রাতের বেলা গাড়িটা চালতে আসলেই একটু মজা লাগে ! পুরো রাস্তা পাওয়া যায় ফাঁকা ! ইচ্ছা মত স্পিড তোলা যায় ! আর সব থেকে মজার ব্যাপার হল দিনের বেলায় যে রাস্তায় ২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানো যায় না এই রাতের বেলা সেখানে ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালানো সম্ভব !
আমি গাড়ির গতি আর একটু বাড়িয়ে দিলাম । এটাতে ১২৯ কিলোমিটার পার আওয়ার পর্যন্ত ওঠে ! দেখা যাক আজকে কত দুর তুলতে পারি !
যখন ১১০ পর্যন্ত উঠেছে তখনই পেছনে সাইরেন শুনতে পেলাম !
সর্বনাশ !
পুলিশ ! এতো রাতে ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় দুইটা বেজে গেছে ! এতো রাতে তো পুলিশের থাকার কথা না ! কাজ সেরেছে !
আমি লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম ! সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গতিও কমিয়ে আনলাম ! পুলিশের গাড়িটা আর একটু কাছে আসেই আমার বুকটা একটু ধক করে উঠলো !
আবারও সর্বনাশ !
এতো র্যাবের গাড়ি !
র্যাব জিনিসটা সবাইই একটু ভয় পায় ! আমিও একটু ভয় পাই । যদিও খুব একটা ভয় পাওয়ার কারন নাই ! আমার বড় মামা র্যাবে আছেন । কোন সমস্যা হলে সামলানো যাবে ! তবুও এই রাতের বেলা যদি র্যাবের গাড়ি আপনার গাড়ির পিছু নেয় ভয় পাওয়ার কারন আছে বৈকি !
আমি গাড়ি গতি কমিয়ে আনতে আনতে একেবারে কমিয়ে আনলাম ! আর তখনই র্যারের গাড়িটা আমাকে ক্রস করে সামনে চলে এল ! মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল যে হয়তো গাতিটা আমাকে ওভার টেক করে চলে যাবে । কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি ! গাড়িটা থামলো ঠিক আমার গাড়ির সামনে ! বাধ্য হয়ে আমাকেও গাড়ি থামাতে হল ! থামানোর সঙ্গে সঙ্গেই দুজন কালো পোষাক পরা অফিসার আমার গাড়ির দিকে এগিয়ে এল ! কালো পোষাক, কালো বুট আর মাথায় কালো স্কার্প ! চোখের কালো চশমাটা দেখা যাচ্ছে না ! একজন দাড়ালো আমার গাড়ির সামনে ! মনে হয় নাম্বার প্লেট চেক করছে !
আর একজন আমার গাড়ির জানলার কাছে । আমার দিকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ! আসলে ওরা ভেবেছিল আমি হয় গাড়ি চুরি করে পালাচ্ছি ! অথবা রাতের বেলা ঢাকার কিছু অভিজাত ঘরের ছেলে মেয়ে রাস্তায় বের হয় গাড়ি নিয়ে ! রেস করে ! কিন্তু আমার গায়ে অফিসে ফরমাল পোষাক দেখে লোকটি কিছুটা ইতস্তত করতে লাগলো !
দেখলাম যে লোকটা আমার গাড়ির নম্বর প্লেট দেখছিল সেও প্রথম লোকটাস এসে দাড়ালো ! দুজনের চোখা চোখি কিছু কথা হল ! কিছু একটা ইশারা করলো মনে হয় !
আমি গাড়ির কাচ নামালাম !
-কোন সমস্যা অফিসার ?
প্রথম জন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কোথায় যাচ্ছেন ?
-বাসায় যাচ্ছি !
-এতো রাতে ?
-জি ! অফিসে একটু কাজ ছিল ! বের হতে হতে একটু দেরি হয়ে গেছে !
-কোন অফিস রাত দেড়টা পর্যন্ত চলে আমার ধারনা ছিল না !
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকালাম কিছুক্ষন ! কারন কথাটা লোক দুজনের মুখ থেকে এবর হয় নাই ! বের হয়ে হয়েছে একটা মেয়ের কন্ঠ থেকে !
এই রাতের বেলা মেয়ে কন্ঠ !!
আমি লোক দুটোকে ছাপিয়ে ওদের গাড়িটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম !
ল্যাম্পপোষ্টের হলুদ আলো পড়েছে র্যাবের গাড়িটার উপরে ! র্যাবের গাড়ির গায়ে হেলাম দিয়ে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ! কালো র্যাবের পোষাক পরে আছে ! তবে মেয়েটার পোষাক টা ঠিক র্যাবের পোষাকের মত না ! মানে এতো ঢিলা ঢোলা না ! বেশ টাইট ফিটিং ! বিশেষ করে মুভির নায়িকারা যখন কোন পুলিস অফিসারের রোল করে তখন যে টাইপের ড্রেসআপ করে সেই রকম !
কোয়াইট হট !!
কোন র্যাবে এমন সুন্দর মেয়ে আছে ?
ও মাই গড !
দেখলাম আমার সামনের দুজন লোক একটু দুরে সরে গেল ! মহিলা অফিসার আমার দিকে এগিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো !
আমি নায়িকার চেহারাটা আরো ভাল করে দেখতে পেলাম ! হলুদ আলোতে মনে হচ্ছে ....
কি মনে হচ্ছে থাক ! সব কিছু বললে আপনারা আবার আমাকে বদ পুলা বলবেন ।
আরো একটু কাছে আসতেই দেখলাম এই মহিলা অফিসার কালো চশমা পরেছে ! হিরোইন স্টাইল !
আর মাশাল্লা ! একটু আগে যে বলেছি মহিলা আসলেই মুভির হিরোইন দের মত দেখতে !
আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
-এতো কোন অফিস খোলা থাকে ?
আহা ! এই কন্ঠ নিয়ে আপনার তো কোন নিউজ চ্যানলের সংবাদ পাঠিকা হওয়ার দরকার ছিল ! আপনি র্যাবে কি করেন ! নাহ ! ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ! আমি বললাম
-আসলে ম্যাম ....।
-বাইরে আসুন !
আমি গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসলাম !
-ম্যাম ! আমার...।
-আপনার আইডি কার্ড দেখান ?
কি রে ভাই ? এতো ভাব নেয় কেন ?
কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না ! আসলে মেয়েটা তার কথা বার্তায় একটা কাঠিন্য আনতে চাচ্ছে কিন্তু খুব একটা কাজ হচ্ছে না ! এতো মিষ্টি কন্ঠস্বর থেকে ধমন শুনতে ভালই লাগছে !
আমি আইডি কার্ড বের করে দিলাম !
মহিলা র্যাব অফিসার কিছুক্ষন আমার আইডি কার্ডের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-কোন অফিসে চাকরী করনে আপনি ?
-আমার মনে হয় আপনি পড়া লেখা জানেন ?
মহিলা অফিসার আমার দিকে সরু চোখে তাকালো !
আহা ! মেয়েটা চেহারায় আরো যেন একটা আবেদনময় ফুটে উঠলো ! আমি নিশ্চিত যদি এখন এই মেয়ে র্যাবের পোষাক না পরা থাকতো তাহলে একটা কাজই হত !
কি কাজ হত ?
বলা যাবে না !
মহিলা অফিসার আমার দিকে শীতল গলায় বলল
-যা জানতে চেয়েছি তার সোজা এবং সহজ উত্তর দিবেন আশা করি !
আমি আামর অফিসের নাম বললাম !
-এতো রাতে বাসায় যাওয়া কারন ?
-আসলে ম্যাম ! ঐ এটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তো । একটা ভিডিও কনফারেন্স ছিল ! আর বোঝেনই তো ওদের সময় আর আমাদের সময় ঠিক এক না ! তাই এতো দেরি !
আমার কেন জানি মনে হল মহিলা অফিসার আমার কথায় ঠিক সন্তষ্ট হল না !
-শফি !
দেখলাম দাড়িয়ে থাকা দুজন অফিসের একজন এগিয়ে এল !
-জি ম্যাম !
-গাড়ি চেক কর ! আমার তো মনে হয় এখানে কিছু আছে !
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-চাবি !
আমি চাবি এগিয়ে দিলাম !
দেখলাম শফি মিয়া অনেক খোজা খুজি করলো আমার ডিক্কির ভিতর ! কিছু পেল না !
যখন আবার আবার আমাদের সামনে এল তখন তার মুখে হতাশা !
মহিলা অফিসারও একটু হতাশ হল !
কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো । তারপর
-ঠিক আছে আপনি আসতে পারেন ! এতো রাতে ঢাকায় রাস্তায় ঘোরাঘুরি করবেন না !
আমি তখনও তার দিকে তাকিয়ে আছি ! বিশেষ করে তার চোখ চ দুটো আসলেই কেমন নেশা ধরিয়ে দেয় !
মহিলা অফিসার তার সাথে দুই অফিসার কে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হল ! আমি পেছন থেকে বলল
-মিস সুরাইয়া !
তিনজনই দাড়িয়ে গেল ! আমার দিকে পিছন ফিরে তাকালো !
-আমাকে কিছু বলছেন !
-আপনার নামতো সুরাইয়াই ! তাই না ? আপনার আইডি কার্ডে তো তাই লেখা আছে ! একটা কথা বলতাম !
-বলুন !
-আপনার অফিসার দের যদি একটু দুরে যেতে বলতেন !
-কেন ?
-না মানে ! কিছু না !
সুরাইয়া বলল
-বলুন !
-আপনার চোখ দুটো অনেক সুন্দর ! আপনি র্যাবে না থাকলে আমি নির্ঘাত আপনার প্রেমে পড়ে যেতাম !
দেখলাম সুরাইয়ার চোখে এক টা বিশ্ময় ! আসলে কেউ যে ওকে এই কথা বলতে পারে এটা ও ভাবতেই পারে নাই ! আমি আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম মহিলা র্যাব অফিসারের দিকে !
সুরাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এল !
আবারও শীতল কন্ঠ বলল
-আপনার সাহস তো কম না ! ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে রুলের ডলা দিলে ঠিক হয়ে যাবে !
আমি হাসলাম !
-যদি আমার সাথে একদিন লাঞ্চে যেতে রাজি হোন তাহলে ১০ দিন রুলের বাড়ি খেতে রাজি আছি !
এবারও দেখলাম সুরাইয়া শীতল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
আহা ! কি সেই দৃষ্টি !
একটু একটু রাগ যেন উঠছে ! নিজের রাগ কে দমানোর চেষ্টা করছে !
আমি শফি সাহেবের দিকে তাকালাম ! যদিও অন্ধকার ল্যাম্পপোষ্টের আলোতে তাদের চেহারা বেশ ভালই দেখা যাচ্ছে । দুজনের চেহারায় একটা হাসি হাসি ভাব ! আমার কথায় তারা দুজনেই বেশ মজা পেয়েছে !
আমি শফি সাহেব দিকে তাকিয়ে বললাম
-শফি সাহেব, আপনাদের সুরাইয়া ম্যাম কি বিবাহিত ?
-জি না ! ম্যাম গত মাসেই আর্মী থেকে এখানে এসেছে !
-শফি গাড়িতে বস !
সুরাইয়া ধমক দিয়ে উঠল ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আর একটা কথা যদি বলেছেন তাহলে সত্যি সত্যি কিন্তু আপনার খবর আছে !
সুরাইটা কন্ঠটা একটু কাঁপছে ! তারমানে সত্যি সত্যি রেগে গেছে !
-আচ্ছা ! ম্যাম ! আপনি রেগে যাবেন না ! আমি না হয় পারিবারিক ভাবেই প্রস্তাব পাঠাবো !
সুরাইয়া আর কোন কথা বলল না ! সোজা পিছন ঘুরে হাটা দিল !
-মিস ! একটু শুনেন প্লিজ !
আর কোন কথা হল না ! মহিলা র্যাব অফিসার গাড়িতে করে চলে গেল !
আমি দাড়িয়ে রইলাম !
পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি হাত নাড়লাম গাড়ির দিকে !
Click This Link
মহিলা র্যাব অফিসার সুরাইয়া এবং আমার সম্ভাব্য প্রেমের ছোট গল্প !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন