আগের পর্ব
দুই
পিয়াস রহমান নিজের অফিস রুমে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন ! এই ভর দুপুর বেলাতেও ঘরটা আবছা অন্ধকার করে রাখা হয়েছে । ঘরের তিন টনের এসিটা পুরো জোড়ে চলছে তবুও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে । বার কয়েক সামনে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খাওয়ার পরেও যেন তার পিপাসা কিছুতেই মিটছে না ! তিনি কেবল গম্ভীর হয়ে বসে আছেন বললে ভুল হবে, মনের ভেতর ভীষন দুষ্চিন্তার আর ভয় নিয়ে বসে আছেন । জীবনে এর থেকে বেশি ভয় আর কখনও তিনি পেয়েছেন বলে তার মনে পরে না এবং এর পরে আর হয় তিনি এরকম ভয় পাওয়ার সুযোগও পাবেন না !
তিনি একটু আগে টিভিতে সরাসরি প্রেসিডেন্টের উপর হামলার ঘটনাটা দেখেছেন । কেবল তিনি নন, পুরো দেশের মানুষই সেটা দেখেছে । দ্বি-বার্ষিক অর্থনীতি সম্মেলনটা জাপান মৈত্রী কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিলো যখন হামলা হয় । কেউ সেটা বন্ধ করার কথা মনে করে নি । অবশ্য হালমা কারী রা চাচ্ছিলো যেন তাদের কর্ম কান্ডটা পুরো দেশের মানুষ সরাসরি দেখতে পারে !
তবে হামলা কারীদের অভিসন্ধি পূরন হয় নি । টিভিতে সবাই স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে যে প্রেসিডেন্ট তার মেয়ে সহ হল রুম থেকে বের হয়ে গেছে নিরাপদেই । এবং একটু আগে তার কাছে খবর এসেছে যে তিনি তার বাস ভবনে পৌছে গেছেন । এক প্লাটুন আর্মীও ঠিক তার পরপরই সেখানে পৌছেছে তার নিরাপত্তার জন্য । কিন্তু এমন টা হওয়ার কথা ছিল না । তাদের প্লান টা বলতে গেলে একেবারে নিখুত ছিল । কোন ভুল হওয়ার কথা ছিল না । ভুল হয়তো হতোও না যদি না কালো মুখো পরা ঐ আগন্তুক সেখানে না এসে হাজির হত !
এখন এই পুরো মিশন ব্যর্থতার দায় ভার একজন কেউ একজন কে বহন করতেই হবে । এনং পিয়াস রহমান খুব ভাল করেই জানেন যে সবার আগে তার মুখ বন্ধ করার জন্য কেউ একজন উঠে পড়ে লাগবে । কারন সেই কেউ একজনের কাছে পৌছানোর সুত্র কেবল তিনি । তার কাছে পৌছালে সেই কেউ একজনের কাছে পৌছাতে খুব বেশি সময় লাগবে না !
মোবাইল টা ভাইব্রেট করে উঠলো । একবার চোখ দিয়ে মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ! নাম্বার টা অপরিচিত । কিন্তু তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে ফোন টা কে করেছে । নিজের ছোট মেয়েটার চেহারা তার সামনে ভেসে উঠলো ! তিনি একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ফোন টা রিসিভ করলেন !
##
জাপাম মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের ঠিক ভেতরে বড় একটা লন । লনের ঠিক ডান দিকেই গাড়ী পার্ক করার জায়গা ! তার পাশেই কত গুলো সিমেন্টের বেঞ্চ ! Senior Assistant Superintendent of Police মাশরুফ হোসাইন একেবারে ডান দিককার একটা বেঞ্চে বসে আছেন !
পুরো জায়গাটাকে এখন কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে । মাশরুফ বার কয়েক সেদিকে তাকিয়ে নিজের মনেই একটু হেসে উঠলো ।
যখন নিরাপত্তার দরকার ছিল তখন এখানে এতো পর্যাপ্ত লোকবল ছিল না আর এখন দরকার নেই তবুও কয়েক শ পুলিশ আর আরএফবির লোক খামোখা এখানে ভীড় করে আছে ।
তা ছাড়া কেবল যে পুলিশের লোকই ভীড় করে আছে তা নয় ! মানুষ আর সাংবাদিকেরাও গেটের সামনে ভীড় করে আছে । ভেতরে কি হয়েছে সেটা দেখার বেশ আগ্রহ সবার ভেতরে । অবশ্য যে ঘটছে তাতে আগ্রহ না হয়ে উপায় নেই । তবে ঘটনা যা ঘটনা মোটামুটি তার
অনেকটাই পুরো দেশের মানুষ দেখেছে টিভিতে । সবার মনে একটা তীব্র আগ্রহ জন্ম নিয়েয়ে । সবাই জানতে চায় আসল ঘটনা টা কি হয়েছে ।
সবাই জানতে চায় তাদের প্রাণ প্রিয় প্রেসিডেন্টের উপর হামলা কে করেছে । কিভাবে এতো সহজেই দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধর মানুষের উপর হামলা করা গেল । দেশের নিরাপত্তা সংস্থা কি করছিল তখন ! সবাই জানতে চায় সেই উদ্ধার কারী আগন্তুক কে ? কি তার পরিচয় ?
এতো এতো প্রশ্ন কিন্তু এর কোনটার উত্তরই কারো কাছে নেই !
মাশরুফের অবশ্য এই প্রশ্ন গুলোর দিকে লক্ষ নেই । কে হামলা করেছে আর কে সেই আগন্তুক এটা পরেও জানা যাবে ! তার মনে অন্য কিছু খেলা করছে ! কিছু একটা নিয়ে যেন খুব বেশি চিন্তিত । নিজের মনের ভেতরেই চিন্তার ঢেউ চলছে । পরপর দুটো বড় বড় হামলা হল দেশের সব থেকে বড় দুজন ব্যক্তির উপর । বলা চলে দেশের সব থেকে গুরুত্বপুর্ন দুজন মানুষের উপরে ! কদিন আগে ভাইস প্রেসিডেন্টের উপর । আর আজে স্বয়ং প্রেসিডেন্টের উপর ! এই দুই ঘটনা কি কোন ভাবে যুক্ত ? নাকি আলাদা আলাদা ?
কোন উত্তর জানা নেই ! ব্যাপারটা মাশরুফ কে বেশ ভাল করেই ভাবিয়ে তুলছে ! তাছাড়া আজকে ঘটনা টা বেশ ঘোলাটে ।
কিভাবে এতো স হজেই এখানে হামলা করা গেল ? একটু আগে সে পুরো কেন্দ্র টা চক্কর দিয়ে এসেছে । সব কিছু নিজের মত করে পর্যবেক্ষন করে এসেছে । কিছু হিসেব তার কাছে কিছুতেই মিলছে না !
ইন্টেলিজেন্সে অনেক দিন থেকেই এমন উড়ো উড়ো সংবাদ আসছিল যে বড় কোন হামলা হতে পারে কিন্তু সেটা যে এমন করে হবে তা কেউ ভাবতে পারে নি । অন্তত এই দেশে হলিউডীও কায়দায় হামলা এই প্রথম ।
এমন কিছু ভাবছে ঠিক সেই সময়েই তার কাধে হাত পড়লো । তাকিয়ে দেখে তার বস হাসান সাবের দাড়িয়ে আছে । তার মত সেও সিভিল পোষাকে এসেছে । পুলিশের পোষাকে আসলে সাংবাদিকের প্রশ্ন বানে জর্জরিত হতে হত । সেটা দুজনের কারোরই ইচ্ছে নেই ।
মাশরুম উঠে গিয়ে স্যালুট দিতে যাবে তখনই হাসান সাবের তাকে মানা করলো ! তারপর ঠিক তার পাশেই বসে পড়লো !
-কি ভাবছো এতো ? ভেতর টা দেখেছো ?
-জি স্যার !
-কি মনে হল ?
-মোট ত৩ জন গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা পড়েছে । তবে ......
-তবে তাদের ভেতরে আমাদের নিজেদের লোক রয়েছে মাত্র ৭ জন । আর বাকি ২৬ জন আসলে আমাদের লোক নয় ! ৭ জন ছিল পিএসএফ আর পুলিশের পোষাকে ! আর বাকী ২৬ জন ছিল কালো পোষাকে ।
হাসান সাবের একটু অবাক হয়ে মাশরুফের দিকে তাকালো । ঠিক যেন বুঝতে পারলো না মাশরুফ কি বলতে চাইছে । মাশরুফ বলল
-স্যার একটা কথা যেটা কেউ জানে না সেটা হচ্ছে হচ্ছে ২৬ই জনের কয়েক জনের কাছে কিন্তু প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্সের আইডি ছিল । এবং সেগুলো কোন ভ্যাজাল ভাবে বানানো না । একে বারে অর্জিনাল !
খানিক টা অবিশ্বাসের চোখে হাসান সাবের মাশরুফের দিকে তাকালো । ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ।
-আপনি জানেন আমাদের সাথেও আরও পিএসএফ, আরএফবি লোকরাও এখানে আছে । ওরা আমার কাছ থেকে ব্যাপার টা লুকাতে চাইছিল । বিশেষ করে পিএসএফের লোক জন ! ওরা আসলে আমাদের কে এখানে ঠিক পছন্দ করছে না ! আবার কিছু বলতেও পারছে না !
-কোন বিশেষ কারন ?
-তা জানি না ! তবে ওরা আসলে ঠিক সাহায্য করছে না ! কিছু লুকাচ্ছে ! কিন্তু আমার চোখ এড়াতে পারে নি । আমি কয়েকজনের পোষাক হতড়ে দেখেছিলাম । একটু আগে আগেই এসেছিলাম বলে সুযোগ টা এসেছিল । দুজনের কাছে এই আইডি দেখেছি ! আর বাকি গুলো দেখার সুযোগ পাই নি ! তবে আমার মনে হচ্ছে সবার কাছেই এই আইডি ছিল !
-এর মানে কি দাড়ায় ?
-এর মানে দাড়ায় ভেতরের কেউ এর সাথে জড়িত এবং সেই একজনটা বেশ ক্ষমতা ধর ! আমার তো মনে হচ্ছে আবারও হামলা হবে । প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবারের উপর । আমাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার !
-কিন্তু প্রেসিডেন্টের সরাসরি সিকিউরিটির দায়িত্ব তো আমার উপর আসে না ! সেটা প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্সের কাজ !
-তবুও স্যার ! আমার কেন জানি পিএসএফের দিয়ে ভরসা হচ্ছে না ! ওদের সোর্স আমি মনে করেছিলাম বেশ ভাল । কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেটা ঠিক না !
-অথবা ,....
লাইন টা শেষ না করে হাসান সাবের কেবল মাশরুফের দিকে তাকালো । মাশরুফ পরিস্কার বুঝতে পারলো হাসান সাবের আসলে কি বোঝাতে চাইছে ।
-আচ্ছা ! এখানে আর কাজ নেই আমাদের । চল আমরা বরং অফিসের দিকে যাই । যা দেখার দেখা হয়েছে । বাকি রুটিন কাজ শাহীন আর জুলি করে নিয়ে আসবে । আমরা বরং অফিসে যাই ! আর কিছু প্রস্তুতির ব্যাপার আছে । দেখা যাক কত দুর কি করা যায় ! আরো কিছু আলোচনার দরকার আছে !
-চলেন !
দুজনই তাকিয়ে দেখলো তখনও গেটের কাছে সাংবাদিকেরা ভীড় করেই আছে তীর্থের কাকের মত কারো বের হওয়ার অপেক্ষা করছে গেটের ভেতর দিয়ে । তাদের আশা কেউ এসে তাদের কে পুরো ঘটনা না খুলে বলবে । কিন্তু তেমন টা ঘটনার কোন লক্ষ্যন দেখা যাচ্ছে না !
ওরা দুজনেই জানে যে তেমন টা হবে না । উপর থেকেও কড়া নির্দেশ এসেছে যে মিডিয়ার সাথে যেন কোন প্রকার কথা না হয় । ব্যাপার টার আগে একটা সমাধা হোক তারপর কিছু একটা ভাবা যাবে !
যখন মাশরুফ হোসাইণ এবং হাসান সাবেরের গাড়িটা রমনা থানার দিকে চলতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ঢাকার কোন এক অভিজাত এলাকায় নিজ বাস ভবের বসে আছে সরকারের খুব ক্ষমতাধর একজন মানুষ । চিৎ হয়ে সিলিংয়ের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে । ৪৮ ইঞ্চি টিভিটা চলছে নিঃশব্দে । একটু আগেও টিভি স্ক্রিনের দিকে তার চোখ ছিল এখন আর নেই !
তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই তার এখন মানুষিক অবস্থা কেমন । ব হুদিন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে করে আসা একটা পরিল্পনা একটু আগে সফল হতে হতে বাকি রয়ে গেছে । সফলতার এতো কাছে এসে তিনি ব্যর্থ হবেন ভাবতে পারেন নি । তবে তিনি তার মুখের ভাব দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে তিনি অস্থির কিংবা রাগান্বিত হয়েছেন ।
মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার তার সেই অনেনক দিনের অভ্যাস । জীবনে অনেক বার ব্যর্থতা এসেছে তবে প্রত্যেকবারই সে সেটা ধৈর্য্য আর বুদ্ধি দিয়ে পার করে এসেছেন !
-স্যার আপনার মেডিসিন নেওয়ার সময় হয়েছে !
বাঁ দিকে মুখ ফেরালেন তিনি । তার জন্য রাখা নার্স হাতে ট্রে নিয়ে দাড়িয়ে আছে । তিন খনিকটা বিরক্ত হলেন । তিনি যখন চিন্তা করেন তখন ব্যাঘাট ঘটাটা একদম পছন্দ করে না ! আর এই বেয়াদব নার্স টার কাজই হল সেই কাজ টা করা । প্রতিদিনই সে এই একই কাজ টা বিরান হীন ভাবে করে চলেছে । প্রতিদিনই তার ইচ্ছে হয় কষে একটা থাপ্পড়া লাগাতে নার্সের গালে । তার জন্য চড় লাগানো টা কোন ব্যাপার না । তার ক্ষমতার দিয়ে তিনি কেবল যে কাউকে চড়ই নয় একেবারে দুনিয়া থেকেই উঠিয়ে দিতে পারেন । কিন্তু এই মেয়ের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না । এতো চমৎকার চেহারার একজন মেয়ের গালে চাইলেই চট করে চড় লাগানো যায় না । মন থেকে সেটা আসে না !
তিনি নিজের হাতে ভর দিয়ে উঠে বসতে চাইলেই নার্স এক প্রকার দৌড়ে এল !
-স্যার আপনি উঠবেন না প্লিজ !
-কেন ?
-ডাক্তার আপনাকে কপ্লিট বেড রেস্টে থাকতে বলেছে । কোন ভাবেই উঠা চলবে না ! আমাকে কেন রাখা হয়েছে !
নার্স নিজেই এগিয়ে এসে তাকে আবারও শুইয়ে দিল । তার পর যত্ন স হকারে মুখে ঔষধ তুলে দিলো চমচে করে । তিনি কিছুটা সময়ের জন্য হলেও যেন সব রকম দুষ্চিন্তা থেকে একেবারে মুক্ত হয়ে গেলেন ! মেয়েটি আসে পাশে থাকলেই কেন জানি ইদানিং তার এই অনুভুতি হতে থাকে ! এই জীবনের অনেক পার করে এসেছেও এরকম অনুিভুতির কোন ব্যাখ্যা নেই তার কাছে ।
তিন
ছোট একটা সংবাদ সম্মেলন করে সবাই কে আপাতত জানানো হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট এখন সম্পুর্ন নিরাপড আছেন এবং সব কিছু এখন সরকার এবং নিরাপত্তা কর্মীদের নিয়ন্ত্রনে আছে । তবে ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনা আর না ঘটে সে দিকে কঠোর ভাবে লক্ষ্য হবে হবে !
টিভিটার সাউন্ড অফ করে দিয়ে হাসান সাবের মাশরুফের দিকে তাকালো । তার অথীন্যস্থ সব গুলো অফিসার থেকে তিনি এই ছেলেটাকে সব থেকে বেশি পছন্দ করেন । পছন্দ করেন বিশেষ করে তার মার্জিত ব্যবহার আর গভীর ভাবে চিন্তা করার কারনে । কদিন আগে জাপান থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসেছেন । হাসান সাবের নিজে ডেকে নিয়ে এসেছে নিজের ডিপার্টমেন্টে ! এরই ভেতরে বেশ কয়েকটা কেসে মাশরুফ বলতে গেলে সবাই কে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । মুগ্ধ করেছে হাসান সাবের কে । এখন তিনি যে কোন ৎিল কেসের জন্য মাশরুফের উপরে বেশ ভরশা করেন । এটা মশরুফ নিজেও জানে । এতে করেই তার দায়িত্ব যেন আরও একটু বেড়ে গেছে !
তাহলে ? তোমার কি মনে হচ্ছে ?
টিভির রিমোর্ট টা এখনও হাসান সাবেরথাতেই রয়েছে ।
-স্যার একটা কথা একদম পরিস্কার যে ওরা কিন্তু ব্রেক করে নি । খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওর জাপান মৈত্রী কেন্দ্রে ঢুকেছে । অন্তত সরাসরি হল রুমের আগে কোন বন্দুক বের করে নি !
-তাতে কি প্রমান হয় ?
-প্রমান হয় যে ওরা ওখানে বেশ শক্ত এবং নিরাপদ অবস্থানেই ছিল । এবং এটা তখনই সম্ভব যখন আপনি জানেন আপনার পরিচয়ের ব্যাপারে কেউ কোন সন্দেহ করছে না কিংবা আপনার ওখানেই থাকার কথা !
-তুমি তাহলে বলতে চাইছো যে.....
-জি স্যার ! আমি তাই বলতে চাইছি । মনে করে আমি এখানে চাকরি করি । আমি এই অফিসের যে কোন জায়গায় যেতে কোন প্রকার ভয় কিংবা দ্বিধা করবো না । কিন্তু একজন সে যদি অবৈধ হয় সে খানে এই প্রতিটা জায়গায় যেতে তার মনে একটা ভয় কাজ করবে ! সে চাইবে তাড়াহুড়া করতে যাতে করে কারো চোখে না পড়তে ! ঠিক তেমনি ওদের আচরন ছিল ধীর এবং স্থির ! ওরা নিশ্চিত ভাবেই জানতো যে ওদের কে ধরার জন্য কেউ আসছে না ! তার মানে খুব বড় কেউ কিংবা বড় কিছু এর পেছনে আছে । আরেকটা ব্যাপার মনে হয় আপনার জানা নেই যেটা হল যাতে করে ব্যাপ আপ না আসতে পারে সেই জন্য ডিজি মোড় খুশরু বাগ আর পিন জিরো পয়েন্টে তিন টা গাড়ি এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে ইচ্ছে করে । যাতে জ্যাম বেঁধে যায় !
-সব দিক দিয়েই একটা পার্ফেক্ট প্লান করেছিল তারা ! সফলও হয়ে যেত যদি না.....
-যদি না সেই আগন্তুক সময় মত চলে আসতো !
কিছুটা সময় কেউ কোন কথা বলল না । দুজনেই চিন্তা করছে ! হঠাৎই মাশরুফ বলে উঠলো
-স্যার !
-হুম !
আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে পিএসএফের কেউ এর সাথে জড়িত ।
-এতো শিওর হয়ে কিভাবে বলছো ?
-দেখুন স্যার, হামলা কারীরা এতো স হজে সিকিউরিটি চেক পার করেছে তার মানে নিশ্চিত ভাবেই তাদের কাছে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স ছিল । আর তাদের কয়েকজনের কাছে পিএসএফের আইডি কার্ডও ছিল ! এর থেকে কি প্রমানিত হয় ? প্রমানিত হয় যে ভেতরে অবশ্য কেউ আছে । আমাদের কেবল জানতে হবে ঐ লোক গুলোকে কারা বা কে রিক্রট করেছিল ! এটা জনাতে পারলে ব্যাপার টা স হজ হবে !
-েটা তো জানা স হজ !! পিএসে এফের টেনিং আর বিভিন্ন সিডিউল অনুযায়ী রিক্রট করার দায়িত্ব একজন থাকেই । সম্ভবত এসিসট্যান্ট জেনারেল সে ! দাড়াও আমি তার নাম টা তোমাকে জানাই !
হাসান সাবের নিজের কম্পিউটার ঘাটতে লাগলো ! নাম টা যখন বের করবে তখনই মাশরুফ বলল
-স্যার !
-দাড়াও ঐ তো পেয়ে গেছি !
-তারট নাম কি পিয়াস রহমান ?
হাসান সাবের তাকিয়ে দেখে মাশরুফের চোখ টিভির দিকে । সেখানে কারো মৃত্যু সংবাদ দেখাচ্ছে সাউন্ট অফ করা কিন্তু নিচে ব্রেকিং নিউজে আকারে লেখা উঠছে যে "পিএসএফের এসিসট্যান্ট জেনারেল পিয়াস রহমান নিজে অফিস রুমে সুইসাইড করে করেছে"
দুজনের যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল । যে একটা ক্রু ছিল সেটাও বন্ধ হয়ে গেল !
-তাহলে আমাদের ধারনা ঠিক মনে হচ্ছে ?
-তাই তো দেখছি !
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫