আমি খানিকটা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম । বাবার মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে তিনি ব্যাপার টা পছন্দ করছে না । কেবল আমার পছন্দের কথা ভেবে এখনও চুপ করে আছেন ! কতক্ষন চুপ করে থাকবে সেটাও একটা বিষয় !
আলমগীর সাহের দিকে তাকিয়ে বাবা বলল
-কিন্তু ভাই সাহেব আপনি ব্যাপার টা ভেবে দেখেন ? আমার ছেলে কয় টাকা বেতন পায় । তার পক্ষে এতো টাকা কাবিন করা সম্ভব নয় !
আলমগীর সাহেব বলল
-দেখুন ! আমার সেই এক কথা । আমি তো এক কোটি টাকার নিচে কাবিন কোন ভাবেই মেনে নিতাম না ! কেবল আমার মেয়ে ফয়সাল কে পছন্দ করে তাই ৫০ লাখে রাজি হয়েছে । এর কমে যদি কাবিন হয় তাহলে সমাজে আমার মান সম্মান থাকবে না ।
আমি কি বলব ঠিক খুজে পেলাম না ! তাকিয়ে দেখলাম বাবাও আর কোন কথা বলছে না । শেষে বলল
-তাহলে ভাই সাহবে আমরা আরেকটু চিন্তা করি ! তারপর আপনাকে জানাই ।
-ঠিক আছে । তবে কথা আমার সেই একই থাকবে !
বাবা উঠে দাড়ালো, সাথে সাথে আমিও । সামনে সাজিয়ে রাখা মিষ্টি আর খাবার দাবার গুলো যেমন ছিল তেমন ভাবেই পড়ে রইলো । কথা ছিল যে আজই বিয়ের জন্য সব কথা বার্তা পাকা কথা দিয়ে যাবে । তারপর দিন ক্ষন দেখে একটা তারিখ ফেলে শুভ কাজটা সেরে ফেলতে হবে ।
সব কথাই আলোচনা হচ্ছিলো শেষে যখন কাবিন টাকা নিয়ে কথা এল তখন আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । জিনিয়ার বাবা পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিল তার মেয়ের বিয়েতে কাবিন করতে হবে এক কোটি টাকা । কোন ভাবেই এর নিচে নামা যাবে না ! ১ কোটি ! মানে কি এরা আমাকে কি ভাবে টাকা ছাপানোর মেশিন !
বিয়ে করতে গেলে কাবিন করতে হয় ঠিক আছে । কিন্তু সেটার তো একটা লিমিট থাকা দরকার নাকি ? কোন হিসেবে এক কোটি টাকা !!
সরকারের অবশ্যই এই কাবিন করার উপর একটা কঠিন নীতি মালা তৈরি করা উচিৎ !
দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় বাবা আগেই বের হয়ে গেল । জিনিয়াকে দেখলাম আমাকে এক পাশে ডেকে নিল । আমার দিকে অসন্তুষ্টের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি বাবার সাথে আর্গুমেন্টে গেলে কেন ?
এবার মনে হয় আমার সব থেকে বেশি অবাক হওয়ার পালা । আমার একটা ধারনা ছিল যে জিনিয়ার বাবার এই অযৌক্তিক দাবীর বিরুদ্ধে অন্তত জিনিয়া কিছু বলবে । তার বাবাকে বোঝাবে । আসলে এই ভরশাতেই আমি ছিলাম যে জিনিয়া নিশ্চয়ই কিছু করবে । কিন্তু ওর কথা শুনে আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না ! বললাম
-তুমি কি বলছো এসব ? আর্গুমেন্টে যাবো না ?
-কেন তুমি আমাকে ভাল বাসো না ?
-তোমাকে ভালবাসি না এই কথা কখন বললাম ?
-তাহলে ?
-তাহলে মানে কি ? তোমাকে ভালবাসি তার মানে এই নয় যে নদীতে ঝাপ মারবো, তাই না ?
-শোন এই বিষয়ে আমি এখন আর কোন কথা বলতে চাই না ! ইফ ইউ লাভ মমি ইউ হ্যাভ টু পে মি !
আমার যা বোঝার আমি বঝে গেলাম । একটু আগেও যা ইচ্ছে মনে ভেতরে তা এই মাত্র মনের ভেতর থেকে উবে গেল ! বললাম
-আচ্ছা তোমার সাথে পরে কথা বলবো !
এই বাইরে বের হয়ে এলাম । বাবা ততক্ষনে বাইরে চলে গেছে । বাবাকে বললাম চলে যেতে ! আমার কেন জানি একটু বিষন্ন লাগছিল । মনে ভেতরে একটু অশান্তি লাগছিল । এই মেয়েটাকে মনে হচ্ছিল আমি চিনি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তা বড় অচেনা লাগছে ।
জিনিয়ার সাথে প্রায় দুবছর ধরেই পরিচয় । চাকরী পাওয়ার পর থেকেই ওর সাথে কথা হত । একটা সময় আমাদের দুজনেরই মনে হল সামেনের দিন গুলো আমরা এক সাথে কাটাতে পারবো । তারপর থেকেই এক সাথে আছি । একটা সময় মনে হল এবার মনে হয় আরও ভাল করে পাশাপাশি থাকার সময় এসেছে । পারিবারিক ভাবে যখন কথাটা উঠলো তখন বাবা মোটেই খুশি হলেন না । তার মতে ছেলে মেয়েদের সব কাজ নিজেদের করতে নেই । কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড়দের হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ ! অবশ্য মায়ের এরকম ধারনা নেই । মা বরং জিনিয়াকে দেখে খুশিই হলেন ।
সব কিছু ঠিকই চলছিল কিন্তু মাঝে খানে এই ঝামেলা এসে হাজির !
রাস্তায় কিছুক্ষন এদিক ওদিক হাটাহাটি করলাম । তারপর বাসায় গিয়ে হাজির হয়ে গেলাম বেশ রাত করেই । ভেবেছিলাম বাবা মা মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি দুইজনই গম্ভীর হয়ে বসে আছে । আমি ঘরে ঢুকতেই বাবা বলল
-তো কি ঠিক করলে ?
-জানি না !
-রাজুর কথা মনে আছে তোমার বড় মামার শ্যালক !
-হ্যা ! কেন ?
-জানো তো ওর সাথে কি হয়েছে । তোমার মতই এরকম ভাবে ২০ লাখ টাকা কাবিন করেছিল । বিয়ের তিন মাসের মাথায় বউয়ের সাথে সমস্যা শুরু হয় । এক বছরের মাথায় ডিভোর্স । ২০ লাখ দিতে তার নিজের বাড়ি বিক্রি করা লেগেছে । এখন তুমি ভেবে দেখো !
আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না ! একটু নীচু স্ব রে বললাম
-কিন্তু বাবা জিনিয়ার সাথে আমার বনিবনা হবে এমন কোন মানে নেই ! তাই না !
-হবে না ঠিক আছে কিন্তু যে মেয়ে নিজের বাবার এরম অযৌক্তিক দাবীর সামনে কোন কথা বলল না সে তোমাকে কত টুকু ভালবাসে সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে ।
আমি এবার কোন কথা বললাম না ! আসলেই ব্যাপার টা আমি ঠিক মত মেনে নিতে পারছি না ! বাবা বলল
-যদি তবুও তোমার ইচ্ছে থাকে তবে আমার কোন সে নেই । তোমার জীবন তোমার সিদ্ধান্তটাই এখানে প্রধান ! তবে যা করবে সেটা তোমাকেই করতে হবে !
বাবার কথা আমি স্পষ্টই বুঝে গেলাম ! আর কথা না বাড়িয়ে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম ! ভাবতে লাগলাম সামনে কি করবো !
পরদিন সকালে জিনিয়া এসে হাজির অফিসে !
-তো ঠিক করলে ? বাবা জানতে চেয়েছে । তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত চান !
আমি হেসে বললাম
-দ্রুত !
-হ্যা ! শুনো আমাদের হানিমুন টা কিন্তু আমরা লন্ডনে করবো ! ঠিক আছে !
-আর ক ভরি সোনা দিতে হবে ?
-সেটা তো আগেই তোমাকে বলেছি ! বাবা চান যে কম করে হলেও ১০ ! এর নিচে না !
-তোমার বাবা আর কি কি চান ?
জিনিয়া আরও কিছু কথা বলে গেল । তার কথা শুনে মনে হল ও ধরেই নিয়েছে যে আমি ওর সব প্রস্তাবেই রাজি ! ওর কথা শেষ হলে বললাম
-সব তো তোমার বাবা চায় ! তুমি কি চাও ?
-বাবা যা চায় আমিও তাই চাই !
-ও আচ্ছা তা তোমার বাবা আমার পেছন দিক দিয়ে যেমন বাঁশ দিতে আগ্রহী তুমিও তাতে রাজি !
জিনিয়া কিছুটা সময় বুঝতে পারলো না আমি কি বললাম কিংবা আমি এরকম কথা বলতে পারি এটা ঠিক যেন ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ! মুখের ভাব বদলে গেল মুহুর্তেই । বলল
-কি বললে তুমি ?
-শুনো নাই কি বলেছি ?
-পরিস্কার করে বল !
-পরিস্কার করে বলছি । তুমি যেমন তোমার বাবার কথা শুনতেছো আমিও আমার বাবা কথা শুনতেছি ! এক টাকাও কাবিন করবো না ! যদি এই শর্তে বিয়ে করতে চাও আসো না হলে দুরে যাও ! দুরে যাও এন্ড ইট মুড়ি !
-কি বললে তুমি ? কি বললে ?
-কানে তো কম শুনো না ! তোমাদের মত মেয়ে আর তোমার বাবার মত লোভী মানুষেরদের কে কেবল নিয়ম করে থাপড়ানো দরকার ! তোমরা আমাদের ছেলেদের কে যৌতুক নিতে বাড়ন কর তার তোমরা কি করছো !
রাগে দেখলাম জিনিয়ার মুখ লাল হয়েছে । ঠিক মত কথা বলতে পারছে না !
আমি আবার বললাম
-কালকে কি বললে ইউ হ্যাভ টু পে মি ! পে করেই যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে তোমাকে কেন বিয়ে করতে হবে কেন ? ভাত ছড়ালে যেমন ভাতের অভাব হয় না তেমনি টাকা ছাড়ালে তোমাদএর মত মেয়ের অভাব হবে !
-তোমাকে তোমাকে ........ আআআআআর একটা বাজে ......
-আরে রাখো তোমার বাজে কথা ! তোমাকে যে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই নাই এইটা তোমার কপাল ! একে বারে দুর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে । আর তোমার বাবাকে বলবা আমি গাধা হতে প্রস্তুত না ! তোমার বিয়ের জন্য কোথা থেকে একটা গাধা খুজে বের করে আনতে !
জিনিয়া আর সহ্য না করতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেল । কাল রাতের পর থেকে বুকের ভেতরে কেমন একটা গুমট ভাব কাজ করছিল । জিনিয়াকে এই কথা বলতে পেরে কেন জানি খুব শান্তি লাগলো । তারপর উপর কালকের বাবার অসন্তুষ্ট চেহারা মনে হচ্ছে আর দেখতে হবে না !
যৌতুক এবং আধুনিক যৌতুক কে "না" বলুন !
(মাশরুফ ভাইয়ের একটা স্টাটাস থেকে গল্প অনুপ্রানীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭