-কি হয়েছে?
-এই মারু হাফ প্যান্ট পরে এসেছ কেন?
-না মানে এমনি গরমে.....
-তুমি কি পাগল! এই ভাবে কেউ ডেটং এ আসে?
-হে হে
-তুমি হাস কেন? ওকে আমি চলে যাচ্ছি, তুমি হাফ প্যান্ট পরেই থাক।
আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই লীনা ঘুরে চলে গেল ! আমি ভেবেছিলা হয়তো এমনতেই আমাকে ভয় দেখাচ্ছে ! কিন্তু আসলেই আর ফিরে এল না !
আমার এখন কিছু বলা উচিৎ কিন্তু কেন জানি বলতে ইচ্ছে হল না ! আমি লীনার চলে যাওয়া পথে দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে রইলাম !
তাকিয়ে থেকে কি লাভ ? কবি বলেছেন চলে যাওয়া বাস আর চলে যাওয়া নারীর দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে নেই ! সময় নষ্ট ! কোন কবি বলেছেন ঠিক মনে পরছে না !
আমি কিছুক্ষন কবির নাম মনে করার চেষ্টা করলাম ! কিন্তু মনে পড়লো না ! ইদানিং কি যে হয়েছে কোন কিছুই ঠিক ঠাক মত মনে থাকে না !
নাহ ! মেয়েটাকে আটকানো দরকার ছিল ! এতো কষ্ট করে সেজে গুজে এসেছে আমার জন্য ! যাক চলে গেছে আর কি করা !
আমার অবস্থান এখন ধানমন্ডির আট নাম্বর রোডের কাছে । এখানে সাম্পান নামের একটা রেস্টুরেন্ট আছে । রেস্টুরেন্টটা নাকি অর্ধেক পানির উপরে। লীনার অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা এমন একটা রোমান্টিক জায়গায় আমার সাথে দেখা করবে ।
প্রায় প্রতিদিনই আমাকে বলতো । ফেসবুকে মেসেজের পর মেসেজ । ফোনের পর ফোন । আমি কোন ভাবে এড়িয়ে যেতাম । আমার কেবল ইচ্ছা ছিল আমার পরিচয়টা ফেসবুক আর ফোনের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাক । আর কত ? এখন আর কি সেই বয়স আছে !
কিন্তু গত কালকে লীনাকে কিছুতেই এড়াতে পাড়লাম না । গতকাল বিকেলের দিকেই আমাকে ফোন দিয়ে বলল
-শোন কালকে তুমি আমার সাথে দেখা করবে !
-আরে কি বল ? না । একদমই সম্ভব না । অফিসে কালকে বিরাট কাজ আছে ।
কথাটা বলেই মনে হল ভুল করে ফেললাম । মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে কথাটা । আসলে প্রত্যেকবারই অফিসের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে গেছি আজকে তাই মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেড়িয়ে গেছে ! কিন্তু পরদিন যে শুক্রবার এটা আমার মনেই ছিল না ।
যাক যে কথা বলা হয়ে গেছে আর কিভাবে ফেরাই ? লীনা বলল
-তুমি কোন অফিসে চাকরি কর যে শুক্রবারেও বিরাট কাজ থাকে ? ফাজলামি করতেছ আমার সাথে ?
-আরে .. মানে ..
-বল বল কি মানে ?
আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না । চুপ করে রইলাম কিছুক্ষন । লীনা বলল
-শুনো ধানমন্ডিতে আমি একটা চমৎকার একটা রেস্টুরেন্টের সন্ধান পেয়েছি । অর্ধেকটা পানির উপর । খুব সুন্দর একটা জায়গা । আমাদের প্রথম দেখাটা ওখানে হবে । এবং কালকেই হবে ।
-আরে কি বল ? ধানমন্ডি ? এতো দুরে কিভাবে যাবো ? না না । এতো দুরে কিছুতেই যেতে পারবো না । তুমি চিড়িয়াখানায় এসো !
-শুনো । বেশি প্যাঁচ প্যাঁচ করবা না । যা বলছি তাই । কালকে যদি সময় মত না আসো তাহলে তোমার খবর আছে ।
কি খবর আছে কে জানে ? আমি আর বেশি কথা বাড়ালাম না । শান্তশিষ্ট মেয়েরা মাঝে মাঝে ভয়ানক কিছু করে ফেলে । লীনাও ওরকম কোন খবর করবে কি না কে জানে । অনিচ্ছা সত্তেও রাজি হয়ে গেলাম । দেখা যাক কি হয় !
লীনা চলে গেছে প্রায় দুই মিনিটের কাছা কাছি হল । আমি সাম্পানের সামনেই দাড়িয়ে রইলাম । কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না । বাম দিকে এক ঝাল মুড়িওয়ালা বসে আছে উদাস হয়ে ! আগে ঝাল মুড়ি খাওয়া যাক তারপর চিন্তা ভাবনা করা যাবে কোন দিকে যাওয়া যায় ?
আমি ঝাল মুড়িওয়ালার দিকে এগিয়ে গেলাম ।
-মামা পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি মাখাও তো ।
-পাঁচ টাকার বেঁচি না ।
-তাহলে কয় টাকার বেঁচো ?
-নিচে দশটাকার ।
বেটা কয় কি ? মুড়ির কেজি পঞ্চাশ টাকা আর এই বেটা কয় দশটাকার নিচে বেঁচে না । একবার মনে হল না খেয়েই চলে যাই কিন্তু তারপর মনে হল থাক ! লীনা এমন করে চলে গেল শেষে ঝাল মুড়িও যদি চলে যায় তাহলে কেমন হয় !
-আচ্ছা তাই মাখাও !
আমি মামার দিকে আর একটু এগিয়ে গেলাম ! বললাম
-তোমার মুড়ি কেউ খায় ? এতো দামী মুড়ি তো চলার কথা না !
মামা খানিকটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল
-চলে । খুব চলে !
-কিভাবে চলে ? কে কিনে এতো দাম দিয়ে ?
-মাইয়া আপুরা কিনে ! লাইন দিয়ে কিনে ! টাইম মত আইলেই দেখতেন !
আমি খানিকটা অবাক হওয়ার ভান করে বললাম
-আচ্ছা ! লাইন দিয়ে কিনে ? কেন ?
মামা দাঁত বের করে একটা হাসি দিল ! হাতের মুড়ি ততক্ষনে কৌটার ভিতর নিয়ে ঝাকাতে শুরু করেছে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার কাছে ইস্পিশাল মশলা আছে !
-আচ্ছা ওস্পিশাল মশলা ! কই সেই মশলা ! দেখান দেখি ?
-আপনেরে দেখান যাইবো না ! এই নেন !
ঝালমুড়ি তৈরি ! মামা আমার দিকে বাড়িয়ে দিতে বলল
-খাইয়া দেখেন !
আমি মুড়ির ঠোঙগা নিয়ে খেতে শুরু করতে যাবো তখনই দেখি ঝালমুড়ি মামার মুখের ভাব খানিকটা পরিবর্তন হয়ে গেল ! আমার পিছনে নিশ্চই এমন কেউ এসেছে যার দিকে মামার চোখ পড়েছে ! আমারও খানিকটা ইচ্ছা দেখার কে এল আবার !
আমি পেছনে তাকাতেই দেখি লীনা ! একেবারে অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
আমি খানিকটা বোকার মত হাসার চেষ্টা করলাম ! একটা ঢোক গিলে বললাম
-আরে তুমি যাও নি ? রিক্সা পাওনি নাকি ?
-দেখো জনি ফাজলাম করবা না বললাম !
-আরে বাবা ফাজলামো করলাম কোথায় ? দেখলাম আমার সামনে দিয়ে গটগট করে হেটে চলে গেলে ! আমার দিকে একবার ফিয়ে তাকালেও না !
লীনা আমার দিকে আরো কিছুক্ষন অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলো !
ও আজকে চোখে কাজল দিয়ে ঘন করে ! আমি খনিকক্ষনের জন্য ঐ গভীর চোখে হারিয়ে গেলাম !
ফেসবুকে ওর ছবি দেখেছি অনেক বার কিন্তু ওর চোখ এটো সুন্দর আগে তো লক্ষ্য করি নি ! আমি আবার একটু হাসি দিয়ে বললাম
-আরে তুমি এতো রেগে কেন যাচ্ছ ? আমি এমন কি করলাম ?
-কিছু কর নি !
-কই নাতো !
-তুমি আজকে দুইটা অপরাধ করেছ ?
-দুইটা ?
-হুম ! প্রথমত আজকে তুমি হাফপ্যান্ট পরে এসেছো ?
-আরে হাফ প্যান্ট কোথায় ? এটাতো থ্রী-কোয়াটার প্যান্ট ?
তারপর ঝালমুড়ি মামার দিকে তাকিয়ে বললাম
-বল মামা এটা কি হাফ না থ্রী কোয়াটার ?
মামা কিছু বলল না তবে কেবল দাঁত বের করে হাসলো ! আমি যে তার ঝালমুড়ির সাথে সাথে লীনার ঝাড়িও খাচ্ছি এটা দেখে সে খুব মজা পাচ্ছে !
আমি বললাম
-দেখেছো তো মামাও আমার কথার সাথে এগ্রি করছে !
দেখলাম লীনার চোখ আবার কিছুটা গরম হয়ে উঠলো !
-আরে বাবা রাগার কি আছে ?
-রাগার কিছু নাই ? তুমি একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছো প্রথম বারের মত তাও হাফপ্যান্ট পরে !
-কারেকশন প্লিজ ! হাফ প্যান্ট না ! থ্রী কোয়াটার !
-শাট আপ ! একটা মেয়ে কত সাধ করে তোমার জন্য দেখা করতে এসেছে, যে কোন দিন ঠিক মত শাড়ি পরে নি তোমার জন্য সে শাড়ি পরে এসেছে আর তুমি ?? ইজ দিস জোক টু ইউ ?
শেষ লাইন টা বলার সময় আমার কেন জানি মনে হল ওর গলা একটু কেঁপে উঠল !
আসলেই লীনার কোন শাড়ি পরা ছবি আমি দেখি নি ! ও প্রায়ও বলতো যে শাড়ি পরা শিখছে । আমার সাথে দেখা করার দিন শাড়ি পরে আসবে !
আসলেই লীনা আজকে শাড়ি পরে এসেছে । ঠিক মত শাড়ি আটকে রাখার জন্য অন্তত ৫০ টা সিপটিপিন আটকেছে !
আমি একটু মিনমিন কন্ঠে বলার চেষ্টা করলাম
-আসলে বাইরে একটু গরম তো !
-গরম !! তাই না ?
আমি কিছু না বলে লীনার দিকে তাকিয়ে রইলাম !
-আর ?
-আর ?
আমি ঠিক বুঝলাম না ! লীনা বলল
-আর আমি যখন চলে যেতে চাইলাম তুমি আমাকে আটকালে না কেন ?
এই রে ! একবার মনেও হয়েছিল ওকে আটকানোর কথা ! আটকানো উচিৎ ছিল ! আমি বললাম
-দেখো তুমি তো জানো আমি ব্লগে টুকটাক লেখা লেখি করেছি ! আমি সব সময় নারী অধিকারের পক্ষে ! নারী স্বাধীনতার পক্ষে ?
-মানে ? এটার সাথে ওটার কি সম্পর্ক ?
-না মানে তুমি তো চলে যাচ্ছিলে ! যদি আমি আটকাতাম তাহলে তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হত না ? তাই আটকাই নি আর কি ?
লীনা আমার দিক খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো !
-আসলে তোমার সাথে আমার দেখা করতে আসাটাই ভুল হয়েছে ! তুমি থাকো তোমার গরম আর স্বাধীনতা নিয়ে ! আমি গেলাম !
লীনা আবারও চলে যাওয়ার জন্য উদ্ধত হল । কিন্তু আমি এবার আর ভুল করলাম না ! লীনার হাত ধরলাম !
-আরে কই যাও ?
-এবার নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে না ?
-আহা একটু হোক না ! শুনো এই মামার কাছে ইস্পীশাল ঝালমুড়ি পাওয়া যায় ! খাবা ?
-তুমি খাও ! আমি এখানে ঝালমুড়ি খেতে আসি নি !
-কি খেতে এসেছো ?
আামর এই কথার জবাব লীনা না দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! দেখলাম খানিকটা যেন ও রগালটা লাল হয়ে উঠলো !
-তুমি .....।
-আচ্ছা ! ঠিক আছে ! যা হওয়ার হয়েছে ! হাফ প্যান্ট পরে যখন চলেই এসেছি আজকে আর রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে লাভ নাই !
-তাহলে ?
-চল ! আজকে রিক্সা করে ঘুরে ! সারা রাত !
-সারা রাত ?খেয়ে দেয়ে আমার লাভ নাই !
-হুম ! লাভ নাই ! শুনো, তুমি বলতে না বৃষ্টিতে আমার হাত ধরে রিক্সা করে ভিজবে !
-হুম !
-আজকে বৃষ্টি না হোক, হাত রিক্সা চড়া নিশ্চই হবে !
লীনার সাথে পরিচয় সেই কবে থেকে ! অন লাইনেই ! কিন্তু মেয়েটা আমার ভার্চুয়াল জগত থেকে আস্তে আস্তে কিভাবে বাস্তব জীবনে ঢুকে পড়লো ! এমন একটা দিন নাই যে দিন ওর ফোন না পেয়ে ঘুম ভেঙ্গেছে ! আমি কখন কি খাই না খাই কেন খাই সব কিছুর জন্য লীনা কি পরিমান চিন্তিত ! প্রথম প্রথম একটু বিরক্ত লাগলেও আস্তে কেন জানি ভালই লাগতো !
এমন একজন কেয়ার করার লোক আছে জেনেই মনে ভাল লাগতো !
একবার পাত্রীদেখা নিয়ে একটা ব্লগ পোষ্ট দিয়েছিলাম সেই পোষ্ট পড়ে কি কান্না কাটি ! যতই বলি যে বানানো গল্প সে কিছুতেই বিশ্বাস করে না !
আর আজকে এই ভাবে দেখা করা ! আস্তে আস্তে আমার নিজের ভিতরেরও একটা পরিবর্তন আসতে থাকে ! মুখে স্বীকার না করলেও মেয়েটা ঠিকই আমার জন্য একটা কিছু হয়েছে এই দিন গুলোতে !
টুংটাং করে রিক্সা এগিয়ে চলছে ! লীনা আমার হাত ধরে চুপ করে বসে আছে রিক্সায় উপর ! অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সে কেঁদেই চলেছে !
কোন কারন ছাড়াই !
একবার জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছিলাম
-কাঁদছো কেন ?
-আমার ইচ্ছা ! তোমার কি ?
-না মানে চোখে চলে তোমার কাঁজল ছ্যাড়াবেড়া অবস্থা ! এই রাতে যে দেখলে কি ভেবে বসবে ?
-জনিইইই !!
-আরে সরি সরি ! জোকিং বাবা ! তোমার চোখ দুটো আসলেই অনেক সুন্দর ! আমি আগে লক্ষ্য করি নি !
-করলে কি হত !
-আরো আগেই ডুব মারতাম ঐ চোখে !
আরো কিছু বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বলা হল না ! রিক্সাটা একটা অন্ধকার পথে ঢুকে পরেছে ! তবুও যেন আমি ওর চোখ দুটো বেশ পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম ! যে চোখে আমার আমার সর্বনাশ দেখা যাচ্ছে !
ওয়ার্ডপ্রেস লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪২