গল্পঃ নতুন ছাত্রী, তানিশা !
এক
-আপনার মেয়েকে আমি পড়াতে পারি !!
মহিলা কঠিন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । অবশ্য তাকিয়ে থাকারই কথা । চলতি পথে আপনি যদি কাউকে হঠাৎ করে বলেন যে আপনার মেয়েকে আমি পড়াতে চান তাহলে যে কেউ কঠিন চোখ আপনার দিকে তাকাবে ।
মহিলা বিন্দু মাত্র কাঠিন্য না কমিয়ে বলল
-কি বললে তুমি ?
-বললাম, আপনার মেয়েকে আমি পড়াতে পারি !
-তুমি কে ?
-প্রাইভেট টিউটর !
কেমন একটা সন্দেহের চোখে তাকালো আমার দিকে । কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে । আমি আমার মুখটা যথাসম্ভব নিরিহ করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কাজ হল কি না বুঝতে পারলাম না ।
মহিলা বলল
-তোমাকে কে বলল যে আমার মেয়ের জন্য টিচার লাগবে ?
-না মানে আপনি যেভাবে ফোনে চিৎকার করে আগের টিচারের ইয়ে উদ্ধার করছিলেন ভাবলাম তার চাকরি নট !
ইয়ে মানে ?
-মানে......
শব্দটা বলবো কি না বুঝতে পারছি না !
-কি মানে ?
-মানে আপনি আগের জনের যেভাবে গুষ্টি উদ্ধার করছিলেন তাতে তো..।
-বেয়াদব ! এখনই দুর হও এখান থেকে ! দুর হও !!
-আমি কিন্তু ভালো শিক্ষক ! আমার রেকর্ড ভাল খুব !
-এক্ষুনি বিদায় হও !
আমি দাড়িয়ে থাকাটা সমীচিন মনে করলাম না । এমনিতেও টিউশনীর জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছিল । বাসা থেকে বের হয়ে টিউশনীর দিকেই যাচ্ছিলাম । কয়েক বাড়ি পার হতেই দেখি এই মহিলা বাড়ির গেটের সামনে দাড়িয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে । সেখান থেকেই বুঝলাম ওনার মেয়ের জন্য টিচার লাগবে । কোন কারন নেই এমনিই বললাম কথাটা । ঢাকা শহরে এভাবে কি টিউশনী পাওয়া যায় নাকি !
আমি সোজা হাটা দিলাম !
আমি ভেবেছিলাম মহিলার সাথে আমার আর দেখা হবে না । কিন্তু ঠিক সপ্তাহ খানেক পরেই আবার দেখা হয়ে গেল মহিলার সাথে । ক্যাম্পাস থেকে বাসায় আসছিলাম । হাতে একটা পেপসির বোতল !
হঠাৎ কে যেন ডাকলো
-এই ছেলে !
আমি খুব বেশি গা করলাম না । কারন রাস্তা ঘাটে আমাকে এই ছেলে বলে ডাকার কেউ নেই ।
-এই চশমা পরা ছেলে !
পেছনে তাকিয়ে দেখি সেদিনের সেই মহিলা গেটের কাছে দাড়িয়ে !
আমি বললাম
-আমি ?
মহিলা বলল
-হ্যা ! তুমি ! এদিকে এসো !
আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম ।
-তুমি সেদিন কি বলছিলে ?
-কই কিছু বলি নাই । কিছু না !
-তুমি আর কাউকে পড়াও ?
-জি পড়াই !
-কোন ক্লাস ?
-এই একটা এইট ! একটা ইন্টারমিডিয়েট !
-আমার মেয়েকে পড়াতে পারবে ?
-কোন ক্লাস ?
-টেন !
আমার মাথার ভিতর দপ করে হাজার পাওয়ারের লাইট জ্বলে উঠলো ! বললাম
-কেন পারবোনা ? অবশ্যই পারবো !
-একটা শর্ত আছে !
-জি বলেন !
-এর আগের টিচারকে কে তাড়িয়েছি জানো ?
-জি ! ওদিন শুনেছিলাম ! আপনার মেয়েকে মনে হয় সে প্রোপজ করেছিল !
-হুম ! এই টাইপের ছ্যাবলামোম আমার পছন্দ না ! আমি যেদিন টের পাবো এমন কিছু সেদিনই তোমাকে তাড়িয়ে দেব !
-আপনি কোন চিন্তা করবেন না ! এমন কিছু হবে না !
মহিলা কিছু যেন ভাবলো কিছুক্ষণ ! তারপর বলল
-তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে ?
-জি ?
-বললাম তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে ?
খানিকটা দ্বিধা করে বললাম
-জি আছে !
-ভাল ! আজ বিকালে আসো ! তোমার সাথে কথা বলবো ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
-এই বাসার তিন তলায় !
বিকেল বেলা গিয়ে আমি খানিকটা টাস্কিই খেলাম । আমার সম্ভাব্য ছাত্রীর দিকে তাকয়ে খানিকটা টাস্কিই খেলাম ! আগের টিচার কেন যে প্রোপোজ করেছিল আমি ঠিক ভাল মত বুঝতে পারলাম !
আমার ছাত্রী আমার সামনে এসে বলসো ! ওর মা আগে থেকেই সোফার উপর বসে ছিল !
মহিলা বলল
-এই তোমার ছাত্রী !
-হ্যালো !
ছাত্রী আমাকে যেন কোন দাম দিলো না এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো ! ছাত্রীর মা ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার নতুন স্যারকে সালাম দাও !
-স্লামুআলাইকুম !
আমি সালামের উত্তর দিলাম ! তারপর বললাম
-তোমার নাম কি ?
-তানিশা !
-আগে পিছে কিছু নেই !
-তানিশা রহমান !
-কোথায় পড় ? ধানমন্ডি গার্ল স্কুল !
আরও টুক টাক কথা হল ! ঠিক হল সামনের দিন থেকে সপ্তাহে তিন দিন তানিশা কে পড়াবো সন্ধ্যা বেলা !
যখন বাসা থেকে বের হলাম তখনও মাথার ভেতর তানিশার চেহারা ঘুরছিল । মানুষের এতো সুন্দর হওয়া ঠিক না ! মোটেই ঠিক না ! আমি বের হতে হতেই দেখি তিলার ফোন এসে হাজির !
-হুম !
-তো ?
-কি তো ?
-তোমার নতুন ছাত্রী কেমন ?
-ভয়াবহ সুন্দরী !
-কি ?
-হুম ! এই খবরদার ঐ মেয়েদিকে তাকিয়ে পড়াবা বলে দিলাম ! একেবারে চোখ তুলে নিবো !
-ওকে ! তুমি ভয় পেও না ! তোমার জিনিস তোমারই থাকবে ! ঠিক আছে ।
-হুম ! মনে থাকে যেন !
আমি ফোন রেখে হাটা দিলাম ! সামনে কপালে কি আছে কে জানে ! আগামি কাল থেকে পড়ানো শুরু হবে !
দুই
-স্যার আপনার মন কেন খারাপ আমি জানি !
অন্যমনস্ক ছিলাম তানিশার কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম ! ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললে ?
-বললাম আপনার মন খারাপ কেন আমি ঠিক জানি ?
-আমার মন খারাপ না !
-তাই বুঝি ? তাহলে কাল রাতে ওমন একটা স্টাটাস কেন দিলেন ?
-তোমাকে না বলেছি আমার ফেসবুক ওয়ালে না যেতে !
এই কথা জবাব না দিয়ে তানিশা বইয়ের দিকে মন দিল । যদিও আমি খুব ভাল করেই জানি মেয়েটা পড়ছে না । আমার সাথে গল্প করতে চাইছে । কাল রাতে আমি আমার ফেসবুকে কি কি লিখেছি এই নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ ! কেবল কাল রাতেই না প্রতিদিন কি না কি লিখি সেইটা নিয়ে তার গবেষণার শেষ নাই ।
প্রথম যেদিন ওকে পড়াতে এলাম সেদিনও ও আমার কাছে জানতে চাইলো
-স্যার আপনার ফেসবুকে আইডি আছে ?
একবার মনে হল বলি, আছে । তারপর মনে হল, কি দরকার ? আমি সারাদিন ফেসবুকে কত কিছু করি । প্রথমেই এই মেয়েকে সেগুলো দেখিয়ে নিজের ওয়েট টা কমানোর কোন মানে নেই । আর তাছাড়া প্রথম দিনের যদি আমি তানিশা কে আইডি দিয়ে দেই এবং এই খবর যদি ওর মায়ের কানে যায় তাহলে আমার চাকরী নট হয়ে যাতে পারে !
বললাম
-নাহ ! আইডি নেই !
-সত্যিই নেই ?
-উহু !
-এই যুগে আবার এমন কেউ আছে নাকি যার ফেসবুকে আইডি নাই !
-আমি এই যুগের মানুষ না ! অন্য যুগের মানুষ ! এখন কথা বন্ধ করে পড়া শুেরু কর ! প্রথম দিনে এটো কথা কিসের ?
-স্যার আপনাকে দেখে কেমন স্যার স্যার মনে হচ্ছে না !
-মানে ?
-মানে আপনি কি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ?
-কি বলছো এসব ? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো না মানে কি ?
-না মানে আমাদের কলেজ শাখার ভাইয়ারা মানে যারা ইন্টার মিডিয়েটে পড়ে তাদেরকেও আপনার থেকে বড় মনে হয় !
আমি কিছু না বলে কিছুটা সময় তানিশার দিকে তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে ! এই আসতে না আসতেই আমার সাথে একম বকরবকর শুরু করে কেন দিয়েছে । আমি একটা ধকম দিয়ে বলল
-বই বের কর ! আর এর পর থেকে এমন ফালতু টাইপের কথা বার্তা বলবা না ! মনে থাকে যেন !
দেখলাম তানিশা কেমন গোমড়া মুখে বই বের করতে লাগলো ! আমার মাথায় সেদিন অন্য চিন্তা চলছিল !
তার আগের দিন তিলার সাথে কথা বলার ঘন্টা খানেক পরেই তিলা আবার ফোন দিল ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে ফোন ধরে বললাম
কি ব্যাপার ? হঠাৎ ?
কারন খুব দরকার না হলে তিলা রাতের বেলা ফোন দেয় না । রাতের বেলা ওর বাসায় বাবা থাকে এবং ওর বাবার ঘর ওর ঘরের পাশেই । বাবাকে ওর ভিষণ ভয় ! ওর বাবার ঘুম নাকি খুব পাতলা এবং সে নাকি সুক্ষাতিসুক্ষ শব্দও কেমন নাকি শুনে ফেলে ! তাই আমাদের কথা স্বাধারনত দিনেই হয় অথবা রাতে চ্যাটিংয়ে !
তিলা ফোন দিয়ে বলল ওর বাবা নাকি ওর বিয়ের জন্য ছেলে দেখছে । ওর মায়ের সাথে বলছিল সেটা ও শুনেছে ।
আমি তখনও অবশ্য ওকে খানিকটা অভয় দিয়ে বলেছিলাম চিন্তা কর না । এতো জলদি তোমার বাবা তোমাকে বিয়ে দিবে না ।
কিন্তু আমার ধারনা সম্পূর্ন ভুল প্রমানিত করে দিয়ে গত কালকে তিলার বিয়ে হয়ে গেছে । ছেলে আমেরিকা প্রবাসী !
শ্লার সবাই আমেরিকা প্রবাসী দেখলেই গলে যায় ! তিলা সবে মাত্র অনার্সে উঠেছিল । কি দরকার ছিল এতো জলদি বিয়ে দেওয়ার !
-স্যর শুনেন না !
-কি ?
-আপনি রাগ করবেন না তো ?
-বল !
-দেখেন আপনি তো আমাকে ব্লক করে রেখেছেন আপনার ওয়াল থেকে । আমি কিভাবে জানবো বলেন আপনি কি স্টাটাস দিয়েছেন । এমনি বললাম !
-হুম ! রেখেছি ! কিন্তু আমি ঠিকই জানি তুমি ঠিকই আমাকে অন্য কোন ফেইক আইডি দিয়ে আমার ওয়ালে ঠিকই যাও ! তোমাকে আমি চিনি না ?
এই কথা শুনেই তানিশা ফিক করে হেসে দিল !
হাসতে হাসতেই বলল
-স্যার গত কালকে যে গল্পটা লিখেছেন সেটা পড়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ ! মা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি পাগলের মত হাসছি কেন ? আমি বলতেও পারছি না কেন হাসছি আবার হাসিও থামাতে পারছি না !
একটানা কথা বলে তানিশা কিছুটা সময় চুপ করলো ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তারপর ?
-কিন্তু আপনার রাতের বেলা লেখাটা পড়ে মন খুব খারাপ হল !
-ও কিছু না । এমনি লিখেছি !
-না স্যার আমি বুঝতে পারি !
-কি বুঝতে পারো ?
-কোন টা এমনি লেখা আর কোন টা মন খারাপ করে লেখা ?
-কিভাবে ?
-পারি ! মেয়েরা বুঝতে পারে ! আর বিশেষ করে........
-বিশেষ করে ?
তানিশা কোন কথা না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো !
আমি বললাম
-আজকে আর পড়াতে ভাল লাগছে না ! আমি যাই কেমন !
তানিশা বলল
-কি করবেন ? রাস্তায় হাটবেন একা একা ?
আরে এই মেয়ে দেখি আমার অননেক খোজ রাখে ! আমি কি করি না করি ! অবশ্য যে আমার ফেসবুক ওয়ালে ঘুরাফেরা করে তার সব কিছু জানারই কথা !
তিন
-স্যার ! আপনি আর আসবেন না আমাদের বাসায় ?
-কেন আসবো না ? সময় পেলেই আসবো ।
-না সময়, না । আপনাকে আগের মত আমাকে পড়াতে আসতে হবে ।
-দেখো তানিশা !
-আমি কিছু শুনতে চাই না ! কিচ্ছু না !
ব্যাস এই টুকু বলেই তানিশা ফোন রেখে দিল । আমি আরেকবার ফোন দেব কি না বুঝতে পারলাম না । শেষে মনে হল ফোন দরকার নেই । কম বয়সী আবেগ । কদিন থাকবে তারপর চলে যাবে ।
গত সপ্তাহে তানিশাদের বাসায় টিউশনীটা ছেড়ে দিয়েছি । একবার ভেবেছিলাম নতুন চাকরী সাথে ওর টিউশনীটা করতে পারবো হয়তো । কিন্তু কদিন পরে শরীর আর কিছুতেই পেরে উঠলো না । আর তাছাড়া চাকরীতে যে পরিমান বেতন দেবে বলেছে তাকে বাড়তি আরেকটা টিউশনী করার কোন দরকার নেই । তাই মাস শেষে বলেই দিলাম যে আমার পক্ষ্য আর টিউশনী করা টা সম্ভব হচ্ছে না ।
তানিশার মা খানিকটা আফসোস করলেন আরেক জন টিউটর এখন তিনি কোথায় পাবেন । তবে আমার চাকরী হয়েছে বলে খুশি হলেন ! কিন্তু তানিশা আমার না পড়ানোর কথা শুনে গম্ভির হয়ে ছিল ! শেষ দিন আমার সাথে একটা কথাও বলেনি । একটা পর্যায়ে তো ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । শেষে কিছুটা সময় অপেক্ষা করে চলে এলাম ।
বাসায় আসার পর থেকেই গত এক সপ্তাহে তানিশা অন্তত ৫০ বার ফোন করে আমার কাছে সেই একইকথা বলেছে । খানিকটা বিরক্ত হয়ে গেছি । ভাবছি মোবাইল টা বন্ধ করে রাখবো কিছু দিন ।
যখন থেকে মোবাইল বন্ধ করে রাখার চিন্তা করছি তখন থেকেই ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেল । আমি ভাবলাম যাক সমস্যা শেষ হল । কিন্তু আসল ঝামেলার ফোন এল আরও দুদিন পরে । সব থেকে বড় ঝামেলার ফোন ।
ফোন টা করলো তানিশার মা । আমি সালাম দিলাম । আন্টি খানিকটা দ্বিধা ভরা কন্ঠে আমাকে বলল
-বাবা তুমি কি আজকে আমাদের বাসায় একটু পারবে ?
-কখন আন্টি ?
-এই বাসায় আসার সময় ! কিংবা যখন তোমার সুবিধা হয় ?
-আচ্ছা !
-একটু এসো কেমন !
শেষ লাইনটাতে তানিশার আম্মুর অনুনয় বেশ ভাল করেই বুঝতে পারলাম । কেন জানি মনে কোন একটা ঝামেলা ঠিকই হয়েছে।
সন্ধ্যা বেলা যখন তানিশাদের বাসায় এসে হাজির হলাম তখন আসলেই আমার জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছিল ।
বসার ঘরে যখন বসে ছিলাম দেখি ভেতরের ঘর থেকে তানিশার বাবা মা দুজনেই বেরিয়ে এল । দুজনের মুখই গম্ভীর ! তানিশাকে আমি প্রায় বছর তিনেক পড়িয়েছি কিন্তু এই সময়ে ওর বাবার সাথে আমার দুএকবারের বেশি দেখা হয় নি । আজকে যে উনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল !
দুজনেই আমার সামনে এসে বসলো গম্ভীর ভাবে । আমার তাকিয়ে তাকিয়ে ভদ্রলোক বেশ খানিকটা বিব্রতবোধ করতে লাগলো দেখলাম ।কিভাবে কথা শুরু করবেন ঠিক মত মনে বুঝতে পারছিলেন না মনে হয় ।
অনেক টা সময় চুপ থাকার পর ভদ্রলোক বললেন
-তানিশা আজকে দুদিন ধরে ঘরে দরজা আটকে বসে আছে । এক ফোটা পানিও খায় নি !
-সে কি !! কি বলেন ? কেন ?
আমার কেনর উত্তর দিতে গিয়ে ভদ্রলোক আরও কিছুটা সময় ইতস্তর করলেন । এদিকে তানিশার মা বলল
-ও আসলে .....
-আমার কাছে আবার পড়তে চাচ্ছে ?
আমি ভেবেছিলাম ঘটনা এটুকুই । তানিশা একটু জেদি টাইপের মেয়ে । আমার উপর কোন প্রকার জোর খাটাতে না পেরে নিশ্চই এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে । তানিশার আব্বা বলল
-আসলে ও তোমার কাছে পড়তে চাচ্ছে না ।
-তাহলে ?
-ও আসলে তোমাকে বিয়ে করতে চাইছে ।
আমার প্রথমে মনে হল আমি যেন ভুল শুনলাম । বললাম
-কি বললেন ?
-ঐ দিন আমরা এইখানেই বসে ছিলাম দুজন ! তানিশা এল আমাদের কাছে । শান্ত কন্ঠে বলল যে সে তোমাকে বিয়ে করবে । যদি আমরা রাজি না হই তাহলে সে আর কিছু খাবে না ।
এরপর তানিশার মা বলল
-আমরাও তোমার মত অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে । আমাদের বিশ্ময় কাটতে না কাটতেই তানিশা দরজা বন্ধ করে দেয় । তারপর থেকে আমরা কতবার ওকে ডেকেছিল ও কিছুতেই শুনে নি । চোখের সামনে মেয়েটা এরকম না খেয়ে আছে । না পেরে তোমাকে ফোন দিয়েছি !
তানিশার মা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! আমার কি করা উচিৎ তাও বুঝতে পারছিলাম না !
তানিশার বাবা বলল
-একটা মাত্র মেয়ে তো ! কিছু বলতেও পারি না !
আমি বললাম
-কোথায় ও !
-নিজের ঘরে !
আমি কোন কথা না বলে তানিশার দরজার কাছে গিয়ে ওর নাম ধরে ডাক দিলাম । নাম ধরে ডাকার ঠিক মিনিট খানেক পরে দেখলাম দরজা খুলে গেল ! আমার দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । মেয়েটার চেহারা আসলেই কেমন শুকিয়ে গেছে । সত্যি মনে হচ্ছে কদিন থেকে কিছু খাই নি । চেহারা একটা দুর্বল ভাব স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে । ও আমাকে ঘরের ঢোকার পথ ছেড়ে দিয়ে খাটের এক কোনায় গিয়ে দাড়ালো !
আমি ওর খাটের উপর বসতে বসতে বললাম
-এসব পাগলামোর মানে কি ?
-পাগলামোর কোন মানে থাকে না ।
-তাহলে ?
-কি তাহলে ?
-আশ্চার্য !! না খেয়ে কেন আছো ?
-আমার ইচ্ছা !
-যেহেতু এটার সাথে আমি জড়িত তাই কেবল আমার ইচ্ছে বললে কাজ হবে না ।
-তাহলে কি করতে হবে ?
-আশ্চর্য !! তোমার বয়স এখন কত শুনি ? এইটা কি বিয়ের বয়স নাকি ?
-শুনুন, আমি কি করবো না করবো সেটা আমি আপনাকে বলবো না ! আমার মনে যা ইচ্ছে তাই করবো ! ঠিক আছে ? আপনি আমাকে ইগনোর করে চলে গেছেন আমি আমি কারো অবহেলা সহ্য করতে পারি না !
-আরে আশ্চর্য আমি অবহেলা কোথায় করলাম !
তানিশা কিছু বলতে গিয়েও বলল না ! অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো ! অন্য দিকে তাকালেও ওর চোখ দিয়ে যে পানি পরছে এটা আমার চোখ এড়ালো না !
আমি তানিশার হাত ধরে ওকে খাটে বসালাম আমার পাশে । নরম সুরে বললাম
-এমন পাগলামো কেন করছো ?
-আপনি আমাকে কেন ছেড়ে গেলেন ! এতো দিন আপনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিচ্ছু বোঝানে নি । একজন আপনাকে ছেড়ে গেছে বসে সবাই আপনাকে ছেড়ে যাবে ?
ব্যাস এই টুকুই ! এই লাইন টুকু বলার পরই তানিশা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো । আমি অপ্রস্তুত হয়ে থাকলাম কিছু টা সময় ! কিন্তু একটা অর্য করম অনুভুতি হচ্ছিল ! হয়তো ভাল লাগার অনুভুতি !
একজন তো বিনা যুদ্ধে বাবা মায়ের মত মতো অন্যের হাত ধরে চলে গেল ! একবার ভাবলোও না তার চলে যাওয়ার পরে আমার কি হবে । আর একজন, যাকে কোন দিন ওরকম চোখে দেখিও নি সে নিজের বাবা মাকে বাধ্য করেছে আমাকে ডেকে নিয়ে আসতে !
আমি তানিশার মাথায় হাত দিয়ে বললাম
-আচ্ছা ! ওসব পরে ভেবে দেখা যাবে ।
আমাকে জাড়িয়ে ধরিয়ে ধরা অবস্থায়ই তানিশা বলল
-কি ভেবে দেখা যাবে ?
-আরে তোমার না সামনে এইচ এসসি পরীক্ষা ! আগে ঐ টা ভাল করে দাও । তা হলে আমার মা বলবে আমার মাস্টার্স পড়া ছেলে । ইন্টার ফেল মেয়ের সাথে মেয়ে বিয়ে দেব না !
এই কথা বলার পরে তানিশা আমাকে ছাড়লো ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার মাথা ছুয়ে আগে কথা দেন !
-কথা দেওয়ার কি আছে ? তুমি আগে ইন্টার পাশ কর । একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হও তারপর কিছু একটা ভাবা যাবে !
-কোন ভাবা ভাবা নেই ! আগে কথা দেন !
-আচ্ছা বাবা, কথা দিলাম ! এবার খুশি তো ?
-সত্যি তো !
-আচ্ছা সত্যি ! এখন তো কিছু খাও ! খাবে তো !
-হুম ! খুব খিদে লেগেছে !
আমি নিজেই ফ্রিজের দিকে পা বাড়ালাম কিছু নিয়ে আসার জন্য । আমাকে ফ্রিজ খুলতে দেখে আনিশার বাবা মা দেখাল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । এতো সহজে সমাধান হয়ে যাবে ওনারা ভাবতে পারে নি !
আরও কিছু দুর যাবে হয়তো গল্পটা অথবা এখানেই শেষ !
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন