আমি রফিক ভাইয়ের দিকে ভরু কুচকে তাকালাম ! আমি যতদুর জানি রফিক ভাই তীব্র পাকিস্তান বিরোধী ! পাকিস্তানের সব কিছুতেই তার তীব্র ঘৃনা ! তিনি দুনিয়ার সব কিছু শুনতে রাজি আছেন কিন্তু পাকিস্তানের প্রসংসা শুনতে মোটেই রাজি না !
আর আজকে এই রফিক ভাই ই কয় পাকিস্তানী সেলোয়ার কামজ কোথায় পাওয়া যায় ?
আমি রফিক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বলেন এই সব ?
-কি বলি ? খারাপ কি বললাম ? বলেছি পাকিস্তানী কামিজ কোথায় পাওয়া যায় জানো নাকি ?
-রফিক ভাই ? আপনি কিনবেন পাকিস্তানী জিনিস পত্র ? আপনি ?
রফিক ভাইয়ের মুখটা একটু করুন হয়ে গেল ! কিছুক্ষন উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো উপরের সিলিংয়ের দিকে । তারপর বলল
-বিয়ে করেছ না ?
-হুম !
-কদিন বাদেই বুঝে যাবে ! বউয়ের ইচ্ছার কাছে পৃথিবীর সব কিছু ফিকে হয়ে আছে !
আমি বললাম
-মানে কি ?
-সময় যাক মানে এমনিতেই বুঝতে পারবে ! এখন বল পাকিস্তানী কামিজ কোথায় পাওয়া যায় জানো নাকি !
-জি না !
আমি আমার কাজে মন দিলাম । ঠিক মত বুঝতে পারলাম না রফিক ভাই আসলে কি বুঝাতে চেয়েছে । বউয়ের কাছে পৃথিবীর সব কিছু ফিকে হয়ে যায় মানে কি ? অবশ্য বিয়ের আগে আমার সব বন্ধু বান্ধবই এমন কথা বলছিল ! এসবের মানে কি ?
বউকে এতো ভয় পাওয়া কি আছে ?
লোকে যা বলে বলুক ! আমার বউ তো আর এমন নয় ! নিশি আসলেই অনেক ভাল মেয়ে ! মাঝে মাঝে একটু আধটু বায়না কয়ে । সেটা তো সব মেয়েরাই তাদের স্বামীদের কাছে করে !
এটাই তো স্বাভাবিক !
অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল ! বাসায় গিয়েই দেখি নিশি গম্ভীর মুখে বসে আছে ! মুখটা অন্ধকার করে বসে আছে !
কি ব্যাপার ? আজকে কি একটু দেরী হয়ে গেল বাসায় আসতে ?
ঘড়ি তে তাকিয়ে দেখলাম !
আধা ঘন্টার মত দেরি হয়েছে । এর জন্য নিশ্চই মুখ অন্ধকার করে বসে থাকার কোন মানে নেই !
আমি নিশির কাছে গিয়ে বললাম
-কি হয়েছে বাবু ? এমন মন খারাপ কেন ?
আমার কথা শুনে নিশি প্রথমে কিছুক্ষন অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকালো ! তারপর বলল
-তোমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কত ?
আমি একটু থতমত খেলাম ! কি রে ভাই ! এটা আবার কেমন কথা ! কিসের ভিতর কি !
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম
-তুমি তো জানোই আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড কত ! তাই না ? আমরা তো একসাথেই জয়েন্ট একাউন্ট খুলেছি !
এই কথা শুনে নিশি যেন আর একটু রেগে গেল ! চোখের আগুনের মাত্রাটা যেন আর একটু বাড়লো !
এই মেয়ের সমস্যা কি ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !
আশ্চার্য !
নিশির সাথে বিয়ের পরপরেই ও আমাকে বলেছিল
-শুনো আমাদের একটা জয়েন্ট একাউন্ট থাকবে !
আমি বললাম
-অবশ্যই থাকবে ! আজকে গিয়েই আমি একাউন্ট করে আসবো ! এখন বল কোন ব্যাংকে একাউন্ট করবে ? আমার মনে হয় ব্রাক ব্যাংক টা বেষ্ট হবে !
-আরে ধুর ! ব্যাংকের একাউন্ট না ! ফেসবুক একাউন্ট !
-ফেসবুক একাউন্ট ? তাও আবার জয়েন্ট !
-হুম !
আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না ! জুয়েন্ট ফেসবুক একাউন্ট কেমনে খুলে ! আমি বললাম
-জয়েন্ট ফেসবুক একাউন্ট কেমনে খুলে ?
-শুনো ! আমরা দুজন প্রায় একই নামে একাউন্ট খুলবো !
-তাতে কি লাভ !
-আরে শুনো না ! ধর তোমার নাম অপু !
-আরে ধরবো কেন ! আমার নাম তো আসলেই অপু !
এবার দেখলাম নিশি আসলেই একটু বিরক্ত হল ! আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল
-শুনো ! ফাজলামি করবা না ! আমি যা বলছি শুনো !
-আচ্ছা !
-জয়েন্ট একাউন্ট মানে হল তুমি অপু নামে এটা একাউন্ট খুলবা আর আমি তোমার নামের সাথে মিলিয়ে আরেকটা একাউন্ট খুলবো ! লাইক অপুর হৈম ! বুঝেছ ? এবং ..।
-এবং ?
-এবং তুমি তোমার আগের একাউন্ট টা ডি-একটিভেট করে দিবা ! ওকে ?
-অবশ্যই ! তুমি সাথে আমার তো আর একাউন্ট রাখার দরকারই নাই !
আমি নিশি দিকে তাকিয়ে বললাম
-এতো রাগারাগির কি আছে ? আমার পাওয়ার্ড তো তুমি জানোই !
নিশি বলল
-এটা না ! তোমার আসল একাউন্ট ! যেটা আগে চালাতে !
-আরে ওটা তো আমি বন্ধ করে দিয়েছি !
-বন্ধ করে দিয়েছ ?
এই কথা বলে নিশি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো ! তারপর শীতল কন্ঠে বলল
-বন্ধ করে দিয়েছ ? বন্ধ করে দিয়েছ ? বন্ধ করে দিয়েছ ?
এই কাজ সেরেছে রে !
নিশি নিশ্চই কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে যে আমি আমার আগের একউন্ট টা বন্ধ করে দেই নি !
আরে এভাবে বললে কি একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া যায় নাকি ? কত বন্ধু- বান্ধব কত পরিচিত মানুজন ! সবার উপরে কত গুলো মেয়ে ফলোয়া রয়েছে আগের একাউন্ট টাতে । বললাম আর একাউন্ট বন্ধ করে দিলাম !
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নিশি কিভাবে জানতে পারলো ! আমিতো আগের একাউণ্ট থেকে নিশিকে ব্লক করে রেখেছি !
তাহলে ?
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম ! বললাম
-এসব কি বলছো সোনা পাখি ? আমি তো কবেই....
-খবরদার মিথ্যা কথা বলবা না ! খবরদার বলতেছি ! তুমি থাকো তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড আর ফলোয়ার নিয়ে ! আমি গেলাম !
আামকে অবাক কয়ে দিয়ে নিশি সত্যি সত্যই ব্যাগ নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল ! আমি কিছু বুঝতেই পারলাম না ! ব্যাগ মনে হয় আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছিল !
আশ্চার্য ! এই টুকু সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ?
যাহ !
যাক ! হু কেয়ারস ??
-কি ব্যাপার অপু সাহেব ! মন খারাপ কেন ?
আজকে রফিক ভাইকে দেখলাম বেশ প্রফুল্য ! সেদিনের মত আর এতো বিষন্ন নন !
-আর বইলেন না ! ফেসবুক নিয়ে ঝামেলায় পরেছি ।
-ফেসবুকে নিয়ে আবার কি ঝামেলায় পড়লা ?
-ঠিক ফেসবুক নিয়ে না ! ফেসবুক আর বউ নিয়ে !
তারপর রফিক ভাইকে সব কথা খুলে বলতেই তিনি কি যেন ভাবতে লাগলেন !
-রফিক ভাই একটা বুদ্ধি দেন !
রফিক ভাই কোন বুদ্ধি দিতে পারলো না ! কেবল বলল আমি যেন শান্তি চুক্তি করে নেই ! এটাই নাকি বিবাহিত জীবনে শান্তিতে থাকার সব চেয়ে ভাল উপায় !
আমার শ্বশুর বাড়ি আমার বাসা থেকে খুব বেশি দুরে না । হেটে গেলে বড় জোর পনের মিনিটের পথ ! এই জন্যই নিশি হুট করে চলে এসেছে এতো জলদি !
আগেও অবশ্য আসতো ! আমি ভেবেছিলাম নিশি গেছে পরের দিনই ফিরে আসবে ! কিন্তু দেখতে দেখতে সপ্তাহ কেটে যাবে ভাবতে পারি নি !
আমি নিশির রাগ ভাঙ্গানোর জন্য শ্বশুর বাড়ি গিয়ে হাজির হলাম !
ড্রয়িং রুমে বসে ছিলাম শ্বশুর সাহেবের সাথে । তিনি টুকটাক কথা বলছিলেন । আমি হ্যা হু করছিলাম !
শ্বশুর মাশই বললেন
-তোমরা কি যে কর না ? আমি বুঝি না ! একটু মানিয়ে নিয়ে চললে কি হয় ?
-তা তো অবশ্যই !
-নিশি এসেছে সেই এক সপ্তাহ আগে ! আর আজকে তুমি এলে ! এভাবে রাগ করে থাকলে কি চলে ? শুনো ! সব সময় বউদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিতে হয় ! তাহলে সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকে !
-জি আব্বা !
শ্বশুর মশাই আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই শ্বাশুড়ি এসে হাজির ! শ্বশুর মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার ? তোমাকে না বললাম বাজারে যেতে ! এখানে বসে বসে কি করছ ?
কাচুমুচু করে শ্বশুর মশাই
-এই তো যাচ্ছি !
আমি বুঝে গেলাম কিভাবে শ্বশুর মশাইয়ের সংসারে সুখ শান্তি বজায় আছে !
কিছুক্ষন একা বসে থেকে আমি নিজে থেকেই নিশির ঘরের দিকে রওনা দিলাম ! গিয়ে দেখি মহা রানী খাটের উপর চুপ করে বসে আছে । আমাকে দেখে তার মুখটা আরো একটু গম্ভীর হয়ে গেল !
আমি আস্তে আস্তে ওর পাশে গিয়ে বসলাম ! ওর হাত ধরতে গেলেও ও তা ছারিয়ে নিল !
-আহা ! এটা কেমন কথা !
-কেমন কথা মনে ?
-তুমি এমন কেন করছ ?
-জানো না কেন করছি ?
-আচ্ছা এটা এমন কি একটা কাজ আমি করেছি যে একেবারে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হবে ! জানো গত দিন গুলো আমি একটুও ঘুমাতে পারি নি ! শান্তি মত একটুও খেতে পারি নি ! তুমি ছাড়া কি চলে বল আমার ?
যদিও একটু মিথ্যা কথা বললাম !
সপ্তাহ ধরে শান্তি মত বিরানী খেয়েছি ! নিশি থাকলে একটু বিরানী খাওয়ার উপায় নাই ! বাইরে থেকে যে খেয়ে আসবো তারও উপায় নাই ! ঠিকই টের পেয়ে যায় ! বিরানী নাকি শরীরের জন্য খারাপ ! তাই সে আমাকে খেতে দেয় না !
দেখলাম নিশির মুখ একটু নরম হল ! বলল
-ঠিক মত খেতে পার নি !
-উহু !
-একটুও ঘুম আসে নি ?
-উহু ! আমার সোনা বউয়ের গায়ের গন্ধ না পেলে কি ঘুম আসে ?
-তাই ?
-হুম !
যাক মনে হচ্ছে ঝামেলা এখনই কেটে যাবে ! কিন্তু এতো সহজেই কাটলো না ! নিশি হঠাৎ বলল
-তাহলে তুমি আমাকে না জানিয়ে কেন ওটা চালু রাখলে ?
-বাবু একটু বোঝার চেষ্টা কর ! ওখানে কত দিনের পরিচিত মানুষ জন রয়েছে ! আস্তে আস্তে এই একাউন্টে সব ট্রান্সফার করছিলাম । এই জন্য !
-যাও তোমার ঐ পরিচিরাই তো সব । আমি তো কিছু না !
-আমি কি তাই বলেছি ? তুমিই তো আমার সব ! একটু বোঝার চেষ্টা কর !
নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আচ্ছা ! তবে একটা শর্ত আছে !
-যে কোন কিছু ! তুমি যা বলবে তাই !
-রফিক ভাই ভাল আছেন ?
-হুম ! ভাল !
-একটা উপকার করতে হয় !
-বল !
পাকিস্তানী কামিজ কোথায় কিন্তে পাওয়া যায় বলতে পারেন ?
আমার এই কথা শুনে এবার রফিকভাই কেমন ভুরু কুচকে তাকালো আমার দিকে !
একটু পরে নিজের হেসে বলল
-এখন বুঝেছ হে মিয়া ?
-হুম !
-সেদিন তো খুব লেকচার দিচ্ছিলে !
-ভাই জানা থাকলে বলেন ! ঝামেলা শেষ করি !
রফিক ভাই কাগজে একটা ঠিকানা লিখে দিল !
নিশি আমাকে দুইটা পাকিস্তানী সেলোয়ার কামিজ কিনের দেওয়ার শর্ত সাপেক্ষে এইবার শান্তি চুক্তি করতে সম্মত হয়েছে ! আর প্রতিমাসের শুরুতে একবার করে শপিংয়ে নিয়ে যাওয়ার শর্ত দিয়ে আমি আমার আগের ফেসবুক একাউন্ট রাখার অনুমুতি পেয়েছি= !
আমি শান্তি চুক্তি মেয়ে নিয়েছি । যদিও খানিকটা বৈষম্য মূলক চুক্তি ! তবুও কি আর করার । শ্বশুর মশাইয়ের কথা মত বউদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নেওয়াই সুখে থাকা সব থেকে উত্তম উপায় !
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১২