গল্প ০১
-যাও চলে । কে তোমাকে থেমে থাকতে বলেছে ?
-অভি প্লিজ । একটু শুনো আমার কথা ।
আমি তুশিকার দিকে তাকালাম ঠান্ডা চোখে । তারপর বললাম
-শোনাও । কি শোনাবে ? কি শোনানোর আছে ?
-ইউ নো আই লাভ ইউ ।
-লাভ কি ? বল আমাকে তাতে লাভ টা কি ?
-তুমি আমার দিক টা একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আরে । কি বোঝার চেষ্টা করবো ? বল আমাকে ? কালকে ছেলে পক্ষ তোমাকে দেখতে এসে আংটি পরিয়ে গেছে । এখন তুমি আমাকে বলছো যে আমাকে ভালবাসো !
-আমি চাইলেই সব পারি ?
-কেন পারবা না ? শুনি কেন পারবা না ? তুমি অক্ষম ? টাকা আয় কর না ? ইন্ডিপেন্ডেন্ট না ?
-দেখো আমি আমার বাবা মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারি না !
-আচ্ছা ! এখন খুব বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে হয়ে গেছো মনে হচ্ছে । তা আমার সাথে প্রেম করার সময় মনে ছিল না ? মনে ছিল আমার বুকে মাথা রাখার সময় ? বল ছিল না ? আরও মনে ছিল ঐ ......
কথাটা বলতে গিয়ে আটকে গেলাম । কেবিনে থাকলেও এটা সাউন্ডপ্রুফ না । এসব কথা মানুষকে শোনানো ঠিক হবে না । তুশিকা বলল
-কিন্তু বাবা না চাইলে আমি কি করবো ?
-আমি কি করবো মানে ? তোমার বাবার কথা শুনবা, তার মানে এই না যে সে কুয়ার ঝাঁপ মারতে বললেই তুমি চোখ বুঝে ঝাঁপ মারবা ! এতো বাধ্য মেয়ে তুমি নও । তোমাকে তো আমি চিনি ! চিনি না !
কেন জানি তুশিকার উপরে খুব রাগ হতে লাগলো । আরও কিছু সময় আমার সামনে বসে থাকলে হয়তো ওকে চড় থাপ্পড় মেরে বসতে পারি । বদ মেয়ে কোথাকার । আমার সাথে প্রেম করে এখন বিয়ে করছে অন্য ছেলে কে । আবার সেই কথা সে আমাকে বলতে এসেছে ।
আমি আবার বললাম
-আর তোমার তো অন্য কাপলদের মত সমস্যাও নেই । তোমার বয়ফ্রেন্ড কিন্তু বেকার না , যে তোমাকে খাওয়াতে পারবে না ?
-বাবার পছন্দ ইউ এস রিটার্ন ছেলে.
-আচ্ছাআআআআ ! এই তো লাইনে এসেছো । আসলে ভালবাসা টালোবাসা তোমার কাছে কিছু না । যেই দেখেছো ছেলে আমেরিকা থেকে এসেছে, আমার থেকে অনেক টাকা আছে সেই ঝুলে পরেছো। বাহ ! তোমরা পারও বটে !
-দেখো তুমি কিন্তু সীমা সারিয়ে যাচ্ছো।
-সীমা মাই ফুট ! তুমি কি ভেবেছো নিজেকে ? কি আছে তোমার বল ? কয় টাকা বেতন পাও ! তোমার বাবাই কয় টাকা বেতন পেত বল । ক'টাকা আয় বল ?
-দিস ইজ টু মাচ !
আমি থামলাম না ! মনে যা আসে তাই বলতে শুরু করে দিলাম ।
-এতোই যদি টাকার দরকার আমাকে আর কদিন আগে বলতা টাকা আয় করে দিতাম । একটা কথা কি জানো কোন দিক দিয়ে তুমি আমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না । তোমাকে পছন্দ করেছিলাম তোমার ভাগ্য এটা ! কিন্তু আমি তো টাকা দেখি নি তোমাকে দেখেছিলাম । এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছিলাম ।
তুশিকার চোখ দিয়ে ততক্ষনে পানি বের হওয়া শুরু হয়েছে । আমার কেন জানি ঐ চোখের পানি দেখে খুব ভাল লাগলো ! আরও খারাপ কিছু বলা দরকার । মনের শান্তি আসবে !
তুশিকা বলল
-আচ্ছা তাহলে আমার থেকে ভাল কাউকেই খুজে নিও ।
-নিবোই তো ! তোমার কি মনে হয় তোমার মত মেয়ের জন্য সারা জীবন দেবদাশ হয়ে থাকবো ! তোমার বিয়ে দুইমাস পরে ঠিক হয়েছে না ? দেখবা এর ভেতরেই তোমার থেকে সুন্দরী আর স্বভাব চরিত্রে তোমার থেকে ভাল গার্লফ্রেন্ড জোগার করে ফেলবো । তাকে নিয়েই তোমার বিয়ে খেতে যাবো ! বুঝেছো ! আর টাকা ছড়ালে তোমার মত মেয়ের অভাব হবে না ! দেখো আবার বেশি টাকা লোভে আবার ঐ ভদ্রলোকে ছেড়ে চলে যেও না । তোমার মত মেয়েদের তো বিশ্বাস নেই ।
তুশিকা কেবল আমার দিকে তাকিয়েই রইলো । কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না । আরও কয়েকটা মুহুর্ত কেটে গেল । তারপর ও উঠে দাড়ালো ! যাওয়ার আগে বলল
-আমি তোমার কাছে একটু ........ (কথাটা শেষ করলো না) কিছুটা থেমে আবার বলল
-আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি !
-ইয়েস, আমি তো দেখতেই পাচ্ছি ।
আর দাড়ালো না ! কাঁদতে কাঁদতেই চলে গেল । ও যাওয়ার পরে মনে হল এমন করে কষ্ট না দিলেও হয় তো পারতাম । কিন্তু পরক্ষনেই মাথা থেকে চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । এসব এখন ভেবে লাভ নেই । ও তো আমার জন্য ওর বাবা মায়ের সাথে সামান্য লড়াই করে নি, আমি কেন ওর জন্য মন খারাপ করে থাকবো ?
কোন কারন আছে কি ?
ফেসবুক চালু করে ইনবক্স চেক করতে লাগলাম । পুরানো কয়েকজনকে খুজে পাওয়া যায় নাকি দেখি ! খুব বেশি খুজতে হল না । সামিরাকে পেয়ে গেলাম । এই মেয়ের সাথে বেশ কিছু দিন আমার কথা বার্তা হয়েছে । মেয়েটার খানিকটা আগ্রহ ছিল আমার প্রতি । আমার নিজেও যে ছিল না তা না । মাঝখানে তুশিকা এমন ভাবে চলে এল যে অন্য কোন দিকে আর খেয়াল দিতে পারলাম না !
নক দিতেই উত্তর এল সাথে সাথেই ।
-এতো দিন পরে !
-হুম ! তবুও তোমার কথা মনে পড়লো । তোমার তো মনে পড়ে নাই !
-বাহ ! অনকে দিন পরে আমার কথা মনে পড়লো মনে হচ্ছে । এতো কেয়ার কেন জনাব ? ব্রেক আপ হয়ে গেছে ?
লুকিয়ে লাভ নেই । সত্যই বলে দেই । বললাম
-হুম !
-কখন ?
-এই মিনিট পাঁচেক !
-বাহ পাঁচ মিনিটও পার হয় নি আর অন্য মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে শুরু করে দিয়েছো !
-তুমি তোমার দিক টা দেখো ! একজন একটা বাঁধন থেকে ছোটার সাথে সাথে তোমার দিকে ছুটে চলে আসছে । ব্যাপার টা এই ভাবে চিন্তা কর । সেই মানুষের কাছে তোমার গুরুত্ব কত খানিক দেখো ! সবার আগে আবার তোমার কথা মনে পড়েছে অন্য কারো কথা মনে পরে নাই । ভাবো একবার !
হাসির ইমো দিলো ! তারপর বলল
-তোমার সাথে কথায় পারা যাবে না !
একটু পরেই সামিরার ফোন এসে হাজির ।
-তা জনাব কি করানে ব্রেকআপ হল শুনি ?
-মেয়ে আমার থেকে বেশি টাকা ওয়ালা ছেলে পেয়েছে তাই চলে গেছে । মেয়েরা যেমন হয় !
-বাহ ! খুব মেয়েদের চিনে রেখেছো দেখছি ?
-তুমিও তো ছেলেদের চিনে রেখেছো দেখছি !
সামিরা আবারও হাসলো ! তারপর বলল
-তুমি তো আমাকে চিনো ! আমি কোন কমিটমেন্টে যাবো না ! এসব আমার ভাল লাগে না ! তোমার সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগে ব্যাস ! তুমি এভাবে যদি আসতে পারো তাহলে ওকে । নয়তো না !
-ওকে তাই হবে !
কদিনের ভেতরেই সামিরার সাথে বেশ জমে গেল । আমি সেসব ছবি দিতে লাগলাম ফেসবুকে । তুশিকা ব্লক মারি নি । আনফ্রন্ড করেছি মাত্র ! আমি জানি ও ঠিক ঠিক আমার প্রোফাইলে আসবে । আসবেই ।
আমিও চাই ও যেন আসুক ! আসুক আর আমাকে আর সামিরা কে একসাথে দেখে খুশি দেখে কিছু সময় জ্বলুক !
আসলেই মোটেই খারাপ ছিলাম না ! সামিরার সাথে সময় ভালই কাটছিলো । কথায় আছে বেস্ট রিভেঞ্জ হচ্ছে ওভারকাম করা । সুখী থাকা । সেই হিসাবে আমি বেশ ভালই ছিলাম । কিন্তু আনন্দটা আরও একটু বেড়ে গেল মাস খানেক পরে । খবর এল যে তুশিকার সেই আমেরিকা ফেরৎ হবু জামাই হচ্ছে একজন চিট ! আমেরিকায় ফ্রড কেসের আসামী ! সেখানে টিকতে না পেরে এখানে পালিয়ে এসেছে । অনেক মানুষ ওর কাছে টাকা পায় ! বাংলাদেশেরও অনেকে টাকা পায় !
এই কথা শোনার পরে মনের ভেতরে একটা পৌশাচিক আনন্দ বেরিয়ে এল ।
শ্লার মেয়ে, এবার কর বিয়ে আরও ভাল জায়গায় ! আরও ভাল লাগতো তুশিকার চেহেরা দেখতে পারলে । কিন্তু সেটা করবো না ঠিক কারলাম ।
ওর নাম মুখে নিয়েছি আর তখনই দেখতে পেলাম ও অফিসের গেট দিয়ে ঢুকছে । দোতালায় আমার কেবিন থেকে রিসিপশনরা পরিস্কার দেখা যায় ! আমি তখনই রিসিপসনে ফোন বলে দিলাম আমার রুমে যেন ঢুকতে না দেয় । ও ওখান থেকেই আমার দিকে তাকালো । ওর চোখের ভাষা পড়ে আমি নিজের মনে হেসে উঠলাম ! আবারও মনে হল যা কর বিয়ে আমার কাছে কেন এসেছিস ?
আরও কয়েকবার তুশিকা আমার সাথে দেখা করতে চাইলেও এড়িয়ে গেলাম । কিন্তু সামিরার জন্য এড়াতে পারলাম না । সামিরার সাথে দেখা করার কথা ছিল সন্ধ্যা বেলা । দেখি সামিরা তুশিকা নিয়েই আসছে । দুজনেই আমার সামনে এসে দাড়ালো ! আমি বললাম
-কি ব্যাপার তুমি এর সাথে কেন ?
সামিরা বলল
-আই থিংক তোমার একটু কথা বলা দরকার ওর সাথে !
-কোন দরকার নেই !
-আছে ।
-সামিরা ! তুমি আমাকে বলে দিবে না যে আমি কার সাথে কথা বলবো আর কার সাথে না ।
আমি ভেবেছিলাম সামিোরা এই কথাতে একটু রেগে উঠবে। বেশ কঠিন ভাবেই কথাটা বলেছিলাম । তবে রেগে উঠলো না ! বরং নরম স্বরে বলল
-তোমার আসলেই কথা বলা দরকার । প্লিজ । আমি একজন মেয়ে । ওর দিক টা একটা মেয়েই কেবল বুঝতে পারবে । প্লিজ একটু শোন ।
আমি কোন কথা না বলে একবার সামিরা, আরেকবার তুশিকার দিকে তাকালম । সামিরা বলল
-আর ভেবো না যে ওর বিয়ে ভেঙ্গে বলেই ও তোমার কাছে এসেছে । ও অনেক দিন আগে থেকেই আমার সাথে যোগাযোগ রাখছে । ইনফ্যাক্ট তুমি আমার সাথে যোগাযোগ করার পরপরই । ও সেদিন তোমার কাছে কেবল গিয়েছিলে কিভাবে বিয়েটা ভাঙ্গা যায় সেটা নিয়ে কথা বলতে । কিন্তু তুমি আর তোমার এঙ্গার । ঠান্ডা মাথায় যে শুনবে সেটা তো তোমাকে দিয়ে হবে না ।
-আর যদি ঐ ইউ এস ওয়ালা ফ্রড না বের হত তখন ?
-তখনও ও বিয়ে করতো না । কোন ভাবেই না । আমি জানি । ওর চোখে আমি তোমার জন্য যে ভালবাসা দেখেছি সেটা তুমি কোন ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারো না । আর তুমি যতই রাগ দেখিয়ে বেড়াও না কেন তুমিও যে ওকে ছাড়া থাকতে পারবে না সেটাও তোমার চোখ দেখলে বোঝা যায় !
সামিরা আর কিছু বলল না । তুশিকা কে আমার সামনে বসিয়ে রেখে চলে গেল । তুশিকার সেই তখন থেকে কে ভাবে নিরবে চোখের পানি ফেলে চলেছে । কোন কথা বলছে না ।
আমি বললাম
-তো ? চুপ করে থাকবে ।
-আমি তো খারাপ । তুমি তো ভাল । তুমিই বল শুনি । সেদিন তো কম কথা শোনাও নি ।
-হুম । এবার তুমি শোনাও ।
তুশিকা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-শোনাবো । আমাকে যত খানি কষ্ট দিয়েছে সব কিছুর শোধ তুলবো । মনে রেখো ।
-কিভাবে করবে শুনি ?
-এখন করবো না । আগে তোমাকে বিয়ে করি । তারপর বোঝাবো .....
হঠাৎই আমার কেন জানি হাসি পেয়ে গেল । হাসি থামিয়ে বললাম
-তাহলে তোমাকে বিয়েই করবো না ভাবছি ।
তুশিকা কিছু না বলে চুপ করে রইলো । টিস্যু বের করে চোখ মুছলো । মেয়েটা নিশ্চয় এই কদিন খুব কান্না কাটি করে কাটিয়েছে । আসলে সামিরা ঠিকই বলেছে আমি যতই তুশিকা কে জোর করে মনের বাইরে রাখার চেষ্টা করি না কেন সে ঠিক ঠিক আমার মনের ভেতরে ঢুকে পড়তো । রাগের মাথায় যত যাই বলি না কেন মেয়েটাকে ভালতো ঠিকই বাসি । মেয়েটাকে এভাবে না কাঁদালেও পারতাম হয়তো !
মেয়েটা নিজে কেঁদেছে এবার আমাকে প্যারা প্লান আটছে । যাক সেই প্লান আমি সফল হতে দেবো না । বিয়ে ঠিকই করবো তোমাকে কিন্তু সেই সুযোগ তুমি পাবে না কন্যা !
গল্প ০২
-মানে আপনার যোগ্যতা টা কি ?
আমার কথা শুনে নুশরাত মনে হল একটু চমকে গেল । আসলে ও ভাবতেই পারে নি যে আমি ওকে এমন একটা প্রশ্ন করতে পারি ! অবশ্য যে কোন সুন্দরী মেয়ের পক্ষেই এমন একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়াটা খুব একটা স্বাভাবিক ব্যাপার না !
আমি আবার বললাম
-প্লিজ আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না ! আমি ব্যাখ্যা করবো আমি কি বলতে চেয়েছি !
নুশরাত কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো !
আমি একটু কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে নিলাম ! নিজেকে বোঝালাম যে এর পরে আমি যা বলতে যাচ্ছি তার উপরেই অনেক কিছু নির্ভর করছে । নিজের স্বাধীনতা নির্ভর করছে ।
আমি বললাম
-গত কয়দিন থেকেই আপনার আর আমার ফ্যামিলির ভেতরে বেশ দেখা সাক্ষাত আর খোজ খবর নেওয়া চলছে । কেন চলছে নিশ্চই বুঝতে পারছেন ?
-জি পারছি ! সেই জন্যই আমাদের আজকে এখানে দেখা হয়েছে আই গেস !
-জি ! গত কয়দিন আপনার ফ্যামিলির লোকজন আমি কি করি না করি কয় টাকা বেতন পাই আমার কি যোগ্যতা কোথা থেকে পড়া শুনা করেছি এই টাইপের হাজারো ইনকোয়ারি শেষ করেছে ! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে আমি আপনার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না ! আপনি কি করেন ?
-আমি তেমন কিছুই করি না ! মানে কোন জব করি না !
-সে কি ! কেন ?
-করার দরকার পরে নি এখনও !
-তাহলে আমি আপনাকে কেন বিয়ে করবো বলেন ? মানে আপনার যোগ্যতাটা কি ?
নুশরাত কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না ! অবশ্য এরকম প্রশ্ন ও কোন ভাবেই আশাও করে নি !
-আমি আবারও বললাম
-আপনি নিশ্চয়ই চেহারাটা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করছেন না ? তাই না ?
নুশরাতের চেহারায় সুক্ষ একটা অপমান বোধ ফুটে উঠতে দেখলাম ! তার মানে আমি কাজে সঠিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছি !
-দেখুন আমি ঠিক পরিস্কার ভাবেই আপনার কাছে কথা বলে নেই । কারন যেহেতু আমাদের সামনের জীবন গুলো এক সাথে কাটাতে হবে তাই আমি সব বিষয়ে আগে থেকে কথা বলে নেওয়াই সঠিক বলে মনে করি !
নুশরাত আবারও কোন কথা না বলে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ওর মুখ টা এমনিতেই কালো হয়ে গেছে আমার কথা শুনে !
আমি বললাম
-আপনার এবং আপনার ফ্যামিলির নিশ্চয় কোন দিক দিয়ে মনে হয়েছে যে আমি হয়তো আপনার যোগ্য তাই আজকে আমাদের এখান দেখা করা । আজকে হ্যা হয়ে গেলে মনে হয় সামনে আমাদের বিয়েটাও হয়ে যাবে । কিন্তু আমি বলতে চাই আমি কেন আপনাকে বিয়ে করবো ? কি দেখে ? সেটা কি কেবলই আপনার সুন্দর চেহারা দেখে !
আবার তাকিয়ে দেখি নুশরাত চুপ করেই আছে । আমি আবার বলা শুরু করি !
-আমাদের দেশে কেবল এই কালচারই আছে । দেখুন এখনকার মেয়েরা সমান অধিকারের কথা বলে । বুক ফুলিয়ে বলে যে ছেলেটা যা পারে আমরাও তাই পারি অথচ এরই সাথে তারা এও আশা করে যে তাদের বিয়ে হবে কোন ভাল ছেলে সাথে ! খুব ভাল কোন জায়গায় । যেখানে তার কোন দুঃখ থাকবে না নিশ্চিত ভবিষ্যৎ হবে ! ব্যাপার টা হাস্যকর লাগে না আপনার কাছে ?
নুশরাতের চেহারায় কিছুটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন ফুটে উঠতে দেখলাম !
-ব্যাখ্যা করছি ! এই যে ভাল ছেলের কথা আসলো এখানে কিন্তু সব থেকে বড় গুন টা ছেলে মাসে কয়টাকা আয় করে । এবং সেটা যদি থাকে তাহলে মেয়েরা অন্যান্য গুন গুলো শিথিল করে ফেলে ।
-যেমন ?
-এই যেমন বয়স, চেহারা, মাঝে মাঝে চরিত্রও ! কিন্তু একটা ব্যাপার আপনি দেখেন একটা ছেলে যখন একটা ভাল একটা মেয়ের সাথে তার বিয়ের স্বপ্ন দেখে সেখানে কিন্তু একটা ছেলে কোন দিন এই ভাবে না যে মেয়েটা তার ভবিষ্যৎ আর্থিক ভাবে নিশ্চয়তা দিবে ! এমন টা ভাবে কেউ ? ভাবে না ! এমন কি আপনার পরিবারো কিন্তু সেই একই কাজ করছেন ! আমি নিশ্চয়তার জন্য আমাকে বিয়ে করছেন অন্য কোন কারনে নয় ! যদি আমার চাকরী ভাল না হত বাকি সব ঠিক থাকতো তাহলে আপনার ফ্যামিলি এমন আপনি নিজেও সেটা এলাও করতেন না ! তাহলে আমি কেন আপনার মত কর্মহীন মেয়েকে এলাও করবো বলেন ? গিম মি এ রিজন !
আসলে আমি নিজেও জানি না আমি কি সব বকতেছি তবে মনে হচ্ছে কাজ হচ্ছে ! নুশরাত নিশ্চিত ভাবেই বাসায় গিয়ে বিয়ে ভেঙ্গে দিবে !
নুশরাতের মুখ একেবারে কালো হয়েগেছে । ঠিক মত কথাও বলছে না ! না বলারই কথা ! নুশরাত আর কোন কথা না বলে উঠে চলে গেল ! আমি হাসি মুখ নিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম ! তারপরপ ওয়েটারকে ডাকলাম বিল দেওয়ার জন !
বিল দিতে দিতে ওয়েটার আমার হাসি মুখ দেখে জানতে চাইলো
-স্যার, ম্যাম আপনার প্রোপোজে রাজি হয়ে গেছে !
-মানে ?
-না মানে আপনি যখন আসছিলেন তখন আপনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিলো ! এখন বেশ খুশি খুশি লাগছে !
আমি হাসলাম ! তারপরপ বলল
-নাহ ! ম্যাডাম রাজি হয় নাই । সম্ভবত সে বাসায় গিয়ে এখন বিয়ে টা ভেঙ্গে দিবে !
বলে আবারও একটা হাসি দিলাম !
ওয়েটার আবারও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । সম্ভবত নিজের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আমিই তার দেখা প্রথম ব্যক্তি !
আমি ওয়েটার কে আরও ৫০ টাকা বকশিস দিয়ে উঠে পড়লাম । এখন খানিকটা চিন্তা মুক্ত ! আমি মোটামুটি নিশ্চিত নুশরাত এখন বাসায় গিয়ে ঠিক ঠিক বিয়ে ভেঙ্গে দিবে । আমি নিশ্চিন্ত মনে অফিসের দিকে রওনা দিলাম ! সারাটা বিকেল মায়ের ফোনের অপেক্ষা করলাম । মা ওদের বাসা থেকে ফোন পাওয়া মাত্রই
কিন্তু বাসায় এসে শুনলাম অন্য কথা । বাসায় ঢুকেই মনে হয়েছে হল কিছু যেন ঠিক নেি । অন্তত আমি ঠিক যেভাবে আশা করেছিলাম সেভাবে নয় । মায়ের মুখ হাসি হাসি অথচ সেখানে মুড অফ থাকার কথা ছিল !
আমি আগ থেকে কিছু জানতে চাইলাম না । হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হতেই মা চা নিয়ে আসলো ! আমি কিছু জনতে চাওয়ার আগেই মা বলল
-তুই মেয়েটাকে কি বলেছিস ?
-কেন ?
-বল ?
তাহলে মনে হয় সত্যি কাজ হয়েছে ! মা নিশ্চয় অন্য কোন কারনে খুশি ! আমি বললাম
না মানে আমি যা চাই, কি ফিল করি এই সব !
-নুশরাত তো খুব ইম্প্রেস !
-কি !!!!!
মুখে দেওয়া চা টা আরেকটু হলেই বের হয়ে আসতো ! আটকালাম কোন মতে !
-মানে সে রাজি ?
-আরে রাজি মানে অবশ্য রাজি ! তবে একটা শর্ত দিয়েছে !
-কি শর্ত ?
-বলে তোদের বাগদান টা যত দ্রুত সম্ভব হয়ে যাবে কিন্তু বিয়ে হবে কদিন পরে ! মেয়ের আগে চাকরি করার ইচ্ছে । সে চাইছে সংসারে দুজনেই চাকরি করুক যাতে তোর কষ্ট টা কম হয় । দুজন মিলেই সমান দায়িত্ব পালন করতে পারে !
খাইছে !
এইবার আমার জীবন সাফা সাফা করেদিনে ! কত প্লান করে স্কিপ্ট রেডি করলাম । নিশ্চিত ছিলাম এই কথা শুনলে মেয়ে কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না সেখানে দেখা যাচ্ছে মেয়ে আরো বেশি করে রাজি হয়ে গেছে ! সামনের দিনে আমার কি আছে কপালে !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০৭