somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ প্যাটার্ন লক

১৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনু গল্প একঃ প্যাটার্ন লক

নিহিনের স্মার্ট ফোন টার দিকে তাকিয়ে রইলাম একভাবে ! প্যাটার্ন লকে এল দিয়ে লক করা !
এল ?
ওর নাম তো এন দিয়ে শুরু !
ভাল নাম এ দিয়ে ! তাহলে এল দিয়ে কেন ?
"এল" ?
মনের ভিতর খানিকটা দ্বিধা হচ্ছিল কথাটা ভাবতে । আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার বুকের ভেতর একটা অন্যরকম অনুভুতি শুরু হয়েছে ! আসলেই কি এটাই নিহিনের স্মার্টফোন টাতে এল প্যাটার্ন থাকার কারন এটাই যে আমার নাম এল দিয়ে শুরু !
নাহ !
একটু বেশি বেশি কল্পনা করে ফেলতেছি ! ক্লাসে আরও ৫০ টা ছেলে আছে যাদের সাথে নিহিন কথা বলে ! সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক ! তবে এটা ঠিক যে কারো নাম এল দিয়ে শুরু নয় !
তার উপর ওর নিজের স্কুল কলেজ জীবনের বন্ধু আছে, পরিবার আত্মীয় আছে ! তাদের যে কারো নাম "এল" দিয়ে শুরু হতে পারে যাকে ও পছন্দ করে ।
আবার কোন কারন ছাড়াই এল দিতে পারে !
নিজে নিজে আরও অনেক থিউরী দাড় করালাম কিন্তু কোন টাতেই মন ভরলো না ! কেবল এই কথাটাই বিশ্বাস করতে মন চাইলো যে আমার নাম দিয়ে নিহিন এল প্যাটার্ন দিয়ে দিয়েছে !

মোবাইলের কাজ শেষ করে নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি হল ? কি দেখছো ?
-না ! তোমার মোবাইল টা ! নতুন কিনেছো নাকি ?
-লাবিব ! তুমি মাঝে মাঝে এমন কথা বল না ? গত সাত মাস ধরে এই ফোন টা ব্যবহার করছি ! মনে নেই তোমার ?
-ও তাই নাকি ?
আমি একটু বোকার মত হাসি ! আসলেই তো ! কি বলব আর কি বলে ফেললাম !
নিহিন বলল
-অবশ্য আমার আর জিনিসের দিকে খিয়াল দেওয়ার মত তোমার সময় কোথায় ? তুমি তোমার ঐ মিনা আর টিনা কে নিয়েই ব্যস্ত !
-আরে কি বল ? এর ভিতর আবার মিনা টিনা আসলো কোথা থেকে ?
-আসে নি ? আমি নিয়ে এসেছি !
-কেন ?
-এমনি আমার ইচ্ছা ! আচ্ছা বললে না, তুমি আমার মোবাইলের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলে কেন ?

আমি একটু দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলাম আবার । বলব ?
বলে ফেলবো নাকি ?
কি করবো এটা ভাবতেই কয়েক সেকেন্ড চলে গেল ! আসে পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ কাছে পিঠে নেই ! আমি সংকুচিত কন্ঠে বললাম
-তোমার স্ক্রিন লকে "এল" অক্ষর কেন ?
বলেই নিহিনের চেহারার দিকে তাকালাম ! দেখি ওর চোহারা থেকে থেকে রক্ত সরে গেল ! খুব বিব্রত যেন অস্বস্থিতে পরে গেছে এমন মনে হচ্ছে ওর দিকে তাকিয়ে ! অন্য দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবতে লাগলো !
আমি আবার বললাম
-বল ! কেন এল ! "এল" ফর .... ?
অনেকক্ষন অন্য দিকে তাকিয়ে নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এতো দিন পরে তুমি দেখলে ?
আমি ক্ষীণ কন্ঠে বললাম
-"এল" ফর লাবিব ?
নিহিন আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার দিকে কেবল এক ভাবে তাকিয়েই রইলো ! ওর চোখের দৃষ্টিতেই আমার সকল প্রশ্নের উত্তর ছিল ! আমি কেবল একটু হাসলাম আপন মনেই ! তারপর পকেট থেকে আমার ফোন টা বের করে ওর হাতে দিলাম !
বললাম
-ওপেন ইট !

নিহিন আমার ফোন টা হাতে নিয়ে পাওয়ার বাটন চাপ দিতেই প্যাটার্ন লক উঠে এল ! আমার দিকে জিজ্ঞাসু চোখ তাকালো কয়েক মুহুর্ত !
আমি কেবল ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম !
নিহিন কিছু সময় আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থেকে নিজেই স্ক্রিনের উপর নিজের আঙ্গুল ঘোরালো !
"এন" !
কি আশ্চার্য ! আমরা দুজনে দুজনের নামে আমাদের স্ক্রিন লক করেছি অথচ এতো দিনে একটা বারেও একে ওপর কে বলি নি !

ও লক টা খুলে আমার দিকে আবার তাকালো ! অবাক হয়ে দেখলাম নিহিনের চোখে পানি জমতে শুরু করেছে ! সেই অদ্ভুদ অশ্রু সিক্ত চোখ দেখে বুকের ভিতর কেমন একটা চিনচিন ব্যাথা শুরু হল ! সুখ আর আনন্দময় ব্যাথা !



অনু গল্প দুই !

ঠিক যখন আশা করেছিলাম নিশির ফোন টা তখনই এসে হাজির ! আমি খুব ভাল করেই জানি ওর ঘুম কখন ভাঙ্গে ! তাছাড়া আজকে ক্লাস আছে একটু পরে ! এখন ও হল থেকে বের হবে ! তার আগেই জায়গা মত হাজির হলাম !
নিশির ফোন টা রিসিভ করার আগে মনে একটু ওকে জ্বালিয়ে নিই ! গত রাতে আমার যে ঝগড়া টা করেছে ! শোধ নিতে হবে না ? নিশি বলল
-এই কোথায় তুমি ?
-এই তো বাসায় ?
-বাসায় কি কর ?
-কিছু না ! কেন ? আরে দাড়াও দাড়াও ! তুমি আমাকে ফোন দিয়েছো কেন ? কালকে রাতে না আমাদের ব্রেক আপ হয়েছে ! এখন আমি কোথায় সেইটা তোমার জেনে কি লাভ ?

এই কথার পর নিশি চুপ করে গেল ! কোন কথা বলল না কিছুক্ষন ! আমি মনে মনে হাসলাম !
গতকাল কে রাতে নিশির সাথে থা রীতি তুমুল ঝগড়া ! এক পর্যারে আমার উপর রাগ করে ফোন কেটে দিল ! আমি আর আবার ফোন করছি না দেখে ১০ মিনিট পরেই নিজেই ফোন করলো আবার !
-এই ফোন দিলা না কেন ?
-আমি কেন ফোন দিবো ? তুমি লাইন কাটছো ?
-আমি লাইন কাটছি তো কি হইছে ! তুমি কেন ফোন দিলা না কেন ?
-আজিব ! তুমি বিনা কারনে লাইন কাটবা আমি তোমাকে তেলাবো ? মোটেও না ! মোটেই না ! তুমি প্রস্থান করতে পারো !
-কি এতো বড় সাহস ! আর কোন দিন যদি আমাকে তুমি ফোন দিছো ? তোমার সাথে আজকেই শেষ ব্রেক আপ !

মনে মনে হাসি ! নিশির প্রায় প্রতিদিনই আমার সাথে ব্রেক আপ করে !
কোন কিছু একটা হলেই হল ! ব্রেক আপ ! ব্রেক আপ করতে সময় লাগে না ! আবার জোড়া লাগতে সময় লাগে না ! ও যে আমার সাথে ব্রেক আপ করে এটা নাকি ওর মনেই থাকে না !

যথারীত আজকে ওর মনে নেই গত কালকের কথা ! নিশি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-ও আমার ভুল হয়েছে । তুমিও আমাকে ফোন দিবা না ! এইটা বলার জন্য ফোন দিছি !
-ওকে দিবো না ! আমার মনে আছে !
-বদ পুলা ! তুই দুর হও !

নিশি ফোন কেটে দিল ! একবার মনে হল কাল রাতের কথা টা এখন না বললেও হত ! কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে ! কিন্তু আমারও দোষ আছে ! ওর পিছনে না লাগলে আমার ও ভাল লাগে না !
কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু নিশি এবার আমার ফোন ধরলো না ! বুঝলাম এই সকাল বেলা করে ওর মেজাজ টা খারাপ করিয়ে দেওয়া ঠিক হয় নি ! কিন্তু কি করবো এখন ?
আছে একটা উপায় ! অবশ্য !
তাড়াতাড়ি নিশিকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম ! জানি ও মেসেজ টা পড়বে আর মেসেজ পড়ে ঠিক চলে আসবে !

নিশি হাজির হল ঠিক ৭ মিনিটের মাথায় ! গেট দিয়ে বের হতেই ওকে দেখতে পেলাম ! চুলের ক্লিপ টা তখনও হাতে ধরা ! আমি জানি ও এখন কি করবে ! আমার কাছে এসে বলবে ক্লিপ টা লাগিয়ে দাও তো !
নিশিঠিক তাই করলো !
আমার কাছে এসে বলল
-এই চুলের ক্লিক টা লাগিয়ে দাও তো ?
-আমি সকাল থেকে এখানে তোমার চুলের ক্লিপ লাগানোর জন্য দাড়িয়ে আছি ? হুহ ?
-আহা ! এতো কথা বল কেন ? দেখো সকাল বেলা এমনিতেই একবার মেজাজ গরম করিয়ে দিয়েছ ? আরেকবার যদি...।
-কি হবে শুনি ?
নিশি আমা রদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-আচ্ছা যাও ! লাগবে না তোমার হেল্প !
এই বলে যখনই চলে যেতে চাইলো তখনই ওর চুপ চেপে ধরলাম ! চুল চেপে ধরে বললাম
-খবরদার যদি আমাকে রেখে কোথায় যাওয়া চেষ্টা কর....
-কি হবে শুনি ? চুল ছাড়ো আমার লাগছে !
আমি ক্লিপ টা চুলে আটকে দিতে দিতে বললাম
- তুমি জানো না আমি অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবো যদি আমাকে ছেড়ে যাও !
-ইস ! ঢং ! বদ পুলা কোথাকার !
-সুইট মাইয়া কোথাকার !
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×