার আগে বললাম
-তোমার কি হয়েছে বলতো ?
-জানি না ! খুব রাগ হচ্ছিলো সকাল থেকে । তবে একখন একটু ভাল লাগছে ।
-তোমাকে খুব অচেনা লাগছে ।
-ভাল দিক দিয়ে নাকি খারাপ ?
-ভাল । অবশ্যই !
-খুশি হয়েছো তো ?
-হুম ! সাহসী প্রেমিকা । তা এখন রাতের বেলা ফোন দেওয়া যাবে তো ?
-হুম ! দেখতেই পাচ্ছো ?
-হাত ধরা যাবে ?
-যাবে ।
-আর ....
-আর ?
আর বলতে গিয়েই আমি চট করে ওর ঠোটে একটা চুম খেলাম টুপ করে, ওর বোঝার আগেই ।
ও আজকে এতো এতো সাহসের কাজ করলো আমিও একটু করি না হয় ।
মিমি কেবল হাসলো ! কিছু বলল না । আমার শান্ত প্রেমিকা আসলেই একদিনে বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে । সামনের দিন গুলোতে সাবধানে থাকতে হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০