somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অচেনা আগন্তুক (স্টেজ থ্রি)

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব

চার

-তোমাকে না বলেছি এভাবে একা একা কোথাও যাবে না !

ফোনে ধমক শুনে নিকিতা কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলো না । তাকে আজ পর্যন্ত কেউ ধমক দিয়ে কথা বলে নি অথচ এই মানুষ কি অবলিলায় তাকে ধমক দিয়ে কথা বলছে ।

নিকিতার মেজাজ টা এমনিতেই একটু খারাপ ছিল । বাসায় থেকে বের হওয়ার ঠিক মুখেই একজন পুলিশ অফিসার এসে তার কাছে জনাতে চাইলো সে কোথায় যাচ্ছে !

খনিকটা বিরক্ত হয়ে নিকিতা বলল
-সেটা আপনাকে কেন বলতে হবে ?
-আপনার নিরাপত্তার ব্যাপার যেখানে আছে সেখানে তো বলতেই হবে ! আর এভাবে রাতের বেলা আপনার বের হওয়াটা কোন ভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয় !
নিকিতা এই পুলিশ অফিসার কে আগে দেখে নি কোন দিন । সম্ভবত নতুন এসেছে । নাম টা কি ?
পুলিশে অফিসারের রবুকে লাগানো নেম প্লেটে দেখতে পেল নাম টা লেখা মাশরুফ হোসাইন ! নিকিতা বলল

-লুক মিস্টার মাশরুফ, আমি কোথায় যাবো সেটার কৈফৎ আমি আপনাকে দিবো না ! ঠিক আছে । আর আমার নিাপত্তার দায়িত্ব ঠিক আপনার উপরে বর্তায় না !
-দেখুন বর্তায় না বুঝলাম কিন্তু .....
-যখন বর্তায় না তখন সেটা আপনার আওয়ার বাইরে ! অন্যান্য মানুষকে নিজের দা্যিত্ব পালন করতে দিন ! নিজের নিজের কাজ করুন !
মাশরুফ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিকিতা বাইরে বেরিয়ে এল । তার জন্য গাড়ি প্রস্তুতই ছিল । সাথে দুন বডিগার্ড ! যদিও বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলে নিকিতার এই সিকিউরিটি একদম ভাল লাগে না । কিন্তু কিছু করার নেই । নিতেই হবে ! তখন থেকেই ওর মেজাজটা একটু খারাপ ছিল ! আর এখানে এসে এরকম ধমক শুনে মেজাজ টা আরও একটু খারাপ হয়ে গেল !


রাত ১১টার কিছু কিছু বাজে । দেশের সব থেকে বড় কমিউনিটি সেন্টার "আলেন্ড্রো" তে আলো ঝকমক করছে ! আয়োজনের কোথাও এটুকু কমতি নেই । হবেই বা কেমন করে । দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পপতির এক মাত্র কন্যার বিয়ে হচ্ছে । আয়জনের কমতি কিভাবে থাকবে ?
যে কমিউনিটিসেন্টারে এক সাথে ছয়টা অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় সেটা পুরোটা ভাড়া করে হয়েছে কেবল একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য । চারিপাশের মানুষ সমাগম দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরো শহরের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে । সবাই এখানে এসে হাজির !

এত সব মানুষের ভিতর অন্যতম আকর্ষন হিসাবে রয়েছে দেশের প্রেসিডেন্টে কন্য নিকিতা রহমান খান । নীল রংয়ের একটা পার্টি ড্রেসে পরে এসেছে বিয়ের অনুষ্ঠানে । তার বাবারও আসার কথা ছিল কিন্তু অতি জরুরী কাজে তাকে হঠাৎ করেই দেশের বাইরে যেতে হয়েছে । আর তাছাড়া শিল্পপতির কন্যা তিহী নিকিতার বেশ ভাল বন্ধু ! তার বিয়েতে না এসে কি পারা যায় !


নিকিতা ফোন কানে নিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । বেশ কিছু ইয়াং টাইপের ছোকড়ারা তার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু নিকিতার সেদিকে খেয়াল নেই । সে স্টেজ থেকে নেমে হল রুমের এক পাশে গিয়ে হাজির হল ! এতোক্ষন সে বর বউয়ের পাশেই ছিল !

নিকিতা নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল
-আপনি কি বললেন ?
-বললাম তোমাকে না বলেছি এভাবে একা একা কোথাও না বেরুতে !
-আপনারা পেয়েছেন কি শুনি ? বের হওয়ার সময় সেই পুলিশ অফিসার কৈফৎ চাইলো এখন আবার আপনি কৈফৎ চাচ্ছেন ! মানে কি এসবের ? আমার কি ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই ?
-দেখো তুমি কিন্তু সাধারন কেউ নও ! দেশের প্রেসিডেন্টের মেয়ে তুমি !
-তো কি হয়েছে ? শুনি কি হয়েছে ? আর আমি তো একা বের হয় নি !
-হুম ! জানি তো কাকে নিয়ে বের হয়েছো । দুজনই এখন ঘুমে বেহুস হয়ে পড়ে আছে ।
-মানে কি ? দেখুন আপনি আমাকে বকবেন না খবরদার ! আমাকে এর আগে কেউ কোন দিন এভাবে বকে নি !
-ঠিকই বলেছো । তোমাকে বকা আমার ভুলই হয়েছে । তোমাকে থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া দরকার । বেকুব মেয়ে কোথাকার !

নিকিতা ধারনাই ছিল না যে দেশের প্রেসিডেন্টের মেয়েকে কেউ বেকুব মেয়ে বলে ধমক দিতে পারে !

নিকিতার নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল । ফোনের ভিতরেই বলে উঠলো
-শুনুন মিস্টার রাফায়েল চৌধুরী ! আপনি কিন্ত.......
-কি বললেন ? কি নামে ডাকলেন আমাকে ?
-জি ! ঠিকই শুনেছেন ! আপনার পরিচয় আমি পেয়ে গেছি !
-তাই ! পেয়ে গেছেন ! হাহাহাহা !

ফোনের ওপাশ থেকে খুব জোরে হাসার আওয়াজ হল ! নিকিতা নিজেকে আর নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে ফোন কেটে দিল ! হল রুম থেকে বেরিয়ে উপরের দিকে রওনা দিল । এতো মানুষের ভিড় এখন তার কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে !
মানুষ টা ভাবে কি নিজেকে ! কি ভাবে নিজেকে !
হলরুম ছারিয়ে উপরের ঘরের বেশ কয়েকটা রুম আছে । নিশ্চই কোন কাজে ! এখন অবশ্য প্রায় সব গুলোতেই মানুষ ভর্তি । বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত !


এদিক ওদিক হাটতে হাটতেই নিকিতার রাগ কমে এল । মনের মাঝে একটু দ্বিধা দেখা দিল । আসলেই সে মানুষটার খোজ বের করতে পেরেছে, নাকি পারে নি !
কিন্তু এই কন্ঠস্বর কি তো ভুল হওয়ার কথা । হাজারটা কন্ঠের ভিতরেও সেই কন্ঠ ঠিকই চিন্তে পারবে, এতটুকু বিশ্বাস ওর নিজের ভেতরে আছে । তাহলে ভুল কেন হল ?
মানুষটা কেন এমন করে হেসে উঠলো ?

সেদিনের সেই আগন্তুককে নিকিতা যেন কিছুতেই মন থেকে ভুলে যেতে পারছিলো না ! সারাটা সময় কেবল তার কথাই চিন্তা-চেতনা জুড়ে বসে গেল ! ভেবেছিল সে আবার হয়তো ফোন করবে । কিন্তু একেবারে যেন তার কথা ভুলে গেল সে । আর কোন যোগাযোগ নেই । না কোন মেইল না কোন ফোন কল ।
লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিজে একদিন ফোন করেছিল কিন্তু ফোন টা বন্ধ ছিল । মেইল পাঠিয়েছে বেশ কয়েক টা । কিন্তু কোন জবাব আসে নি !
তখন যেন হঠাৎ করে তার দেখা পেল সে ।

টিভিতে এলোমেলো চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতেই দেখতে পেল একটা টকশো হচ্ছে, পাল্টাতে যাবে ঠিক তখনই টকশোর মানুষ টা কিছু বলে উঠলো । নিকিতা কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলো না । বুকের ভেতরে সেই কন্ঠ তীরের ফলার মত করে ওকে আঘাত করে চলল ।
না ! কোন ভাবেই ভুল হওয়ার কথা নয় !
নিকিতার একটুও বুঝতে কষ্ট হল না এই রাফায়েল চৌধুরীই সেদিনের সেই আগন্তুক ! কোন ভুল হতে পারে না !

কিন্তু আজকে এভাবে হেসে ফেলায় নিকিতা খানিকটা হতাশই হল ! আসলেই সে মানুষটাকে চিন্তে ভুল করেছে ? এসব যখন চিন্তা ভাবনা করেছে তখনই ওর ফোন টা বেজে উঠলো ।

-কি চাই আপনার ?
-আমার কিছু চাই না । বলতে চাচ্ছি যে নীল পোষাকে তোমাকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে । আজকে তোমার বান্ধবীর বিয়ে না হলে তোমার বিয়ে হলে ভাল হত !
-কেন ?
-কারন এই আসরের সব থেকে সুন্দর মুখ টি তোমার ! আর বিয়ের দিন কেবল কনের মুখ টাই সব থেকে সুন্দর হওয়া উচিৎ !

এই টুকু বলাতেই কাজ হল । নিকিতার রাগ পানি হয়ে গেল ! মনের ভিতর কেমন একটা আনন্দের অনুভুতি হতে লাগলো ।

ওপাশ থেকে আবার কন্ঠ টা বলে উঠলো
-এবার একটু মন দিয়ে শুনো ! তোমার পিছনে লোক লেগেছে !
নিকিতা বলল
-চিন্তা করবেন না ! এই ভিড়ের ভেতরে ওরা কিছু করতে পারবে না !
-ভীড়ের ভিতর কিছু করতে পারবে না ঠিক আছে কিন্তু তুমি যখন বাইরে বের হবে তখন ওরা এটাক করবে !
নিকিতা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । ততক্ষনে হাটতে হাটতে আবার হল রুমের ভিতর চলে এসেছে । অনুষ্ঠান প্রায় শেষ হয়ে এসেছে । এখন কন্যকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার পালা । তারপর আস্তে আস্তে সবাই বিদায় নেবে ! নিকিতার ওর সাথে আসা দুজন গার্ডকে খোজার চেষ্টা করলো । দুজন সাথে এসেছিল ! আর দুজন গাড়িতেই অপেক্ষা করছিল ! কিন্তু কোথায় ওদের দেখতে পেল না । একটু আগেও এখানেই ছিল । কোথায় গেল !

ওপাশ থেকে আবার কথা বলার আওয়াজ শোনা গেল !
-তোমার ঠিক ডান দিকে একটা টেকো মত লোক দেখতে পাচ্ছো ?
নিকিতা তাকিয়ে দেখে আসলেই ওর ডান দিকে এজন দাড়িয়ে আছে । ওর থেকে ৫০ গজের মত দুরে ।
-হ্যা ! কেন ?
-ও তোমাকে ফলো করছে । ওর কাজ হচ্ছে তোমাকে গাড়ি পর্যন্ত ফলো করা । যাক ও যতক্ষন তোমার আসে পাশে আছে ততক্ষন মনে হয় ওরা এটাকে যাবে না ।
-আচ্ছা আপনি এতো কিছু জানেন কিভাবে ? বলেন তো ? আর আমাকে আপনি কিভাবে দেখছেন ?
আবারও হাসির আওয়াজ এল ওপাশ থেকে ।
-আমি জানি কিভাবে সেটা জরুরী না । জানি এটাই জরুরী ! যাক আমাদের মনে হয় কাজ শুরু করে দেওয়া উচিৎ !
-মানে কি ? কি কাজ ? দাড়ান আমি আঙ্কেল কে ফোন দেই ! উনি আরো ফোর্স পাঠাক !
-না ! এতো সময় নেই । আর তাছাড়া ফোর্স বের হলে ওরা টের পেয়ে যাবে তার তখন হল রুমের ভিতরে ঢুকেই এটাকে যাবে । অনেক লোক আছে এখানে । হতাহতের সম্ভাবনা প্রচুর !
-তাহলে ?
-যা বলছি কর ! আমি যা যা বলছি তাই কর !

নিকিতা তই করতে লাগলো ! ওপাশের কন্ঠ স্বরের নির্দেশ অনুযায়ী একটা পর একটা রুম পেরিয়ে চার তলার একটা রুমের ভেতরে চলে এল ! এখানে কেউ নেই ! ছোট্ট একটা স্টার রুম বলা চলে !
-এবার দরজা বন্ধ কর !
নিকিতা দরজা বন্ধ করলো !
-এরপর ?
-দেখো বড় টেবিলের নিচে একটা ব্যাগ আছে । ব্যাগটার ভিতর কিছু পোষাক আছে । ওগুলো চট করে পরে নাও !
-মানে কি ?
-মানে হল সুন্দরী ! তুমি এই তিন কেজি ওজনের লেহেঙ্গা আর দুই ইঞ্চি হাই হিল পরে দৌড়াতে পারবে না !
-আমার হিল মোটেই দুই ইঞ্চি লম্বা না !
-কিন্তু নেহেঙ্গার ওজন তো তিন কেজি নাকি ?
-কি নিশ্চয়তা আছে যে আপনি আমাকে দেখছেন না । আমি আপনার কথায় পোষাক বদলাবো না !

কিছুক্ষন নিরবতা ! ততক্ষনে নিকিতা ব্যাগ টা খুলে পোষাক বদলাতে শুরু করে দিয়েছে । ও নিশ্চিত জানে আর যাই হোক ওপাশের মানুষটা লুকিয়ে কোন মেয়ের পোষাক বদলানো দেখবে, এমনটা হতে পারে না !

জিন্স টা একটু টাইট হল তবে শরীরের সাথ একেবারে ফিট হয়ে গেল ! কালো গেঞ্জির উপরে কালো জ্যাকেট ! আর একজোরা বুট ! নিজেকে কেমন জানি একশান ফিল্মের হিরোইনের মত লাগতে লাগলো নিকিতার কাছে ।
এখন চোখ একটা কালো সান গ্লাস আর হাতে গ্লোভ থাকলেই হল ! পরে থাকা পোসাক টা ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে আবার যথাস্থানে ব্যাগ টা রেখে দিল সে !

-কি কাজ শেষ ?
-হুম ! এবার সোজা ছাদে চলেও যাও ! আর ফোন টা পকেটে রেখে এয়ার ফোনের সাথে সংযোগ কর !
-এয়ারফোন তো সাথে আনি নি ! গাড়িতে আছে !
-তা আনবা কেন ? দেখো ঐ ব্যাগের পকেটে আছে একটা ব্লটুথ এরার ফোন !

নিকিতা ব্যাগ হাতড়ে দেখলো আসলেই ওখানে একটা ব্লুটুথ হেড ফোন ডিভাইস আছে । নিকিতা ভেবে অবাক হল লোকটা নজর কত দিকে আছে । কত নিখুত ভাবে সব কিছু ভেবে রেখেছে !

নিকিতা পথ খুজে যখন ছাদে গিয়ে হাজির হল তখনই পেছন থেকে কার যেন আওয়াজ পেল । কানের কাছে আস্তে করে আওয়াজ এল
-নরবে না । টেকো মাথা তোমার পিছু নিয়ে ছাদে চলে এসেছে ।
-এখন ?
-দাড়াও । দেখছি !

তখনই পেছন থেকে আওয়াজ এল
-মিস নিকিতা !
নিকিতা পেছন ঘুরে তাকালো ! লোকটা হাতে পিস্তল উঠে এসেছে । নলটা সোজা ওর দিকে ঘুরানো ! যদিও জানে ওকে সম্ভবত গুলি করা হবে না !
নিকিতা যথা সম্ভব গম্ভীর গলায় বলার চেষ্টা করলো
-কি চাই !
-আপনি পালানোর চেষ্টা করবেন না দয়াকরে !
-আমি কেন পালাবো ? কি বলছেন আপনি !

কানের কাছে হেড ফোনে আবার আওয়াজ এল

একটু সরে দাড়াও ! তোমার জন্য লোকটা কে ঠিক মত বাগে পাচ্ছি না !
-কোন দিকে ?
কথাটা আস্তে বললেও কথা টা সামনের জন ঠিকই শুনে ফেলল
ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি কার সাথে কথা বলছেন ? কান থেকে হেড ফোন খুলুন ! খুলুন বলছি !


নিকিতা ততক্ষনে ডান দিকে সরে দাড়িয়েছে । টেকো মাথা ওর দিকে এগিয়ে আসছে ঠিক তখনই নিকিতা অনুভব করলো ওর কানের পাশ দিয়ে কিছু একটা চলে গেল । তারপর বিস্ফোরিত চোখ দেখতে পেল সামনের টেকো মাথা মানুষটার ।
বুকের ঠিক সান দিকে রক্তের ফোয়ারা বের হয়ে গেছে ততক্ষনে !

কানের কাছে নির্দেশ এল
-উই হ্যাভ টু মুভ ফার্স্ট ! ওরা টের পেয়ে যাবে যে কোন সময় !
-কি করবো ? কোন দিকে যাবো ?
-ডান দিকের রেলিংয়ের দিকে যান !

নিকিতা কোন কথা না বলে সেদিকে গেল । এদিকটা কমিউনিটি সেন্টারের পেছনের দিক ! সামনের দিক আলোসজ্জা থাকলেও এদিকটা অন্ধকারই বলা চলে ! নিকিতা একেবারে রেলিংয়ের কাছে গিয়ে দেখলো ঠিক এক তলা নিচে একটা লোহার সিড়ি দেখা যাচ্ছে । তিলতলার একটা রুমে গিয়ে সিড়িটা । কিন্তু চার তলা থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য কোন উপায় নেই !

নিকিতা বলল
-আমি নিচে নামবো কিভাবে ?
-পারবে না ?
-মাথা খারাপ নাকি ? আমি পারবে না !
-আরেকটু ভাল করে দেখো । অন্ধকারের জন্য মনে হয় ভাল করে দেখতে পাও নি!

নিকিতা আরেকটু মনযোগ দিয়ে দেখতে পেল সেখানে একটা কালো দড়ির মই বাঁধা রয়েছে । অন্ধকারের জন্য ঠিক মত দেখতে পাই নি প্রথমে !

নিকিতা তবুও সঙ্কিত গলায় বলল
-আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে ! পারবো তো ?
-আরে পারবে না মানে ? তুমি প্রেসিডেন্টের মেয়ে না ! পারতেই হবে ! তোমার বাবা কত সাহসী একজন মানুষ ! আর টার মেয়ে হয়ে তুমি এই কাজটুকু করতে পারবে না ?

নিকিতার মনে তবুও ভয় জায়না না । সে আস্তে আস্তে রেলিংয়ের উপর ওঠে । তারপর কোন রকমে -পা রাখলো দড়ির মইটাতে । যখন মনে হল না কোন সমস্যা হবে তখনই ওর হাত টা একটু ফসকে গেল ! তবে অন্য হাতটা দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিল বলে রক্ষে ! কোন রকমে রক্ষা পেল । তবে ভয় কাটলো না কিছুতেই । আস্তে আস্তে যতক্ষন না লোহার সিড়ির উপর পা রাখলো ততক্ষন ভয় কারটলো না!

-এবার নেমে এসো !

পেছনের দিককার রাস্তাটা একেবারে নির্জন । মানুষ জন নেই বললেই চলে । নিকিতা যখন রাস্তায় নেমে এল দেখতে পেল ঠিক রাস্তার পাশেই একজন বাইকের উপর বসে আছে। যদিও তাদের মাত্র একবার দেখা হয়েছে তবুও চিনতে বিন্দু মাত্র দেরি হলনা!
নিকিতা বাইকের কাছে যেতে বাইকের স্টার্ট দিয়ে দিল আগন্তুক !
-আর দেরি করা যাবে না । ওরা যেকোন সমসয় চলে আসতে পারে !
-সত্যি কি তাই ?
-নয়তো ?
-আমার মনে হচ্ছে আপনি আমার সাথে ঘুরতে চান এই জন্য আমাকে এতো কিছু ?
-আচ্ছা তাই বুঝি ?
-জি !
-তাই ধরে নাও ! এখন দেরি কর না । বাইকে উঠে পড় ! আর তোমার ঐ ঘুমন্ত দুই গর্ধবদেরকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দাও যে তুমি রওনা হয়ে গেছো !


নিকিতা বাইকের পেছনে উঠে বসলো ! মুহুর্তেই বাইকে গতি পেল । যেন রাস্তার উপরে উড়ে চলল বাইক খানা ! নিকিতা একটু দ্বিধান্বিত হয়ে আগন্তুককে শক্ত করে ধরে বসলো !

নিকিতার আসলেই আজকে ওর নিজেকে হলিউজ একশান মুভির হিরোইনের মনে হচ্ছে । সামনে বসা হিরোকে নিয়ে যেন উড়ে চলেছে অজানার পথে !




পাঁচ
আলমগীর হোসেনের দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট হাউজের পেছনের দিকটার একটু ছোট্ট অংশ পাহারা দেওয়া । সে ছাড়া আর ২১ জন গার্ড আছে পুরো বাড়িটার দায়িত্ব । বলা চলে ২১ জনের একটা বৃত্ত পুরো বাড়িটাকে ঘিরে রেখেছে । একটু দুরে দুরে ছোট ছোট ছাউনির ভিতর বসে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় ! একটু বিরক্তিকর কাজ বটে তবে আরামের চাকরি ।

আর তাছাড়া চার টা বিশাল সাইজের কুকুর ছাড়া রয়েছে । এগুলো গার্ড দের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে ।

আলমগীরের এই কুকুর গুলোকে সব থেকে বেশি ভয় ! যদিও সেগুলো ট্রেনিং প্রাপ্ত তবুও আলমগীরের রাতের বেলা ছাউনির বাইরে বের হতে ভয় লাগে । যদি ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাহলে ওকে বাঁচাতে কে আসবে ?

প্রতি ১০ মিনিট পরপর ছাউনি থেকে বের হয়ে নিজের নির্ধারিত জায়গাটুকু একবার টহল দেয়ার নিয়ম ! যদিও রাত বাড়ার সাথে সাথে এই সময়ের ব্যবধান টা বাড়তেই থাকে । নিয়মের হেরফের হতে থাকে । রাত তিনটার পরে আর কারো কিছু মনে থাকে না ! কেবল ওর একার জন্য না । সবাই ই এমন টা করে । আর তাছাড়া দেশের সব থেকে সুরক্ষিত জায়গাতে কে আসবে খামোখা মরার জন্য!

হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বাইরে বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে । আলমগীর বাইরে বের হওয়ার আগেই ছাউনি ছোট্ট ফাঁকটা দিয়ে একটু দেখে নিল কুকুর গুলো আসে পাশে কোথাও আছে নাকি !
না নেই ! বের হওয়া যায় !
তাছাড়া ওর নিজের সিগারেটও শেষ হয়ে এসেছে । পাশে ছাউনির আলিম ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আসতে হবে !


আলমগীর নিজের ছাউনি থেকে বের হল ! আলিম ভাই ভাইয়ের ঘুম একটু বেশি । ডিউটিতে থাকলেও ঘুমিয়ে থাকে বেশি ! একটু আগে যখন এসেছিল তখন দেখেছে সে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে । এখন আবার যখন এসে হাজির হল তখনও ঘুমিয়ে!

আলমগীর ডাকতে শুরু করল চাপা স্বরে !

আলিম ভাই !

ও আলীম ভাই !

আলীম ভাই !


আরও কয়েকবার যখন ডাকার পরেও আলীমের ওঠার কোন লক্ষন দেখা গেল না তখন আলমগীরের কেন জানি সন্দেহ না । এমন তো হয় না । ঘুম বেশি হলে দুএক ডাকেই আলিম সাড়া দেয় । তাহলে এখন এমন হচ্ছে কেন ?


নিজেই পকেট থেকে পকেট হাতড়ে সিগারেট বের করে নিল ! ম্যাচ জ্বালিয়ে যখন আলো জ্বালাতে যাবে ঠিক তখনই একটা অবাক করা দৃশ্য দেখতে পেল সে ।
আলিম ভাইয়ের ছাউনির দরজা থেকে তিন চার হাত দুরে দুটো কুকুর শুয়ে আছে । পরে থাকা ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে ও হয় মরে গেছে নয়তো আর বেহুস হয়ে পড়ে আছে !

আলমগীরের শরীরের ভিতর একটা ঝাকি দিয়ে উঠলো । মনে হল নিশ্চই এখানে কোন সমস্য আছে । এখনই ইন-চার্জকে জানানো দরকার ! কেবল পকেটে হাত দিয়ে ওয়্যারলেসটা বের করতে যাবে ঠিক তখনই কিছু একটা এসে বিধলো তার ঘারের কাছে । হাত টা সেখানে পোছানোর আগেই মাটিতে বেহুস হয়ে পড়লো সে !
####

-স্যার ! আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে !

নিজের কেবিনে কাজ করছিল রাফায়েল চৌধুরী ! ইন্টারকমে রিসিপ্টশনিষ্টের আওয়াজ শুনে খানিকটা মেজাজ খারাপ হল তার । কাজের সময় স্বাধারনত ভিজিটর পছন্দ করে না সে । অফিসে সবাইকে বলে দেওয়া আছে । অবশ্য অফিসে খুব কম মানুষের সাথেই সে কথা বলে । প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না । আর এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়া কারো সাথে দেখাও করে না ।


রাফায়েল চৌধুরী বলল
-তোমাকে না বলেছি এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়া কাউকে আমার সাথে দেখা করতে দেবে না !
ওপাশ থেকে রিসিপ্টশনিষ্ট বলল
-স্যার ! আমি ওনাকে মানা করতে পারি নি ! সি ইজ দ্য প্রেসিডেন্টস ডটার !
-হোয়াট ?
-ইয়েস স্যার !


##

শামীম জাফর গম্ভীর মুখে তার কেবিনে রুমে বসে আছে । এখনও ঠিক মত অফিসে লোকজন আসা শুরু করে নি । কিন্তু তিনি এসেছেন সবার আগে । কথা ছিল সকাল বেলা উঠেই তিনি সুসংবাদ শুনবেন । কিন্তু দুঃসংবাদ তিনি গতকাল রাতেই শুনেছেন ।

যখন একজন ফোন করে দুঃসংবাদটা দিল তিনি ওপর পাশের মানুষটার গলার ফ্যাকাশে ভাব টা ঠিকই ধরতে পারছিলেন ! লোকটা ভয় পাচ্ছিল বেশ বোঝাই যাচ্ছিল । যদিও ভয় পাওয়ার যথেষ্ঠ কারনও ছিল !
-স্যার মিশন ফেইল করেছে ।
-ও আচ্ছা !
-একজনকে হারাতে হয়েছে । আমরা আসলে বুঝতে পারি নি এমন কিছু হবে ।
-আচ্ছা !
-স্যার মেয়েটি কিভাবে ওখান থেকে পালিয়ে গেল আমরা ঠিক মত ট্রেস করতে পারি নি । রাত ২ টা পর্যন্ত তার গাড়ি কমিউনিটিসেন্টারের সামনেই ছিল । আমরা তার বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । কিন্তু সে বেরই হয় নি । রাত দুইটার দিকে খোজ পেলাম যে সে অলরেডি বাসায় চলে গেছে । কিভাবে গেল আমরা বুঝতে পারি নি । কামরানকে পরে আমরা ছাদে পেয়েছি । ওর বুকে কেউ গুলি করা হয়েছে ।
তিনি আবারও আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলেন !

শামীম জাফর কিছুটা সময় চিন্তিত হওয়ার চেষ্টা করলেন কিন্তু কোন চিন্তা করতে পারলেন না । কেন জানি তার তখন কোন দুঃচিন্তা কিংবা রাগ কোনটাই আসছিল না । জানালা খোলা ছিল, সেটা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছিল ! তিনি চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেলেন । তার ঘুম ভাঙ্গলো বেশ সকালে । এতো সকালে স্বাধারনত তার ঘুম ভাঙ্গে না । ঘুম থেকে উঠে নিজেই নিজেই চা বানিয়ে খেলেন । অনেক দিন পর তার সকাল টা বেশ ভাল কাটলো ! বাড়িতে কিছু করার ছিল না বলে নয়টা বাজার আগেই অফিসে এসে হাজির হলেন ! অন্য দিন গুলোতে হয়তো তার ঘুমই ভাঙ্গতো সকাল নটার পরে !

-স্যার আসবো ?
শামীম জাফর জানলার দিকে তাকিয়ে ছিলেন । কিছু হয়তো নির্দিষ্ট করে দেখছিলেন না । এমন সময় তার সেক্রেটারি আকিব আরিয়ান দরজায় দাড়িয়ে ভিতরে আসার অনুমুতি চাইলো !

শামীম জাফর আকিবকে বেশ পছন্দ করেন । বেশ কর্মঠ ছেলে । কোন সময় কোন কাজটা করতে হবে ঠিক ভাল করেই জানে ।
-এসো !
-স্যার আপনি এতো সকালে আসবেন ভাবিনি ! আমাকে বললেই আমি আরও আগে চলে আসতাম !
-না না ঠিক আছে । সমস্যা নেই ।

আকিব কিছুটা সময় চুপ করে শামীম জাফরের সামনে দাড়িয়ে রইলো । কিছু সঙ্কিত সে নিজেও বোঝ করছে । শামীম জাফরকে খুব বেশি শান্ত দেখাচ্ছে । এতো শান্ত ভাবটাই আকিব কে একটু বেশি ভাবাচ্ছে ।

শামীম জারফ বলল
-তোমাকে যে সকাল বেলা একটা মেসেজ পাঠিয়েছিলাম । পেয়েছিলে ?
-জি স্যার !
-কাজ হয়েছে ?
-জি স্যার !
-গুড ! আহম্মাকের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই ! যত্তসব আহম্মক নিয়ে কাজ করছি আমি !

শামীম জাফরকে একটু অশান্ত দেখা গেল ! আকিবের মনে আবারই একটু ভয় দেখা দিল । শামীম জাফর রেগে গেলে তার মাথা ঠিক থাকে না । একবার রেগে গিয়ে একজনকে কেবল ব্যাট দিয়ে পিটিয়েই মেরে ফেলেছিলেন । এখন যেহেতু সে নিজেই শামীম জাফরের সামনে আছে ঝড়টা তার উপর দিয়েই যাওয়াই সম্ভবনা রয়েছে । কিন্তু দেখা গেল নিজেকে সামলে নিলেন শামিম জাফর ! শান্ত কন্ঠে বলল
-ফারিয়া কোথায় ?
-স্যার, ম্যাডাম তো এখনও অফিসে আসেন নি ।
-ওকে আসতে বল ! এই ব্যাপার টা ওকে দেখতে বল ! আমি আর গাধা গুলোর উপর ভরশা করতে পারছি না !
-জি স্যার । আমি এখনই ম্যাডাম কে আসতে বলছি !

আকিব দরজার দিকে পা বাড়াতে গেল । যত দ্রুত সম্ভব শামীম জাফরের কাছ থেকে দুরে সরে যেতে চায় ! যখন দরজার কাছে গিয়ে হাজির হল তখনই শামীম জাফর আবার তাকে ডাকলো ।

-আকিব !
-জি স্যার !
-থাক ! এখনই ডাকার দরকার নেই । সময় হলে ও নিজেই আসবে !
-জি আচ্ছা !

আকিব আবার একটু দ্বিধায় পড়ে যায় । তাহলে এখন ওর কি করা উচিৎ ? অফিস রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিৎ নাকি আবার ফিরে যেখানে ছিল সেখানেই গিয়ে দাড়ানো উচিৎ !

###

নিকিতা রাফায়েলের বিশ্ময় ভরা চোখ দেখে সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেল । আসলেই তাহলে ভুলই করে ফেলল নাকি ? ছেলেটা এতো অবাক হচ্ছে কেন ?
অবশ্য অবাক হওয়ারই কথা । যে কেউ অবাক হবে । যদি যে সাধারন কেউ হয় ! বলা নেই কওয়া নেই দেশের প্রেসিডেন্টের মেয়ে যদি কারো সাথে দেখা করতে হাজির হয় তাহলে তো এমনই হবারই কথা ! অবশ্য এখানে আসতে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে । নয়তো সাংবাদিকদের জ্বালায় কি শান্তিমত বের হওয়ার উপায় আছে ?

কিন্তু নিকিতার মন বলছে ওর মন ভুল করতে পারে না । এই রাফায়েলই সেই আগন্তুক ! কোন ভুল হতে পারে না ।
গতকাল পুরো রাস্তা নিকিতা তার বাইকের পিছনে বসে ছিল । বলা চলে একেবারে জড়িয়ে বসে ছিল । যদিও তার মুখে সেদিনের মত কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল তবুও নিকিতার মন বলছে সামনে বসা মানুষটাই সেই !

রাফায়েল বলল
-আমি আসলে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন !
নিকিতা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । আসলেই তাহলে সে ভুল করেছে ? নাকি সামনে বসা ছেলেটা আসলেই একজন পাকা অভিনেতা !
কন্ঠস্বরও তো একই মনে হচ্ছে । গতকাল রাতে মুখে কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল বিধায় একটু অন্য রকম শোনাচ্ছিল । ফাঁকা মুখে বললে নিশ্চই এমন মনে হত ! তবুও নিকিতার মনের ভিতর দ্বিধা রয়েই গেল !

কি বলবে কি বলবে করে বলল
-আপনি বাইক চালাতে পারেন ?
-কেন বলুন তো ?
-আহা বলুন না ?
-পারি ! কেন ?
-আমাকে একটু বাইকে নিয়ে ঘুরবেন ?

এই প্রশ্ন শুনে রাফায়েল খুবই অবাক হল । নিকিতার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন কিংবা এমন আবদার সে আশা করে নি ।

হঠাৎ নিকিতার মনে হল এখানে এভাবে রাফায়েলের অফিসে আসাটা তার চরম বোকামী হয়েছে । যদি পত্রিকায় এই খবর লিক হয়ে যায় তাহলে ওর ইমেজের সাথে সাথে ওর বাবার ইমেজেরও ১২টা বেজে উঠবে ।

-আচ্ছা আমি আজকে যাই !
-সে কি ? আপনা বললেন আমার বাইকে উঠবেন ?
-অন্য কোন দিন ! আজ কে না ! আসি !

নিকিতা আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো । তারপর দ্রুত দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল ! যদি পেছন ফিরে চাইতো তাহলে দেখতে পেত রাফায়েল চৌধুরীর মুচকি হাসিটা !

##


-কি চাই আপনার ?
-কি ব্যাপার এতো কঠিন গলায় কেন কথা বলছো ?
-এমনি ! আমার ইচ্ছে ! কেন ফোন দিয়েছেন ?
-আরে আমি ফোন দিতে পারি না ?
-না কেন দিবেন ? গত কালকে আমি কত করে বললাম চলেন একটু ঘুরে আসি আপনি তো সোজা আমাকে নামিয়ে গায়েব হয়ে গেলেন ! হুহ ! আপনার সাথে কথা নেই ।
-আরে বাবা একটু বোঝার চেষ্টা করবে না ? তখন কি ঘোরার সময় ? আর কত বড় বিপদ ছিল দেখবা না ?
-ঘোরার ডিম ছিল ! আপনার সাথে কথা নেই !
-আচ্ছা নেই বুঝলাম । এখন একটু জালনাটা খোল তো ! কাঁচ ভাঙ্গলে আওয়াজ হতে পারে !

নিকিতা প্রথমে কিছু সময় কোন কথা বলতে পারলো না ! ঠিক মত বুঝতেও পারলো না ওপাশ থেকে আসলে কি বলার চেষ্টা করা হচ্ছে ।
নিকিতা বলল
-মানে ? আপনি কি বলছেন ?
-বলছি ডান দিকের বাগানের জানলাটা খোল একটু ! আমি কতক্ষন ধরে ঝুলছি !

নিকিতা এক দৌড়ে নির্দিষ্ট জানলার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে এক ধাক্কার মত খেলো ! জানলার পাত ধরে ঝুলে আছে, যথারীতি কালো পোশাকে সারা শরীর আবৃত এমন কি মুখটাও !

নিকিতা জানলা খুলে দিলো !
-আপনি ?
-হুম !
-আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন ?
-না মানে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমাকে একটু হাই হ্যালো বলে যাই ! তাই ২১ জন গার্ড আর চারটা গ্রে হাউন্ডকে বেহুস করে তোমার সাথে দেখা করতে এলাম ! এলার্ম সিস্টেমও বন্ধ করতে হয়েছে ।

নিকিতা কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! সামনে দাড়ানো মানুষটাকে সে আসলেই ঠিক মত বুঝতে পারছে না । আসলে মানুষটা কি চায় ! গট কাল রাতে হাজার বার অনুরোধ করার পরেও তাকে সোজা বাসায় এসে দিয়ে গেছে । অন্য কোথাও নিয়ে যায় নি । আর আজকে ওর সাথে দেখা করার জন্য প্রেসিডেন্ড হাউজের পুরো সিকিউরিটি অকার্যকর করে দিয়েছে !
-ভেতরে আসবো না ?
নিকিতা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । কেবল তাকিয়ে রইলো মুখোশ পরা মানুষটার দিকে ।চোখ দুটো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । মায়াময় দুটো চোখ !


পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×