কিন্তু মায়ের সুমিকে একদম পছন্দ নয় ।
আমি এখন কই যাই ?
বাড়ির চাচা ফুপুরাও এখন দুইভাগে বিভক্ত । কেউ বলতেছে সুমি আবার কেউ বলতেছে ইরিন !
আমি এখন কোথায় যাবো ??
নাহ এখানে আসাটাই ঠিক হয় নাই । ঢাকা থেকেই টুক করে বিয়ে করে ফেলতাম । কোন ঝামেলা হত না । আমার বড় বোন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-শোন জনি, আমাদের সবারই মেয়ে পছন্দ হয়েছে । সুমিই ঠিক আছে । আমার তো মনে হয় না আর মেয়ে দেখার দরকার আছে ?
ফুপু একটু দুরে বসে ছিলেন । ফুপু আপা কে থামিয়ে দিয়ে বলল
-কি দেখে তুই সুমিকে পছন্দ করলি ?
-ফুপু কি বলছো তুমি ? পছন্দ করার মত সুমির সব কিছু আছে ।
ফুপু বলল
-সাদা চামড়া ছাড়া আর কিছুই সুমির নাই । সুন্দরী মেয়ের সাথে চট করে প্রেম করা যায় কিন্তু বিয়ে করার জন্য কেবল সৌন্দর্য যথেষ্ঠ নয় । ইরিন এই দিক দিয়ে সুমির থেকে অনেক এগিয়ে ।
বড় আপা হঠাৎ গরম হয়ে গেল । বলল
-ঐ মেয়েকে আমি খুব ভাল করেই দেখেছি । জনির সাথে মানাবে না কিছুতেই ।
বাবা দেখলাম বড় আপাকে সমর্থন দিলেন এই দিক দিয়ে ফুপুকে মা সমর্থন দিলেন ।
মায়ের এক কথা । কেবল রূপবতী বউ নিয়ে তার চলবে না । সাথে গুনবতী বউও লাগবে ।
বাড়ির উঠানে সবাই এই নিয়ে তর্কাতর্কী করছে । আমি উঠান ছেড়ে পিছনের বাগানটাতে চলে এলাম । সূর্যটা ডুবেছে অনেক আগেই । বাড়ির এতো ঝামেলার ভিতরেও আমার মনটা ভাল হয়ে গেল ।
চাঁদের আবছা আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারিদিকে । ঝিঁঝিঁ ডাকার আওয়াজ আসছে ।
কি আশ্চার্য ! একটানা ডেকে চলেছে । যেন কন ক্লান্তি নাই ! ঢাকায় এই আওয়াজটা পাওয়া যায় না কিছুতেই । অনেক আগে যখন গ্রামে আসতাম তখন রাতের বেলা এই আওয়াজটা কান পেতে শুনতাম । পুরানো কত কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ।
আরো কদিন থাকতে পারলে ভাল হত । কিন্তু পরিস্থিতি এমন একটা দাড়িয়েছে যে থাকা যাবে না । চট করে মেয়ে দেখতে হবে । বিয়ে করে ঢাকা যেতে হবে ।
এমন একটা ভাব আমি যেন বিয়ে করতে না বাজার করতে এসেছি । বাজারে যাও । দুইটা বোয়াল মাছের ভিতর একটা মাছ পছন্দ কর । ব্যাগে ভর তারপর বিদায় হও ।
আরে এতো জলদি এই কাজ হয় নাকি ?
বিয়ে করা আর বাজার করাটা কি এক নাকি ? কিন্তু সেই কাজটাই আমাকে করতে হচ্ছে । আজকে বাজারে গিয়ে বোয়াল মাছ পছন্দ করতে হচ্ছে ।
আজকে গিয়ে একটা মাছ মানে একজন কে দেখে এসেছি । কালকে গিয়ে দেখতে হবে আর একজনকে তারপর পছন্দ করতে হবে কোনটা যাবে আমাদের সাথে !
অবশ্য আজকের মেয়েটার চেহারা বেশ সুন্দর ছিল । সুমি নাম মেয়েটার । এইবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে । পরীক্ষার রেজাল্টও বেরিয়ে কিন্তু মেয়ে ঠিক কলেজে ভর্তি হতে পারে নাই । আর মেয়ের নাকি সেদিকে খুব একটা আগ্রহও নাই । সারা দিন স্টার জলসা আর জি বাংলা নিয়ে আছে । ইন্ডিয়ান সব নায়কদের নাম নাকি তার নখদর্পনে । মেয়ে সারাদিন এই নিয়েই আছে ! বাসা থেকেও কিছু বলে না ! একমাত্র মেয়ে ! আদরের মেয়ে !
মেয়েকে বলা হয়
-তোমার কি করতে ভাল লাগে ?
প্রশ্নটা করলো বড় আপা । মেয়ের উত্তর শুনে আমার গলা শরবত আটকে গেল । আমি সবে মাত্র লেবুর শরবতটা এক চুমুক দিয়েছি তখন মেয়ে বলল
-ভারুন ধাওয়ালের মুভি দেখতে আমার খুব ভাল লাগে ।
আমি কোন মনে চুমুক দেওয়া শরবত টুকু গলা দিয়ে নামিয়ে দিলাম । তারপর আসতে করে গ্লাসটা নামিয়ে রাখলাম সামনের টেবিলের উপর । আর কিছু মুখে নেওয়া ঠিক হবে না । মেয়ে আবার কোন প্রশ্নের উত্তর কি দিবে শেষে গলায় কিছু আটকে গিয়ে কেলেঙ্কারী বেঁধে যাবে । আমার গ্লাস নামিয়ে নেওয়া দেখে মেয়ের বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি বাবা ? শরবতে মিষ্টি হয় নি ? গ্লাসটা নামিয়ে রাখলে কেন ।
-না না চাচা । ঠিক আছে । মিষ্টি কম না একটু বেশি হয়েছে । আমি একটু কম মিষ্টি খাই ।
-আরে কি বল ! মিষ্টি খাওয়ার এই তো বয়স ? কম খেলে কি হবে !
এই বলে ভদ্রলোক গলা ছেড়ে হাসতে লাগলো । এতে হাসির কি আছে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
দেখলাম ঘরের ভিতর সবার মধ্যেই হাসিটা প্রবাহিত হচ্ছে । তখনই আমার পাত্রীর সাথে চোখা চোখি হল । সুমি চোখের দিকে তাকায়ে মনে হল মেয়েটি আসলেই সুন্দরী । তার উপর বেশ প্রশাধনী ব্যবহার করেছে । মনে হয় পার্লার থেকে সেজে এসেছে । কিন্তু মেয়েটার বয়সটা একটু কম মনে হল না ?
যাক ! মেয়েটা দেখলাম লেহেঙ্গা টাইপের কিছু পরেছে । আরো অনেকক্ষন কথা বার্তা চলল । সুমিকে আমাদের সবাই প্রশ্ন করছিল । কি করে না করে ? সামনে কি করার ইচ্ছা আছে । এক পর্যায়ে কথা বার্তা রাজনীতির দিকে টার্ন নিলো !
পাত্রীর বাবা একজন নাম করা রাজনীতিবীদ ! এলাকায় বেশ সুপরিচিত !
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকটা মনে হয় একটু বেড়েছে ! নাকি চারিদিকের আওয়াজ টা একটু কমে গেছে ? অবশ্য গ্রামে রাত নামে জলদি । মানুষ জলদি ঘুমায় । আমি রাতের নিরবতা উপভোগ করতে লাগলাম ।
-জনি সাহেব !
আমি চট করে পিছনে তাকালাম ।
এতো রাতে কে এল ?
তাও আবার মেয়ে কন্ঠ ?
কে আমাকে ডাকছে ?
গ্রামে শুনেছি ভুত প্রেত থাকে ! দাদী নানীর কাছে কত গল্প শুনেছি । পেত্নীর পাল্লায় পড়লাম নাকি ? যেহেতু মেয়ে কন্ঠ ডাক শুনলাম । আমি বললাম
-কে ?
-আমি !
-আমি কে ?
খানিকক্ষন নিরবতা । তারপর দেখলাম অন্ধকারের ভিতরে একটা আকৃতি আমার দিকে এগিয়ে আসছে । আমার থেকে দুতিন হাত দুরেই এসে আকৃতিটা থেমে গেল । চাদের আলোয় আমি মেয়েটার চেহারা দেখলাম । বলতে গেলে মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।
চাঁদের আলোর আবছা দেখাচ্ছে মেয়েটাকে । একটা মোহনীয় আবেস তৈরি করেছে আমার মনের ভিতর !
এই মেয়ে তো পেত্নী হতে পারে না । পরী হলে হতে পারে ! কিন্তু পরীর পাখনা কই ?
পরী দেখি কেবল একটা সাদা রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে । আমি বললাম
-আপনি কি পরী নাকি ?
-পরী ?
মেয়েটি হেসে উঠল । চাঁদের আলোতেই পরীর মন মাতানো হাসি দেখে প্রায় পাগল হয়ে গেলাম ।
-আপনি আসলেই মজার মানুষ । আপনার সম্পর্কে যা শুনেছি সত্যি ! যাক সে কথা, আপনাকে কয়েকটা জরুরী কথা বলতে এসেছি ।
আমি চুপ । আকাশের পরী আমাকে কোন প্রয়োজনীয় বার্তা দিতে এসেছে ! পরী বলল
-বলব ?
-বলুন ।
কিছুক্ষন ইতস্ততঃ তারপর পরী বলল
-আসলে ঠিক কথা না একটা অনুরোধ করতে এসেছি ।
-বলুন ।
-কালকে তো আপনি একজনকে দেখতে যাবেন তাই না ? আজকেও একজন কে দেখে এসেছেন ?
বাহ ! আমার বিয়ের খবর এতো দুর পৌছে গেছে । সেই খবর নিতে স্বয়ং পরী নিচে নেমে এসেছে ।
যাক, এই পরী নিশ্চই এখন আমাকে একটা পরামর্শ দিতে পারবে যে আমার কোন মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ। আমি বললাম
-হ্যা ।
-আপনি দুজনের কাউকে বিয়ে করবেন না ।
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-কেন ?
পরী কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-দেখুন এই গ্রামে ঐ দুই পরিবারই বেশ প্রভাবশালী আর অবস্থা সম্পন্ন পরিবার । আপনার বিয়েটা নিয়ে পুরো গ্রামে এক ধরনের ঠান্ডা প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে । আপনি যদি এক জনকে রেখে অন্য জনকে বিয়ে করেন তাহলে অন্য পরিবারটি পরাজিত হবে । মানসম্মানের একটা প্রশ্ন ।
-হুম ।
-যদি একজন কে আপনি বিয়ে করেন তাহলে অন্য পরিবারের সাথে আপনাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে । দুই পরিবারের মধ্যেও একটা ঝামেলা বাঁধবে !
-তাই নাকি ! কি আশ্চার্য !
-জি ! আপনি জানেন আজ সকালে পাড়ার খেলার মাঠে একটা মারামারি হতে গিয়ে হয় নাই !
-সত্যি বলছেন আপনি ?
-জি ! আপনার কাছে অনুরোধ রইলো রাখবেন !
-আচ্ছা আমি দেখি !
-আচ্ছা ! আমি যাই !
-এখনই যাবেন ?
-হুম ! যেতে হবে !
পরী চলে গেল । আম তাকিয়ে রইলাম তার যাওয়ার দিকে !
পরদিন বিকালে আবার সেই পাত্রী দেখার পালা । এই পরিবারটিও গ্রামের বেশ বনেদি পরিবার ! মেয়ের বাবা বিজিনেস করেন, চাচা বর্তমান চেয়ারম্যান, দাদা ব্রিটিশ পিরিয়ডে স্থানীয় সরকারি কর্মকরতা ছিলেন, বংশ মর্জাদা ভাল, গ্রামে প্রভাবশালী, আর্থিক সচ্ছল, গ্রামেই বিল্ডিং এর ঘর। মেয়ে আবার সর্ব গুনে গুনান্বিত ! অনার্সে পড়াশুনা করে ! সব কিছুই ভাল ! কিন্তু মেয়ে নাকি একটু কালো ! এটাই নাকি প্রবলেম !
আবার সেই কথা বার্তা ! মেয়ে দেখা ! মেয়ে ঘরের ভিতর ঢুকলো ! সবাইকে সালাম দিল ! ঠিকই আমি একটা ধাক্কার মত খেলাম !
কারন কন্ঠটা আমার পরিচিত !
কালকে রাতে আমি যাকে পরী ভেবে ছিলাম সেই কন্ঠস্বর !
আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম ! ইরিন নাম মনে হয় !
কালো না ! শ্যমলা ! কালকের মত আবছা আলো না ! তবে আমার চিনতে বিন্দু মাত্র কষ্ট হল না যে কালকের মেয়েটাই এই মেয়েটা !
কালকের পরী !
একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে কালকে মেয়েটা বলল যে আমি যেন কাউকেই পছন্দ না করি !
গ্রামের কথা ভেবে ?
আসন্ন ঝামেলার কথা ভেবে ?
তার মানে মেয়েটা কেবল নিজের কথাই চিন্তা করে না ! সবার কথা চিন্তা করে !
আমার মা দেখলাম ইরিনেকে অনেক কথাই জিজ্ঞেস করছে ! স্পষ্টই মায়ের পছন্দ হয়েছে ! বিশেষ করে মা ইরিনের রান্না বান্নার খোজ নিচ্ছেন !
কি কি রাধতে পার এই সব আর কি !
জানা গেল আমার পরিবেশন কৃত সব কিছুই তার নিজের হাতের রান্মা করা !
মেয়ে দেখা শেষ আমরা বের হলাম ! জানানো হল আমাদের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে !
পরদিন সকালেই আমি ঢকায় চলে আসি ! মা আর বাবাকে স্পষ্টই জানিয়ে দেই যে কোন মেয়ে আমার পছন্দ হয় নাই ! যদিও দুজনকেই আমার মনে ধরেছিল । বিশেষ করে ইরিন কে ! কিন্তু আমার বিয়ের ফলে যদি গ্রামে আসলে একটা ঝামেলার ব্যপার হয়ে যায় তাহলে ?
প্রায় তিন বছর পরের কথা ! একদিন লাঞ্চের পর অফিসের কাজে একটা ব্যাংকে গেছি ! কিছু লোনের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ! বসে আছি এসিষ্ট্যান্ট ম্যানাজারের সাথে দেখা করার জন্য ! বেশ খানিকক্ষন বসে থাকতে হল ! আমাকে অবশ্য এই সময়েই এপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয়েছিল !
যখন ঢুকতে পারলাম তখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে ! যখন এসিষ্ট্যান্ট ম্যানেজারের দিকে চোখ গেল তখনই চোখ চরখ গাছ !
ইরিন !
সেই দিনের সেই পরী ! আজ এই খানে ?
এই ব্যাংকের এসিষ্ট্যান্টে ম্যানজার !
মাইগড !
পরী আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! ওকে দেখে মনে হল না যে ওকে আমাকে দেখে খুব একটা অবাক হয়েছে ! যেন জানে !
-ভাল আছেন ?
একটু হেসে ঐ আগে আমাকে জিজ্ঞেস করলো !
-হুম ! তুমি ভাল আছো ?
একবার মনে হল তুমি বলে আবার ভুল করলাম নাকি ? ও যদি আবার রাগ করে !
কিন্তু তেমন কিছুই হল না !
-হুম !
-তুমি জানতে আমি আসবো ?
-হুম ! আপনি যখনই এপোয়েন্টমেন্ট নিয়েছেন তখনই জানি ! তবুও শিওর হওয়ার জন্য একট খোজ নিয়ে রেখেছি !
-এই জন্য বিকেল বেলা আসতে বলেছ ?
-হুম !
ইরিন হাসলো ! সেই মন মাতানো হাসি ! আম চেয়ে রইলাম কিছুক্ষন !
তারপর..... ???
থাক ! সব কথা শুনতে নাই ! বাকি কথা জনি ভাইয়ের কাছে থেকে শুনে নিয়েন !
(গল্পটি জনি ভাইয়ের স্টাটাস এবং অনুমুতি সাপেক্ষে লেখা)
জনিভাইয়ের স্টাটাস
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৫