-স্যার ভাল আছেন ?
-হু ! কে আপনি ? কি চাই ?
-কিছু চাই না । কয়েকটা প্রশ্ন ছিল ?
-অ্যা ? সাংবাদিক ? সাংবাদিক পছন্দ না ! আমি বলব এক জিনিস আর আপনারা লিখবেন নিজের মত করে ! যদি নিজের মত করেই লিখেন তাহলে প্রশ্ন করার কি দরকার ?
-ইয়ে মানে স্যার আমি সাংবাদিক না !
-তাহলে ?
-ব্লগার ! ব্লগ লিখি !
-ব্লগার ! নাস্তেক ?
-কি যে বলেন ? নাস্তিক কেন হব ! এই দেখেন কপালে দাগ ! নামাজ পড়তে পড়তে দাগ হয়ে গেছে !
মন্ত্রী সাহেব বেশ কিছুক্ষন সময় ধরে আমার কপালের দিকে তাকিয়ে রইলেন ! কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছেন ! আমি আসলেই নামাজ পড়ি কি না । তারপর বললেন
-হুম ! তাই তো মনে হচ্ছে ! তা আমার ইন্টারভিউ নিয়ে কি করবেন শুনি ?
-স্যার ইন্টারভিউ না ! কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই । আপনারা দেশের মন্ত্রী ! দেশ চলে আপনাদের কথায় ! তাই কয়েকটা জিজ্ঞাসা ছিল আর কি ? যদি উত্তর দিতেন !
খনিকটা বিরক্ত হলেন ! বিরক্ত মুখেই বললেন
-এতো ব্যস্ত আমরা আপনাদের কথার জবাব দেওয়ার সময় কোথায় বলেন ? আচ্ছা বলুন কি জানতে চান ? তবে বেশি সময় দিতে পারবো না কিন্তু ?
-জি আচ্ছা !
মন্ত্রী সাহেব নড়েচড়ে বসলেন ! আমিও একটি শান্তিমত পরিবেশে বসে পড়লাম ! এসির বাতাস গায়ে লাগিয়ে খানিক্ষন শান্তিতে মন জুড়িয়ে নিলাম ! আসলে ঘরে প্রবেশের সময় যত কথা মনে করে ঢুকেছিলাম এখন বেশ কিছু ভুলে গেছি ! এতো আরামের ভিতর কি ঐ সব মনে পড়ে ?
কাগজে লিখে এনেছিলাম ! নয়তো মনেই থাকতো না !
-ইয়ে মানে ৪৮ ঘন্টার তাৎপর্য আপনার কাছে কেমন হয় ? ২৪ কিংবা ৭২ ঘন্টা নয় ৪৮ ঘন্টাই কেন ?
-দেখুন ৪৮ ঘন্টার মাঝে অন্য রকম অর্থ লুকিয়ে আছে ! আপনারা এটা ঠিক বুঝবেন না !
-একটু বুঝিয়ে বলবেন কি ?
-এটা একটা লম্বা বর্ণনা দিতে হবে তাহলে আর অন্য প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে পারবো না ! আর এটা যে বলেছে সে ছাড়া আর কেউ ভাল করে বুঝাতেও পারবে না । এটা বরং বাদ থাক !
-আচ্ছা ! আপনারা বলেছেন যে জন গনের বেডরুমের নিরাপত্তা নাকি আপনারা দিতে পারবেন না ! এটা নিয়ে যদি কিছু বলতেন ?
-দেখুন এখানে তো আমি তো ভুল কিছু দেখছি না ! সরকারের পক্ষ্যে তো বেডরুমের নিরাপত্তা দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না !
-কেন নয় ?
-যেমন মনে করুন আপনি রান্না ঘরে রান্না করছেন ! গ্যাস সিলিন্ডার ব্ল্যাস্ট হয়ে গেল ! এটার নিরাপত্তা কি আমরা দিতে পারবো না ? নিশ্চই না ! যেখানে রান্না ঘরের নিরাপত্তার নিরাপত্তাই আমরা দিতে পারছি সেখানে বেড রুম তো আরও প্রাইভেট জায়গা ! ওখানে কি হয় না হয় আমরা কিভাবে জানবো ? বুঝছেন ব্যাপার টা ?
-জি জি !
-পরের প্রশ্ন ।
ঘরের বাতার আরও ঠান্ডা লাগছে ! বড় শান্তি লাগছে ! মনে হচ্ছে এখানে প্রশ্ন না করে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেই ! মন্ত্রী সাহেবও দেখি কৌটা থেকে একটা পান বের করে মুখ দিলেন ! আয়েস করে চিবুতে চিবুতে আমার দিকে তাকালান ! প্রশ্ন করার সিগনাল পেলাম আমি !
-আচ্ছা রাস্তা থেকে মানুষ যে দিনে দুপুরে গুম হয়ে যাচ্ছে এটা নিয়ে যদি কিছু বলতেন ?
-এই তো আপনারা অর্ধেক কথা বললেন ?
-ঠিক বুঝলাম না !
-দেখুন ! মানুষ তো কেবল গুম হচ্ছে না ! ফেরৎও আসছে ! এবং কেবল খালি হাতে ফেরৎ আসছে না ! পকেটে ৩০০ টাকা নিয়ে ফেরৎ আসছে ! আপনি আমাকে এমন একটা উদাহরন দেখাতে পারবেন যে গুম হওয়া ব্যক্তি মুক্তিপন না দিয়ে, উপরউন্তু অপহরনকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরৎ আসে ? দেখাতে পারবেন ?
-জি না ! পারবো না !
-এই তো লাইনে এসেছেন ! আমরা কিন্তু পেরেছি ! আমাদের সরকার ক্ষমতায় থাকা কালে এমন টা হয়েছে ! আর কেউ পেরেছে ?
-কিন্তু অনেকে তো ফেরৎ আসে নি !
-আসে নি আসবে ! আজ না কাল ! এতো চিন্তার কি আছে ?
-কেউ কেউ কিন্তু জীবিত হয়ে ফিরে আসছে না ! কাউকে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে শীতলক্ষার তীরে !
-দেখুন, সারাদেশে ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালের তুলনা এ বছর গুমের সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম। সুতরাং গুম নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই । নিশ্চই বুঝতে পারছেন !
-জি জি !
-পরের প্রশ্ন প্লিজ !
আমি কাগজের দিকে একবার দেখে নি । পরের প্রশ্নটা স্কিপ করবো কিনা বুঝতে পারছি না ! তবুও করলাম !
-প্রশ্ন পত্র নিয়ে কয়েকটা কথা ?
মন্ত্র সাহেব একটু নড়েচড়ে বসলেন ! আমিও বসলাম নড়েচড়ে !
-প্রশ্ন পত্র নিয়ে আবার কি কথা ?
-না মানে পরীক্ষার আগে এভাবে ফাঁস হওয়াটা ....
-আপনার কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে ?
-জি না !
-তাহলে এতো চিন্তা কেন নেন ? আর আমাদের শিক্ষা মন্ত্রী তো বলেছেই গুজবে কান দিবেন না ! আপনি কেন গুজবে কান দিচ্ছেন ?
-আসলে নিজের চোখে যেখানে দেখলাম !!
-আপনারা সব কিছুতেই বেশি বুঝেন ! শুনেন আমি যখন ইন্টার পড়টাম তখন জিন স্যার নামে আমাদের এলাকায় স্যার ছিল !
-জিন স্যার ?
-হুম ! জিন স্যার ! তার পোষা ৬ টা জিন ছিল ! জিনের মাধ্যমে প্রশ্ন আনতো ! পরীক্ষার আগের দিন আমাদের যা বলতো টাই চলে আসতো ! এখন আপনি কি এটাকে প্রশ্নফাঁস বলবেন ?
-জি না ! তা তো বলাই যাবে না !
-এই ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার হয়েছে ! সমস্যা হচ্ছে ব্যাপার টা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে ! ফেসবুক না থাকলে এমন টা হতে পারতো না !
-আসলেই সব দোষ ফেসবুকের !
-এই তো ঠিক ধরেছেন ! এখন ফেসবুক টা বন্ধ করে দিলেই তো আপনারা আবার হাউকাউ করে দিবেন ! তাই না ?
-স্যার ফেসবুক/ব্লগ থেকেও বা আমরা কি করতে পারছি ? ৫৭ ধারা আছে না !
-বারে ! আপনারা নাস্তেকগীরি করবেন আর আমরা চুপ করে থাকবো ? জানেন না দেশ এখন মদিনা সনদ মোতাবেক চলবে ! সেখানে আপনারা কেন ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করবেন ?
-সবাই কি আর করে ?
-যারাই করুক !
-কিন্তু যারা করছে তাদের তো আপনারা কিছুই করতে পারছেন না ! অন্য দিকে নিরীহ ....।
-থাক থাক ! এই কথা কথা বলটে গেলে আপনাদের অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে ! অন্য প্রশ্ন করুন !
-জি জি !
আমি আবারও কাগজের দিকে তাকালাম ! আরও কত শত প্রশ্ন রয়েছে । কিন্তু করবো কি না বুঝতে পারছি না ! প্রশ্ন করে কোন লাভ হবে কি না তাও জানি না !
মন্ত্রী সাহেব বললেন
-কি ব্যাপার প্রশ্ন শেষ ?
-জি মানে রানা প্লাজা ?
-ওটার তদন্ত চলছে ! দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে !
-আর ক্ষতি পুরন ? ১২৭ কোটি টাকা উঠেছিল শুনেছিলাম !
-ওগুলোও দেওয়া হবে ! একটু সময় তো লাগবে নাকি ? এতো তাড়াহুড়া করলে কি চলে ?
-জি জি ! তা তো অবশ্যই ! একবছর তো মোটেই বড় কোন সময় না ! ছাগল দেওয়ার থেকে এটা তো অনেক ভাল !
-এই তো ঠিক বলেছেন ! আমরা তো আর ছাগল দেই নি ! যথেষ্ঠ দিয়েছি ! আরও দিব !
-আপনাদের দয়া ?
আমি কাগজ গুটিয়ে ফেললাম ! মন্ত্রী সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি হল ? প্রশ্ন শেষ ?
-আর একটা শেষ প্রশ্ন ?
-বলুন ?
-ইসলামী ব্যাংক !
-দেখুন ওটা তো বৈধ একটা ব্যাংক ! তাই না ? ওটা থেকে টাকা নেওয়া তো দোষের কিছু না !
-কিন্তু এটাও তো সত্য যে ওটা রাজাকারের ব্যাংক ? তাই নয় কি ?
-দেখুন মুখে যাই বলেন না কেন, কাগজে কলমে ওটার কিছুই করতে পারবো না আমরা ?
-আপনারা কি চেস্টা করেছেন কোন দিন ? যেভাবে আপনার প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ক্ষমতায় আছেন ! গ্রামীন ব্যাংকের পিছনে যেভাবে লেগেছেন ওটার পিছনে এমন ভাবে লেগেছেন ? নাকি লাগার চেষ্টাও করেছেন ?
-দেখুন .... আমরা কেন লাগবো ? ওখান থেকে আমাদের প....।
-জি ?
-না কিছু না ! অনেক সময় দিয়েছি আপনাকে ! আজকে আপাতত আর কোন প্রশ্ন না ! এবার আসতে পারেন ! এই কে আছিস ? ব্লগার সাহেব কে যাবার রাস্তাটা দেখিয়ে দে !
-জি আমি চিনে যেতে পারবো !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৬