না বলুক !
মেয়েদের বেশি লাই দিলেই মাথায় উঠে । এখন সময় এসেছে লাই দেওয়া বন্ধ করার !
সকলা বেলা ঘুম থেকে উঠেই অফিসে চলে গেছি । সারা দিনে বাসায় যাওয়ার দরকার পরে নাই ।
অবশ্য অন্য দিন নিশি দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার ফোন দেয় ! আজকে দেয় নাই একবারও । আমিও দেয় নি । দেখা যাকে কে রাগ করে থাকতে পারে বেশি !
কিন্তু সমস্যা হল বাসায় এসেই । বাইরে থাকলে তো বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকা যায় কিন্তু বাসায় আসলে তো আর কিছু করা যায় না । তাছাড়া নিশি রয়েছে আমার চোখের সামনে ! ওর সাথে কথা বলতে পারছি না আাবর না বলে থাকতেও পারছি না !
এখন কি করি !
কিছুক্ষন নেট ব্রাউজিং করলাম । কিন্তু মন বসলো না ঠিক মত । বই পড়ার চেষ্টা করলাম তাতেও কাজ হল না !
না এভাবে আর সময় কাটানো যাবে না । টিভি দেখতে যাবো কিন্তু সেখানে নিশি বসে আছে গম্ভীর মুখে ।
আমি গড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১১ টা বেজে গেছে ।
নাহ ! আর সময় নষ্ট করে লাভ নাই । রাতের খারার খেয়ে ঘুমিয়ে পরা যাক ।
ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি নিশি এখনও টিভির দিকে তাকিয়ে আছে এক ভাবে । কিছু দেখছে বলে মনে হয় না । আমি রান্না ঘরের দিকে রওনা দিলাম । যদিও আমি নিজে কোন দিন ভাত বেড়ে খাই নি । প্রতি বেলায় নিশি নিজেই আমাকে ভাত বেড়ে দেয় !
কোন ব্যাপার না । আগে তো এক সময় নিজে নিজেই করেছি । আমি রান্না ঘরে হাজির হলাম !
ওকে !
ভাতের প্লেট কই ? এদিক ওদিক খুজেও ভাতের প্লেট খুজে পেলাম না ।
আরে এটাতো ভাতে রপ্লেট নাকি গহনার বাক্স ! এতো লুকিয়ে রাখার কি আছে ?
নিশিকে কে কি জিজ্ঞেস করলবো যে ভাতের প্লেট কোথাট রেখেছে ?
নাকি বাইরে গিয়ে খেয়ে আসবো ?
আমি আবার ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দেখি টেবিলে নিশি ভাতের প্লেট সাজাচ্ছে ! আমি আসতেই আমাকে গম্ভীর মুখে বলল
-ভাত বেড়েছি ! ভাত খেয়ে নাও !
একবার ভাবলাম বলি যে আমার ভাত আমি নিজেই খেয়ে নিতে পারব কিন্তু তারপর মনে হয় দরকার কি !
রাগের জায়গায় রাগ আর খাওয়ার জায়গায় খাওয়া ! আর নিশি তো নিজেই ভাত বেড়ে দিচ্ছে সুতরাং খাওয়াই যায় !
আমি ভাত খেতে বসে গেলাম। নিশি আস্তে আস্তে খাবার টেবিলে । টেবিলে খাবার সাজানো শেষ হলে আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো আবার টিভির সামনে গিয়ে বসবে কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার সামনেই বসে পড়লো ! গম্ভীর মুখে আমার প্লেটে ভাত তুলে দিতে শুরু করলো !
এটা একটা ভাল কথা । আসলে ওর সাথে বিয়ের পর থেকেই নিশি সব সময় আমার খাওয়ার সামনে বসে থাকে । এমন না যে আমার সাথেই খেতে বসে । আমি খাওয়ার পরে সে খেতে বসবে । আমি কখন কি খাই কি লাগে নিশির এই দিকে খুব খিয়াল । ও কিভাবে যেন বুঝে যায় আমার কখনও কি লাগবে । আমার মুখ দিয়ে বলাও লাগে না । ও নিজ থেকেই আমার প্লেটে ভাত তুলে দিবে তরকারী তুলে দিবে ও ঠিক মতই জানে আমার কখন তরাকরী খাই, কখন ডাল খাই !
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় নিশি যদি কোন দিন যদি কোন কিছু আমার পাতে তুলে না দেয় আমি হয়তো সেদিন সেই তরকারীর কথা মনেই করবো না ।
যখন অফিসে কাজের জন্য মাঝে মাঝে বাইরেই খেতে হয় তখন ওর প্রয়োজনীয়তাটা খুব ভাল করেই অনুভব করি ! আজকে যেমন করে ছিলাম । দুপুরে গরুর মাংস ডাল আর আলু ভর্তার অর্ডার দিয়ে ছিলাম । যখন খাওয়া শেষ করলাম দেখলাম যে আমি মাংস খেতে প্রায় ভুলেই গেছি ! কেবল আলু ভর্তা আর ডাল দিয়েই খাওয়া শেষ করে ফেলেছি । নিশি থাকলে ঠিক সময়েই আমার প্লেটে মাংস তুলে দিতো !
আমি খাওয়া শেষ করলাম ! আমার আর একট বাজে অভ্যাস আছে ! আমি ভাত খাওয়া শেষ করলেও এক মুঠো পরিমান ভাত সব সময় রয়ে যায় আমার প্লেটে । নিশি এইটা নিয়ে প্রতিদিনই আমার সাথে রাগারাগি করে তারপর নিজেই আমার প্লেটে ভাত নিয়ে খাওয়া শুরু করে ।
আজকে আমি যখন এক মুঠো পরিমান ভাত রেখেই উঠে গেলাম নিশি আজকে কিছু বলল না । হাত ধুয়ে এসে দেখি নিশি খেতে বসেছে ।
কি মনে হল আমি ওর পাশে বসলাম । নিশি আমার দিকে না তাকিয়েই গম্ভীর মুখে ভাত খেতে লাগলো ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি !
তখনই কেন জানি মনে হল নিশির উপর রাগ করাটা ঠিক হয় নাই ! কিছু কিছু মানুষের উপর রাগারাগি করা ঠিক না একদমই !
আমি ডালের বাটিটা ওর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললাম
-ডাল নাও ! আজকে ডালটা ভাল হয়েছে !
-জি ! আমি জানি ! আমিই তো রেধেছি ! আমি জানি !
-নাও !
নিশি গম্ভীর মুখেই বলল
-সময় হলে নিবো ! তুমি তোমার কাজে যাও !
-আরে আমি আমার কাজই তো করছি ! তোমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছি । জানো না স্ত্রীর রাগ ভাঙ্গানোই হল সকল স্বামীর একান্ত এবং প্রধান কর্তব্য !
-তাই ! তা পুরো দিনের ভিতর এই কথা এখন মনে পড়লো !
আমি বললাম
-আচ্ছা ধর আজকে তোমার রাগ ভাঙ্গলো না তাহলে কি আমাকে আজ রাতে তোমার সাথে ঘুমাতে দিবে না ? মানে আমাকে কি সোফার উপরে ঘুমাতে হবে !
নিশি এই বার কোন কথা বলল না !
-আচ্ছা বাবা আমিই সরি বলছি ! ঠিক আছে !
তবুও নিশি চুপ !
-ওকে ! কালকে তোমাকে দুইটা পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ কিনে দিবো ! ঠিক আছে ?
এবার নিশি খাওয়া বন্ধ করে বলল
-তুমি মেয়েদের কি মনে কর ? পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ দিয়েই সব কাজ হয়ে যাবে !
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম
-তাই তো হবার কথা ! সুত্র তো তাই বলে !
-ওকে তুমি থাকো তোমার সুত্র নিয়ে !
নিশির খাওয়া শেষ হয়েছে । ও প্লেট নিয়ে উঠে চলে গেল ! আমি বসে রইলাম টেবিলের উপর ! তবে একটা আশার কথা হচ্ছে নিশির মুখের গাম্ভীর্য খানিকটা কমেছে !
রাগও নিশ্চই কমে যাবে । আর কথা যখন বলা শুরু করেছে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে !
রাতে যখন ঘুমাতে গেলাম ভেবছিলাম হয়তো সোফার উপরেই আজকে ঘুমাতে হবে কিন্তু তেমন কিছুই হল না । আমি শান্তিতেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম ! নিশি নিজের চুল বাঁধছিল । ঘুমানোর প্রস্তুতি !
হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো কালকে যখন সেলোয়ার কামিজ কিনবে খবরদার কালো আর সাদা রংয়ের কিনবে না ! তোমার আবার তো এই দুই রং ছাড়া আর একটাও পছন্দ হয় না !
আমি হেসে ফেললাম । নিশিও হাসলো ! কে বলেছে পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজে কাজ হয় না ! অবশ্যই হয় !
শান্তি চুক্তি এবং পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ !
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৫