এক
-এই কই তুমি ?
-কই থাকবো আর ! অফিসে ।
-অফিসে মানে ? তোমার না এখন বাইরে থাকার কথা ?
-কোথায় বাইরে থাকার কথা ?
-মানে কি ? ফাজলামো কর নাকি ? তোমার জন্য শাফায়েত কে কাটিয়ে এসেছি । এখন অফিসে বললে তো হবে না ! এখনই নিচে নামো ! এক্ষন নিচে নামবা !
-জারিন, দেখো একন কাজের সময় ডিস্টার্ব করবা না ! তোমাকে বলেছিলাম বাইরে যাবা নাকি তুমি তখন পরিস্কার বলে দিলে তুমি তোমার জানুর সাথে বের হবা ! তো যাও এখন তার সাথে । আমি নাই । এখন কাজে আছি ।
কিছুক্ষন ফোনের ওপাশে কোন কথা শুনতে পেলাম না । জারিন নিশ্চই রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে । রেগে গেলে জারিনের মুখ দিয়ে ঠিক মত কথা বের হয় না । কয়েক মুহুর্ত পরে জারিন বলল
-তুই নিচে নামবি নাকি আমি উপরে আসবো ? টাই ধরে টানতে টানটে নিয়ে আসবো কিন্তু !
-টাই পাচ্ছো কই ? আমি তো টাই পরি না ! তুমি জানো না ?
-সমস্যা নেই আমার সাথে টাই আছে । আমি আগে টাই পরাবো তার পর টানতে টানতে নিয়ে আসবো । ৫ মিনিট সময় দিলাম !
এই বলে জারিন ফোন রেখে দিল ।
আমি আর বেশি অপেক্ষা করাটা সমীচিন মনে করলাম না । জারিন যেমন মেয়ে উপরে চলেও আসতে পারে । বস কে বলে নিচের দিকে হাটা দিলাম ।
ভাবতে অবাক লাগে কদিন আগেও জারিনের সাথে আমার সম্পর্ক অন্য রকম ছিল । আমাকে যেন চেনেই না এমন একটা ভাব ধরে সব সময় আমার সামনে দিয়ে হাটা চলা করতো । কথা বলার সময় কেমন টেনে কথা বলতো । আর আমি আঠার মত লেগে ছিলাম ওর সাথে । ও পাত্তাই দিতো না । একদিন আমাকে সরাসরি বলল
-আপনি আমার পেছনে কেন লেগেছেন ?
-পেছনে লেগেছি ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এমন একটা ভাব করলাম । বললাম
-আপনি কি লোকাল বাস নাকি যে আপনার পেছন পেছন লেগে থাকবো, জাগয়া না থাকলেও উঠার চেষ্টা করবো ?
জারিন আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে থেকে বলল
-বাহ ! খুব সুন্দর মুখের ভাষা দেখা যাচ্ছে আপনার । যাই হোক আমার কিন্তু বয়ফ্রেন্ড আছে ।
আমি বিন্দু মাত্র দমে না গিয়ে বললাম
-তো ? আপনি কি ভেবেছেন যে আপনার সাথে প্রেম করার জন্য আমি আপনার পেছনে লেগেছি ? আচ্ছা আপনারা নিজেদের কে কি ভাবেন বলেন তো ? সবাই আপনাদের সাথে প্রেম করতে চায় ? আজিব !
আমার এই কথা শুনে জারিন যেন একটু থামলো । কি বলবে ঠিক খুজে পেলো না ! আমি এই নিরবতাকে কাজে লাগালাম । বললাম
-আপনি আপনার প্রেমিক ছাড়া আর অন্য ছেলের সাথে কথা বলেন না ?
-কেন ?
-আহা বলেন না ? বলেন না ?
-বলি ?
-নিশ্চই আপনার অনেক ছেলে বন্ধু আছে ? আছে না ?
-আছে ?
-সবার সাথেই কি আপনি প্রেম করেন ?
-কি বলছেন এসব ?
-এটাই তো ? তেমনি একটা ছেলে কি একটা মেয়ের সাথে কেবল প্রেম করার জন্য কথা বলে । আমাদের কথা বার্তা কি স্বাভাবিক হতে পারে না ?
জারিন সেদিন অবশ্য আর কথা বলে নি । ওখান থেকে উঠে চলে গিয়েছিল । কিন্তু পরদিন আবার এসে হাজির ।
তারপর থেকেই আমাদের কথা বলা শুরু । এক সাথে আড্ডা হাসি কান্না ঝগড়া কত কিছু । ওর সাথে সময় গুলো কেমন করে চলে যায় ! বুঝতেই পারি না !
নিচে নেমে দেখি ঠিক রাস্তার পাশেই ও দাড়িয়ে আছে । চোখে কালো সান গ্লাস চুল গুলো খোলা । আমাকে দেখতেই এগিয়ে এল !
-এতো দেরি হল কেন ?
-আরে বাবা অন্যের চাকরি করি তো ! অনুমুতি নিতে হয় না ?
-হুম ! তোমরা কেবল চাকরি কর !
আমি হেসে বললাম
-তোমার প্রেমিক কই ?
-জানি না !
-ঝগড়া হয়েছে ?
-জানি না ।
-আরে বাবা । কি হয়েছে ?
-কিছু হয় নি । তুমি চাও আমি চলে যাই ?
-আচ্ছা ঠিক আছে । রিক্সা নেব !
-না ।
-তাহলে ?
-আগে ফুচকা খাওয়াও তারপর ?
-এই সময়ে ফুচকা ?
-হুম ।
-জারিন !
-আমি খাবো খাবো খাবো !
জারিন বাচ্চা মেয়েদের মত চিৎকার করে উঠলো । আমি হাসলাম ।
জারিনের ফুচকা আবার খুব বেশি পছন্দ । সময় অসময় নাই । সকাল বিকাল দুপুর রাত । দেখা হলেই তাকে ফুচকা খাওয়াতে হবে । তাও আবার কেবল রাস্তার পাশের ফুচকা ।
দুই
-আমাকে তুমি বিয়ে করবে ?
বিকেল এখনও হয় নেই । ছুটির দিন, তাই এলাকাটা একটু বেশি ভিড় । মানুষ জন রাস্তার এদিক ওদিক দারিয়ে বসে গল্প করছে । আমি আর জারিনও এক কোনায় বসে আছি । ওর হাতে ফুচকার প্লেট । আমার হাতে একটা পানির বোতল । এমন সময় জারিন কথা টা বলল । ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে মনে হল না যে ও আমার সাথে রসিকতা করছে । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-সিরিয়াস ?
-হুম ! করবে ?
-অবশ্যই করবো ! চল এখনই বিয়ে করে ফেলি ! কিন্তু আমার প্রতি এতো সদর হলে কেন ? তোমার সাফায়েত কোথায় ?
-ও আমাকে বিয়ে করবে না ! আমাকে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে ওর পক্ষে আমাক বিয়ে করা সম্ভব নয় ?
-কেন ? কারন বলে নি !
-না । বলেছে .....।
জারিন আর কথা না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি আবার বললাম
-তুমি কি সত্যি সিরিয়াস ?
-হুম ।
-আজই ?
-আজই !
-আরেকবার ভেবে দেখো কিন্তু ? এটো বড় একটা সিদ্ধান্ত !
-আমি অনেক ভেবেছি । আর এতো ভাবলে চলবে না । তুমি কি চাও যে আমি সারা জীবন তার জন্য বসে থাকি সে আমাকে বিয়ে করবে না বলে আমি তার বিরহে চিরো কুমারি হয়ে থাকবো ?
-না মানে আমি সেই কথা বলি নি তো ?
-তাহলে ? দেখো তোমাকে আমার বেশ পছন্দ । যদি তুমি বিয়ে না করতে চাও ওকে ফাইন ! বাবা আমার বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছে ! তাদের কাউকে বিয়ে করে ফেলবো !
-আরে কি বল ! আমি এই সুযোগ ছাড়বো নাকি ? চল চল এখনই চল !
-ফুচকা শেষ করি !
তিন
আর কোন চিন্তা ভাবনা না । ওখান থেকে সোজা কাজী অফিস । কয়েকজন বন্ধু ফোন করে ডেকে আনলাম । এক ঘন্টার ভিতর কাজ শেষ ! জীবিত থেকে বিবাহিত । কিন্তু খুব বেশি খারাপ লাগছে না । জারিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেমন লজ্জা লজ্জা চোখ নিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । আমার দিকে তাকাতে যেন লজ্জা পাচ্ছে !
-আমি বললাম
-তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো ?
-না লজ্জা পাবো কেন ? ইডিয়েটের মত কথা বলবা না !
-হুম ! ইডিয়েট না হলে কি আর কেউ বিয়ে করে ?
-এই কি বললা ? কি বললাম তুমি ?
-কিছু না ! কিছু না ! তো কি করবো এখন ? তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি !
-কার বাসায় ?
-তোমাদের বাসায় ?
-বাহ রে ! আমি আমার স্বামীর বাসায় যাবো ! আর কারো বাসায় না !
-সিরিয়াস লি ?
-জি সিরিয়াসলী । চলেন বাসায় ! বিয়ে করেছেন না এর প্যারাটাও তো নিবেন নাকি ?
পরিশিষ্ট !
জারিন মাঝে মাঝেই বালিশ ফেলে দিয়ে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে । মাঝে রাত পর্যন্ত আমি টের পাই ও ঘুমায় নাই ! একদিন হঠাৎ করেই জারিন বলল
-তুমি জানতে, তাই না ?
পুরো ঘর অন্ধকার ! এর ভিতর জারিনের কন্ঠে কেমন জানি লাগলো । বললাম
-কি জনাতাম ?
-সাফায়েতের বিষয়ে ?
কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ! চুপ করে রইলাম ।
-জানতে না ?
বললাম
-জানতাম ।
-তাহলে ? চুপ করে কেন ছিলে ? আর কেনই বা এলে আমার জীবনে ! আমি ওকে ছাড়া আর আর কোন দিন কিছু ভাবতেই পারি নি । ও কিভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেল ! এভাবে আল্লাহ কেন ওকে কেড়ে নিলো বলবা ? কেন ?
অনেক আগে থেকেই জানতাম জারিনের সাফায়েত আর বেঁচে নেই । কিন্তু মেয়েটা তবুও কল্পানায় তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল । সবার সাথে এমন একটা ব্যবহার করতো যেন এই মাত্রই তার সাথে কথা বলেছে ।
এটা নিয়ে ওর বাবা মা খুব বেশি চিন্তায় ছিল ! ওর বাবা মায়ের কাছ থেকে সব কিছু আমি জানতে পারি ! তারপর কি মনে হল জারিনের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মালো !
জারিন হঠাৎ করেই ফোঁপানো শুরু করলো ! আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম ! বললাম
-সাফায়েত কিন্ত কিন্তু আজকে উপর থেকে তোমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে । বুঝছো ? তুমি যে তার জন্য নিজের জীবন কে ঐ এক জায়গায় আটকে রেখেছিলে এতে সে কষ্টই পেত কেবল ! আর কিছু না !
বুঝছো ?
জারিন কোন কথা বলল না ! তবে ওর কান্না আস্তে আস্তে থেমে এল ! ঘুমিয়ে পড়লো মনে হয় ধীরে ধীরে । আমি ওর মাথায় হাত রেখে সামনের দিন গুলোর কথা ভাবতে লাগলাম !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০১