মেলবর্নের বিলাশবহুল ৫ তারকা হোটেল রূম । নিজের রুমের ব্যালকুনি ধরে দুরে তাকিয়ে আছে ইয়েন গৌল্ড ! আজকে অনেক দিন পর তার মুখ একটু চিন্তার ছাপ !
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় রাত তিনটা বেজে গেছে । যদিও বাইরে মেলবর্ন শহর যেন এখনও সজাগ । চারিদিকে গাড়ির সারির কোন অভাব নেই ।
তিনি আরেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন । আর কদিন তারপরেই এই বিলাশবহুল থাকা খাওয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে নিজের দেশে । তবে চিনি চিন্তিত আজকে অন্য কারনে । একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তাকে একটু চিন্তিত হতে হচ্ছে । অথচ আগামী কাল তার গুরুত্বপূর্ন ম্যাচ পরিচালনা করার কথা আছে । এখন তার ভাল ঘুম দরকার । কিন্তু তিনি ঘুমাতে পারছেন না । তিনি একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত !
প্রায় রাত দুইটার দিকের ঘটনা । তিনি কেবল শাওয়ার সেরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক তখনই তার হোটেল রুমের ফোনে বেল বেজে উঠলো । এতো রাতে কারো ফোন করার কথা না । তিনি একটু অবাক হয়েই ফোন রিসিভ করলেন !
-মিস্টার গৌল্ড ?
-জি বলছি !
-আপনার সাথে কয়েকটা কথা আছে । জরুরী !
ওপাশে লোকটা জরুরী শব্দ টাতে যেন একটু বেশি জোর দিলেন ।
গৌল্ড বললেন
-এখনই ?
-হ্যা !
তিনি কি বলবেন ঠিক ভেবে পেলেন না ! ওপাশ থেকে কল দাতা বলল
-আপনি ইলেভেন বি তে চলে আসুন প্লিজ !
-কিন্তু !
-কোন সসম্যা নেই । কেউ দেখবে না ! বাইরের কেউ এই খবর জানবে না ! আর আমাদের এই মিটিংটা আপনার জন্য লাভজনক হবে এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি !
ফোন দাতার কন্ঠে আত্মনিশ্বাস দেখে ইয়েন গৌল্ড বেশ দ্বিধায় পরে গেল । যাবে কি যাবে না এমন দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত জয়ী হল । তিনি সাদা রংয়ের একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে ইলেভেন বির দিকে রওনা দিলেন !
ইলেভেন বির সামনে গিয়ে আবারও একটু চিন্তা করলেন । যতই লাভজনক হোউক না কেন জানি তার মনে হচ্ছে ভেতরে অন্য কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে । একবার ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করেও আবার নিজের মনকে শান্ত করলেন ! দেখা যাক কি হয় !
তিনি কলিংবেল চাপ দিলেন ! প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে গেল । যেন কেউ দরজার পাশেই অপেক্ষা করছিল !
ভেতর উজ্জল আলো তিনি বেশ অবাক হয়েই লক্ষ্য করলেন সেখানে আগে থেকেই বেশ কয়েকজন মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করছে ।
আলিম দার !!
তার সহ কর্মী ! আগামী কালকের গুরুত্বপূর্ন ম্যাচ টা পরিচালনা করার জন্য তার সঙ্গী হবেন তিনি ! ভেডিসও আছে দেখছি !
কিন্তু আরও তিন জনের উপস্থিতিতে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েলন ! এম এস ধোনি আর বিরাট কোলি !
এরা এখানে কি করছে ?
এদের তো এখানে থাকার কোন কথা না !
মুহুর্তেই কি হচ্ছে তিনি বুঝে গেলেন । মুখটা শক্ত হয়ে উঠলো তার !
-কি হচ্ছে এখানে ?
-আসুন মাথা ঠান্ডা করুন আগে !
তৃতীয় ব্যক্তিটি বলল ইংরেজিতে ! গলায় স্পষ্ট ভারতীয় টান !
-মানে কি ?
-দয়া করে আগে আমাদের কথা টা শুনুন !
এই কথাটা বলল এম এস ধোনি ।
-আগামী কালকের খেলাটা আমাদের জন্য কতটা জরুরী আপনারা জানেন !
ধোনী তিন জনের উদ্দেশ্যেই বলল !
-দেখুন আমরা যদিও ভাল খেলি কিন্তু বাংলাদেশের কোন ভরশা নেই । বিশেষ করে ওদের কজন এই বিশ্বকাপে বেশ ভাল করছে । আমরা যতও রান করি না কেন ওদের একটা সম্ভাবনা রয়েছেই সেটা টপকে যাওয়ার !
-তো ?
ধোনী একটু চুপছে গেল ! কিছুক্ষন কোন কথা বলল না ! গৌল্ড দেখলো ধোনীর চোখ যেন একটু সিক্ত হয়েছে ।
-একটু বোঝার চেষ্টা করুন !
-কোন বোঝার তো দরকার নেই ! আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন !
ধোনী এবার অন্য পথ ধরলো !
-আপনারা জানেনই তো আমাদের দেশের মানুষ গুলো কি প্রকার হিংস্র ! আমরা যতক্ষন ভাল খেলি কিংবা জিতি আমাদের সাথে আছে কিন্তু যখন হারি তখন আমাদের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে দেয় ! স্যার আমাদের বাঁচান ! বাংলাদেশের সাথে হারলে আমাদেরকে রাস্তায় আর আস্ত রাখবে না আমাদের দেশের মানুষ !
যেন এই টুকুই বলার ছিল ! পাশে দাড়ানো বিরাট কোলির শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল ! সে সরাসরি আলিম দারের পা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো ! তারপর বলল
-স্যার ! স্যার গো, আকুশকা বলেছে আগামীদিন হারলে নাকি সে আমাকে রেখে চলে যাবে ! বাসা থেকে ফোন এসেছে । তারা চিন্তায় অস্থির । ঘরের দরজা জালনা বন্ধ করে বসে আছে । পাশের বাসার অনেকেই নাকি উঠানে বেশ কিছু ইট জড় করে রেখেছে !
ইয়েন গোল্ড সাথে আমিল দার একে অপরের দিকে চোখাচোখি করলেন ! কি বলবেন ভেবে পেলেন না । ইন্ডিয়া ভাল খেলে কিন্তু বাংলাদেশ এখন শক্ত প্রতিপক্ষ ! কালকে কি হবে কিছু বলা যাচ্ছে না !
ইয়েন গৌল্ড বলল
-কিন্তু এটা তো হয় না !
এবার ধোনি গিয়ে গৌল্ডের পা জড়িয়ে ধরলেো !
-স্যার ! আমাদের জীবন মরন আপনাদের হাতে ! আমাদের বউ বাচ্চার জীবনও আপনাদের হাতে !
ঘরের ভেতর কেউ কোন কথা বলল না ! কিছু কেটে গেল এমন ভাবেই । একটু পরে আলিম দার বলল
-তা না হয় বুঝলাম ! কিন্তু আমাদের লাভ কি এতে ?
আবারও যেন তিন আম্পায়ার চোখাচোখি হল ! গৌল্ডও এই কথাই ভাবছিল । আগামিকালকের খেলা কে ঘিরে অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে । আর আসলেই ইন্ডিয়ার মানুষ গুলো একটু জংলী টাইপেরই । খেলায় হারলে ওরা খেলোয়াদের কে ছাড়ে না ! সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ গুলো ভাল । যাই হোক তারা নিজেদের টিম কে দেবতা তুল্য করে মাথায় করে রাখে ! ওরা বুঝবে নিশ্চই ! কিন্তু ইন্ডিয়ার জংলী মাথায় এটা ঢুকবে না ! সবার শেষে তাদের লাভ টা কি !
তৃতীয় ব্যক্তির মুখে এবার হাসি ফুটলো ! তিনি বলল
-বয়েজ উঠে এসো ! আমরা একটা আলোচনা করতে পারি !
ধোনী আর বিরাট পা ছেড়ে দিয়ে উঠে এল ! এখনও তাদের চোখ পানি ! তবে মুখে একটা শান্তির হাসি । সেখানে নিশ্চিত বড় কোন বিপদের হাত থেকে বেচে যাওয়ার আনন্দ !
যখন তারা সবাই ইলেভেন বি থেকে বের হল তখন সবার হাতেই একটা করে সাদা খাম শোভা পাচ্ছে । বলা হয়েছে বাকিটা খেলা শেষে পাওয়া যাবে ! বিনিময়ে মাঠটা যেন ওদের ফেভারে হয় সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে ।
এসব কথা মনে করতে করতে ইয়েন গৌল্ডের চিন্তাটা আরও একটু বেড়ে উঠলো । আগামী কাল সব কিছু সামাল দিতে পারবেন তো ?
পারবেন আশা করে ! নিজের উপর আস্তা আছে ।
আর তা ছাড়া বহুদিনের শখ একটা বাগান বাড়ি বানাবেন ! এবার সেই শখ টা পূরন হতে চলেছে ।
তিনি শোয়ার প্রস্তুতি নিলেন ঠিক তখনই আবারও তার ফোন বেজে উঠলো ! এবার হোটেলের নয় নিজের সেলফোন টা ! সেখানে নাম টা দেখে তার ভুরু কুচকে উঠলো !
এই ব্যক্তির এখন তো ফোন করার কথা না ! সাথে সাথে একটু ভয়ও পেয়ে গেলেন ! সব কিছু ফাঁস হয়ে গেল !
ভয়ে ভয়ে বললেন
-হ্যালো !
ওপাশ থেকে ভারী গলায় আওয়াজ এল
-সব কিছু মেনে নিয়েছেন জেনে ভাল লাগলো ! আশা করি সামনেও আপনাকে পাবো ?
অবাক বিশ্ময়ে ইয়েন গৌল্ড বলল
-আপনি জানেন ? আপনি ......।
তার কথাটা মুখ দিয়ে বের হল না !
ওপাশ থেকে উত্তর এল
-মিছেমিছি আবেগ থেকে টাকার দৌড় টা অনেক বড় ! আগামীকালকের ম্যাচ কে ঘিরে অনেক কিছু নির্ভর করছে ! আমরা চাইলেই তো আর কোন অঘটন ঘটতে দিতে পারি না !
-জি জি অবশ্যই !
-আচ্ছা ! এখন ঘুমিয়ে পড়ুন ! টুমারো ইজ এ বিগ ডে !