-এই এসিতে টিকিট কাট !
-ক্যান ?
-কাটতে বলছি কাট ! এতো কথা বলিস ক্যান ?
আমি আর নিশি ফার্মগেটে দাড়িয়ে আছি । কলেজ যাবো ! নিশির পরনে কলেজ ড্রেস । প্রতিদিন আমরা একসাথেই এখান থেকে রওনা দেই ! যদিও আমার বাসা থেকে অন্য বাস যায় তবুও ওর সাথে একসাথে যাওয়ার জন্য আমি এখানে আসি ! একটু ঝামেলা হয় তবুও এই কষ্ট টুকু আমি করি আনন্দের সাথেই !
নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি নিশি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে বলার প্রয়োজন মনে করছে না । আর কথা বলার ভঙ্গিটাও এমন একটা ভাব যেন আমি ওর ক্লাস মেট না, সেই আমার প্রভু !
মহিলা প্রভু আর কি ! আমি আমি ওর প্রজা !
মহারানী যা বলবে আমাকে তাই করতে হবে !
আচ্ছা এই মেয়েটা আমাকে ভাবে কি শুনি ?
মাঝে মাঝে মনে হয় থাপড়ায়ে নিশির দাঁত ফেলে দেই !
ফাজিল মেয়ে !!
-এই শীতের ভিতর এসিতে টিকিট কেটে কি লাভ ?
-শুন, তোর যদি টাকার জন্য এতোই মায়া লাগে তাহলে তুই যা নরমালে । আমার এসিতে যেতে ইচ্ছা করছে । আমি যাবো ! বুঝলি !
মেয়েটা এমন ভাবে কথা কেন বলে ? একটু ভাল করে কথা বলা যায় না ! আমার মন একটু খারাপ হয় । মন খারাপ নিয়েই এসিতে টিকিট কাটি !
তাকিয়ে দেখি নিশি এখনও সেই সিনেমার হলটার দিকটাতেই তাকিয়ে আছে । কি দেখছে কে জানে ?
ওর কথায় যে আমার মন খারাপ হয়েছে এটা নিশির কাছে তো দামই নেই । কোন রকম অনুভুতিও নেই ! মাঝে মাঝে নিজের কাছে প্রশ্ন করি আচ্ছা নিশির কি আদেও আমার ব্যাপারে কোন দিন সিরিয়াস হবে ?
নাকি কোন দিন কিছু ভাবে আমাকে নিয়ে ?
আমি জানি না !
কি জানি হয় তো সারাটা জীবন এমন ভাবেই থাকতে হবে !
বিআরটিসির এসি গাড়ি আসতে আরও একটু সময় নিল ! যখন গাড়িতে উঠলাম দেখি বাসটা প্রায় ফাঁকাই ! প্রথম দিকে কয়েকজন বাসে আছে ! পেছনের দিক টা একেবারে ফাঁকা ! কেবল শেষের দুই সাড়ি আগে ডাবল সিটে একটা ইয়াং ছেলে বসে আছে ! একটু চিকন মত চুল গুলো লম্বা ! কানে হেড ফোন লাগানো !
আমার ইচ্ছা ছিল ওকে নিয়ে একদম শেষে বসি অথবা কোন ডাবল সিটে বসি ! কিন্তু নিশির সেদিকে না যেতে ইয়াং ছেলেটি যেখানে বসে আছে সেই সাড়ি বরাবর গিয়ে বসলো !
মেজাজ টা একটু খারাপ হল !
আরে বসবি ভাল কথা ! এই ছেলে সোজাসুজি কেন বসতে হবে ?
আগে অথবা পিছনে বস !
পাজি মেয়ে !
নিশিকে বললাম
-এখানে আয় !
-না ! আমি এখানে বসবো !
-এখানে আয় না !
-শোন আমি এখানে বসবো ! তোর ইচ্ছা হলে তুই এখানে আয় !
আমার রাগ হল ! যাহ, বসবো না !
আমি ছেলেটার সামনের একটা ডাবল সিটে বসে পড়লাম ! যা না বসলে কি হবে ? তোর দিকে তাকাবও না !
কিন্তু শত চেষ্টা সত্তেও তাকাবো না এই এই প্রতিজ্ঞতা ধরে রাখতে পারলাম না । পিছনের দিকে ঘুরে তাকালামই !
তাকিয়েই দেখি নিশির দিকে তাকিয়ে বদ পুলাটা হাসছে ! আর তার থেকে বড় কথা এই পাজি মেয়ে সেই হাসির প্রতি উত্তরে হাসি দিচ্ছে !
এমন মেজাজ খারাপ হল !
মনে হল উঠে গিয়ে একটা থাপ্পড় দেই !
আরে বাবা, অপরিচিত মানুষ কে দেখে এতো হাসির কি আছে !
যতবারই পিছনে তাকাই তটবারই দেখি নিশিও হাসছে আর ছেলেটাও ! হঠাৎ কেন জানি কষ্ট হতে লাগলো । মনে হল বাসের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি ।
আগামীকাল সংবাদ পত্রের শিরোনাম হবে "বাস থেকে ঝাপিয়ে পড়ে মেধাবী কলেজ ছাত্রের আত্মাহুতি" অথবা "অন্য ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রেমিকাকে হাসতে দেখে কলেজ ছাত্রের আত্মাহুতি" !
হুম ! এরকম হলে খারাপ হয় না !
একবার মনে হল সত্যি সত্যিই জানলা খুলে ঝাপ দেই । তখন বুঝবে নিশি !
কিন্তু জানলা খুলতে গিয়ে দেখি এসিবাস ! জানলা আটকানো ! খোলা যাবে না !
দুর শালা !
শান্তি মত মরতেও পারবো না !
সংবাদ শিরোনামও হল না !
কিছু দুর যেতেই ইয়াং ছেলেটা মেনে গেল ! আমি তাকিয়ে দেখলাম বদ নজরে !
বেটা ফাজিল ছোকড়া !
আমি মনে মনে বদ দুয়া দিলাম ! তোর গার্লফ্রেন্ডও এমন ভাবে অন্য ছেলে কে দিয়ে হাসি দিবে । তখন বুঝবে কষ্ট কারে কয় !
ছেলেটা শেষ হাসি দিয়ে নেমে গেল !
আমি নিশির দিকে তাকালাম না ! তাকাবো না ! থাক বসে ! তোর দিকে তাকাবো না !
বাস আবার চলতে শুরু করলো ! এখনও বাসটা প্রায়ই ফাঁকা ! আর একটু দুরে গেলেই আমাদের ক্যাম্পাস চলে আসবে ! নিশি কি এখনও আমার কাছে আসবে না !
দুরেই থাকবে ?
পাজি মেয়ে ! বদ মেয়ে !
না আসুক । আমিও যাবো না !
-এর সরে বয় !
-ক্যান ?
-সরতে বলছি সর ! এতো কথা ক্যান বলিস !
নিশি আমার গা ঘেসেই বসলো ! ওর শরীর থেকে সেই মিষ্টি গন্ধটা পেতে শুরু করলাম ! এই একটু মিষ্টি গন্ধের জন্যই প্রতিদিন আমার বাসা থেকে এতো দুরে আসি ওর সাথে যাওয়ার জন্য !
কিন্তু বোকা মেয়েটা যদি বুঝতো !
-তুই ওভাবে তাকাচ্ছিলি কেন ?
-কোন ভাবে ?
-ঐ যে আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম বলে !
না তাকাবো না ?
উনি অপরিচিত কোন ছেলের দিকে মুচকি হাসি দিবে আর আমি বসে তালি বাজাবো !
ক্ষমতা থাকলে ঐ ছোকড়া কে জানালা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম !
আর তোকে ...... মনের ভেতরের কথাটা শেষ করলাম না !
ফাজিল মেয়ে কোথাকার !
-খুব হিংসে হচ্ছিল ?
-হিংসা ? তুই কারো দিকে তাকিয়ে হাসলে আমি কেন হিংসা করবো ?
-করবি না ? না ?
এই বলেই নিশি জোরে হেসে উঠলো ! হাসতেই থাকলো !
আমি কাঁচুমুচু হয়ে ওর পাশে বসে রইলাম ! হঠাৎ করেই কেন জানি মনে হল আমার সব অনুভুতি গুলো নিশি খুব ভাল করেই বুঝতে পারে !
আমাকে ইচ্ছে করে এই ভাবে যন্ত্রনা দেয় ! আমাকে এভাবে রাগাতে ওর মজা লাগে !
এর আগেও ও এমন টা করেছে !
আর আজকেও নরলাম বসা রেখে এই এসি বাসে ও উঠলো যাতে বাসটা ফাঁকা পাওয়া যায় । নয়তো নরমাল বাস গুলোতে এই সময় খুব ভিড় থাকে !
হঠাৎই দেখলাম নিশি আমার দিকে আর একটু ঘেষে এসেছে । আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল
-তুই এতো বোকা কেন রে !
আমি কেবল নিশির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলাম ! আজকে সেই চোখে অন্য একটা দৃষ্টি !
বারবার মনে হল আমি আসলেই এতো বোকা কেন !
ফেবু
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৮