somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ আধুনিক যৌতুক

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম । বাবার মুখের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে তিনি ব্যাপার টা পছন্দ করছে না । কেবল আমার পছন্দের কথা ভেবে এখনও চুপ করে আছেন ! কতক্ষন চুপ করে থাকবে সেটাও একটা বিষয় !

আলমগীর সাহের দিকে তাকিয়ে বাবা বলল
-কিন্তু ভাই সাহেব আপনি ব্যাপার টা ভেবে দেখেন ? আমার ছেলে কয় টাকা বেতন পায় । তার পক্ষে এতো টাকা কাবিন করা সম্ভব নয় !
আলমগীর সাহেব বলল
-দেখুন ! আমার সেই এক কথা । আমি তো এক কোটি টাকার নিচে কাবিন কোন ভাবেই মেনে নিতাম না ! কেবল আমার মেয়ে ফয়সাল কে পছন্দ করে তাই ৫০ লাখে রাজি হয়েছে । এর কমে যদি কাবিন হয় তাহলে সমাজে আমার মান সম্মান থাকবে না ।

আমি কি বলব ঠিক খুজে পেলাম না ! তাকিয়ে দেখলাম বাবাও আর কোন কথা বলছে না । শেষে বলল
-তাহলে ভাই সাহবে আমরা আরেকটু চিন্তা করি ! তারপর আপনাকে জানাই ।
-ঠিক আছে । তবে কথা আমার সেই একই থাকবে !

বাবা উঠে দাড়ালো, সাথে সাথে আমিও । সামনে সাজিয়ে রাখা মিষ্টি আর খাবার দাবার গুলো যেমন ছিল তেমন ভাবেই পড়ে রইলো । কথা ছিল যে আজই বিয়ের জন্য সব কথা বার্তা পাকা কথা দিয়ে যাবে । তারপর দিন ক্ষন দেখে একটা তারিখ ফেলে শুভ কাজটা সেরে ফেলতে হবে ।

সব কথাই আলোচনা হচ্ছিলো শেষে যখন কাবিন টাকা নিয়ে কথা এল তখন আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । জিনিয়ার বাবা পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিল তার মেয়ের বিয়েতে কাবিন করতে হবে এক কোটি টাকা । কোন ভাবেই এর নিচে নামা যাবে না ! ১ কোটি ! মানে কি এরা আমাকে কি ভাবে টাকা ছাপানোর মেশিন !
বিয়ে করতে গেলে কাবিন করতে হয় ঠিক আছে । কিন্তু সেটার তো একটা লিমিট থাকা দরকার নাকি ? কোন হিসেবে এক কোটি টাকা !!
সরকারের অবশ্যই এই কাবিন করার উপর একটা কঠিন নীতি মালা তৈরি করা উচিৎ !

দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় বাবা আগেই বের হয়ে গেল । জিনিয়াকে দেখলাম আমাকে এক পাশে ডেকে নিল । আমার দিকে অসন্তুষ্টের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি বাবার সাথে আর্গুমেন্টে গেলে কেন ?

এবার মনে হয় আমার সব থেকে বেশি অবাক হওয়ার পালা । আমার একটা ধারনা ছিল যে জিনিয়ার বাবার এই অযৌক্তিক দাবীর বিরুদ্ধে অন্তত জিনিয়া কিছু বলবে । তার বাবাকে বোঝাবে । আসলে এই ভরশাতেই আমি ছিলাম যে জিনিয়া নিশ্চয়ই কিছু করবে । কিন্তু ওর কথা শুনে আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না ! বললাম
-তুমি কি বলছো এসব ? আর্গুমেন্টে যাবো না ?
-কেন তুমি আমাকে ভাল বাসো না ?
-তোমাকে ভালবাসি না এই কথা কখন বললাম ?
-তাহলে ?
-তাহলে মানে কি ? তোমাকে ভালবাসি তার মানে এই নয় যে নদীতে ঝাপ মারবো, তাই না ?
-শোন এই বিষয়ে আমি এখন আর কোন কথা বলতে চাই না ! ইফ ইউ লাভ মমি ইউ হ্যাভ টু পে মি !
আমার যা বোঝার আমি বঝে গেলাম । একটু আগেও যা ইচ্ছে মনে ভেতরে তা এই মাত্র মনের ভেতর থেকে উবে গেল ! বললাম
-আচ্ছা তোমার সাথে পরে কথা বলবো !

এই বাইরে বের হয়ে এলাম । বাবা ততক্ষনে বাইরে চলে গেছে । বাবাকে বললাম চলে যেতে ! আমার কেন জানি একটু বিষন্ন লাগছিল । মনে ভেতরে একটু অশান্তি লাগছিল । এই মেয়েটাকে মনে হচ্ছিল আমি চিনি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তা বড় অচেনা লাগছে ।

জিনিয়ার সাথে প্রায় দুবছর ধরেই পরিচয় । চাকরী পাওয়ার পর থেকেই ওর সাথে কথা হত । একটা সময় আমাদের দুজনেরই মনে হল সামেনের দিন গুলো আমরা এক সাথে কাটাতে পারবো । তারপর থেকেই এক সাথে আছি । একটা সময় মনে হল এবার মনে হয় আরও ভাল করে পাশাপাশি থাকার সময় এসেছে । পারিবারিক ভাবে যখন কথাটা উঠলো তখন বাবা মোটেই খুশি হলেন না । তার মতে ছেলে মেয়েদের সব কাজ নিজেদের করতে নেই । কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড়দের হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ ! অবশ্য মায়ের এরকম ধারনা নেই । মা বরং জিনিয়াকে দেখে খুশিই হলেন ।

সব কিছু ঠিকই চলছিল কিন্তু মাঝে খানে এই ঝামেলা এসে হাজির !
রাস্তায় কিছুক্ষন এদিক ওদিক হাটাহাটি করলাম । তারপর বাসায় গিয়ে হাজির হয়ে গেলাম বেশ রাত করেই । ভেবেছিলাম বাবা মা মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখি দুইজনই গম্ভীর হয়ে বসে আছে । আমি ঘরে ঢুকতেই বাবা বলল
-তো কি ঠিক করলে ?
-জানি না !
-রাজুর কথা মনে আছে তোমার বড় মামার শ্যালক !
-হ্যা ! কেন ?
-জানো তো ওর সাথে কি হয়েছে । তোমার মতই এরকম ভাবে ২০ লাখ টাকা কাবিন করেছিল । বিয়ের তিন মাসের মাথায় বউয়ের সাথে সমস্যা শুরু হয় । এক বছরের মাথায় ডিভোর্স । ২০ লাখ দিতে তার নিজের বাড়ি বিক্রি করা লেগেছে । এখন তুমি ভেবে দেখো !
আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না ! একটু নীচু স্ব রে বললাম
-কিন্তু বাবা জিনিয়ার সাথে আমার বনিবনা হবে এমন কোন মানে নেই ! তাই না !
-হবে না ঠিক আছে কিন্তু যে মেয়ে নিজের বাবার এরম অযৌক্তিক দাবীর সামনে কোন কথা বলল না সে তোমাকে কত টুকু ভালবাসে সেই বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে ।

আমি এবার কোন কথা বললাম না ! আসলেই ব্যাপার টা আমি ঠিক মত মেনে নিতে পারছি না ! বাবা বলল
-যদি তবুও তোমার ইচ্ছে থাকে তবে আমার কোন সে নেই । তোমার জীবন তোমার সিদ্ধান্তটাই এখানে প্রধান ! তবে যা করবে সেটা তোমাকেই করতে হবে !

বাবার কথা আমি স্পষ্টই বুঝে গেলাম ! আর কথা না বাড়িয়ে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম ! ভাবতে লাগলাম সামনে কি করবো !

পরদিন সকালে জিনিয়া এসে হাজির অফিসে !
-তো ঠিক করলে ? বাবা জানতে চেয়েছে । তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত চান !
আমি হেসে বললাম
-দ্রুত !
-হ্যা ! শুনো আমাদের হানিমুন টা কিন্তু আমরা লন্ডনে করবো ! ঠিক আছে !
-আর ক ভরি সোনা দিতে হবে ?
-সেটা তো আগেই তোমাকে বলেছি ! বাবা চান যে কম করে হলেও ১০ ! এর নিচে না !
-তোমার বাবা আর কি কি চান ?

জিনিয়া আরও কিছু কথা বলে গেল । তার কথা শুনে মনে হল ও ধরেই নিয়েছে যে আমি ওর সব প্রস্তাবেই রাজি ! ওর কথা শেষ হলে বললাম
-সব তো তোমার বাবা চায় ! তুমি কি চাও ?
-বাবা যা চায় আমিও তাই চাই !
-ও আচ্ছা তা তোমার বাবা আমার পেছন দিক দিয়ে যেমন বাঁশ দিতে আগ্রহী তুমিও তাতে রাজি !

জিনিয়া কিছুটা সময় বুঝতে পারলো না আমি কি বললাম কিংবা আমি এরকম কথা বলতে পারি এটা ঠিক যেন ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ! মুখের ভাব বদলে গেল মুহুর্তেই । বলল
-কি বললে তুমি ?
-শুনো নাই কি বলেছি ?
-পরিস্কার করে বল !
-পরিস্কার করে বলছি । তুমি যেমন তোমার বাবার কথা শুনতেছো আমিও আমার বাবা কথা শুনতেছি ! এক টাকাও কাবিন করবো না ! যদি এই শর্তে বিয়ে করতে চাও আসো না হলে দুরে যাও ! দুরে যাও এন্ড ইট মুড়ি !
-কি বললে তুমি ? কি বললে ?
-কানে তো কম শুনো না ! তোমাদের মত মেয়ে আর তোমার বাবার মত লোভী মানুষেরদের কে কেবল নিয়ম করে থাপড়ানো দরকার ! তোমরা আমাদের ছেলেদের কে যৌতুক নিতে বাড়ন কর তার তোমরা কি করছো !

রাগে দেখলাম জিনিয়ার মুখ লাল হয়েছে । ঠিক মত কথা বলতে পারছে না !
আমি আবার বললাম
-কালকে কি বললে ইউ হ্যাভ টু পে মি ! পে করেই যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে তোমাকে কেন বিয়ে করতে হবে কেন ? ভাত ছড়ালে যেমন ভাতের অভাব হয় না তেমনি টাকা ছাড়ালে তোমাদএর মত মেয়ের অভাব হবে !
-তোমাকে তোমাকে ........ আআআআআর একটা বাজে ......
-আরে রাখো তোমার বাজে কথা ! তোমাকে যে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই নাই এইটা তোমার কপাল ! একে বারে দুর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে । আর তোমার বাবাকে বলবা আমি গাধা হতে প্রস্তুত না ! তোমার বিয়ের জন্য কোথা থেকে একটা গাধা খুজে বের করে আনতে !

জিনিয়া আর সহ্য না করতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে গেল । কাল রাতের পর থেকে বুকের ভেতরে কেমন একটা গুমট ভাব কাজ করছিল । জিনিয়াকে এই কথা বলতে পেরে কেন জানি খুব শান্তি লাগলো । তারপর উপর কালকের বাবার অসন্তুষ্ট চেহারা মনে হচ্ছে আর দেখতে হবে না !

যৌতুক এবং আধুনিক যৌতুক কে "না" বলুন !

(মাশরুফ ভাইয়ের একটা স্টাটাস থেকে গল্প অনুপ্রানীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×