somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ একটি ক্রিকেট ম্যাচের পূর্ব প্রস্তুতি

২০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেলবর্নের বিলাশবহুল ৫ তারকা হোটেল রূম । নিজের রুমের ব্যালকুনি ধরে দুরে তাকিয়ে আছে ইয়েন গৌল্ড ! আজকে অনেক দিন পর তার মুখ একটু চিন্তার ছাপ !

হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় রাত তিনটা বেজে গেছে । যদিও বাইরে মেলবর্ন শহর যেন এখনও সজাগ । চারিদিকে গাড়ির সারির কোন অভাব নেই ।

তিনি আরেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন । আর কদিন তারপরেই এই বিলাশবহুল থাকা খাওয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে নিজের দেশে । তবে চিনি চিন্তিত আজকে অন্য কারনে । একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তাকে একটু চিন্তিত হতে হচ্ছে । অথচ আগামী কাল তার গুরুত্বপূর্ন ম্যাচ পরিচালনা করার কথা আছে । এখন তার ভাল ঘুম দরকার । কিন্তু তিনি ঘুমাতে পারছেন না । তিনি একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত !


প্রায় রাত দুইটার দিকের ঘটনা । তিনি কেবল শাওয়ার সেরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঠিক তখনই তার হোটেল রুমের ফোনে বেল বেজে উঠলো । এতো রাতে কারো ফোন করার কথা না । তিনি একটু অবাক হয়েই ফোন রিসিভ করলেন !

-মিস্টার গৌল্ড ?
-জি বলছি !
-আপনার সাথে কয়েকটা কথা আছে । জরুরী !

ওপাশে লোকটা জরুরী শব্দ টাতে যেন একটু বেশি জোর দিলেন ।
গৌল্ড বললেন
-এখনই ?
-হ্যা !
তিনি কি বলবেন ঠিক ভেবে পেলেন না ! ওপাশ থেকে কল দাতা বলল
-আপনি ইলেভেন বি তে চলে আসুন প্লিজ !
-কিন্তু !
-কোন সসম্যা নেই । কেউ দেখবে না ! বাইরের কেউ এই খবর জানবে না ! আর আমাদের এই মিটিংটা আপনার জন্য লাভজনক হবে এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি !

ফোন দাতার কন্ঠে আত্মনিশ্বাস দেখে ইয়েন গৌল্ড বেশ দ্বিধায় পরে গেল । যাবে কি যাবে না এমন দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত জয়ী হল । তিনি সাদা রংয়ের একটা টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে ইলেভেন বির দিকে রওনা দিলেন !


ইলেভেন বির সামনে গিয়ে আবারও একটু চিন্তা করলেন । যতই লাভজনক হোউক না কেন জানি তার মনে হচ্ছে ভেতরে অন্য কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে । একবার ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করেও আবার নিজের মনকে শান্ত করলেন ! দেখা যাক কি হয় !

তিনি কলিংবেল চাপ দিলেন ! প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে গেল । যেন কেউ দরজার পাশেই অপেক্ষা করছিল !

ভেতর উজ্জল আলো তিনি বেশ অবাক হয়েই লক্ষ্য করলেন সেখানে আগে থেকেই বেশ কয়েকজন মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করছে ।

আলিম দার !!
তার সহ কর্মী ! আগামী কালকের গুরুত্বপূর্ন ম্যাচ টা পরিচালনা করার জন্য তার সঙ্গী হবেন তিনি ! ভেডিসও আছে দেখছি !

কিন্তু আরও তিন জনের উপস্থিতিতে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েলন ! এম এস ধোনি আর বিরাট কোলি !
এরা এখানে কি করছে ?
এদের তো এখানে থাকার কোন কথা না !

মুহুর্তেই কি হচ্ছে তিনি বুঝে গেলেন । মুখটা শক্ত হয়ে উঠলো তার !

-কি হচ্ছে এখানে ?
-আসুন মাথা ঠান্ডা করুন আগে !
তৃতীয় ব্যক্তিটি বলল ইংরেজিতে ! গলায় স্পষ্ট ভারতীয় টান !
-মানে কি ?
-দয়া করে আগে আমাদের কথা টা শুনুন !
এই কথাটা বলল এম এস ধোনি ।

-আগামী কালকের খেলাটা আমাদের জন্য কতটা জরুরী আপনারা জানেন !
ধোনী তিন জনের উদ্দেশ্যেই বলল !
-দেখুন আমরা যদিও ভাল খেলি কিন্তু বাংলাদেশের কোন ভরশা নেই । বিশেষ করে ওদের কজন এই বিশ্বকাপে বেশ ভাল করছে । আমরা যতও রান করি না কেন ওদের একটা সম্ভাবনা রয়েছেই সেটা টপকে যাওয়ার !
-তো ?
ধোনী একটু চুপছে গেল ! কিছুক্ষন কোন কথা বলল না ! গৌল্ড দেখলো ধোনীর চোখ যেন একটু সিক্ত হয়েছে ।

-একটু বোঝার চেষ্টা করুন !
-কোন বোঝার তো দরকার নেই ! আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন !
ধোনী এবার অন্য পথ ধরলো !

-আপনারা জানেনই তো আমাদের দেশের মানুষ গুলো কি প্রকার হিংস্র ! আমরা যতক্ষন ভাল খেলি কিংবা জিতি আমাদের সাথে আছে কিন্তু যখন হারি তখন আমাদের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে দেয় ! স্যার আমাদের বাঁচান ! বাংলাদেশের সাথে হারলে আমাদেরকে রাস্তায় আর আস্ত রাখবে না আমাদের দেশের মানুষ !

যেন এই টুকুই বলার ছিল ! পাশে দাড়ানো বিরাট কোলির শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল ! সে সরাসরি আলিম দারের পা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো ! তারপর বলল
-স্যার ! স্যার গো, আকুশকা বলেছে আগামীদিন হারলে নাকি সে আমাকে রেখে চলে যাবে ! বাসা থেকে ফোন এসেছে । তারা চিন্তায় অস্থির । ঘরের দরজা জালনা বন্ধ করে বসে আছে । পাশের বাসার অনেকেই নাকি উঠানে বেশ কিছু ইট জড় করে রেখেছে !

ইয়েন গোল্ড সাথে আমিল দার একে অপরের দিকে চোখাচোখি করলেন ! কি বলবেন ভেবে পেলেন না । ইন্ডিয়া ভাল খেলে কিন্তু বাংলাদেশ এখন শক্ত প্রতিপক্ষ ! কালকে কি হবে কিছু বলা যাচ্ছে না !

ইয়েন গৌল্ড বলল
-কিন্তু এটা তো হয় না !
এবার ধোনি গিয়ে গৌল্ডের পা জড়িয়ে ধরলেো !
-স্যার ! আমাদের জীবন মরন আপনাদের হাতে ! আমাদের বউ বাচ্চার জীবনও আপনাদের হাতে !

ঘরের ভেতর কেউ কোন কথা বলল না ! কিছু কেটে গেল এমন ভাবেই । একটু পরে আলিম দার বলল
-তা না হয় বুঝলাম ! কিন্তু আমাদের লাভ কি এতে ?

আবারও যেন তিন আম্পায়ার চোখাচোখি হল ! গৌল্ডও এই কথাই ভাবছিল । আগামিকালকের খেলা কে ঘিরে অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে । আর আসলেই ইন্ডিয়ার মানুষ গুলো একটু জংলী টাইপেরই । খেলায় হারলে ওরা খেলোয়াদের কে ছাড়ে না ! সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ গুলো ভাল । যাই হোক তারা নিজেদের টিম কে দেবতা তুল্য করে মাথায় করে রাখে ! ওরা বুঝবে নিশ্চই ! কিন্তু ইন্ডিয়ার জংলী মাথায় এটা ঢুকবে না ! সবার শেষে তাদের লাভ টা কি !

তৃতীয় ব্যক্তির মুখে এবার হাসি ফুটলো ! তিনি বলল
-বয়েজ উঠে এসো ! আমরা একটা আলোচনা করতে পারি !

ধোনী আর বিরাট পা ছেড়ে দিয়ে উঠে এল ! এখনও তাদের চোখ পানি ! তবে মুখে একটা শান্তির হাসি । সেখানে নিশ্চিত বড় কোন বিপদের হাত থেকে বেচে যাওয়ার আনন্দ !


যখন তারা সবাই ইলেভেন বি থেকে বের হল তখন সবার হাতেই একটা করে সাদা খাম শোভা পাচ্ছে । বলা হয়েছে বাকিটা খেলা শেষে পাওয়া যাবে ! বিনিময়ে মাঠটা যেন ওদের ফেভারে হয় সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখতে হবে ।



এসব কথা মনে করতে করতে ইয়েন গৌল্ডের চিন্তাটা আরও একটু বেড়ে উঠলো । আগামী কাল সব কিছু সামাল দিতে পারবেন তো ?
পারবেন আশা করে ! নিজের উপর আস্তা আছে ।
আর তা ছাড়া বহুদিনের শখ একটা বাগান বাড়ি বানাবেন ! এবার সেই শখ টা পূরন হতে চলেছে ।

তিনি শোয়ার প্রস্তুতি নিলেন ঠিক তখনই আবারও তার ফোন বেজে উঠলো ! এবার হোটেলের নয় নিজের সেলফোন টা ! সেখানে নাম টা দেখে তার ভুরু কুচকে উঠলো !
এই ব্যক্তির এখন তো ফোন করার কথা না ! সাথে সাথে একটু ভয়ও পেয়ে গেলেন ! সব কিছু ফাঁস হয়ে গেল !

ভয়ে ভয়ে বললেন
-হ্যালো !
ওপাশ থেকে ভারী গলায় আওয়াজ এল
-সব কিছু মেনে নিয়েছেন জেনে ভাল লাগলো ! আশা করি সামনেও আপনাকে পাবো ?
অবাক বিশ্ময়ে ইয়েন গৌল্ড বলল
-আপনি জানেন ? আপনি ......।
তার কথাটা মুখ দিয়ে বের হল না !
ওপাশ থেকে উত্তর এল
-মিছেমিছি আবেগ থেকে টাকার দৌড় টা অনেক বড় ! আগামীকালকের ম্যাচ কে ঘিরে অনেক কিছু নির্ভর করছে ! আমরা চাইলেই তো আর কোন অঘটন ঘটতে দিতে পারি না !
-জি জি অবশ্যই !
-আচ্ছা ! এখন ঘুমিয়ে পড়ুন ! টুমারো ইজ এ বিগ ডে !
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×