somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অচেনা আগন্তুক

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পূর্ব কথা

জাহির মিয়া এভিনিউ এর ঠিক সামনের রাস্তা । ভাইস প্রেসিডেন্ট ভবনের ঠিক সামনেই দুজন পুলিশ সাদা পোষাকে দাড়িয়ে আছে । তাদের মাঝে কোন প্রকার তাড়াহুড়া দেখা যাচ্ছে না । গেটের সামনে কর্ত্বব্যরত পুলিসের সাথে দুজন টুকটাক কথা বলছে । কারো বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে তারা ।

সকালের আলো এখনও ঠিক মত ফুটে ওঠে নি । বলতে গেলে পুরো ঢাকা শহর এখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । ঢাকা শহরের এই এক নীতি, গভীর রাত পর্যন্ত শহর জেগে থাকে কিন্তু সকালে উঠতে দেরি করে ফেলে ।

হঠাৎই দুজন পুলিশ সোজা হয়ে দাড়িয়ে পড়লো । গেট টা খোলাই ছিল । ঠিক সেই সময় গেট দিয়ে বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট জামসের আহমেদ বেরিয়ে এল । বয়স পঞ্চান্ন থেকে ষাটের ভেতরে কিন্তু দেখতে পয়তাল্লিশ বছরের শক্ত সমর্থ্য যুবকের মত মনে হয় । নিয়মিত শরীর চর্চা আর ব্যায়াম করে তিনি নিজের এই স্বাস্থ্য ধরে রেখেছেন !

প্রতিদিন সকালে এই জাহির মিয়া এভিনিউ দিয়ে তার জগিং করা তার অভ্যেস । যখন পুরো ঢাকা শহর ঘুমিয়ে থাকে তখনই তিনি উঠে এখানে জগিং করতে নামেন । এই সময়ে তার সিকিউরিটি খুব একটা থাকে না বললেই চলে । তিনি এতো নিরাপত্তা পছন্দ করেন না । দেশের সব থেকে জনপ্রিয় দলের অন্যতম একজন প্রতিনীধি তিনি । তার ভাষ্য মতে দেশের মানুষ তাদেরকে ভালবাসে । মানুষের কাছ থেকে ভয়ের কিছু নেই ।

তবুও নিয়ম রক্ষার জন্য দুজন পুলিশ তার সাথে সাথে দৌড়ায় !
আজও ঠিক সেই জগিং করার উদ্দেশ্য জামসের আহমেদ নিজের সরকারী বাস ভবন থেকে রওনা হলেন । তার পরনে কালো রংয়ের হাফ প্যান্ট আর সাদা গেঞ্জি ! পায়ে সাদা স্নিকার !

যথা রীতি প্রতিদিনের মত আজও তিনি দৌড় শুরু করলেন । তার পেছনে পুলিশ জন আলস পায়ে দৌড়াতে থাকলো । তিনি প্রতিদিন এই জাহির মিয়া এভিনিউয়ের পুরো রাস্তাটা চার বার চক্কর দেন ! তারপর বাসায় ফেরেন । এই পুরোটা সময় সাধারন এই এলাকায় কেউ আসে না । আসলে এতো সকালে ঢাকা বাসীর ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই !

কিন্তু আজকে হঠাৎ একটা পরিবর্তন দেখা দিল । যখন জামসের আহমেদ এক চক্কর মেরে ফিরে আসছেন তখন কালো রংয়ের লায়ন সাইকেলে করে একজনকে জাহির মিয়া এভিনিউয়ের রাস্তা ধরে সাইকেল চালিয়ে আসতে দেখা গেল । পোষাক পরিচ্ছেদ দেখে মনে হল সেও সকালে সাইকেলিং করতেই বেরিয়েছে । সাধারন পোষাক, ট্রাউজার আর নেভি ব্লু গেঞ্জি ! মাথায় কালো ক্যাপ ! দুজন পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করলো ! আসল পায়ে তারা দৌড়াতে থাকলো ভাইস প্রেসিডেন্টের পিছন পিছন ।

কিন্তু যখনই সাইকেলটা ভাইস প্রেসিডেন্টের সামনে চলে এল তখনই হঠাৎ করেই সাইকেল চালকের ভেতরে একটু চাঞ্চল্য দেখা গেল । সাইকেলের গতি বেড়ে গেলে মুহুর্তেই । ঠিক যখনই দুরুত্ব আর মাত্র ৫০ গজ তখনই সাইকেল চালক নিজের পকেট থেকে একটা কালো রংয়ের ছোট যন্ত্র বের করলো । দুজন পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কালো যন্ত্রটা গর্জে উঠলো ।

ঘটনা ঘটতে সময় লাগলো খুব বেশি হলে ৫ সেকেন্ড ! দুজন পুলিশ কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে কালো ক্যাপ পরা সাইকেল আরোহীর চলে যাওয়া দেখলো । সাইকেলটা খুব দ্রুত তাদের ক্রস করে গেল হারিয়ে গেল বাক ঘুরেই ।

যখন দুজন পুলিশের টনক নড়লো তখনই ওরা খানিকটা দ্বিধায় পড়ে গেল । কোন দিকে যাবে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না । সাইকেল চালকের পেছনে নাকি ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে । প্রেসিডেন্ট এদিকে বুকের মাটতে পরে আছেন ।

শেষে সাইকেলের পেছনে না গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছেই যাওয়ার জন্যই মনস্থির করলো তারা !

দুজন জামসের আহমেদের কাছে এসে হাজির হল । ভাইস প্রেসিডেন্ট বুকের ঠিক উপরে হাত চেপে পড়ে আছে । গুলি টা গেছে টা রঠিক কাধের নিচে ! যতই সাদা গেঞ্জি রক্তে ভেসে গেছে তবুও দুজন পুলিশ নিশ্চিন্ত হলেন যে ভাইস প্রেসিডেন্ট বেঁচে আছে । মরে যাওয়ার মত গুলি তিনি খান নি । তবে আরেকটু নিচে গুলিটা লাগলে হয়তো তার আর বেঁচে থাকা হত না !

দুজন পুলিশের একজন পকেট থেকে ওয়্যারলেস বের কর সাহায্যের জন্য ডাক দিল !






এক
জাপান-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ! প্রধান হল রুমে আজ জাতীয় অর্থনৈতিক দি-বার্ষিক সম্মলনের উদ্ভোদনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে । প্রধান অতিথি হিসাবে আসন গ্রহন করেছে দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমান খান ! সাথে আছেন অর্থমন্ত্রী হুসাইন আবেদ আলী এবং বাংলাদেশ অর্থনীতির সমীতির নির্বাহী প্রধান সহ আরো গন্যমান্য কর্ম-কর্তারা । এছাড়া আরও একলজন সারপ্রাইজ গেস্ট আছে । প্রেসিডেন্টের মেয়ে নিকিতা রহমান খান ! সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করে দেশে এসেছে !

প্রথমে যদিও তার বসার জন্য স্টেজে চেয়ার রাখা হয়েছিল কিন্তু নিকিতা সেখানে বসতে চায় নি । সামনের একটা সোফায় বসেছে ।

একটু আগে বেশ কয়েকজন তাদের বক্তব্য দিয়ে গেছেন । এখন প্রধান অথিতির বক্তব্য দেওয়ার সময় ! চারিদিকে পিনপতন নিরবতা । সবাই আগ্রহ নিয়ে প্রসিডেন্টের কথা শোনার জন্য বসে আছে ।
প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান একজন জনপ্রিয় নেতার সাথে সাথে একজন জনপ্রিয় বক্তাও বটে । তিনি যখন কথা বলেন সবাই কি যেন এক মোহের ভিতর চলে যান ! অন্য কোন কিছুতে তাদের খেয়াল থাকে না !
কিন্তু নিকিতার মনযোগ সে দিকে নেই । তাকে বেশ খানিকটা চিন্তিত মনে হচ্ছে । অবশ্য তার চিন্তার কারনও আছে । গত পরশু দিনের ফোনের কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না । ভোলা মনে হয় উচিৎও না !

নিকিতার ফোন নাম্বার পরিচিত মানুষ মানুষজন ছাড়া আর কারো কাছে থাকার কথা না । হাজার হলেও দেশের প্রেসিডেন্টের মেয়ে বলে কথা । তাই যখন ফোন করে কেউ তার নাম ধরে সম্মধোন করলো তখন ব্যাপার টা একটু সিরিয়াসলি নিতে হল !
ফোন টা এসেছিল ঠিক সকালের দিকে । কেবলই সকালের নাস্তা সেরে নিকিতা নিজের রুমে এসেছে ঠিক তখনই নিকিতার ফোন বেজে উঠলো ।
অপরিচিত নাম্বার দেখে একটু অবাক হল । স্বাধারনত ওর নাম্বারে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে না । নিকিতার মনে হল পরিচিত হয়তো কেউ নতুন নাম্বার থেকে ফোন করেছে ।

ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় শুনতে পেল
-যা বলছি একটু মনযোগ দিয়ে শুনো !
গলাটা ঠিক অপরিচিত মনে হল নিকিতার কাছে । নিকিতা বলল
-সরি, কে বলছেন ?
-আমি কে, এটা জরুরী প্রশ্ন না মিস নিকিতা ! আমি তোমাকে এখন যা বলতে যাচ্ছি সেইটা জরুরী প্রশ্ন !

অপরিচিত কলারের মুখে নিজের নাম শুনে একটু চমকালো । তার মানে ওপাশের লোকটা তাকে চিনে । এবং সাধারন কেউ না । না হলে তার ফোন নাম্বার যোগার করতে পারতো না !
-কে বলছে না আপনি ?
-আবারও ভুল প্রশ্ন !
-দেখুন আপনি কে না জানলে আমি আপনার সাথে কথা বলব না !
-ব্যাপার টা আপনার বাবার জীবন সম্পর্কৃত হলেও না ?
ফোন টা রাখার জন্য বাটনে চাপ দিতে গিয়েও দিতে পারলো না ! কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলল না । তারপর নিকিতা বলল
-আচ্ছা কি বলবেন বলুন ?
-আগামি পরশু দিন আপনার বাবার জাপান-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে যে প্রোগ্রাম আছে সেটা তে তাকে যেতে দিবেন না দয়া করে !
-কেন ?
-কারন সেখানে তার উপর হামলা হবে !
নিকিতা হেসে ফেলল !
-আপনার মাথা কি ঠিক আছে ? আপনি কার কথা বলছেন একটু ভেবে দেখেছেন ?
-জি ! আমি সব কিছু জেনেই বলছি !
-তাহলে সম্ভবত আপনার মাথা ঠিক নেই!আপনি আমার যথেষ্ঠ সময় নষ্ট করেছেন ! এখন রাখি!
-আপনার বাবার আগামী পরশু দিন ঠিক ১১টা ০৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হবে । উত্তর দিকের গেট দিয়ে বের হবেন । এবং ৫ নাম্বার রাস্তা টা দিয়ে জাপান-মৈত্রীর দিকে যাবেন । যদিও আরও তিনটা রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় । তিনটা ব্ল্যাক পাজেরোর ঠিক শেষের পাজেরোতে থাকবেন তিনি । তার গাড়ীর নাম্বার হল ঢাকা ক ০২৩৪৫ !

এক টানা কথা বলে অপরিচিত কলার কিছুটা সময় থামলো ! তারপর বলল
-এর পরে তিনি কোথায় কোথায় থামবেন এবং কি কি করবেন কোন গেট দিয়ে কেন্দ্রে ঢুকবেন আমি সেটা আপনাকে মেইল করে দিচ্ছি ! একটা কথা মনে রাখবেন এই খবর গুলো যেহেতু আমি ম্যানেজ করতে পেরেছি অন্য যে কেউও নিশ্চই পারবে ! রাখি !


আর দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল । লোকটা তার ইমেইল আইডিও জানে । অবশ্য যে লোকটা তার ফোন নাম্বার যোগার করতে পেরেছে তার জন্য মেইলের ঠিকানা যোগার করা নিশ্চই খুব একটা সমস্যা না !
সে দ্রুত মোবাইল থেকেই মেইল টা চেক করলো ! তারপর সোজা গিয়ে হাজির হল ওর বাবার চিপ সিকিউরিটি অফিসার আহমেদ আসাদের কাছে ।
-আঙ্কেল বাবার আগামী পরশু দিনের জাপান-মৈত্রীর সিডিউল তৈরি হয়েছে ?
আহমেদ আসাদ বলল
-হয়েছে মা-মনি ! কেন ?
-আমাকে একটু দিবেন ?
-মা-মনি ! এটা তো গোপন বিষয় ! কাউকে দেওয়া যাবে না !
-প্লিজ আঙ্কেল ! একটু দরকার !
-সরি মা মনি ! এটা কাউকে দেওয়া যাবে না !

নিকিতা কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো ! তাপরর নিজের মোবাইলের মেইলটা আহমেদ আসাদ কে দেখালো !
-আচ্ছা আমাকে দেওয়া লাগবে না ! আপনি এটা দেখুন তো !

আহমেদ আসাদ কিছুক্ষন মেইল টা দেখলো ! আহমেদ আসাদের মুখ টা খানিকটা কালো হয়ে গেল !
নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা তোমাকে কে দিয়েছে মা মনি ?
-একজন পাঠিয়েছে ! এবং আমাকে বলেছে যে ঐ দিন নাকি আব্বুর উপর একাট হবে ! আমার তো খুব ভয় লাগছে !
আহমেদ আসাদের চেহারাও বেশ গম্ভীর মনে হল ! নিকিতাকে বলল
-আচ্ছা আমি দেখছি ! তুমি চিন্তা কর না ! আমি দেখছি !

নিকিতা ভেবেছিল প্রোগ্রাম বাতিল হবে হয়তো ! কিন্তু প্রোগ্রাম বাতিল হল না । প্রেসিডেন্টের জন্যই বাতিল হল না ! প্রেসিডেন্ট হেসে বলল
-আরে এতো ভয় পেলে চলে নাকি ! যদি এই ভয়েই আমি প্রোগ্রাম বাতিল করে দেই তাহলে দেশ চালাবো কিভাবে ?
নিকিতা এবং আহমেদ আসাদ আরও কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু প্রেসিডেন্ট কিছুতেই শুনলো না !

নিকিতা তাই বাবার সাথে এখানে এসে হাজির হয়েছে । কিছুতেই একা একা শান্তি পাচ্ছিলো না প্রেসিডেন্ট বাস ভবনে !

নিকিতার বাবা যখন ভাষন দেওয়ার জন্য মাইকের কাছে গিয়ে হাজির হল ঠিক তখনই এক সাথে পুরো হল রুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেল ! কেউ কেউ চিৎকার করে উঠলো ! চারিদিকে একটা অন্ধকারে ঢেকে গেলো কয়েক মুহুর্তে !

কিন্তু নিকিতা চমকে উঠলো । তাহলে যা আশংকা করেছিলো তাই হতে যাচ্ছে । এতো টাইট সিকিউরিটির ভিতর এটা কিভাবে সম্ভব ! নিকিতা কিছুই ভাবতে পারছিলো না !
নিকিতা তখনই এক সাথে চাপা কিছুর আওয়াজে শুনলো ! যেন ভারি কিছুতে গিয়ে কিছু একটা আঘাত করলো ! নিকিতার বুঝতে অসুবিধা হল না কেউ সাইলেন্সার লাগিয়ে কাউকে গুলি করেছে । একটা না বেশ কয়েকটা ! অথবা বেশ কয়েকজন কে ! ঘটনা গুলো ঘটলো খুব দ্রুত ! নিকিতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার লাইট জ্বলে উঠলো !


কিন্তু ততক্ষনে অনেক কিছু বদলে গেছে । নিকিতা দেখলো দুজন মুখোস পরা মানুষ তার বাবাকে ঘিরে রেখেছে । পুরো হল রুমে যত জন প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি ফোর্সের লোক ছিল তার কেউ মাথা উচু করে নেই আর । মাটিতে শুয়ে আছে । পড়ে থাকা ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তাদের কেউ আর বেঁচে নেই ! তাদের বদলে গোটা দশেক কালো মুখোস পরা মানুষ অটিমেটিক একএইচ ৪৫ গান নিয়ে পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।

নিকিতা তাকিয়ে দেখলো আহমেদ আসাদের মাথায় একজন বন্দুকের নল ঠেকিয়া তাকে স্টেলেজের এক কোনায় দাড় করিয়ে রেখেছে । যে দুইজন প্রেসিডেন্টের মাথায় বন্দুক ধরে রেখেছিল তাদের একজন বলে উঠলো

-কারো কোন প্রকার ক্ষতি হোক আমরা চাই না । কিন্তু যদি আপনারা সহযোগিতা না করেন তাহলে আমাদের কিছু করার নেই ! জন ! ফ্রন্ট গেইট ক্লিয়ার ?
-ক্লিয়ার !
-আপনারা আস্তে আস্তে লাইন ধরে সবাই বের হয়ে যান ! দয়া করে কেউ হিরো সাজতে যাবেন না ! কেবল মারা পড়বেন । আর কিছু না !

বলা মাত্র কাজ হল । সবাই লাইন ধরে বের হওয়া শুরু করলো !
নিকিতা কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না ! ও কি সবার সাথে বের হয়ে যাবে নাকি বাবার সাথে থাকবে । যখনই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না তখনই কালো মুখোস পরা লোকটা পরা লোকটা আবার বলল
-নো ! মাই ডার্লিং নিকিতা ! তুমি না ! স্টেজে উঠে এসো !

নিকিতা এমনিতেও বাবাকে এই বিপদে ফেলে যেত না । সে উঠে স্টেজের দিকে এগিয়ে আস্তে লাগলো !
প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান খান বলল
-আমি আছি ! ওকে যেতে দাও !
কালো মুখোস পরা বলল
-নো মাই ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ! শী ইজ আওয়ার ইন্সুরেন্স !

যখন শেষ মানুষটাও হল রুম ছেড়ে চলে গেল তখন কেবল পুরো হল রুমে গোটা দশেক কালো মুখো পরা মানুষ ! নিকিতা, আহমেদ আসাদ আর প্রেসিডেন্ট !

প্রেসিডেন্ট আজিজুল রহমান বলল
-তোমরা এখান থেকে জীবিত পার পাবে না ! ব্যাক-আপ আসবে !

কথা যেন খুব মজার কিছু একটা ছিল ! হাহাহা করে হেসে উঠলো মুখোস পরা লোকটা ! কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে ঠিক তখনই আবার পুরো হল রুমের আলো চলে গেল । কয়েকবার গুলি চলল ! কিছু চিৎকার ! তারপর আবার নিরবতা !

যখন আবার আলো এল নিকিতা দেখলো যে কালো মুখো পরা মানুষ গুলো দাড়িয়ে আছে তারা সবাই এবার মাটিতে পড়ে আছে । এমনি স্টেটেজের সেই নেতা গোছের মানুষটাও ! কেবল একজন অপরিচত মানুষ কে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের কাছে । আহমেদ আসাদ ও ততক্ষনে প্রেসিডেন্টের কাছ পৌছে গেছে ।

নিকিতার কিছু সময় কেবল শক হয়ে দাড়িয়ে রইলো । এখনও তার বাবা যে অক্ষত আছে এটা যেন ঠিক তার বিশ্বাস হচ্ছে না !

-আব্বু তুমি ঠিক আছে ?
প্রেসিডেন্ট বললেন
-এখনও পর্যন্ত ! তুমি কোন চিন্তা কর না ! ব্যাক-আপ অন দা ওয়ে !
-সরি স্যার !
নিকিতা দেখলো সামনে দাড়ানো সেই কালো মুখোশ পরা আগন্তক বলল
-সরি ! স্যার কোন ব্যাক আপ আসছে না !
-হোয়াট ননসেন্স ই্উ টকিং !
-আই এম টকিং দ্য ট্রুথ স্যার ! আপনার ব্যাক আপ আসতে এখনও আধা ঘন্টার বেশি লাগবে ! আর ওদের ব্যাক-আপ আসতে ৫ মিনিট !

আসমেদ আসাদ পেছনেই ছিল ! সে পিস্তল তাক করে রেখেছে আগন্তকের দিকে ! ওয়্যারলেস কি যেন কথা বলার চেষ্টা করছে সে !
কিছুক্ষন চেষ্টার পরে আহমেদ আসাদ বলল
-স্যার আমাদের এখানকার ব্যাক আপ কেউ কেই সাড়া দিচ্ছে না !
-স্যার উই হ্যাভ টু মুভ ফাস্ট ! স্যার ! দে আর কামিং !
আজিজুল রহমান বলল
-হু আর ইউ ? আমরা কেন তোমার কথা শুনবো ?
-কারন এটা ছাড়া আপনাদের আর কোন উপায় নেই ! এখান থেক বেঁচে ফেরার যে ক্ষীন সম্ভবনা টুকু আছে সেটা কেবল মাত্র আমি !


নিকিতার আসলেই কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না । আসলেই তার সাথে এমন কিছু হচ্ছে । এতো দিন মুভিতে যে দৃশ্য গুলো দেখেছে এখন সেইটা তার সাথেই হচ্ছে ।
আহমেদ আসাদ বলল
-কি আমরা কিভাবে বের হব ?
আগন্তুক বলল
-সামনের কোন দরজা দিয়ে বের হওয়া যাবে না ! ওরা সব ওদিক দিয়েই আসছে এবং ওরা সবাই সুইসাইড মিশনে এসেছে । ওদের এক মাত্র টার্গেট হল আপনি ! আর কেউ না ! প্রয়োজনে ওরা পুরো বিল্ডিং উড়িয়ে দিতে দ্বিধা করবে না ! পেছনের টানেলের দিয়ে আমাদের যেতে হবে ! আসুন আমরা আমার সাথে ।


তিন জনের ছোট দল টা কালো আগন্তুকের পিছু নিলো ! আহমেদ আসাদ পিছনে মাঝ খানে নিকিতা এবং তার বাবা ! কালো আগন্তক হল রুম থেকে তাদের কে সোজা ডান দিকের বাধরুমে নিয়ে গেল ।

এখানে কেন ?
কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তখনই দেখলো বাধরুমের বাঁ দিকে আগন্তুক কিছু একটা খুজছে যেন !
-আপনি কি খুজছেন ? এখানে কেন আসলেন !
নিকিতা কিছুতেই বুঝতে পারছে না ! ও যেন হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে !
আসাদ আরেকবার দরজা দিয়ে বাইরে দেখে এল !
ওদের কথা বার্তা শোনা যাচ্ছে ।
-হোয়াট আর উই ডুয়িং ?
-আপনি কি করছেন ?

আরও কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই নিকিতার সাথে ওর বাবা ও বেশ অবাক হল ! আগন্তুক বাধরুমের ভিতরে একটা গুপ্ত দরজা খুলে ফেলেছে ! এখানে দরজা আছে এটা তাদের জানা ছিল না ।

আসাদ তো বেশ খানিটা অবাক হল ! ইমাজেন্সি গেট টা এখান থেকে আরও দুরে । ও তো সেদিক দিয়ে বের হওয়ার কথা ভাবছিল !
আসাদ বলল
-এদিক দিয়ে না গিয়ে ইমার্জেনন্সি গেট দিয়ে গেলে ভাল হত না ?
আগন্তুক বলল
-ওরাও আপনার জন্য ওখানে অপেক্ষা করছে !
-ওরা কারা !
-জানা যাবে ! এখন আলোচনা নয় ! জীবিত থাকাটাই জরুরী ! আসুন !

ওরা সবাই আগন্তক পিছু পিছু যেতে যেতে লাগলো ! অন্ধকারের ভিতর কতক্ষন ওরা দৌড়িয়েছে ওরা বলতে পারবে না ! পুরানো স্যাঁতস্যাতে টানেলে যেন অনেক দিন কেউ আসে নাই ! কত সময় দিয়ে হাটছে কে জানে ! নিকিতার মনে হল যেন এই পথের যেন আর শেষ হবে না !
তবে একটা সময় সামনে আলো দেখতে পেল ! টানেলের মুখ দেখা যাচ্ছে !

নিকিতারা বাইরে বের হয়ে দেখলো টানলের মুখ টা ওদের একেবারে পিছনের দিকে নদীর কাছে নিয়ে এসেছে । নদীটা শহরের একপাশে অবস্থিত । এতোদুর কিভাবে এল সেইটাই বুঝতে পারছে না !
নিকিতা দেখলো নদীর পাড়ে একটা স্পীড বোট বাঁধা !

আগন্তক আহমেদ আসাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি স্পীড বোট চালাতে পারেন ?
-পারবো মনে হয় !
-ওকে শুনুন মন দিয়ে ! এখান দিয়ে সোজা উঠবেন বড় রায়বাজার এলাকায় দিক থেকে । দেখবেন ওখানে একটা হলুদ রংয়ের ক্যাব রাখা আছে । সেখান থেকে ক্যাব নিয়ে সোজা প্রেসিডেন্ট ভবনে হাজির হবেন । খবরদার এর ভিতরে কাউকে ফোন দিবেন না ! কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না ! আপনাদের বাস ভবনে পৌছানে আধা ঘন্টার মত লাগার কথা ! ঠিক ৩০ মিনিট পরে এক প্লাটুন আর্মি বাসভবনে পৌছাবে ! সাবধান ! এর আগে কাউকে ফোন দিবেন না ! মনে থাকবে ?
আসাদ মাথা নাড়ালো !


নিকিকে কে নিয়ে যখন সবাই স্পীড বোটে উঠলো আজিজুল রহমান খান বলল
-কে তুমি ? আমাদের কেন বাঁচালে ?
এই কথা শুনে আগন্তুক হাসলো !
যদিও আগন্তুকের মুখ ঢাকা তবুও নিকিতার বুঝতে কষ্ট হলে না যে আগন্তনক হাসছে !
তারপর বলল
-আপনি দেশের সম্পদ ! আপনাকে মরতে দিলে দেশ টা আবার পিছিয়ে যাবে ! অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আপনার কিছু হতে দিবো না !
-তোমার নাম কি ?
-আমি আপনার দেশেরই একজন ! আসাদ সাহেব, যা বলছি করুন ! দেরি হয়ে যাচ্ছে !

আগন্তক আবার টানেলের দিকে হাটা দিল !

নিকিতার কানে কেবল একটা কথাই বাজতে লাগলো ! অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আপনার কিছু হতে দিবো না !


আহমেদ আসাদ ততক্ষনে স্পীড বোট ছেড়ে দিয়েছে । দুর ঠেকে ক্ষীন ভাবে গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো ! নিকিতার মনে অচেনা আগন্তুকের জন্য চিন্তা হতে লাগলো !


পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×