চোখ মেলেই নিশির বিছানার উপরে এলোমেলো কম্বলর দিক চোখ পড়লো ! কালো রংয়ের কম্বলটা এখনও কেমন জানি অপরিচিত ! কিছুটা খাট পেরিয়ে নিচে নেমে গেছে !
একটু যেন অপ্রস্তুত হল । উল্টো হয়ে পাশ ফিরতেই সঙ্গে সঙ্গে মনে পরে গেল ও এখন কোথায় আছে ! খাননিকটা লজ্জা পেল নিজের কাছে !
পাশের মানুষটি পাশ নেই ! ওর আগেই ঘুম ভেঙ্গেছে !
বাধরুম থেকে পানি পরার আওয়াজ আসছে !
লজ্জা থেকে এমন নিজের উপর খানিকটা বিরক্ত হল নিশি !
মানুষটা অফিস যাবে আর ও পড়ে পড়ে এখনও ঘুমাচ্ছে ! এটা কোন কথা !
চট করেই বিছানা ছাড়লো ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে সাতটার কিছু বেশি বাজে ! গত কালকে নিশি দেখেছে মানুষটা সাড়ে আটটার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছে । এখনও বেশ কিচুটা সময় হাতে আছে । যদি চট করে কয়েকটা রুটি বানানো যায় তাহলে গত রাতের রান্না করা মাংসের ঝোল দিয়ে খেয়ে যেতে পারবে !
নিশি আর দেরি করলো না ! পরনের শাড়িটা একটু ঠিক করেই উঠে পড়লো ! রান্না ঘরের দিকে পা চালালো ! এখনও ঘরের কাজে ঠিক মত অভস্ত্য হয়ে উঠে নি ! কি করে হবে ? বিয়েই হল কবে ওর ! মাত্র তো দিন পাঁচেক ! এর ভিতর এতো কিছু হয় ?
বাসায় থাকতে তো ঘুম থেকে উঠেই বেশ বেলা হয়ে যেত !
রান্না ঘরে গিয়ে নিশি আরেক দফা অপ্রস্তুত হল ! জেসন ভাই রুটি বানানোর জন্য আটা বেলছে !
ছি! ছি ! কি লজ্জা !
ঘরে ছোট ভাইয়ের বউ থাকতে বড় ভাই রুটি বানাচ্ছে !
এটা কোন কথা?
নিশি চোখ কপালে তুলে বলল
-আপনি করছেন কি ?
জেসন ভাই হেসে বলল
-কেন ? দেখছো না ?
-আমাকে ডাকবেন না ? আপনি সরুন তো ! জলদি সরুন !
-আরে কোন সমস্যা নাই ! তোমাকে কিছু করতে হবে না ! তার উপর তুমি নতুন বউ !
-হয়েছে । নতুন বউ আর কদিন থাকবে নতুন ! আপনি বের হন ! জলদি বের হন বলছি রান্না ঘর থেকে !
-আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ? আমার রান্না ঘর থেকে আমাকেই বের করে দিচ্ছে !
-শুনের জেসন ভাই ! এই বাড়ি আপনার হতে পারে কিন্তু এই রান্না ঘরে কেবল ভাবী আর আমার অধিকার । যেহেতু ভাবী এখন নেই ! সেহেতু এটা এখন আমার দখলে ! আপনি জলদি বের হন বলছি !
জেসন ভাই হাসতে হাসতেই রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এল !
-আমার নতুন বউ কি ?
রুটি বানানো প্রায়ই শেষ সেই সময় আরমান রান্না ঘরে উকি দিল !
-ইস ! এতো আহ্লাদ !
-আরে ! রীতিমত কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে কর বউ আমার । একটু আহ্লাদ করবো না ? নিজের বউয়ের সাথে আহ্লাদ করবো না তো কার সাথে করবো ?
নিশি একটু মুখ বাঁকা করলো !
-হুম ! হয়েছে ! টেবিলে বসেন ! আমি নাস্তা নিয়ে আসছি !
আরমান আর জেসন ভাইকে বিদায় দিতে দিতে প্রায় নয়টা বেজে গেল ! যদিও নতুন বউকে এভাবে একা রেখে যাওয়া ঠিক না কিন্তু প্রাইভেট চাকরীতে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে ! তার উপর নিশির এইভাবে হুট করে চলে আসাটা আরমান ঠিক মত ছুটিও নিতে পারে নি অফিস থেকে ! তবে আরমান বলেছে অফিসে কেবল হাজিরা দিয়েই চলে আসবে ! যদিও এই ব্যাপারে নিশির যথেষ্ঠ সসন্দেহ আছে ! অন্তত গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে তো তাই মনে হয়েছে !
এই টুকু সময় নিশিকে একা একা থাকতে হবে ! অবশ্য খুব বেশি সমস্যা নাই ! উপর তলায় বাড়িওয়ালারা থাকেন ! নিশির সমবয়সী দুটো মেয়ে আছে ! চাইলেই ওদের ওখানে যাওয়া যাবে অথবা ওদেরকে নিচে ডেকে আনা যাবে !
দরজায় দাড়িয়েই আরমানকে বিদায় দিল ! যতক্ষন আরমান কে দেখা যায় সেদিকেই তাকিয়ে রইলো নিশি !
যখন আবার ঘরে ফিরে এল নিজের মনের ভিতর অদ্ভুদ একটা আনন্দ অনুভুব করতে লাগলো ! কিভাবে স্বপ্ন টুকু বাস্তবে পরিনত হয়ে গেল ঠিক বুঝতেই পারছে না । এমন কি নিশির ঠিক এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আসলেই ওর পছন্দের মানুষটার জন্যই সকালবেলা নাস্তা বানিয়েছে এবং একটু আগে যাকে অফিসে যাওয়ার জন্য বিদায় দিল সেই মানুষটাকেই ও ভালবাসে কাছে চেয়েছিল !
পাঁচ পাঁচটা দিন কেটে যাওয়ার পরেও মনে হচ্ছে নিশি এখনও স্বপ্ন দেখছে ! একটু পরেই হয় তো সেপ্ন টা ভেঙ্গে যাবে । পরদিন সকাল বেলা ওর বাবা মা ওকে ধরে তাদের পছন্দ মত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে !
নিশির বিয়ে মোটামুটি ঠিক হয়েই গিয়েছিল ! এখনও পড়ালেখা শেষ হয় নি এই অযুহাতে কিছুতেই নিশির বাবাকে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না ! তারা বাবার কেবল একটাই কথা ! সে কিছুতেই এতো ভাল ছেলে হাত ছাড়া করতে রাজি নন ! বিয়ের পরেও পড়ালেখা করা যাবে । নিশি যখন দেখলো কোন কিছুতেই আর বাবাকে আটকানো গেল না তখনই আরমান কে ফোন দিল !
নিশির মন কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল ! এইভাবে হুট করে বিয়ের কথা বললেই তো যে কেউ বিয়ে করতে পারে না ! মানুষ যতই আবেকের কথা বলুক বাস্তবটা অনেক বেশি কঠিন !
আরমানকে সব কিছু বলার পর আরমান কিছুটা সময় চুপ করে রইলো ! ফোনের ওপাশ থেকে নিরবতা দেখে নিশির মনের ভয়টা যেন একটু বেড়ে গেল । তাহলে কি ....
নিশির ভাবনার শেষ হওয়ার আগেই আরমান বলল
-তুমি কি করতে চাও ?
-আমি জানি না ! আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না ! আমি কিছু ভাবতে পারছি না ! কিন্তু ....
-কিন্তু কি ?
-কিন্তু তোমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না ! কিছুতেই না !
-আচ্ছা ! তুমি আজকের রাতটা আরেকটু ভাবো ! সকাল বেলা আমাকে বল কি করতে চাও ! যদি ঢাকায় আসতে চাও আসতে পারো অথবা যদি বল আমি তোমার ওখানে আসি তাতেও আমি রাজি ! তুমি যা চাইবে তেমন টি হবে ! ঠিক আছে ?
আরমানের কথায় বুকে একটু বল আসলো ! কিন্তু তবুও বাবা মাকে ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব একটা সহজ ছিল না নিশির জন্য ! পরদিন রাতে নিশির বিয়ের কথা বার্তা পাকাপাকি করতে ছেলে পক্ষ আসবে ! রাতে খুব ভাল ঘুম আসে নি চিন্তায় । ভোর রাতের দিকে একটু তন্দ্রার মত এসেছিল কিন্তু সেটও খুব বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি ! বার বার মনে হচ্ছিল ওর কোথাও যাওয়ার কথা । কিন্তু ওর ট্রেন টা মিস হয়ে যাচ্ছে !
সকাল বলে ঘুম থেকে উঠেই কেবল একটা কথাই মনে হল আরমান কে ছাড়া কিছুতেই চলবে না ওর ! কিছুতে না !
আরমান কে ফোন দিয়ে বলল
-আমি তোমার কাছে আসছি !
-একা একা আসতে পারবে ? কাউকে সাথে করে নিয়ে আসতে পারবে ?
নিশি বলল
-হুম ! পারবো না কেন ? আব্বা কে বলি ? আব্বাকে বলি যে আব্বা আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি ! আপনি আমাকে একটু এগিয়ে দেন তো !
-আরে তুমি রেগে যাচ্ছ কেন ?
-গাধার মত প্রশ্ন করলে রাগবো না ?
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ! রেগো না ! টাকা আছে তোমার কাছে ?
-না ! খুব বেশি নেই !
-চিন্তা নেই ! আমি পাঠাচ্ছি ! তুমি কিন্তু এক কাপড়েই বের হয়ে আসবে ! কেমন ?
-না ! আমি তো বিরাট লাগেজ রেডি করে রেখেছি ! তুমি এই রকম কথা বার্তা কেন বলছো ?
-আচ্ছা ! বাবা ! রাগ কর না ! মাথা ঠান্ডা রাখো !
নিশির সকাল বেলা স্বাভাবিক ভাবে নাস্তা খেল ! যদিও ওর ভিতরটা উত্তেজনয় কাঁপছিল ! নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রন রাখলো নিশি নিজেই জানে !
কলিং বেল বেজে উঠলো ! নিশির চিন্তার মাঝে ছেদ পড়লো !
নিশির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আধা ঘন্টাও হয় নাই !
-তুমি ?
-হুম !
-তোমার না অফিস যাওয়ার কথা !
-নতুন বউকে রেখে কিভাবে অফিস যাই বল ? তার উপর এই দেখো পথে মাঝে ইয়া বড় একটা ইলিশ মাছ পেলাম ! তুমি তো আবার ইলিশ মাছ খুব পছন্দ কর তাই না ?
নিশি তাকিয়ে দেখে আরমানের হাতে একটা পুটি মাছ সাইজের ইলিশ মাছ !
নিশি বলল
-এই টা তোমার ইয়া বড় !
আরমান অবাক হওয়ার ভান করে বলে
-আরে কি বল ? ঢাকা শহরে এটাই হল সব চেয়ে বড় ইলিশ মাছ ! এই টা তোমার শহর না যে ইলিশ মাছের সাইজ ইয়া বড় হবে !
-বুঝলাম ! তা জনাব এই ভাবে অফিস কামাই দিলে চলবে ? চাকরি চলে গেলে উপায় আছে ? আপনার কি মনে নেই এখন আর আপনি একজন আরমান নাই । দুইজন আরমান হয়েছেন !
-প্রিয় বধু । কোন চিন্তা নাই ! তোমার জন্য সব কিছু পরিত্যাগ করে দিবো !
-হয়েছে ! আসেন । আপনাকে আর ডায়লগ বাজি করতে হবে না ! ভিতরে আসেন !
নিশি একটু রাগ দেখাতে চায় কিন্তু মনে মনে খুশি হয় অনেক বেশি ! গত চার দিনেও আরমান ঠিক একই কাজটা করেছে । অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয় কিন্তু মাঝ পথেই আবার চলে আসে । পাগল একটা !
বাসা থেকে বের হতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি নিশির । কেবল যখন বাসের টিকিট কাটছিল তখন একটু বুক কাঁপছিল ! বাসটা যাবে বাজারের উপর দিয়ে ! সেটার জন্যই ভয় করছিল । কোন ভাবে যদি নিশির বাবা টের পেয়ে যায় যে মেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তাহলে নিশিকে আর আস্ত রাখবে না !
যতক্ষন না বাস বাজার ছেড়ে যায় ততক্ষন নিশি যেন ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না ! নিজেকে স্বাভাবিক রাখার হাজারটা চেষ্টা করছিল ! কিন্তু কেউ যদি ওকে একটু ভাল করে দেখত নিশ্চিত বুঝে ফেলতো এই মেয়ে নিশ্চই পালিয়ে যাচ্ছে !
বাস বাজার ক্রস করার পরেও নিশির ভয় কাটে নি ! যতবার বাসটা একটু থেমেছে কিংবা যতবার একটু ব্রেক করেছে ততবার নিশির বুঝের ভেতরটা কেঁপে উঠেছে । বারবার মনে হয়েছে ই বুঝি ওর বাবা চলে আসলো !
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একটা চিরকুট রেখে এসেছে সে ! ঐ টা হাতে পাওয়ার পর বাসায় কি অবস্থা হবে ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে নিশির !
সারা ক্ষন আরমানের সাথে কথা হচ্ছিল । নিশি নিজেও বুঝতে পারছিল যে আরমান নিজেও চিন্তিত ! সব কিছুর উপরে নিশির নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল !
কিন্তু কিছু করার ছিল না ! আরমান ঢাকা থেকে এসে যে ওকে নিয়ে যাবে এমনও উপায় ছিল না ! একে তো হাতে সময় ছিল না তার উপর এতে রিস্কটা আরও একটু বেশি ছিল !
সব কিছু প্রস্তুতই ছিল ! কিন্তু তবুও বাস থেকে নেমে যতক্ষন না প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পেল ততক্ষন নিশির মনে শান্তি ছিল না ! বাস থেকে নেমেই দেখলো আরমান দাড়িয়ে আছে পাঞ্জাবী পরে ! এতো টেনশনের মাঝেও নিশির হাসি পেয়ে গেল !
বাহ !
বিয়ে করার জন্য একেবারে প্রস্তুত !
নিশির একবার মনে হল বলে যে শেরওয়ানী পরলে ভাল হত ! কিন্তু বলে নি ! নিশির খুব ইচ্ছা করছিল আরমান কে একবার জড়িয়ে ধরতে ! কিন্তু এতো লোকজনের মাঝে কি জড়িয়ে ধরা যায় ?
নিশির রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় আবার কলিংবেল বেজে উঠলো ! এরই মাঝে আবার কে রান্না ঘর থেকেই দরজাটা কাছে তাই নিশি নিজেই বেরিয়ে এল দরজা খুলতে ! দরজা খুলেই ওকে আরেক দফা অবাক হতে হল !
এতো গুলা মানুষ দরজার সামনে !
সবার সামনে দাড়িয়ে জেড়িফ ! নাটকের মডেলদের মত চেহারা আর থাকেও সব সময় পরিপাটি হয়ে ! বিয়ের দিনও জেরিফ এসেছিল এই রকম সেজে গুজেই ! তার পরে অভি দারিয়ে ! হাসি মুখে বলল
-ভাবী কেমন আসেন ? চলে এলাম জ্বালাতে !
তারপরেই কাভা ভাই ! হাতে এক বড় একটা বাজারের ব্যাগ !
সদা হাস্যজ্জল মানুষ !
নিশিকে দেখেই একটা মিস্টি হাসি দিলেন ! বললেন
-কি ব্যাপার আরমানের বউ ! সব ঠিক তো ?
নিশি হেসে বলল
-কি ব্যাপার ? আপনি একেবারে বাজার নিয়ে হাজির হয়েছেন !
-আনবো না ? বাসায় কি রান্না হবে সেটা তো রাধুনীর চিন্তার বিষয় ! কেন সেদিন আমার রান্না খাও নাই ?
-খেয়েছি তো !
-আজকেও চলে এলাম ! আজকেও আমরা পিকনিক করবো ! তাই একেবারে বাজার নিয়েই হাজির হলাম !
সবার পিছনে কান্ডারী ভাই আর কুনো ব্যাঙ ভাই ! যথারীতি নিশি কে দেখে একটা হাসি দিল !
আসলেই সেদিন সব কিছু এরাই করেছে । আরমানের আসে পাশের মানুষ গুলো সেদিন আরমানের কাছেই ছিল ! কাভা ভাই সবার জন্য রান্নায় ব্যস্ত ছিল ! এতো গুলো মানুষ জন্য রান্নার যোগার করা তো চাট্টি কথা না !
বাস থেকে নামতে নামতে প্রায় রাত ১০ টা ! ওখান থেকে সোজা আরমানে বাসায় ! নিশি এক কাপড়েই চলে এসেছিল এদিকে বিয়ের জন্য সব কেনা কাটা সাহায্য করেছে কান্ডারী ভাই আর আর কান্ডারী ভাবী !
নিশিকে বউয়ের সাজে ভাবীই সাজিয়েছিল !
বিয়ের সময় কাছের মানুষ গুলোর পাশে থাকা টা জরুরী । কিন্তু ঐ দিন নিশির কটা বারেও মনে হয় নি যে এক দল অপরিচিত মানুষের মাঝে সে রয়েছে । বারবার মনে হয়েছে খুব কাছের একদল মানুষই তার পাশে রয়েছে !
বিয়ে হতে হতে প্রায় ১২ টা বেজে গেল ! জেসন ভাই সব কিছুর তত্ত্বাবোধায়নে ছিলেন ! সব কছু ঠিক মত হচ্ছিল কি না এটা দেখছিল ! বারবার অভিকে ধমক দিচ্ছিল ! এই এটা কর ! ওটা কর ! এতো দেরি লাগে ?
নিশি দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই সাইকেলে টুংটাং আওয়াজ কানে আসলো ! ফিরে তাকিয়ে দেখে মাগুর ভাই !
এই মানুষটাও সেদিন অনেক মজা করছিল ! এই রকম মজার মানুষও হতে পারে ! নিশির সাথে এমন ভাবে কথা বলছিল যেন তিনি কত দিনেরই না চেনা ! হাসির হাসির কথা বলছিল যেন নিশির মুখের টেনশন টা কমে যায় !
টুংটুাং বেল বাজিয়ে মাগুর ভাই বলল
-আমাকে রেখেই দরজা আটকে দিচ্ছ ? এটা কিন্ত ঠিক না !
-আরে কি বলেন ! আসুন ! আপনাকে রেখে কিভাবে দরজা আটকে দিবো ?
নিশি যখন দরজা আটকে ঘরে ঢুকলো ততক্ষনে ঘরের ভিতর একটা হইচই শুরু হয়ে গেছে ! আরমানের সাথে আগে যখন কথা বলতো তখন আরমান প্রায়ই তাদের এইরকম আড্ডার কথা বলত ! আজকে তার ভাল ভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে !
নিশি এক গুচ্ছ ভাললাগা নিয়ে কাছের মানুষ গুলোকে দেখতে লাগলো ! এই মানুষ গুলো আজকে এখানে ওর জন্য ! ভাবতেই নিশির চোখ ভিজে উঠলো আনন্দে !
নিশি যখন বাসর রাতে ঢুকলো তখন বেশ রাত হয়ে গেছে ! ভাবী ওকে সাজিয়ে গুছিয়ে চলে গেল ! আস্তে আস্তে কেবল জেসন ভাই বাদ দিয়ে সবাই যে যার বাসায় চলে গেল ! আরমান যখন বাসর রাতে ঘুকলো তখন নিশির শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে । কিন্তু তবুও বাসর রাতে প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনের জন্য একটা বিশেষ রাত । নিশি সেই সময়টার জন্য কত দিন ধরে না অপেক্ষা করেছে !
আরমান যখন নিশির সামনে এসে বসলো তখন নিশির বুকের মাঝে কেমন করে উঠলো ! এতো পরিচিত মানুষ তবুও কেন এমন লাগছে !
নিশি আর কিছু ভাবতে পারছিল না ! সবকিছু যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল ! আজকে রাতে ওর অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে কথা পাকা হওয়ার কথা ছিল আর এখন সে তার প্রিয় মানুষটির সামনে বসে আছে ।
বধু সেজে !
এটা কি শুধুই স্বপ্ন নাকি সত্যি হচ্ছে !
নিশিই আগে কথা বলে উঠলো ! বলল
-তোমাকে একটু ছুয়ে দেখবো ?
আরমান হেসে বলল
-কেন বিশ্বাস হচ্ছে না ?
-উহু ! এভাবে তোমাকে পেয়ে যাবো কোন দিন ভাবি নি !
-পেয়ে গেছো তো ?
তারপর আরমান আবৃতি করতে লাগলো
প্রিয় বালিকা,
যাবে কি আমার সাথে?
দেবে কি অনেকটা পথ পাড়ি?
যতোটা পথ পাড়ি দিয়ে
ছুঁতে চেয়েছি তোমায়
অন্তত ততোটা পথ !
প্রিয় বালিকা,
ভালোবাসবে কি আমায়?
যতোটা আমি বাসি তোমায় !
ঠিক ততোটা না হলেও তার অর্ধেক !
প্রিয় বালিকা,
আমি তোমার ভিঞ্চি হবো।
তুমি কি ক্যানভাস হবে?
তুমি আমার ক্যানভাস হলে
সেখানে আঁকবো আমার মোনালিসাকে !
প্রিয় বালিকা,
যদি ভালোবাসো তবে হাতটা বাড়াও
আর যদি নাও বাসো তবুও হাতটা বাড়াও
আমি একবার তোমার ও আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে চাই।
প্রিয় বালিকা,
তোমার ঐ আঙ্গুলেই
আমার শেষ ইচ্ছেদের বসবাস।
কারণ
এরপর হয়তো কোন এক ভোরে
সবাই আবিস্কার করবে নশ্বর আমাকে !
কিন্তু আমি বেঁচে রইবো
তোমার মাঝেই
অনন্তকাল !
---------
জানি না গল্পটা এমন হয়েছিল কি না ! কিন্তু মোটামুটি নিশ্চিত যে এমন কিছু হয়েছিল ! আরমান তার প্রিয় বালিকাকে পেয়ে গেছে !
এই তো কদিন আগে আরমান আমার ব্লগে এসে এসে গল্প পড়তো আর কমেন্ট করতো ! আমি কোন দিন ভাবতেই ভারি নি আমার গল্পের মত করে সে তার নায়িকাকে পেয়ে যাবে !
আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র হয়ে বদ পুলা আমার আগে বিয়ে করে ফেলল ! তাও বিয়ে করবি কর, কাকে বিয়ে করলো ?
দুঃখের বিষয় আরমানের বউয়ের নিশি !
দুনিয়াতে বদ পুলা আর মেয়ে খুইজ্জা পাইলো না !
শুনো আরমান জলদি বউয়ের নাম চেঞ্জ কর ! আমি কিন্তু আমার গল্পের নায়িকার নাম বদলাবো না ! সুতরাং সাবধান !
আপনারা সবাই আরমান এবং আরমানের বউ (নট নিশি, এই নাম কেউ মুখে আনবা না) এর জন্য দোয়া করবেন ! যেভাবে ভালবাসা দুজন কে কাছে এনেছে সারাটা জীবন যেন এই ভালবসায় দুজন কাছাকাছি থাকে !
বিঃদ্রঃ বিয়ে উপলক্ষ্যে হেভি খানা পিনার আয়োজন আশা করতাছি ! আরমান জলদি ইনতেজাম কর ! দেরি করলে কিন্তু খবর আছে !
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫১