somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মিমি আর আমি !

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-আমার ছবি গুলো কোথায় ?
-কোন গুলা ?
-যেগুলো আড্ডায় তুলেছো ?
-কেন সব গুলোই তো ফেসবুকে দিয়েছি !
-আমি আমার ছবি গুলোর কথা বলেছি ! সিঙ্গেল ছবি !

আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ! মিমি আবার বলল
-কই দাও !
-আমি তো আর ছবি তুলি নি !
-দেখো মানুষ কিন্তু এতো গাধা না !
-আরে আমার কাছে আর কোন ছবি নাই তো ! যা ছিল সব দিয়েছি ।

মিমি কিছুক্ষন কোন কথা বলল না । তারপর বলল
-আমি খুব ভাল করেই দেখেছি । আচ্ছা যাও ! এখন দিতে হবে না । আগামী কাল বিকেলে ছবির হাটে আসবা ছবি নিয়ে ।
-পেনড্রাইভে ?
-জি না জনাব । ছবি প্রিন্ট করে আনবা ! ছবি যখন তুলেছে প্রিন্ট করার দায়িত্বও তোমার । মনে থাকে যেন !
-আর কেউ আসবে ?
-এতো কথা বলতে হবে না । যা বলছি কর । কে আসবে না আসবে কাল দেখতে পাবে ।

এই বলে মিমি অফলাইনে চলে গেল । আমি মিমির ছবি দেখতে লাগলাম ।
গত কাল সবার ছবি তোলার মাঝে মিমির বেশ কিছু ছবি তুলেছি । নতুন ক্যামরা কিনলে যা হয় আর কি । যা দেখি সব কিছুর ছবিই তুলতে ইচ্ছা করে !
অবশ্য মিমিকে বস কিছুর সাথে তুলনা করলে চলে না ! ও তো একাই অন্যন্যা । সব কিছুর মাঝে ওকে খুব ভাল ভাবে আলাদা করা যায় !

কিন্তু আমার খানিকটা সন্দেহ জাগতেছে মনে যে আসলেই ও কি বুঝতে পেরেছে আমি ওর ছবি তুলেছি ? এতো মানুষ জনের ভিতর ও কিভাবে বুঝলি যে আমি ওর ছবি তুলছি ! সব মিলিয়ে আমাদের চার জনের হাতে ক্যামেরা ছিল । সবাই ছবি তুলছিল । মিমি কিভাবে আলাদা ভাবে বুঝলো যে আমি ওর ছবি তুলছি !
মেয়েটা কি কিছু বুঝতে পেরছে ?

মেয়েদের নাকি এই সহজাত ক্ষমতা টা থাকে যে কেউ তাদের কে পছন্দ করলে সেটা তারা বুঝতে পারে । অবশ্য আমি আমার কাছের কিছু মানুষ কে আমা রপছন্দের কথ ঠিকই বলেছিলাম তারাও মিমিকে বলে দিতে পারে !

বেশ কিছু দিন থেকেই আমাদের একটা প্লান চলছিল যে অনলাইনের মানুষ গুলো এক সাথে কোথাও দেখা করি । এক সাথে আড্ডা হোক যেমন করে রাতের পর রাত আমরা অলাইনে আড্ডা মারি । যেই ভাবা সেই কাজ ! প্লান প্রোগাম ঠিক হে গেল ! পরিচিত সবাই হাজির হলাম এক জায়গায় !
কত আড্ডা কত কথা ! সবাই সাথে সাথে আড্ডা মারার ফাকে ফাকে লুকিয়ে লুকিয়ে মিমিকে দেখছিলাম । মাঝে মাঝে ওর সাথে চোখাচোখি হচ্ছিল ! ও নিশ্চই বুঝতে পারছিল আমি ওকে অন্য চোখে দেখি । অবশ্য এটা ওর অনেক আগে থেকেই বোঝা উচিৎ ! ওকে তো কম ডিন হল চিনি না ! এমন কি ওর উপর ক্রাশ খেয়েছি এটাও তো কম দিন না !
অবশ্য মিমির চোখেও ছিল দুষ্টামীর হাসি !

সবার সাথে কথা বললেও মিমি আমার সাথে ঠিক কথা বলছিল না ! খনিকটা যেন এরিয়ে চলছিল অন্য ভাবে বলতে আমার সাথে ভাব নিচ্ছিল আর কি ! নিক ভাব ! আমার সাথেই তো ভাব নিবে ! আর কার সাথে নিবে ! তবে এমনও হতে পারে যে প্রথমবার সরাসরি দেখা হচ্ছে দেখে মেয়েটা হয় তো ঠিক মত কথা বলতে পারছে না । কিন্তু অন্য মানুষের সাথে তো ঠিকই কথা বলতেছে । তাহলে আমার সাথে কেন কথা বলে নাই !


কিন্তু রাতের বেলা ফেসবুকে এই ঝাড়ি ! কি আর করা ! পরদিন ঠিক ঠিক ছবি প্রিন্ট করে হাজির হলাম ছবির হাটে ! গিয়ে দেখি মিমি তখনও আসে নি । এক পাশে বসে মিমির ছবি গুলো খাম থেকে বের করে দেখতে লাগলাম !
মেয়েটা আসলেই আমার মন কেড়েছে । বিশেষ করে সরাসরি দেখার পর । এমনিতে ফেসবুকে সবাই দেখতে পরীর মত । কিন্তু বাস্তবে দেখলে বোঝা যায় আসলে কে কেমন । কিন্তু এই মেয়েটা কি বাস্তবে আর কি ফেসবুকে সব জায়গায়ই সুন্দর ! বরং বাস্তবে দেখতে আরও বেশি সুন্দর । এই জন্য মিমির উপর বারবার ক্রাশ খেয়েছি এখনও খাচ্ছি !


-এই কি দেখো ?
মুখ তুলে দেখি মিমি এসে হাজির ! সাদা রংয়ের একটা লেগিংয়ের সাথে কালো বেগুনী রংয়ের কামিজ ! সাথে লম্বা ওড়না ! চুল গুলো খোলা ! এক পাশে রাখা । মুখে একেবারে হালকা মেকআপ ! ঠোটে লিপস্টিপ নেই ! নাকি আছে !
আরেকটু ভাল করে দেখবো তার উপায় নেই ! মিমি আবার কি ভেবে বসবে কে জানে !
-তোমার ছবি গুলো ঠিক মত এসেছ নাকি তাই দেখছিলাম !
-তাই ! দেখি সরে বস !
আমি বেঞ্চে সরে বসলাম ! মিমি আমার পাশেই বসলো গাঁ ঘেষে । ওর শরীর মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগলো !
-কই ! দাও ছবি !
আমি খাম টা দিলাম ওর হাতে ! ও খাম খুলে দেখতে লাগলো ছবি গুলো !

আমি ওকে দেখতে লাগলাম ।
কিছু কি বলা উচিৎ ? ওকে যে চমৎকার লাগছে এই কথাটা কি বলবো ?
বলা যায় ?
নাকি বলা যায় না !
বললাম
-আর কেউ আসবে ?
-কেন ? আমার সাথে থাকতে বিরক্ত লাগছে ?
কি যে বল সুন্দরী ? তোমার সাথে সারা জীবন এই বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিতে পারবো ! আর তুমি বল বিরক্ত ! আমি খানিকটা হেসে বললাম
-না ! বিরক্ত লাগার তো প্রশ্নই আসে না !
-তাহলে ? কেন জানতে চাইছো আর কেউ আসবে কি না ?
-না মানে কালকে আমার সাথে তো কথাই বললে না আর আজকে একদম আমার সাথে একা একা দেখা করতে চাইলে !
-এই ছবি নেওয়ার জন্য !
-সত্যিই কি কেবল ছবি নেওয়ার জন্য ?
আমি একেবারে মিমির চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম । মিমিও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার কি মনে হয় ?
-উমমম ! আমার তো অনেক কিছুই মনে হয় ! কিন্তু ঠিক ভরশা পাই না ! মানে পাচ্ছি না !

মিমি হেসে ফেলল ! বলল
-তুমি আসলে গাধা রয়ে গেলে ! তোমার সাথে আমার পরিচয় কদিনের বল তো ?
-এই তো বছর খানেক !
-আমাদের দেখা হয়েছে কত বার ?
-এই গত কালকে ?
মিমির আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ভাল করে হিসেব করে বল ! কতবার আমাদের দেখা হয়েছে ?
আমি খানিকটা ইতস্তর করে বললাম
-কালকেই তো হল ? আর কবে ?
মিমি বলল
-আজকে থেকে প্রায় মাস দশেক আগে আমি ঠিক এই জায়গায় বসে ছিলাম আমার কয়েক জন বন্ধুর সাথে !
এই বলে মিমি সামনের একটা জায়গা দেখলো ! তারপর বলল
-তুমি ঠিক ঐ জায়গায় ছিলে । চা খাচ্ছিলে ! মনে আছে ?
আমি কোন রকমে বললাম
-হুম !
-আমাকে তুমি দেখলে ! কিন্তু কথা না বলে চলে গেলে ! মনে আছে ?
-আসলে তখন তো আমাদের সবে মাত্র পরিচয় হয়েছে । আর আমি একা ছিলাম !
মিমি আমার দিকে রাগের চোখে তাকিয়ে বলল
-তখন তোমার সাথে আমার নিয়মিত কথা হত ফেসবুকে !
-তা হত !
-তাহলে ?
-আসলে ....
-আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম ঠিক তার দের মাস পরে আবার যখন দেখা হল তখন ?
-ইয়ে.......।
-তারপর তোমার ডিপার্টমেন্টের সামনে যে দেখা হল ? এমন একটা ভাব করলে যেন আমাকে চিনোই না ! এতো মেজাজ খারাপ হয়েছিল সেদিন !

আমি আসলেই অবা হলাম বেশ ! মিমি সত্যি সত্যিই আমাকে লক্ষ্য করেছে । আমি যেমন ওকে লক্ষ্য করেছি ও নিজেও তেমন লক্ষ্যকরেছে ! কিন্তু দেখা হওয়ার পরে যখন আমাদের কথা হত তখন তো তেমন কিছুই বলে নি ! আমি নিজেও বলি নি অবশ্য !
মিমি বলল
-ইচ্ছে ছিল কোন দিন তোমার সাথে কথাই বলবো না ! কিন্তু ?
-কিন্তু ?
-কিছু না ! ছবি নেওয়া শেষ ! আমি যাই এখন !
আমি হায় হায় করে উঠলাম !
-আরে আরে যাও কই ! দেখো কালকে ভাল করে তোমার সাথে কথাই হয় নি !
-তো ! তোমার কাছে এতো সুযোগ এসেছে । তুমি কাজে লাগাও ননি ! এখন কেন আমি দাড়াবো !
-আচ্ছা বাবা ! আমার ভুল হয়েছে ! দেখো প্লিজ !
-কোন প্লিজ ফিলিজের ভাত নেই ! আমি যাই !

মিমি আর কথা না বলে উঠে দাড়ালো ! কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না ! যখন মিমি হাটা দিবে তখনই মিমির হাত ধরে বললাম
-এখনই যাবা !
একটু ভয় ছিল মিমি হয়তো ওর হাত ধরা নিয়ে রাগ করবে কিন্তু মিমি মুখের ভাব দেখে তেমন কিছু মনে হল না ! বরং মনে হল যেন একটু খুশি হল !
-হাত ধরলে কেন ?
-ধরবো না ?
-কোন হিসাবে ধরবা ?
-সম্ভাব্য ......
-কি সম্ভাব্য ? ইস শখ কত ? আমার বয়েই গেছে তোমার গার্লফ্রেন্ড হতে ?
-আমি কখন বললাম যে গার্লফ্রেন্ড ?
-ইস ! আবার ঢং ! সুমির কাছে কান্না কাটি করে ভাসিয়ে ফেল আর এখন আবার চোখ উল্টানো ! ছাড়ো !!

এই বলে মিম হাটা দিল । তবে রাস্তার দিকে না । উদ্যানের ভিতরে ! চলে যেতে চাইলে ও নিশ্চই রাস্তার দিকেই হাটা দিতো ! আর সুমি কথা যেহেতু বলল তার মানে মিমি পরিস্কার ভাবেই জানে ! এবং এখনও পর্যন্ত সব ফিগনাল পজেটিভই মনে হচ্ছে !

মিমি ততক্ষনে একটু দুরে চলে গেছে । আমি দৌড়ে গিয়ে মিমির পিছু নিলাম !
-আরে তোমার বাসা তো অন্য দিকে !
-তো !
-বাসায় যাবা বললা ?
-আমার ইচ্ছা !
-তাই ? আমার তো মনে হচ্ছে তুমি আমার সাথে ডিটিং করতে যাচ্ছো ! চল ঐ জায়গাতে বসি !
-ইস ! কত শখ !
কত শখ বললেও মিমি ঠিকই আমার দেখানো জায়গাতে বসলো ! বসতে বসতে বলল
-চটপটি খাবো !
-আমি তো অন্য কিছু খাওয়াবো !

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মিমি বলল
-খবরদার দিষ্টামী করেছো তো ! বদ পুলা !


যাহ , এতো দিনের পছন্দের মানুষটা কি তাহলে কাছের মানুষ হয়েই যাচ্ছে ! ;)


১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×