somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অফিস প্রেম

২৩ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক

সুমন এক ভাবেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে ! কিছুটা আনমনা হয়ে । আজকে অফিসে আসার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে । ঝুম বৃষ্টি ! এই রকম বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে ভাল লাগতো কিন্তু সেই উপায় নাই ! অফিস ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।
অবশ্য অফিস ছুটির আর খুব একটা বাকীও নাই । সুমন ঘড়ি দেখলো । ঘন্টা খানেক বাকি আছে ।
কি করবে ?
একটু আগে কি আজকে বের হয়ে যাবে ?
যাওয়া যায় । বস আজকে আসে নাই । বকা দেওয়ার কেউ নাই । সুমন আর অপেক্ষা করলো না। বাইরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মন হচ্ছে বৃষ্টি আর অনেক্ষনই হবে কিন্তু সুমনের অপেক্ষা করতে মন চাইছে না । এখনই বাসায় যেতে হবে তারপর ছাদে উঠে ভিজতে হবে !
সে নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ।

-এই সুমন ভাই ? দাড়ান !

সবে মাত্র অফিসের গেট দিয়ে বের হয়েছে তখনই ডাকটা শুনতে পেল । অহিনের ডাক ।
পেছন ঘুরে তাকাতেই অহীন একেবারে লাফ দিয়ে সুমনের ছাতার নীচে চলে এল !
-আরে আস্তে !
-হুম ! আস্তে আসলে তো ভিজে যেতাম দেখছেন না !
-আমাকে তো বলা যেত ! আমি নিয়ে আসতাম । !
-হুম ! হয়েছে । এখন চলেন !

সুমন খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-কোথায় ?
-আপনি বৃষ্টিতে ভিজতে যাচ্ছেন না ?
-আপনাকে কে বলল ?
-দেখুন , আমি কিন্তু আপনার অনেক খবরই জানি ! এখন চলেন ! আজকে আপনাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবো সারা জীবনে মনে রাখবেন !
-কোথায় নিয়ে যাবেন ?
-আরে চলুন না ! বৃষ্টিতে ভেজার জন্য অতি উত্তম জায়গা ! আসুন আসুন !

বৃষ্টির দিকে ট্যাক্সিটা পাওয়া অনেক ঝামেলার একটা ব্যাপার । সুমন নিজে খানিক্ষন চেষ্টা করে দেখলো কিন্তু কোন কাজই হল না । কোন ট্যাক্সি বা সিএনজি থামতে চাইছে না !
যখন হাল ছেড়ে দিলো তখনই একটা সিএনজি এসে হাজির !


অফিসের দুইতালা থেকে সুমন আর অহীনের পুরো দৃশ্যটা মুনিয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল ! হঠাৎ করেই মুনিয়ার মনে হল ওর রাগ উঠছে । ঠিক কারনটা ও ঠিক মত ববুঝতে পারছে না !
রাগ ওঠা রকোন কারন তো নাই !
কিন্তু তবুও রাগ উঠছে কেন ?
অহীনকে সুমনের পাশে দেখে সহ্য হচ্ছে না ?
কিন্তু তা তো হওয়ার কথা না ! কোন কারনই নাই ! তাহলে কেন রাগ হচ্ছে ? মনে হচ্ছে ঐ অহীনের নামনের মেয়েটাকে একটা জোরে চড় লাগাতে ।
ছেলে মানুষের সাথে তো মাখা মাখি কেন ?
আর সুমন টাও হয়েছে এমন ?
আসলেই ছেলে মানুষ এমনই হয়ে থাকে । একটা মেয়েকে ছেড়ে যেতে অন্য মেয়ের কাছে যেতে ওদের বিন্দু মাত্র সময় লাগে না !

এই তো কদিন আগেই সুমন মুনিয়াকে প্রোপোজ করেছিল ! এমন একটা ভাব যেন মুনিয়াকে ছাড়া ও বাঁচবেই না ! আর এখন দিব্যি অন্য মেয়ের সাথে ঘুর বেড়াচ্ছে ।
আশ্চর্য !
মুনিয়া যদিও সুমনের প্রোপোজ এক্সসেপ্ট করে নি তবুও কি এক মাসের ভিতরে অন্য মেয়ের দিকে ঝুকে পরতে হবে ?
এমন কেন হবে ?
মাঝখানে মুনিয়ার একবার মনে হয়েছিল যে সুমন প্রোপোজাল ফিরিয়ে দিয়ে ও মনে হয় ভুলই করলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঠিক ই করেছে । এই রকম ছেলের সাথে বিয়ে করার কোন মানে নাই ।

মুনিয়া নিজের মন থেকে সুমন আর অহীনের চিন্তা দুর করার চেষ্টা করলো ! কন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে কিছু ঝেড়ে ফেলতে পারছে না । ঘুরে ফিয়ে ঐ দৃশ্যটাই চোখের সামনে আসছে ।
সুমন দাড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে আর অহীন দৌড়ে এসে ছাতার ভিতর ঢুকে পড়লো !
একেবারে সিনেমার নায়িকা দের মত । জীবন টা সিনেমা পেয়েছে ।
ফাজিল মেয়ে !!
থাপড়িয়ে দাত খুলে ফেলা দরকার !
মুনিয়ার রাগ বাড়তেই থাকে !


-ঐটা কি ছিল ?
অহীন সিএনজির গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল ! সুমনের কথায় ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল
-কোনটা কি চিল ?
-আরে ঐ ভাবে কেউ লাফ দিয়ে আসে । তাও অফিসের সামনে কলিগরা কি মনে করবে ?
-করুক না ? সমস্যা কি ?
-অহীন ! আপনার কাজ কারবার আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
অহীন কিছুক্ষন সুমনের তাকিয়ে বলল
-আপনি এতো টেনশন নিয়েন না তো ! দেখবেন কাজ হবে । অপেক্ষা করেন !



দুই

সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছিল ! বৃষ্টি হলেই আমার মন বিষন্ন হয়ে ! আর ইদানিং কেন জানি আরো বেশি মন খারাপ হয় ! মুনিয়া আসে পাশে থাকলেই এমন টা হয় ! আচ্ছা মেয়েটার মনে আমার জন্য কি কোন ফিলিংস ই নাই ?
কি রকম কঠিন মুখে আমার সামনে দিয়ে চলাচল করে !
আশ্চর্য হয়ে যাই !
এখন মনে হচ্ছে মেয়েটাকে পছন্দ করে ভুলই করেছিলাম ! যে মেয়েটা আমার জন্য বিন্দু মাত্র কিছু অনুভুব করে না তার জন্য মন খারাপ করে কি লাভ ?
তবে আজকে সময় আসলেই অনেক ভাল কেটেছে । অহীন আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যাবে ভাবতেই পারি নি । আফতাব নগরে এমন একটা বাড়ি আছে আমি তো জনতামই না !

বৃষ্টির ভিতরে সিএনজি থামলো একদম বাড়িটা গেটের সামনে । একেবারে শেষ বাড়িটা ! আমি যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম তখন মনে হল যেন আমি অন্য কোন জগতে চলে এসেছি !
পুরো বাড়িটা গাছগাছালীতে ভরা ! তার উপর আবার আকাশে মেঘ ! কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে ।
অহীন আমাকে টেনে নিয়ে গেল বাড়ির ভিতরে !
-এটা কার বাড়ি ?
অহীন আমার কথার ঠিক মত জবাব না দিয়ে বলল
-কেন ? এ বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করবেন ?
-আরে আশ্চর্য ! এভাবে যে কারো বাড়ির ভিতর ঢুকা ঠিক নাকি ?
-সুমন সাহেব, আপনি মনে হয় দেখেন নাই যে আমি চাবি দিয়ে গেট খুলেছি ! তারমানে কি দাড়ায় ?
আমি সত্যিই অবাক হয়েছি ! বললাম
-এটা তোমার বাসা ?
-হুম !
-সরি এটা আপনার বাসা ? এটা আসলে অবাক হয়েছিলাম এতো যে হঠাৎ করেই তুমি বের হয়ে গেল !
অহীন হেসে বলল
-তুমিই ঠিক আছে ! আর আমরা যে প্রযেক্ট হাতে নিয়েছি তাতে মনে হয় আমাদের তুমিতেই আসা ভাল ! তাই না ?

আমি কিছুক্ষন চুপ করে অহীনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটাকে আমি ঠিক মত বুঝতে পারছি না ! মেয়েটা আসলে কি করতে চাইছে !
আর কেনই বা করতে চাইছে !

মুনিয়া যেদিন আমার প্রোপোজ ফিরিয়ে দিল সেদিন মনটা অনেক খারাপ ছিল ! অহীন পুরো ব্যাপারটা কোথা থেকে যেন জানতে পারে ! হয়তো মুনিয়া নিজেই বলেছে ।
অহীন একেবারে সরাসরি আমার কাছে এসে বলল
-আপনি কি হার মেনে নিবেন ?
আমি অহীনের কথা ঠিক মত বুঝতে পারলাম না ! । বললাম
-মানে কি ? আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা !
তারপর অহীন আমাকে যা বলল তাতে আমি সত্যিই অবাক হলাম । কেবল বললাম
-কাজ হবে ?
-অবশ্যই হবে ! কেবল আমি যা করতে বলবো তাই করতে হেব ! পারবেন তো !



তিন

-আসবো ?
সুমন একটু চমকালো ! দরজায় মুনিয়া দাড়িয়ে ! হাসি মুখে !
সুমন অনুভব করলো ওর বুকের ভিতর হার্টবিট বেড়ে গেছে ! এই মেয়েটা এখানে কি করে ! এতো দিন ধরে এখানে কাজ করে খুব কমই ওর সাথে কথা হয়েছে । মুনিয়া আর সুমনের ডিপার্টমেন্ট আলাদা তাই খুব একটা দরকার হয় না দেখা করার । তাহলে আজকে কি দরকার পড়লো ?
-আসুন !
সুমন অনুভব করলো কথাটা বলার সময় ওর গলাটা কেমন যেন একটু কেঁপে উঠল !
মুনিয়া ওর সামনে বসতে বসতে বলল
-একটা দরকারে আসলাম !
-বলুন !
-তার আগে বলুন আপনি আমার উপর এখনও রাগ করে নেই তো !
-কোন ব্যাপারে ?
-দেখুন আপনি ভাল করেই জানেন কোন ব্যাপারে ! আসলে জীবনে সব কিছুই মন মত হয় না ! তার পরেও তো সবার সাথেই মানিয়ে চলতে হয় !
-হুম ! তা তো অবশ্য ! বলুন !
-আপনি নাকি গ্রাফিক্স জিজাইন জানেন ?
-এই একটু জানি আর কি ?
-আমার একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করে দিতে হবে !
-কখন ?
-আজকেই ! লাঞ্চ আওয়ারের আগেই লাগবে । দেখুন কালকে হলে আমি কিছু একটা করে ফেলতাম কিন্তু হঠাৎ করেই ঝামেলা টা বেঁধে গেছে । কিছু উপায় খুজে পাচ্ছি না !
-আচ্ছা ঠিক আছে ! আমার কিছু থিম করা আছে ! দেখা আপনার কাজে লাগে নাকি !
মুনিয়া খুশি হয়ে উঠল ।
-আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো !
-না না ! ঠিক আছে । আগে আপনার উপরকারে আসি তারপর !

মুনিয়া চলে যাওয়ার পরেও সুমন কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো ! মনে মনে একটা অনন্দ অনুভব করছে ।
কাজ কি তাহলে সত্যি হচ্ছে ?



চার

সুমন ছেলেটা প্রথম থেকেই কেন যেন লাগতো ! দেখতে শুনতে খারাপ তা কিন্তু না ! কিন্তু তবু কেন জানি ভাল লাগতো না ! তাই ছেলেটা যখন প্রপোজ করে বসলো একটু বিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম ! কিন্তু ছেলেটাকে যখন অহীনের সাথে আবার দেখলাম কেন জানি ভাল লাগলো না ! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এমন একটা কেন হচ্ছে ! এমন তো হবার কথা না ।
সুমনের কোন কিছুই ঠিক অপছন্দ করার মত না । অফিসের সবাই তাকে পছন্দ করে । সেই হিসাব মত আমারও তাকে পছন্দ করার কথা ।
সারাক্ষন কথা বলছে নিজে হাসছে আবার অন্যকে হাসাচ্ছে ! এমন ছেলে সবাই পছন্দ করে ! আমিও করি ! কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয়েছিল সুমন আমাকে একটু আগে ভাগেই প্রোপোজ করে ফেলে । এমনটা কেন হবে ?
আমাকে পছন্দ কর । ভাল কথা ! কিন্তু আগে তো আমার মন জোগাবে !
তা না আমি সামনে আসলেই কেমন চুপ করে যায় । আমি নিজেওওর সাথে কয়েকদিন কথা বলেছি কিন্তু আমাকে আকারে ইঙ্গিতে তেমন কিছুই সে বোঝাই নি ! বা বোঝাতে পারি নি !

আমি ওর মনভাব প্রথম টের পপাই সাবরিনার কাছ থেকে । শুনে খানিকটা অবাক হয়ে গেছিলাম । পরে আস্তে আস্তে টের পেতে শুরু করি আসলেই সুমন আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে !
সুমনের মত ছেলেকে সবাই পছন্দ করে কিন্তু তাই বলে এমন হুট করে কিছু বলে উঠবে ?
আগে কি ওর উচিৎ ছিল না আমি দিকটা দেখা ! আমার মনটা কি ওর আগে জয় করার দরকার ছিল না ?
তা না !
তাই প্রথমে খানিকটা বিরক্তই হয়েছিলাম ওর আচরন দেখে কিন্তু সব চেয়ে বেশি বিরক্ত হলাম অহীনের সাথে ইতিস পিটিস করতে !
আমি ওকে রিফিউজ করেছি দুইদিনও হয় এরই ভিতরে নতুন একজন ?
কি রে ভাই ?
কটাদিন অপেক্ষা করলে হত না ?

প্রথমে ভেবেছিলাম সম্পুর্ন ভাবে সুমনকে ওভোয়েড করবো । কিন্তু সেদিন যখন ওদের দুজন কে একসাথে বৃষ্টির ভিতর বের হতে দেখলাম কেন জানি ভাল লাগলো না !
ওরা যখন হাসছিল বুকের ভিতর একটা কাটা বিঁধছিল ! মনে হচ্ছিল ঐ জায়গাতে আমি থাকতে পারতাম !
আমি ঐ মেয়েটার জায়গায় হাসতে পারতাম !



পাঁচ

সুমনের মুখ দেখে মনে হচ্ছ যেন ওর মনের আর আনন্দ আর ধরছে না । অহীন এক মনে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে । কি বলছে সেটা কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না । কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছে যে ছেলেটার সাথে মনে হয় আর এভাবে বসে আড্ডা দেওয়া হবে না । হবে না । এমন করে অন বাহনা নিয়ে আর কথা বলা হবে না । একসাথে রিক্সা করে আর ঘোরাঘুড়ি হবে না !

সুমন বলল
-তুমি কি শুনছো ?
-হুম ! শুনছি তো !
-তাহলে মুখ শুকনা কেন ? শরীর খারাপ নাকি ?

এই কথা বলেই সুমন খুব স্বভাবিক ভাবেই ওর কপালে হাত দিল জ্বর দেখার জন্য !
-কই ? শরীর তো ঠান্ডা !
অহীন কেবল মনে মনে বলল

ছেলে কেবল কপালে ছুয়েই সব কিছু বোঝা যায় ! তুমি যদি সব কিছু বুঝতে পারতে তাহলে আজকে আমার মন এমন হত না ! আসলে সত্যি কথা বলতে কি অহীন কিছুতেই সুমন কে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে নি । এগিয়ে এসেছিল যাতে করে কয়েকটা দিনের জন্য হলেও সুমনের কাছাকাছি থাকার কথা চিন্তা করে ।

অফিসে সুমন মুনিয়া টপিক টা যখন চুঙ্গে অহীন বেশ মন খারাপ করেই এই সব আলোচনা শুনতো চুপচাপ । কেন জানি ওর খুব কান্না পেত । সবার পছন্দের সুমন কে অন্য সবার মত সেও পছন্দ করতো । একটু যেন বেশিই পছন্দ করতো ! কিন্তু চুপচাপ স্বভাবের জন্য সেটা আর বলা হয়ে ওঠে নি । কিন্তু যখন জানতে পারলো যে মুনিয়া সুমনের প্রপোজাল টা মানা করে দিয়েছে তখন নিজের ভেতরে আর চুপ করে থাকতে পারে নি ।
মনে হয়েছে ভাগ্য হয়তো তাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে । তাই সাহায্য করার নামে এগিয়ে গেছে সুমনের কাছে । নিজের মুখ বুঝে থাকা স্বভাব টা বিষর্যন দিয়ে কথা বলা শুরু করেছে ।

তারপর থেকে ওদের কথা হতে থাকে নিয়মিত । দেখা সাক্ষাত এমন ভাবে হতে থাকে যেন সেটা মুনিয়ার চোখে পড়ে । কিন্তু এদিকে অহীন আকারে ইঙ্গিতে নানা ভাবে বোঝাতে থাকে যে দেখো তোমাকে অন্য কেউ ও পছন্দ করে ! কিন্তু সুমন সেটা বুঝতে পারে নি । এদিকে প্রতিদিন মুনিয়ার সাথে কি হল না সেটা বলতে থাকে ! অহীন সেটা মুখ বুঝে সহ্য করে ! তবে সেটা কিছুতেই সহ্য হত না ! মুনিয়া অসম্ভব হিংসা হত ওর । বারবার মনে হত মেয়েটা কি ভাগ্য নিয়েই না জন্মেছে !

সুমনের কথা বলা শেষ হলেও অহীন চুল করে থাকে । বাইরে তাকিয়ে থাকে ! সুমন বলল
-কি হল আজকে তোমার ?
-কিছু না !
-আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ । চল আজকে বৃষ্টিতে ভিজি !
-আজকেও !
-আহা ! চল না ! আজকের পর হয়তো আর সুযোগ হবে না !

অহীনের মন টা আরও একটু খারাপ হয়ে গেল । সুমনের এই কথাটার মানে ও খুব ভাল করেই জানে । মুনিয়া সম্ভবত রাজি হতে যাচ্ছে । আর রাজি হওয়া মানে ওর সাথে মেলা মেশা বন্ধ ! প্রজেক্ট শেষ !



ছয়

ঝুম বৃষ্টির ভেতরে কান্নার একটা সুবিধা হচ্ছে সেটা বাইরে দেখে খুব ভাল করে বোঝা যায় না ! আমি যে কাঁদছি সুমনের দিকে কোন লক্ষ্য নেই । ছেলেটা এমন কেন ? একটুও কি বুঝতে পারে না আমাকে !
সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি আমার সাথে কেবল এমনই হয়েছে । সব থেকে পছন্দের মানুষ গুলো কেন জানি আমার কাছ থেকে সব সময় হারিয়ে যায় ! আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি তাদের চলে যাওয়াটা !

বাবা মায়ের চলে যাওয়ার দিন কেবল আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম । কিছু বলতে পারি নি । কিছু বলার মত তখন আমার বয়সই ছিল না ! তারপর থেকে সারাটা জীবন টা একা একাই কেটেছে কেবল !

সুমনের সাথে কাটানো এই কটা দিন আসলে আমার কাছে অন্য রকম ছিল ! অফিস শেষে ওর সাথে ফুসকা খাওয়া । বাসা পর্যন্ত আমাকে এগিয়ে দিতে আসতো । কোন কোন দিন বাসায় এসেও চা খেয়ে যেন । আর রাতে ফোনে কথা তো ছিল । কেমন স্বপ্নের মত দিন কেটে যাচ্ছি । কিন্তু সব স্বপ্নের যেমন শেষ আছে তেমনি ভাবেই এটারও শেষ হয়ে যাচ্ছে ।

মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে ওকে জোর করে জড়িয়ে ধরে বলি তুমি কি কিচ্ছু বুঝো না ! কিন্তু পারি না ! পারলে ভাল হত ! এখন আমাকে কাঁদতে হত না লুকিয়ে !
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি থেমে যাচ্ছে । সেই সাথে ওর সাথে শেষ ভেজা টাও মনে হয় !


-এই কি কর ?
আমি ফিরে চাইলাম !
-কিছু না !
আমার দিকে এগিয়ে এসে ও খুব সহজে আমার হাত ধরলো ! আমার চোখে চোখ রেখে বলল
-আমি বুঝতে পারছি তোমার কিছু একটা হয়েছে । কি হয়েছে বল আমাকে ?
আমার কেন জানি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হল তোমাকে ভালবাসি তুমি বুঝতে পারছো না ! তুমি কেন আমাকে ছেড়ে যাবে ? কেন ? আমি কি দেখতে সুন্দর না !

কিন্তু বলতে পারলাম না !

সুমন আমার হাত ছেড়ে না দিয়েই বলল
-আচ্ছা তোমার নামে এই বাড়িটা ছাড়া আর কি কি আছে বল তো ?
আমি কিছু না বুঝতে পেরে বললাম
-কি ? কি বলছো ?
-নামে মানে তুমি আর কোন কোন জিনিসের মালিক ?
-সুমন তুমি কি বলছো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না !
-না মানে আমি যদি মুনিয়াকে প্রপোজ না করে তোমাকে প্রপোজ করি তাহলে আমার কপালে আর কি কি আসবে সেটার একটা ক্যালকুলেশন করতে চাচ্ছি আর কি !

আমার পুরো শরীর টা যেন কেঁপে উঠলো ! সুমন কি বলল ? কেন বলল ?
ও কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছে ?

আমি কেবল অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম । বুঝের ভেতরে কেমন একটা ধড়ফড়ানী শুরু হল । ব্যাখ্যাতীত একটা উত্তেজনা !




পরিশিষ্টঃ

অহীন কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে আছে সামনে দাড়ানো ছেলেটার দিকে । কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর সাথে যা হচ্ছে । নাকি ও স্বপ্ন দেখছে এখনও !
সুমন বলল
-তুমি আমাকে কি মনে কর বল তো ?
-কেন ?
-না মানে আমি কি কিচ্ছু বুঝি না নাকি ?
অহীন কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো ! সুমন বলল
-মানুষের অনুভুতি বুঝতে পারবো না এতো বড় গাধা আমি নই । হ্যা আমার প্রথম নির্বাচন টা হয়তো ভুল ছিল কিন্তু দিনের পর দিন যার সাথে আমি মিশেছি তাকে তো চিনতে ভুল হওয়ার কথা না !
-কিন্তু তুমি মানে মুনিয়াকে....।
-আরে বোকা মেয়ে ওগুলো কেবল আমি বানিয়ে বলেছি ! মুনিয়ার সাথে আমার কোন যোগাযোগ হয়নি কেবল একদিন ছাড়া । আমি ওর কথা আর চিন্তাও করি নি । তোমার সাথে মিশার পর আমার অন্য কারো কথা মনেও পড়ে নি !

অহীন কেবল সুমনের দিকে তাকিয়েই রইলো ! বৃষ্টি মাঝে একটু থামার মত হয়েছিল এখন আবারও জোরে পড়তে শুরু করেছে । সুমন বললল
-আমি কেবল তোমার মুখের ভাব টা দেখতা যখন মুনিয়ার কথা বলতাম ! আমার খুব মজা লাগতো !
-তাই ! আমাকে কষ্ট দিয়ে মজা নিতে ! ছাড়ো আমাকে! ছাড়ো !!

নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অহীন বাড়ির দিকে রওনা দিল । মুখ ফিরিয়ে নিলেও ওর এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ! মনের ভেতরে একটা চাপা আনন্দ কাজ করছে যেটা ও কিছুতেই চেপে রাখতে পারছে না !

-আরে কই যাও ?

বলতে বলতে সুমন ছুটে এল ! ঠিক পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ওকে । তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
-শুনো মেয়ে তোমাকে এই ভাবে চলে যেতে দিবো ভাবলে কিভাবে শুনি !! হুম !!

অহীন কেবল চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো ! ওর এখনও বিশ্বাস হতে চাইছে না । কেবলই মনে হচ্ছে চোখ খুললেই মনে হয় এই সব গায়েব হয়ে যাবে ! এই অনুভুতি টুকু হারিয়ে যাবে নিমিষহিতেই ! তাই চোখ বন্ধ করেই এই অনুভুতি টুকু সম্পুর্ন ভাবে নিজের করে অনুভব করে নিতে চাইছে ।


(গল্পটা অন্যভাবে শেষ করবো ভেবেছিলাম কিন্তু শেষ করলাম সম্পূর্ন আরেক ভাবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×