আগের পর্ব
আট
মেজর হাবিব আজ বেশ কয়েক দিন পর নিজের বিছানা থেকে উঠে বাইরে বেরিয়েছে । এতো দিন শুয়ে থাকতে থাকতে গা যেন মরিচা পড়ে গেছে । যদিও ডাক্তার আরও কয়েকটা দিন সম্পূর্ন রেস্ট নিতে বলেছে তবুও হাবিব মনে করে যে যথেষ্ঠ হয়েছে । তা ছাড়া তার অসমাপ্ত কাজ টা করার জন্য যে মরিয়া হয়ে উঠেছে । আজ পর্যন্ত সে কোন কাজ অসম্পূর্ন রাখে নি সেখানে এই কাজ টা এখন পর্যন্ত জীবনের এক মাত্র ব্যর্থ মিশন । সেটা সম্পূর্ন না করা পর্যন্ত তার কোন শান্তি নেই ।
তাছাড়া আজকে সেই বিশেষ মানুষটার কাছ থেকেও ফোন এসেছে । ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই মেজর হাবিব যেন শরীরের অন্য রকম একটা উত্তেজনা অনুভব করছে । কাজটা শেষ করার তাগিত অনুভব করছে । এতো দিন বিছানায় শুয়ে শুয়েই সে সব কাজের আপডেট পেত ফারিয়ার কাছ থেকে । আজ থেকে নিজে নামতে হবে মাঠে । পরিস্থিতি এমন যে কোন শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে নামতে হবে যার কাছে এরই মধ্যে একবার পরাজিত হয়েছে ।
মেজর হাবিব নিজের বুকের ঠিক উপরে হাত বুলালেন । ঠিক এই স্থানেই আগন্তুকের গুলিটা লেগেছিল । আর ইঞ্চি খানেক নিচে লাগলে হয়তো তার আর বেঁচে থাকাই হত না । কপাল গুনে বেঁচে আছে । আর ভাগ্য যখন সাহায্য করেছে মেজর হাবিবের বিশ্বাস বাকিটাও সে ঠিকই পার করে ফেলবে ।
মেজর হাবিবের ফোনটা বেজে উঠলো । মোবাইল স্ক্রিনে ফারিয়ার নাম্বারটা দেখে একটা মুচকি হাসি দেখা গেল তার চেহারায় । মেয়েটা অনেক দিন বাঁচবে মনে হচ্ছে । একটু আগেই ওর কথা ভাবছিলো !
-হ্যালো মাই ডিয়ার !
-জাফর আঙ্কেল আপনাকে ফোন করেছিল । কথা হয়েছে
-হ্যা ।
-তবে । সব কথা মুখে বলা সম্ভব না । আমাদের দেখা হওয়া দরকার । আপনি কি প্রস্তুত মানে সুস্থ ?
-সুস্থ তো হতেই হবে । তোমাদের হাতে কাজ দিয়ে তো আর ভরশা করা যায় না ।
-আপনার কাছ থেকেও খুব যে আশাবাদী তাও কিন্তু না । ফলাফল আমরা দেখতেই পাচ্ছি । আমাদের হয়তো এতো ঝামেলার দরকারই হত না যদি.....
খোঁচাটা একটু হজম করতেই হল মেজর হাবিবকে, কিছু করার নেই । মুখের ভাবটা বিকৃত করে এক দলা থুথু ফেলল বাইরে । মনে মনে বলল শালী তো কেবল একটাবার বাগে পেয়ে নেই । এতো তেজ কোথা থেকে আসে বের করবো ।
ফারিয়া বলল
-যে আলোচনা টা আপনার আঙ্কেলের সাথে হওয়ার কথা ছিল সেটা আমার সাথে হবে । চাচার উপর পুলিশ নজর রাখছে ।
-তার কাছে পুলিশ পৌছালো কিভাবে ?
-আমাদের একজন মুখ খুলেছে । চাচার কোম্পানীর নাম বলেছে ।
-তাই নাকি ? সো স্যাড । এমপ্লোয়ী নির্বাচনে তোমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ।
-ঠিক আছে সেইটা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না । আমাদের দেখা কোথায় এবং কখন হবে ?
-দাড়াও জানাচ্ছি ।
মেজর হাবিব আর শামিম জাফর ঠিক এক লাইনের লোক না । বলতে গেলে মেজর হাবিব যেখানে অস্ত্র ছাড়া কথা বলে না সেখানে শামীম জাফর কাজ করে পরিকল্পনা মাফিক । মেজর হাবিবের নিজস্ব বাহিনী আছে অন্য দিকে শামিম জাফর কাজ করে ভাড়াটে লোক দিয়ে । বলা চলে কাজ শেষ তার দরকারও শেষ সেই লোক গুলোর কাছ থেকে । ঠিক যেখানে যেমন লোক দরকার জায়গামত টাকা ঢেলে কাজ হাসিল করে ।
ঠিক তিন মাস আগে শামীম জাফরের কাছে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে । একজন অপরিচিত মানুষ তার সাথে দেখা করে কিছু কাগজ পত্র ভর্তি খাম দিয়ে যায় । সেখানেই বলা হয় তাদের কি করতে হবে । কি প্রকারে প্লানিং পরিকল্পনা করতে হবে । এবং যেহেতু কাজটা খুব বেশি গোপনীয় তাই লোকবলের জন্য মেজর হাবিবকে মেনশন করা হয় । তারপর থেকেই দুজন একসাথে কাজ করছে । যদিও শামীম জাফরের এই কাজটা ঠিক পছন্দ না । সে নিজের মত কাজ করতে পছন্দ করে । অন্য কারো খবরদারী তার পছন্দ না । কিন্তু যার কাছ থেকে তার আদেশ অমান্য করার কোন উপায় নেই ।
###
নিকিতা তখনও ভেবে যাচ্ছে রাফায়েলের কথা । ওর মনটা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে । এক ভাগ বলছে আসলে রাফায়েলই হচ্ছে আগন্তুক আর অন্য ভাগ বলছে রাফায়েল নয় অন্য কেউ । যদি রাফায়েলই হবে তাহলে কেন ও এলো না গতদিন । ওকে এভাবে বিপদের ভেতরে ফেলে রেখে দিল । তখন যদি ঐ পুলিশ অফিসার না থাকতো তাহলে কি হত ভাবতেই নিকিতার গা শিউরে যাচ্ছে । এবার আসুক ফোন । আর কথাই বলবে না ।
এর আগে ঐ পুলিশ অফিসার কে যতটা বিরক্তিকর ভেবেছিল আসলে ততখানি বিরক্ত লাগছে না । কদিন থেকে ওদের বাসার আসে পাশেই দেখছে পুলিশ অফিসার মাশরুফ কে । বেশ কয়েকবার দেখাও হয়েছে । অন্য সময় হলে হয়তো বিরক্ত হত কিন্তু এখন মাশরুফ দেখে নিকিতা কিছুটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত হাসি হেসেছে । হাজার হলেও মানুষ সেদিন না থাকলে ও হয়তো আজকে এখানে থাকতো না !
###
-ঠিকানা পেয়েছো ?
-হুম ।
-সময় মত চলে এস । এখানে অন্য কেউ আসতে পারবে না । কেবল তোমার জন্য সব কিছু উন্মুক্ত ! বুঝেছো মাই ডিয়ার !
ফারিয়া এই পামে বিন্দু মাত্র গনে না গিয়ে বলল
-আচ্ছা । আর একটা কথা ।
-বল । রাফায়েল চৌধুরীর কি করবে ? আমার লোকজন ওকে কিছুতেই ট্রেস করতে পারছে না ।
-রাফায়েল ।
মুচকি হাসলো মেজর হাবিব । তারপর বলল
-ওকে তোমার চিন্তা করতে হবে না । ওর ব্যাপার টা আমি দেখছি !
ফারিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দিল ।
নয়
-স্যার আরেকবার চিন্তা করে দেখবেন কি ? এখন পরিস্থিতি খুব বেশি ভাল না । আপনার যাওয়া টা কি খুব বেশি জরুরী ?
আহমেদ আসাদের উদ্দিগ্ন হওয়ার কারন টা প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান ঠিকই ধরতে পারছেন । উনি আহমেদ আসাদ কে অভয় দিয়ে বলল
-এতো ভয় কেন পাচ্ছো ? এতো দিন যখন কিছু হয় নি সামনেও কিছু হবে না ! এতো ভয় পেলে কি চলে ?
আহমেদ আসাদের ভয় না পেয়ে কোন উপায় নেই । ইন্টেলিজেন্সের পাক্কা খবর যে প্রেসিডেন্টের উপর হামলা হবেই । বলা চলে গত তিন মাস ধরে এটা নিয়ে প্রেসিডেন্টের উপর দ্বিতীয় হামলা হতে যাচ্ছে । কিন্তু প্রেসিডেন্ট কিছুতেই এই জনসভা বাতিল করার পক্ষপাতি নন । অবশ্য তিনি যে বাতিল করতে চান না এটার পেছনেও যথেষ্ঠ কারন আছে ।
স্বাধীনতার শুরু থেকেই দেশের এই শহরটা এক প্রকার অবহেলিত হয়ে আছে । রাজধানীর এতো কাছে থেকেও শহরটার দিকে অন্য কোন কোন সরকার একটুও নজর দেন নি একটি বিশেষ কারনে । কিন্তু সবাই এই নিরাপত্তার অযুহাত দিয়ে এলাকাটা এড়িয়ে গেছে । কিন্তু আজিজুল রহমান খান সবার মত দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না ! তাই তিনি যখন একবার মনস্থির করেছেন তাখন সেখানে যাবেনই ।
শহর থেকে মোটামুটি ৭০ মাইল দুরে অবস্থিত এলাকা টা । শহরটার ঠিক কাছেই একটা আর্মি বেজ ক্যাম্প আছে । রাজধানী থেকে সরাসরি হেলিকাপ্টারে ঐ আর্মি ক্যাম্পেই নামবেন প্রেসিডেন্ট ! তারপরপ সেখান থেকে গাড়িতে করে আরও মাইল পাঁচেক !
সমস্যা এই পাঁচ মাইল নিয়ে ! এই পাঁচ মাইল জায়গাতে কোন ভাবেই সম্পূর্ন নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় । উচু নিচু পাহাড়ী এলাকার মাঝ দিয়ে রাস্তা । কিছু জায়গায় আবার বনাঞ্চলও আছে । যদি হামলা হয় তাহলে এই পাঁচ মাইলের ভিতরেই হবে । যদিও এরই ভিতরে সিকিউরিটি টিম বেশ কয়েকবার এই পাঁচ মাইল কে কয়েকবার সার্চ করেছে তবুও আহমেদ আসাদের কেন জানি মনে ঠিক শান্তি লাগছে না !
###
প্রেসিডেন্টের গাড়ি বের হওয়ার সাথে সাথেই নিকিতার ফোনে ফোন এসে হাজির ! নাম্বার টা দেখেই নিকিতার মনে একটু আনন্দ আর একটু দ্বিধা কাজ করে উঠলো ! ফোন করেছে রাফায়েল চৌধুরী !
-হ্যালো !
-কি ব্যাপর ? আপনার দেখি কোন খোজ নেই !
-একটু ব্যস্ত ছিলাম !
-আমার মেইল টা দেখেন নি ?
-সমসয় হয় নি ! আসলে !!
ওপাশ থেকে কন্ঠ টা যেন একটু কাঁপছে । একটু যেন দ্বিধা ! নিকিতা অবশ্য এসব আমলে নিলো না ! কেবল বলল
-বুঝলাম !
-আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আজকে কি দেখা করা যাবে একটু ?
-আজকে ?
-হুম !
-কিন্তু একটু সমস্যা আছে যে !
-কি সমস্যা ?
-আসলে আব্বু বাইরে গেছে । আমাকে শক্ত করে বলে গেছে যেন আমি বাইরে না বের হই !
-প্লিজ । একটু দেখেন না ! বিশেষ দরকার ! আপনাকে একটা কথা বলার ছিল !
নিকিতা রাফায়েলের কন্ঠের আকুলতা বেশ ভাল করেই বুঝতে পারলো ! মনে মনে হাসলো ! তাহলে আজকে সে আসল সত্য টা বলতে যাচ্ছে ? যেতে পারে !
-আচ্ছা ! তবে বেশি সময় কিন্তু থাকতে পারবো না ! ঠিক আছে ?
-ঠিক আছে ।
ফোনে কথা বলা অবস্থায়ই নিকিতা বুঝতে পারছিল যে অন্য একটা ফোন আসছে । স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মাশরুফ ফোন দিচ্ছে !
-হ্যা বলুন !
-ম্যাম ! আজকে কিন্তু আপনি কোন ভাবেই বাইরে বের হবেন না ! যত কাজই থাকুক না কেন !
-আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি এতো চিন্তা করেন না ! আচ্ছা আপনি কোথায় ?
-আমি একটু বাইরে এসেছি অফিসের কাজে !
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমি বাইরে বের হব না !
ফোন রাখার পরেই নিকিতার মন খুশি হয়ে উঠলো । ভাগ্য ভাল যে এই অফিসার আসে পাশে থাকবে না ! এখন ওর জন্য কাজ টা আরও সহজ হয়ে যাবে ! মনে ভেতরে কেবল রাফায়েলের চিন্তায় ঘুর পাক খেতে থাকলো ! আজকে কি তাহলে সত্যি সত্যি কথা টা বলে দিবে ?সে
###
আর্মি ক্যাম্প থেকে শহরের দিকে যাওয়া পথেই প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহরের উপর হালমা হল । হামটা হল সভা স্থল থেকে ঠিক দুমাইল দুরে ! সামনে দুটো পেছনে দুটো জিপের মাঝখানে আজিজুল রহমানের গাড়ি ছিল । আশে পাশে ছিল আর কিছু মোটর বাইক ! কিন্তু হামলা টা হল বড্ড অগোছালো ভাবে ।
হঠাৎ একটা খাদের আড়াল থেকে দুটো গাড়ি বেরিয়ে এল ! রাস্তার ঠিক মাঝেখানে দুটো গাড়ি দাড় করিয়ে রাস্তা আটকানো হল । গাড়ির ঠিক পাশে চার পাঁচ জনের একটা দল এলোপাতাড়ি গুলো করা শুরু করলো কিছুক্ষন । কোন প্রকার ভারী কোন অস্ত্র না কেবল রাইফেল আর অটোমেটিক পিস্তল দিয়েই গুলি গুলো করা হল ! কয়েকটা হাত বোমা ফাটালো তারা !
একেবারে সামনে থাকা আর্মির গাড়ি থেকে কয়েকজন সৈনিক নেমে গুলি শুরু করলেই ওরা পালিয়ে গেল !
আহমেদ আসাদকে একটু চিন্তিত দেখে প্রেসিডেন্ট বলল
-কি ব্যাপার ? তোমাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে ? বিপদ তো কেটে গেছে মনে হয় !
-কিন্তু স্যার ! এটা আপনার কাছে খুব সাদা মাটা একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে না ? মানে এটা কোন ধরনেই হামলা হল ! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা একটা.....।
ঠিক আধা মাইল দুরে একটা উচু ঢিবির উপর স্নাইপার রাইফেল নিয়ে শুয়ে থাকা একজন মানুষও ঠিক একই সময় একই কথা ভাবছে । এটা মূল হামলা হতে পারে না ! এটা একটা ডাইভারজেশন !
কার জন্য ?
নিজেকে কষে একটা গালী দিতে ইচ্ছে হল তার ! রাইফেল ফেলে ফোন বের করে ডায়েল ঘুরালো কাঙ্খিত নাম্বার টাতে ! মুখে কালো কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা নয়তো একটা অস্থিরতার ভাব যে ফুটে উঠেছে সেটা স্পষ্টই বোঝা যেত !
###
-হ্যালো !
-কোথায় তুমি ?
-কোথায় তুমি মানে ? আপনিই না বললেন রাইফেলস স্কোয়ারে আসতে ?
-আমি ? কখন ?
-সরি আপনি না ! রাফায়েল বলেছে ! ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি !
কিছুক্ষন নিরবতা !
-তুমি একক্ষুনি বাসায় যাও !
-কেন ?
-কোন কথা না ! একটুও দেরি না এখনই বাসায় যাও !
-কিন্তু.....
-তোমার গাড়ি কে চালাচ্ছে ? কে ? পেছনে সিকিউরিটি আছে ?
-হুম আছে পেছনের গাড়িতে ! আর একজন নতুন ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে ! নতুন জয়েন করেছে মনে হয় !
-গাড়ি থামাতে বল ! গাড়ি থেকে নামো ! এখনই নামো !
-কেন ? কি হয়েছে !
-যা বলছি করো ! এখনই
নিকিতা আগন্তুকের কথা বার্তা কিছুই বুঝতে পারছে না । কি এমন হয়ে গেল ! সকাল বেলা বাসা থেকে বের হওয়ার কোন প্রকার প্লান ছিল । ওর বাবার যে দিন বাইরে কোন প্রোগ্রাম থাকে সেদিন সাধারনত ও বাইরে বের হয় না ! কিন্তু যখন রাফায়েল কাছ থেকে যখন ফোন আসলো যে আজকে দেখা করা যাবে কি না এই বলে তখন কেন জানি আর বাসায় থাকতে মন চায়নি ! বাইরে বের হওয়ার সময় নতুন ড্রাইভার কে দেখে একটু অবাক হলেও ও তেমন কিছু একটা মনে করে নি ।
নিকিতা কিছু বুঝতে পারছে না । এদিকে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটার কথা ফেলতেও পারছে না !
-ড্রাইভার গাড়ি থামাও !
নতুন ড্রাইভার বলল
-জি ম্যাম ! কোথায় থামাবো ? আরেকটু সামনে গিয়ে পার্কিং দেখে থামাই ?
-আচ্ছা !
গাড়ি থামলো আরও কয়েক মিনিট পাঁচেক পরে । কিন্তু সেখানে নিকিতা নামার আগেই দুজন লোক দুদিক থেকে গাড়িতে চেপে বসলো কোন কিছু বোঝার আগেই !! ঠিক ওর পেছনে ওর সিকিউরিটির গাড়ি ছিল ! কোন রকমে ঘাড় ঘুরিয়ে নিকিতা দেখলো তিন দিক থেকে চার পাঁচ জন বন্দুকধারী গাড়িটার উপর সমানে গুলি করে চলেছে ।
দুপাশের উঠে আসা লোক দুটোর একজন ততক্ষনে নিকিতার মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে ! সম্পূর্ন চেতনা হারানোর আগে নিকিতা কেবল ফোনের ওপাশে থেকে কেউ একজন চিৎকার শুনতে পেল । ফোনের স্পিকারে নিজের নাম টা শুনেই চেতনা হারালো !
যে জন রুমাল চেপে ধরেছিল তার পাশের জন্য ফোনটা নিয়ে গাড়ির জানলা দিয়ে ফেলে দিল । গাড়িটি ছুটে চলল শহরের শেষ মাথার দিকে !
###
ফারিয়া নূশরাতের বাসা টা ঠিক শহরের প্রানকেন্দ্রে । ১৬ তলা একটা বিল্ডিংয়ে একেবারে টপ ফ্লোরে থাকে সে ! লিফ্ট যখন একেবারে টপ ফ্লোরে এসে থালমো ঠিক তখনও ফারিয়ার মনে কোন প্রকার দুষ্চিন্তা কিংবা কোন প্রকার বিপদের কোন আভাস আসে নি ।
তার জানামতে শহরের এমন লোক খুব কমই আছে যারা কিনা তার জন্য বিপদের কারন হতে পারে ।
তাছাড়া আজকে তার মন বেশ ভাল । গত এক মাস ধরে যে ব্যর্থতা তাকে তাড়া করে ফিরছিল সেটা আজকে মুছে গেছে । আজকে অন্য কোন চিন্তা তার মনে আসছে না । আজকে রাতে তার আনন্দের ঘুম আসবে ।
কিন্তু সে যদি যদি জানতো তার শোবার ঘরেরই তার জন্য কি অপেক্ষা করছে তাহলে সে শোবার ঘরের দিকে ভুলেও পা বাড়াতো না !
ফারিয়া নূশরাত নিজের শোবার ঘরে গিয়ে যখন লাইট জ্বালালো প্রথম লক্ষ্যই করলো না ঠিক বারান্দার দরজার পাশে যে ছোট চেয়ার টা পাতা আছে সেখানে একজন বসে আছে । হাতে একটা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল তাক করে !
-হ্যালো মিস ফারিয়া !
চরকির মত ঘুড়ে দাড়ালো সে । বেশ খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কালো পোষাক পরা অচেনা আগন্তুকের দিকে !
ফারিয়া কেবল অবাক বিশ্ময়ে সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলো । তার দিকে তাক করা বন্দুকের নলটাও তার দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারছে না । একটু আগেই আগন্তুক তার কালো কাপড়টা খুলে ফেলেছে । সেখান থেকে বেরিয়ে পরেছে তার আসল চেহারা । ফারিয়া এই চেহারা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।
আগন্তুক কঠিন গলায় বলল
-নিকিতাকে কোথায় রাখা হয়েছে ?
-কি ? কি বলছেন ? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । আপনি এভাবে আমার বাসায় আসতে পারেন ...
ফারিয়া আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই আগন্তুক তাকে থামিয়ে দিল । তারপর তার মোবাইলটা বের করে ওর দিকে বাড়িয়ে দিল । ফারিয়া একটু দ্বিধা গ্রস্ত হলেও হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিল । ফোনের স্ক্রিনে একটা ছবিটা ভাসছে । ছবিটা আর কারও নয় শামীম জাফরের । ঠোট ফেঁটে রক্ত বের হয়ে আছে । চেহারাটার অবস্থাও খুব বেশি সুবিধার নয় ।
আগন্তুক বলল
-ঠিক একই কথা তোমার চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম । সে আমার মন মত উত্তর দেয় নি । তার কি অবস্থা করেছি তুমি দেখতেই পাচ্ছো । ছবিতে তো কেবল মুখটা দেখা যাচ্ছে । তোমার জ্ঞাতার্থে জানাই ওনার দুই হাটুতে আমি দুটো গুলি করেছি । সেখান থেকেই আমি মেজর হাবিবের নাম এসেছে । আর মেজর লোকেশন কেবল তুমি জানো ।
-আমি কিছু জানি না ।
কথাটা বলার পরেই একটা ঘটনা ঘটলো । চোখের পলকে সামনে বসা মানুষটা উঠে এসে ফারিয়ার গাল বরাবর স্বজোরে চড় মারলো । চড়টা এতোই জোরে পড়লো যে ফারিয়া কেবল ছিটকে গিয়ে পড়লো এক পাশে ।
এতো দিন তার নির্দেশে কত মানুষের হাত পা ভাঙ্গা হয়েছে । কত মানুষকে ঠান্ডা মাথায় উপরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সে কিন্তু কোন দিন নিজের এরকম পরিস্থিতে পরতে হবে সেটা সে ভাবতেও পারে নি ।
মাথা তুলে ওঠার পর ব্যাথা কি পাবে ফারিয়া কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সে আগন্তুকের দিকে । কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে । এতো সুন্দর চেহারার একজন মানুষ তাকে এভাবে চড় মারতে পারে এটা যেন তার বিশ্বাস হচ্ছে । আগন্তুক তখন শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিয়ার দিকে । তার ভয় ভয় করতে লাগলো । এতো ক্ষমতাধর হয়েও নিজেকে এই আগন্তুকের সামনে বড় বেশি অসহায় লাগলো । ফারিয়ার কেবল মনে হল সামনে বসা মানুষ টার কাছে সে আসলে বড় বেশি অসহায় !
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩