পূর্ব কথা
জাহির মিয়া এভিনিউ এর ঠিক সামনের রাস্তা । ভাইস প্রেসিডেন্ট ভবনের ঠিক সামনেই দুজন পুলিশ সাদা পোষাকে দাড়িয়ে আছে । তাদের মাঝে কোন প্রকার তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে না । গেটের সামনে কর্ত্বব্যরত পুলিসের সাথে দুজন টুকটাক কথা বলছে । কারো বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তারা ।
সকালের আলো এখনও ঠিক মত ফুটে ওঠে নি । বলতে গেলে পুরো ঢাকা শহর এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ঢাকা শহরের এই এক নীতি, গভীর রাত পর্যন্ত শহর জেগে থাকে কিন্তু সকালে উঠতে দেরি করে ফেলে ।
হঠাৎই দুজন পুলিশ সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়লো । গেট টা খোলাই ছিল । ঠিক সেই সময় গেট দিয়ে বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট জামসের আহমেদ বেরিয়ে এল । বয়স পঞ্চান্ন থেকে ষাটের ভেতরে কিন্তু দেখতে পয়তাল্লিশ বছরের শক্ত সমর্থ্য যুবকের মত মনে হয় । নিয়মিত শরীর চর্চা আর ব্যায়াম করে তিনি নিজের এই স্বাস্থ্য ধরে রেখেছেন !
প্রতিদিন সকালে এই জাহির মিয়া এভিনিউ দিয়ে তার জগিং করা তার অভ্যেস । যখন পুরো ঢাকা শহর ঘুমিয়ে থাকে তখনই তিনি উঠে এখানে জগিং করতে নামেন । এই সময়ে তার সিকিউরিটি খুব একটা থাকে না বললেই চলে । তিনি এতো নিরাপত্তা পছন্দ করেন না । দেশের সব থেকে জনপ্রিয় দলের অন্যতম একজন প্রতিনীধি তিনি । তার ভাষ্য মতে দেশের মানুষ তাদেরকে ভালবাসে । মানুষের কাছ থেকে ভয়ের কিছু নেই ।
তবুও নিয়ম রক্ষার জন্য দুজন পুলিশ তার সাথে সাথে দৌড়ায় !
আজও ঠিক সেই জগিং করার উদ্দেশ্য জামসের আহমেদ নিজের সরকারী বাস ভবন থেকে রওনা হলেন । তার পরনে কালো রংয়ের হাফ প্যান্ট আর সাদা গেঞ্জি ! পায়ে সাদা স্নিকার !
যথা রীতি প্রতিদিনের মত আজও তিনি দৌড় শুরু করলেন । তার পেছনে পুলিশ জন আলস পায়ে দৌড়াতে থাকলো । তিনি প্রতিদিন এই জাহির মিয়া এভিনিউয়ের পুরো রাস্তাটা চার বার চক্কর দেন ! তারপর বাসায় ফেরেন । এই পুরোটা সময় সাধারন এই এলাকায় কেউ আসে না । আসলে এতো সকালে ঢাকা বাসীর ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই !
কিন্তু আজকে হঠাৎ একটা পরিবর্তন দেখা দিল । যখন জামসের আহমেদ এক চক্কর মেরে ফিরে আসছেন তখন কালো রংয়ের লায়ন সাইকেলে করে একজনকে জাহির মিয়া এভিনিউয়ের রাস্তা ধরে সাইকেল চালিয়ে আসতে দেখা গেল । পোষাক পরিচ্ছেদ দেখে মনে হল সেও সকালে সাইকেলিং করতেই বেরিয়েছে । সাধারন পোষাক, ট্রাউজার আর নেভি ব্লু গেঞ্জি ! মাথায় কালো ক্যাপ ! দুজন পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করলো ! আসল পায়ে তারা দৌড়াতে থাকলো ভাইস প্রেসিডেন্টের পিছন পিছন ।
কিন্তু যখনই সাইকেলটা ভাইস প্রেসিডেন্টের সামনে চলে এল তখনই হঠাৎ করেই সাইকেল চালকের ভেতরে একটু চাঞ্চল্য দেখা গেল । সাইকেলের গতি বেড়ে গেলে মুহুর্তেই । ঠিক যখনই দুরুত্ব আর মাত্র ৫০ গজ তখনই সাইকেল চালক নিজের পকেট থেকে একটা কালো রংয়ের ছোট যন্ত্র বের করলো । দুজন পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কালো যন্ত্রটা গর্জে উঠলো ।
ঘটনা ঘটতে সময় লাগলো খুব বেশি হলে ৫ সেকেন্ড ! দুজন পুলিশ কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে কালো ক্যাপ পরা সাইকেল আরোহীর চলে যাওয়া দেখলো । সাইকেলটা খুব দ্রুত তাদের ক্রস করে গেল হারিয়ে গেল বাক ঘুরেই ।
যখন দুজন পুলিশের টনক নড়লো তখনই ওরা খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেল । কোন দিকে যাবে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না । সাইকেল চালকের পেছনে নাকি ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে । প্রেসিডেন্ট এদিকে বুকের মাটতে পরে আছেন ।
শেষে সাইকেলের পেছনে না গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছেই যাওয়ার জন্যই মনস্থির করলো তারা !
দুজন জামসের আহমেদের কাছে এসে হাজির হল । ভাইস প্রেসিডেন্ট বুকের ঠিক উপরে হাত চেপে পড়ে আছে । গুলি টা গেছে টা রঠিক কাধের নিচে ! যতই সাদা গেঞ্জি রক্তে ভেসে গেছে তবুও দুজন পুলিশ নিশ্চিন্ত হলেন যে ভাইস প্রেসিডেন্ট বেঁচে আছে । মরে যাওয়ার মত গুলি তিনি খান নি । তবে আরেকটু নিচে গুলিটা লাগলে হয়তো তার আর বেঁচে থাকা হত না !
দুজন পুলিশের একজন পকেট থেকে ওয়্যারলেস বের কর সাহায্যের জন্য ডাক দিল !
এক
জাপান-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ! প্রধান হল রুমে আজ জাতীয় অর্থনৈতিক দি-বার্ষিক সম্মলনের উদ্ভোদনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে । প্রধান অতিথি হিসাবে আসন গ্রহন করেছে দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমান খান ! সাথে আছেন অর্থমন্ত্রী হুসাইন আবেদ আলী এবং বাংলাদেশ অর্থনীতির সমীতির নির্বাহী প্রধান সহ আরো গন্যমান্য কর্ম-কর্তারা । এছাড়া আরও একলজন সারপ্রাইজ গেস্ট আছে । প্রেসিডেন্টের মেয়ে নিকিতা রহমান খান ! সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করে দেশে এসেছে !
প্রথমে যদিও তার বসার জন্য স্টেজে চেয়ার রাখা হয়েছিল কিন্তু নিকিতা সেখানে বসতে চায় নি । সামনের একটা সোফায় বসেছে ।
একটু আগে বেশ কয়েকজন তাদের বক্তব্য দিয়ে গেছেন । এখন প্রধান অথিতির বক্তব্য দেওয়ার সময় ! চারিদিকে পিনপতন নিরবতা । সবাই আগ্রহ নিয়ে প্রসিডেন্টের কথা শোনার জন্য বসে আছে ।
প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান একজন জনপ্রিয় নেতার সাথে সাথে একজন জনপ্রিয় বক্তাও বটে । তিনি যখন কথা বলেন সবাই কি যেন এক মোহের ভিতর চলে যান ! অন্য কোন কিছুতে তাদের খেয়াল থাকে না !
কিন্তু নিকিতার মনযোগ সে দিকে নেই । তাকে বেশ খানিকটা চিন্তিত মনে হচ্ছে । অবশ্য তার চিন্তার কারনও আছে । গত পরশু দিনের ফোনের কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না । ভোলা মনে হয় উচিৎও না !
নিকিতার ফোন নাম্বার পরিচিত মানুষ মানুষজন ছাড়া আর কারো কাছে থাকার কথা না । হাজার হলেও দেশের প্রেসিডেন্টের মেয়ে বলে কথা । তাই যখন ফোন করে কেউ তার নাম ধরে সম্মধোন করলো তখন ব্যাপার টা একটু সিরিয়াসলি নিতে হল !
ফোন টা এসেছিল ঠিক সকালের দিকে । কেবলই সকালের নাস্তা সেরে নিকিতা নিজের রুমে এসেছে ঠিক তখনই নিকিতার ফোন বেজে উঠলো ।
অপরিচিত নাম্বার দেখে একটু অবাক হল । স্বাধারনত ওর নাম্বারে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে না । নিকিতার মনে হল পরিচিত হয়তো কেউ নতুন নাম্বার থেকে ফোন করেছে ।
ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় শুনতে পেল
-যা বলছি একটু মনযোগ দিয়ে শুনো !
গলাটা ঠিক অপরিচিত মনে হল নিকিতার কাছে । নিকিতা বলল
-সরি, কে বলছেন ?
-আমি কে, এটা জরুরী প্রশ্ন না মিস নিকিতা ! আমি তোমাকে এখন যা বলতে যাচ্ছি সেইটা জরুরী প্রশ্ন !
অপরিচিত কলারের মুখে নিজের নাম শুনে একটু চমকালো । তার মানে ওপাশের লোকটা তাকে চিনে । এবং সাধারন কেউ না । না হলে তার ফোন নাম্বার যোগার করতে পারতো না !
-কে বলছে না আপনি ?
-আবারও ভুল প্রশ্ন !
-দেখুন আপনি কে না জানলে আমি আপনার সাথে কথা বলব না !
-ব্যাপার টা আপনার বাবার জীবন সম্পর্কৃত হলেও না ?
ফোন টা রাখার জন্য বাটনে চাপ দিতে গিয়েও দিতে পারলো না ! কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলল না । তারপর নিকিতা বলল
-আচ্ছা কি বলবেন বলুন ?
-আগামি পরশু দিন আপনার বাবার জাপান-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে যে প্রোগ্রাম আছে সেটা তে তাকে যেতে দিবেন না দয়া করে !
-কেন ?
-কারন সেখানে তার উপর হামলা হবে !
নিকিতা হেসে ফেলল !
-আপনার মাথা কি ঠিক আছে ? আপনি কার কথা বলছেন একটু ভেবে দেখেছেন ?
-জি ! আমি সব কিছু জেনেই বলছি !
-তাহলে সম্ভবত আপনার মাথা ঠিক নেই!আপনি আমার যথেষ্ঠ সময় নষ্ট করেছেন ! এখন রাখি!
-আপনার বাবার আগামী পরশু দিন ঠিক ১১টা ০৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হবে । উত্তর দিকের গেট দিয়ে বের হবেন । এবং ৫ নাম্বার রাস্তা টা দিয়ে জাপান-মৈত্রীর দিকে যাবেন । যদিও আরও তিনটা রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় । তিনটা ব্ল্যাক পাজেরোর ঠিক শেষের পাজেরোতে থাকবেন তিনি । তার গাড়ীর নাম্বার হল ঢাকা ক ০২৩৪৫ !
এক টানা কথা বলে অপরিচিত কলার কিছুটা সময় থামলো ! তারপর বলল
-এর পরে তিনি কোথায় কোথায় থামবেন এবং কি কি করবেন কোন গেট দিয়ে কেন্দ্রে ঢুকবেন আমি সেটা আপনাকে মেইল করে দিচ্ছি ! একটা কথা মনে রাখবেন এই খবর গুলো যেহেতু আমি ম্যানেজ করতে পেরেছি অন্য যে কেউও নিশ্চই পারবে ! রাখি !
আর দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল । লোকটা তার ইমেইল আইডিও জানে । অবশ্য যে লোকটা তার ফোন নাম্বার যোগার করতে পেরেছে তার জন্য মেইলের ঠিকানা যোগার করা নিশ্চই খুব একটা সমস্যা না !
সে দ্রুত মোবাইল থেকেই মেইল টা চেক করলো ! তারপর সোজা গিয়ে হাজির হল ওর বাবার চিপ সিকিউরিটি অফিসার আহমেদ আসাদের কাছে ।
-আঙ্কেল বাবার আগামী পরশু দিনের জাপান-মৈত্রীর সিডিউল তৈরি হয়েছে ?
আহমেদ আসাদ বলল
-হয়েছে মা-মনি ! কেন ?
-আমাকে একটু দিবেন ?
-মা-মনি ! এটা তো গোপন বিষয় ! কাউকে দেওয়া যাবে না !
-প্লিজ আঙ্কেল ! একটু দরকার !
-সরি মা মনি ! এটা কাউকে দেওয়া যাবে না !
নিকিতা কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো ! তাপরর নিজের মোবাইলের মেইলটা আহমেদ আসাদ কে দেখালো !
-আচ্ছা আমাকে দেওয়া লাগবে না ! আপনি এটা দেখুন তো !
আহমেদ আসাদ কিছুক্ষন মেইল টা দেখলো ! আহমেদ আসাদের মুখ টা খানিকটা কালো হয়ে গেল !
নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা তোমাকে কে দিয়েছে মা মনি ?
-একজন পাঠিয়েছে ! এবং আমাকে বলেছে যে ঐ দিন নাকি আব্বুর উপর একাট হবে ! আমার তো খুব ভয় লাগছে !
আহমেদ আসাদের চেহারাও বেশ গম্ভীর মনে হল ! নিকিতাকে বলল
-আচ্ছা আমি দেখছি ! তুমি চিন্তা কর না ! আমি দেখছি !
নিকিতা ভেবেছিল প্রোগ্রাম বাতিল হবে হয়তো ! কিন্তু প্রোগ্রাম বাতিল হল না । প্রেসিডেন্টের জন্যই বাতিল হল না ! প্রেসিডেন্ট হেসে বলল
-আরে এতো ভয় পেলে চলে নাকি ! যদি এই ভয়েই আমি প্রোগ্রাম বাতিল করে দেই তাহলে দেশ চালাবো কিভাবে ?
নিকিতা এবং আহমেদ আসাদ আরও কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু প্রেসিডেন্ট কিছুতেই শুনলো না !
নিকিতা তাই বাবার সাথে এখানে এসে হাজির হয়েছে । কিছুতেই একা একা শান্তি পাচ্ছিলো না প্রেসিডেন্ট বাস ভবনে !
নিকিতার বাবা যখন ভাষন দেওয়ার জন্য মাইকের কাছে গিয়ে হাজির হল ঠিক তখনই এক সাথে পুরো হল রুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেল ! কেউ কেউ চিৎকার করে উঠলো ! চারিদিকে একটা অন্ধকারে ঢেকে গেলো কয়েক মুহুর্তে !
কিন্তু নিকিতা চমকে উঠলো । তাহলে যা আশংকা করেছিলো তাই হতে যাচ্ছে । এতো টাইট সিকিউরিটির ভিতর এটা কিভাবে সম্ভব ! নিকিতা কিছুই ভাবতে পারছিলো না !
নিকিতা তখনই এক সাথে চাপা কিছুর আওয়াজে শুনলো ! যেন ভারি কিছুতে গিয়ে কিছু একটা আঘাত করলো ! নিকিতার বুঝতে অসুবিধা হল না কেউ সাইলেন্সার লাগিয়ে কাউকে গুলি করেছে । একটা না বেশ কয়েকটা ! অথবা বেশ কয়েকজন কে ! ঘটনা গুলো ঘটলো খুব দ্রুত ! নিকিতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার লাইট জ্বলে উঠলো !
কিন্তু ততক্ষনে অনেক কিছু বদলে গেছে । নিকিতা দেখলো দুজন মুখোস পরা মানুষ তার বাবাকে ঘিরে রেখেছে । পুরো হল রুমে যত জন প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্সের লোক ছিল তার কেউ মাথা উচু করে নেই আর । মাটিতে শুয়ে আছে । পড়ে থাকা ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তাদের কেউ আর বেঁচে নেই ! তাদের বদলে গোটা দশেক কালো মুখোস পরা মানুষ অটিমেটিক একএইচ ৪৫ গান নিয়ে পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
নিকিতা তাকিয়ে দেখলো আহমেদ আসাদের মাথায় একজন বন্দুকের নল ঠেকিয়া তাকে স্টেলেজের এক কোনায় দাড় করিয়ে রেখেছে । যে দুইজন প্রেসিডেন্টের মাথায় বন্দুক ধরে রেখেছিল তাদের একজন বলে উঠলো
-কারো কোন প্রকার ক্ষতি হোক আমরা চাই না । কিন্তু যদি আপনারা সহযোগিতা না করেন তাহলে আমাদের কিছু করার নেই ! জন ! ফ্রন্ট গেইট ক্লিয়ার ?
-ক্লিয়ার !
-আপনারা আস্তে আস্তে লাইন ধরে সবাই বের হয়ে যান ! দয়া করে কেউ হিরো সাজতে যাবেন না ! কেবল মারা পড়বেন । আর কিছু না !
বলা মাত্র কাজ হল । সবাই লাইন ধরে বের হওয়া শুরু করলো !
নিকিতা কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না ! ও কি সবার সাথে বের হয়ে যাবে নাকি বাবার সাথে থাকবে । যখনই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না তখনই কালো মুখোস পরা লোকটা পরা লোকটা আবার বলল
-নো ! মাই ডার্লিং নিকিতা ! তুমি না ! স্টেজে উঠে এসো !
নিকিতা এমনিতেও বাবাকে এই বিপদে ফেলে যেত না । সে উঠে স্টেজের দিকে এগিয়ে আস্তে লাগলো !
প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান বলল
-আমি আছি ! ওকে যেতে দাও !
কালো মুখোস পরা বলল
-নো মাই ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ! শী ইজ আওয়ার ইন্সুরেন্স !
যখন শেষ মানুষটাও হল রুম ছেড়ে চলে গেল তখন কেবল পুরো হল রুমে গোটা দশেক কালো মুখো পরা মানুষ ! নিকিতা, আহমেদ আসাদ আর প্রেসিডেন্ট !
প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান বলল
-তোমরা এখান থেকে জীবিত পার পাবে না ! ব্যাক-আপ আসবে !
কথা যেন খুব মজার কিছু একটা ছিল ! হাহাহা করে হেসে উঠলো মুখোস পরা লোকটা ! কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে ঠিক তখনই আবার পুরো হল রুমের আলো চলে গেল । কয়েকবার গুলি চলল ! কিছু চিৎকার ! তারপর আবার নিরবতা !
যখন আবার আলো এল নিকিতা দেখলো যে কালো মুখো পরা মানুষ গুলো দাড়িয়ে আছে তারা সবাই এবার মাটিতে পড়ে আছে । এমনি স্টেটেজের সেই নেতা গোছের মানুষটাও ! কেবল একজন অপরিচত মানুষ কে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের কাছে । আহমেদ আসাদ ও ততক্ষনে প্রেসিডেন্টের কাছ পৌছে গেছে ।
নিকিতার কিছু সময় কেবল শক হয়ে দাড়িয়ে রইলো । এখনও তার বাবা যে অক্ষত আছে এটা যেন ঠিক তার বিশ্বাস হচ্ছে না !
-আব্বু তুমি ঠিক আছে ?
প্রেসিডেন্ট বললেন
-এখনও পর্যন্ত ! তুমি কোন চিন্তা কর না ! ব্যাক-আপ অন দা ওয়ে !
-সরি স্যার !
নিকিতা দেখলো সামনে দাড়ানো সেই কালো মুখোশ পরা আগন্তক বলল
-সরি ! স্যার কোন ব্যাক আপ আসছে না !
-হোয়াট ননসেন্স ই্উ টকিং !
-আই এম টকিং দ্য ট্রুথ স্যার ! আপনার ব্যাক আপ আসতে এখনও আধা ঘন্টার বেশি লাগবে ! আর ওদের ব্যাক-আপ আসতে ৫ মিনিট !
আসমেদ আসাদ পেছনেই ছিল ! সে পিস্তল তাক করে রেখেছে আগন্তকের দিকে ! ওয়্যারলেস কি যেন কথা বলার চেষ্টা করছে সে !
কিছুক্ষন চেষ্টার পরে আহমেদ আসাদ বলল
-স্যার আমাদের এখানকার ব্যাক আপ কেউ কেই সাড়া দিচ্ছে না !
-স্যার উই হ্যাভ টু মুভ ফাস্ট ! স্যার ! দে আর কামিং !
আজিজুল রহমান বলল
-হু আর ইউ ? আমরা কেন তোমার কথা শুনবো ?
-কারন এটা ছাড়া আপনাদের আর কোন উপায় নেই ! এখান থেক বেঁচে ফেরার যে ক্ষীন সম্ভবনা টুকু আছে সেটা কেবল মাত্র আমি !
নিকিতার আসলেই কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না । আসলেই তার সাথে এমন কিছু হচ্ছে । এতো দিন মুভিতে যে দৃশ্য গুলো দেখেছে এখন সেইটা তার সাথেই হচ্ছে ।
আহমেদ আসাদ বলল
-কি আমরা কিভাবে বের হব ?
আগন্তুক বলল
-সামনের কোন দরজা দিয়ে বের হওয়া যাবে না ! ওরা সব ওদিক দিয়েই আসছে এবং ওরা সবাই সুইসাইড মিশনে এসেছে । ওদের এক মাত্র টার্গেট হল আপনি ! আর কেউ না ! প্রয়োজনে ওরা পুরো বিল্ডিং উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করবে না ! পেছনের টানেলের দিয়ে আমাদের যেতে হবে ! আসুন আমরা আমার সাথে ।
তিন জনের ছোট দল টা কালো আগন্তুকের পিছু নিলো ! আহমেদ আসাদ পিছনে মাঝ খানে নিকিতা এবং তার বাবা ! কালো আগন্তক হল রুম থেকে তাদের কে সোজা ডান দিকের বাধরুমে নিয়ে গেল ।
এখানে কেন ?
কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই দেখলো বাধরুমের বাঁ দিকে আগন্তুক কিছু একটা খুজছে যেন !
-আপনি কি খুজছেন ? এখানে কেন আসলেন !
নিকিতা কিছুতেই বুঝতে পারছে না ! ও যেন হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে !
আসাদ আরেকবার দরজা দিয়ে বাইরে দেখে এল !
ওদের কথা বার্তা শোনা যাচ্ছে ।
-হোয়াট আর উই ডুয়িং ?
-আপনি কি করছেন ?
আরও কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই নিকিতার সাথে ওর বাবা ও বেশ অবাক হল ! আগন্তুক বাধরুমের ভিতরে একটা গুপ্ত দরজা খুলে ফেলেছে ! এখানে দরজা আছে এটা তাদের জানা ছিল না ।
আসাদ তো বেশ খানিটা অবাক হল ! ইমাজেন্সি গেট টা এখান থেকে আরও দুরে । ও তো সেদিক দিয়ে বের হওয়ার কথা ভাবছিল !
আসাদ বলল
-এদিক দিয়ে না গিয়ে ইমার্জেনন্সি গেট দিয়ে গেলে ভাল হত না ?
আগন্তুক বলল
-ওরাও আপনার জন্য ওখানে অপেক্ষা করছে !
-ওরা কারা !
-জানা যাবে ! এখন আলোচনা নয় ! জীবিত থাকাটাই জরুরী ! আসুন !
ওরা সবাই আগন্তক পিছু পিছু যেতে যেতে লাগলো ! অন্ধকারের ভিতর কতক্ষন ওরা দৌড়িয়েছে ওরা বলতে পারবে না ! পুরানো স্যাঁতস্যাতে টানেলে যেন অনেক দিন কেউ আসে নাই ! কত সময় দিয়ে হাটছে কে জানে ! নিকিতার মনে হল যেন এই পথের যেন আর শেষ হবে না !
তবে একটা সময় সামনে আলো দেখতে পেল ! টানেলের মুখ দেখা যাচ্ছে !
নিকিতারা বাইরে বের হয়ে দেখলো টানলের মুখ টা ওদের একেবারে পিছনের দিকে নদীর কাছে নিয়ে এসেছে । নদীটা শহরের একপাশে অবস্থিত । এতোদুর কিভাবে এল সেইটাই বুঝতে পারছে না !
নিকিতা দেখলো নদীর পাড়ে একটা স্পীড বোট বাঁধা !
আগন্তক আহমেদ আসাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি স্পীড বোট চালাতে পারেন ?
-পারবো মনে হয় !
-ওকে শুনুন মন দিয়ে ! এখান দিয়ে সোজা উঠবেন বড় রায়বাজার এলাকায় দিক থেকে । দেখবেন ওখানে একটা হলুদ রংয়ের ক্যাব রাখা আছে । সেখান থেকে ক্যাব নিয়ে সোজা প্রেসিডেন্ট ভবনে হাজির হবেন । খবরদার এর ভিতরে কাউকে ফোন দিবেন না ! কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না ! আপনাদের বাস ভবনে পৌছানে আধা ঘন্টার মত লাগার কথা ! ঠিক ৩০ মিনিট পরে এক প্লাটুন আর্মি বাসভবনে পৌছাবে ! সাবধান ! এর আগে কাউকে ফোন দিবেন না ! মনে থাকবে ?
আসাদ মাথা নাড়ালো !
নিকিকে কে নিয়ে যখন সবাই স্পীড বোটে উঠলো আজিজুল রহমান খান বলল
-কে তুমি ? আমাদের কেন বাঁচালে ?
এই কথা শুনে আগন্তুক হাসলো !
যদিও আগন্তুকের মুখ ঢাকা তবুও নিকিতার বুঝতে কষ্ট হলে না যে আগন্তনক হাসছে !
তারপর বলল
-আপনি দেশের সম্পদ ! আপনাকে মরতে দিলে দেশ টা আবার পিছিয়ে যাবে ! অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আপনার কিছু হতে দিবো না !
-তোমার নাম কি ?
-আমি আপনার দেশেরই একজন ! আসাদ সাহেব, যা বলছি করুন ! দেরি হয়ে যাচ্ছে !
আগন্তক আবার টানেলের দিকে হাটা দিল !
নিকিতার কানে কেবল একটা কথাই বাজতে লাগলো ! অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আপনার কিছু হতে দিবো না !
আহমেদ আসাদ ততক্ষনে স্পীড বোট ছেড়ে দিয়েছে । দুর ঠেকে ক্ষীন ভাবে গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো ! নিকিতার মনে অচেনা আগন্তুকের জন্য চিন্তা হতে লাগলো !
পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩